কুয়াশায় ঘেরা রেললাইন

আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগের কথা।
নেত্রকোনার একটি বিখ্যাত কলেজে ২১ শে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে রাত ১০ টার পরে কলেজের বেশকিছু ছাত্র ছাত্রী, বন্ধু-বান্ধব, স্যার সবাই মিলে আলপনা আঁকছিলাম। যা প্রায় সব কলেজেই করে। মোটামুটি সব কাজ শেষ করে রাত প্রায় ১২ঃ৩০ নাগাদ আমরা কলেজ ত্যাগ করি। ভোরবেলা কলেজের প্রোগ্রাম আছে প্রভাতফেরীর। তাই আমি ডিসাইড করলাম আজ আর বাসায় না গিয়ে বন্ধুদের মেসে চলে যাবো। যেন সবাই মিলে আড্ডা দিতে পারি আর সকালে একসাথে বের হতে পারি প্রোগ্রামে এটেন্ড হবার জন্য।
আমরা তিন জন ছিলাম একসাথে। কলেজ থেকে বন্ধুর মেস ছিলো প্রায় ১০ মিনিটের রাস্তা। বলে রাখা ভালো, আমরা রেললাইন দিয়ে হেঁটেই বাসায় যেতাম সবসময়। ঐদিনও সেইম ভাবেই আমরা হাঁটছি। শীতের রাত, সাথে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিলো সেই চিরচেনা রেললাইন। ছিমছাম পরিবেশে কুয়াশার মধ্যে আমরা এক প্রকার এনজয় করতে করতেই বাসার দিকে হাটছি। রেললাইনের পাশে স্বভাবতই ময়লা, নর্দমার স্তুপ থাকে। যখন আমরা সেই যায়গাটা ক্রস করলাম তখন আমরা কিছু উদ্ভট শব্দ শুনতে পেলাম। শুনে এমন মনে হলো যেন কেউ হাড় চিবোচ্ছে। মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে সেখানে ধরলাম কিসের শব্দ সেটা দেখার জন্য। কেননা প্রায় সময়ই এসব ময়লায় কুকুর বিড়াল পঁচা খাবার খায়। কিন্তু ফ্ল্যাশ ধরার পর আমরা কিছুই দেখতে পেলাম না। বিষয়টা আমরা কেউই পাত্তা না দিয়ে আবারো মেসের দিকে হাটা শুরু করলাম।
একটু পর সেই উদ্ভট শব্দটা আবারো শুনতে পেলাম। পিছনে ফিরে তাকাতে আমরা কেউই কিছুই দেখতে পেলাম না। ময়লার স্তুপ থেকে এখন একটু সামনে আমরা, তবুও বিচ্ছিরি গন্ধ যেন আমাদের সাথেই আছে মনে হচ্ছে।।
শীতের রাতেও মনে হচ্ছিলো চারপাশটা খুব ভারী আর অনেক গরম। কিছুটা ভয় মনে আসলেও আমরা তিনজন থাকায় এত বেশি ভয় আমাদের লাগে নি।
হঠাৎই মোবাইলে কল আসলো,
— “কি মিয়া আমারে রাইখা যাইতাছগা কেন? দাড়াও একটু। কুয়াশাতে তোমাদের দেখাও তো যাইতাছে না। দাড়ায়া থাকো আইতাছি।”
— মুন্না!!
মুন্নার গলা পেয়ে আমি পাশে তাকিয়ে দেখি, শুধু আমি আর আল-আমিন। তাহলে মুন্না কোথায়? দুজনেই অবাক। আমরা না এতক্ষণ একসাথে আসলাম!! পিছন হেটে মুন্নাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি না আমাদের সাথে হাটছিলে এতোক্ষণ? ওর জবাব ছিলো সে নাকি আমাদের বলেছিলো একটু দাঁড়াতে, ওর একটু হালকা হতে হবে। আর এটা বলেই সে হালকা হতে গেলো। তার মানে আমরা দুজনের কেউই সেটা শুনলাম না। উল্টো মুন্নাকে নিয়েই হাটলাম যে কি না আমাদের মুন্না-ই না!
আমরা খেয়াল করে বুঝলাম সেই বিশ্রী গন্ধ টাও এখন আর নেই। এতে তিনজন প্রচন্ড ভয় পেয়ে বেহুঁশ হই হই অবস্থা। সবাই এত শীতের মধ্যেও ঘামছি ভয়ে। কোথাও পড়েছিলাম, এসব ময়লার স্তুপে থাকে পালিস নামক এক জ্বীন। যারা মানুষদের ভয় দেখায়, আর তাতেই ওরা আনন্দ পায়।
তবে কি সে জ্বীন ছিলো?
আমরা দোয়া দূরুদ পড়তে পড়তে দ্রুত পা চালিয়ে মেসে এসে শীতের রাতেও গোসল করলাম। এরপর থেকে রেললাইনের ঐ জায়গাটা দেখলে ভয় করতো। আর প্রভাতফেরীর জন্য কলেজে আলপনা আঁকা পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেই এর পর থেকে।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প