”সাইমুম শর্তের কথা বলে আমার মুখ থেকে কচস্টেপ খুলে দেয়।আর তখন আমার শরীরে ছিল প্রবল যন্ত্রণা।না চাইতেও মুখ থেকে তখন কান্না বেরিয়ে আসে। সেই কান্না অনেকটা ছড়িয়ে যায়। সাইমুম আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।রাগী রাগী চোখ।চোখ থেকে আগুনের হলকা বেরুয় যেনো।
আমি সঙ্গে সঙ্গে চুপ মেরে যাই।যেন আমার আর কোন কষ্ট হচ্ছে না।
সাইমুম এবার বলে,’বলো শর্ত মানতে রাজি কি না?’
আমি মনের অজান্তেই বলে ফেলি,’রাজি। আপনার শর্ত বলুন।’
সাইমুম হাসে। শব্দ করে হাসে। কিন্তু অতটা শব্দ নয় যা রুমের বাইরে যেতে পারে।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,’খুব বুঝে শুনে বলেছো তো রাজি?পরে আবার শর্ত শুনে না বলো না যেন।না বললে কিন্তু এরচেয়েও ভয়ংকর হতে জানি আমি।’
আমি ভাবতে পারি না তখন কিছুই।কারণ আমার মুক্তির প্রয়োজন ছিল। এবং যে বিপদে পড়েছে সেই জানে কেবল ওখান থেকে বেরিয়ে আসা কতটা কঠিন। পরিস্থিতি মানুষকে বদলে দিতে জানে। সাহসীকে পর্যন্ত করে তুলতে পারে দূর্বল।
আমার শরীরে প্রবল যন্ত্রণা হচ্ছিল।মনে হচ্ছিল আমি মরে যাচ্ছি। এইসব যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আমি সাত পাঁচ না ভেবেই বলি,’আমি রাজি। আপনার যেকোন শর্ত মানতে আমি রাজি।’
সাইমুম এবার আমার কাছে আসে।হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
আমি আমার শরীরের দিকে তাকাই।লাল টুকটুকু হয়ে গেছে শরীর। জায়গায় জায়গায় কেমন ফুলে ফেঁপে গেছে।
সাইমুম বলে,’এইসব দেখে লাভ নাই। শর্ত পূরণ করতে পারলে অনেক ভালো থাকবে তুমি। নয়তো এরচেয়ে বেশি কষ্ট হবে তোমার। অনেক ভোগতে হবে।’
আমি বলি,’আপনার কী শর্ত বলুন।’
সাইমুম এবার বলে তার শর্তের কথা।বলে,’মুনতাহাকে আমি চাই। তুমি যেভাবেই হোক ওকে একবারের জন্য আমার সাথে দেখা করিয়ে দিবে।আমি যে জায়গার কথা বলবো সেই জায়গায়।দেখা করে চলে যাবে ও সমস্যা নাই। কিন্তু ওর সাথে আমি একবার দেখা করতে চাই! তুমি দেখা করিয়ে দিবে বলো?’
আমি ওর কথা শুনে ঈষৎ চমকে উঠি। কেঁপে উঠে আমার শরীর।বুকটা কেমন উঠানামা করে হাতুড়ির মতো।
আমার উত্তর না পেয়ে ও তাড়া দেয়। জিজ্ঞেস করে আমি কী এই শর্ত পূরণ করতে পারবো কি না!
আমি কী বলবো বুঝতে পারি না। কিন্তু এটা বুঝতে পারি যে সাইমুম আপুর সাথে ভালো কিছু করবে না।ওর দেখা করার উদ্দেশ্যে মোটেও ভালো না। আমাকে সে বিয়ে করেছে এই জন্যই।যেন আমার মাধ্যমে আপুর নাগাল পায় সে।আর আপুর কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে!
আমি জানি আপুর সাথে আমি যোগাযোগ করতে পারবো।রাসেল ভাইয়ার নম্বর আছে। এবং আমি যদি বলি আপুকে ওর সাথে দেখা করার জন্য আপু আসবেও। কিন্তু আমি কীভাবে এমন একটা কাজ করবো যা আপুর জন্য হুমকিস্বরূপ।আর আপুর সাথে দেখা করার পর যে সাইমুমের চরিত্র বদলে যাবে এটাও নিছক কল্পনার বিষয়। কিংবা ওর চরিত্র বদলে গেলেই বা কী! এমন চরিত্রহীন লম্পটের সাথে সংসার করার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো।
তারপর অল্প সময়ের ভেতর অনেক কিছু ভাবলাম। ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম ওর শর্তে আমি রাজি হবো।রাজি হওয়া ছাড়া উপায় নাই। কিন্তু এর সাথে আমিও একটা শর্ত জুড়ে দিবো।ওর মোবাইল থেকে ভিডিওটা ডিলিট করে দিতে বলবো। এবং আমার সামনে এটা করতে হবে।
আমি ওকে বলি।বলি,’আমি আপনার শর্তে রাজি। কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে।’
সাইমুম বললো,’কী শর্ত?’
আমি বললাম,’আপনার মোবাইল থেকে আমার ভিডিওটা কাটতে হবে।’
সাইমুম বললো,’অবশ্যই কাটবো। কিন্তু এর আগে ওকে আসতে বলো। কবে আসবে ডেট ফিক্সড করো ওর সাথে।আমি জানি ওকে মিথ্যে কথা বলে আনবে তুমি।সত্য বললে ও কখনোই আসবে না। আমার সামনে জীবনেও ও পড়তে চায়বে না। তুমি ওকে বলবে ওর সাথে তুমি দেখা করতে চাও।’
আমি বললাম,’যেভাবেই হোক আপনার সাথে আপুকে আমি দেখা করাবো। আপনি ভিডিওটা কাটুন প্লিজ!’
সাইমুম বললো,’তাহলে ওর সাথে কথা বলো।বলো তুমি ওর সাথে কেন্দুয়ার বিধান সাহার অপরিত্যাক্ত ভবনের সামনে দেখা করবে।’
আমি সত্যি সত্যি আপুর সাথে কথা বললাম। মিথ্যে করেই বললাম,’আপু তোর সাথে আমার জরুরি কথা বলতে হবে।দেখা করতে হবে।আমি বড় বিপদে আছি। আগামীকাল তুই আমার সাথে দেখা করতে পারবি?’
আপু বললো,’কী বলছিস?তুই কোথায় দেখা করতে পারবি বল! আমার দেখা করতে সমস্যা নাই।আমি দূরে কোথাও পালিয়ে যায়নি। রাসেলের এক বন্ধুর বাসায় উঠেছি আমরা।’
আমি খানিক সময় চুপ থাকি। সাইমুম ফিসফিস করে আমায় বলে দেয়,বলো রাসেল ভাই যেন সঙ্গে না থাকে ।
আমি ভয়ে ভয়ে ওর কাছে বলি,’আপু শোন, রাসেল ভাই যেন তোর সঙ্গে না থাকে। খুব গোপন কথা বলতে হবে।’
আপু বললো,’আচ্ছা তুই টেনশন করিস না। আচ্ছা শোন, আমার প্রতি কী সাইমুম রেগে আছে নাকি রে এখনও?’
সাইমুম আমার সামনে তখন দাঁড়িয়ে। মোবাইলে লাউড স্পিকার অন করা। আমাকে মিথ্যে বলতে হলো আবার।আমি বললাম,’নাহ।একদম না।’
আপু খুশি হলো।বললো,’ছেলেটা ভালো আছে।আমি ওকে অত বড় আঘাতটা দিলাম। কিন্তু কিছুই তো করার ছিল না। রাসেলের সাথে আমার ছ’বছরের রিলেশন। ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারতাম না কিছুতেই!’
আমি বললাম,’আপু এখন রাখি। আমার শাশুড়ি আসছেন!’
বলেই ফোন কেটে দিলাম।এই মিথ্যে কথাগুলো বলার একটা কারণ ছিল।আমি মনে মনে একটা বুদ্ধি করে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম আপুর সাথে কথা শেষ করে গোপনে আপুকে একটা মেসেজ দিবো।লিখবো,’আপু,আমি তোকে ফোন করে যা বলেছি এর সব মিথ্যে।তুই আমার সাথে দেখা করতে আসিস না প্লিজ!’
কিন্তু সাইমুম অতটা বিপদজনক তা আমার জানা ছিল না।সে আমার হাত থেকে আমার মোবাইল ফোনটাই কেড়ে নিলো। তারপর বললো,’আগামীকাল যখন তোমার বোন তোমার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে তখন নিশ্চয় তোমায় ফোন দিবে। তুমি তখন ফোন হাতে পাবে। এবং ও আসতেছে এটা কনফার্ম হওয়ার সাথে সাথেই আমি তোমার ভিডিও কেটে দিবো।’
আমি খুব অসহায় হয়ে পড়লাম।যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নিজেকে এবং আপুকে বাঁচাবার জন্য যে ফন্দি বের করেছিলাম তা একেবারেই ভেস্তে গেলো!
আমি কাঁদছি। নিজের অক্ষমতা এবং নির্বুদ্ধিতার জন্য। শব্দ করে কাঁদতে পারছি না।কারণ আমার সব পথ এখন বন্ধ।
সাইমুম হাসছে।ওর হাসিটা সাধারণ কোন হাসি নয়। ওকে দেখেই বিপদজনক মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে ক্ষুধার্ত হায়েনা নিজের ডেরার কাছে শিকার পেলে যেমন পরিতৃপ্তির হাসি হাসে ঠিক এমন ভাবেই হাসছে সাইমুম নামের অসভ্য লোকটা!