ক্বারিন জ্বীন

আমরা অত্যন্ত ধার্মিক ফ্যামিলির সন্তান। আমার আব্বু একজন আলেম, তিনি উনার জীবনে অনেক প্যারানরমাল এক্টিভিটি দেখেছেন। বেশ কয়েকবার জ্বীনে ধরা রোগীকেও ভালো করেছেন। এক কথায়, উনার এসব বিষয়ে অনেক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে।
২০১৩ সালের এক সন্ধ্যায় আব্বু মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় আসেন। তখন আমার বোন সাইবা বেশ ছোট—৮/৯ বছর হবে হয়তো। তো, সাইবা আব্বুকে বলে জ্বীন-ভূতের গল্প শোনাতে। আব্বু তখন আমাদের সবাইকে বসতে বলেন। তিনি গল্প শোনাবেন বলে।
আমরা সবাই বসি গল্প শোনার জন্য। আব্বু অনেক গল্প শোনালেন; উনার নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাও বললেন! সবশেষে বললেন ক্বারিন জ্বীনের কথা, যেটা মানুষের সঙ্গে সবসময় থাকে এবং যার সঙ্গে থাকে, হুবহু তার মতোই রূপ ধারণ করে। আব্বু বললেন, রাতের বেলা অন্ধকারে কখনো আয়না দেখবে না। লাইট জ্বালিয়ে, আয়না দেখার দোয়া পড়ে তারপর দেখবে, নাহয় ভয় পেতে পারো।
এটা শোনার পর আমি বেশ ভয় পেলাম। কখনো অন্ধকার রুমে একা থাকতাম না। আয়না দেখা তো অনেক দূরের কথা। কিন্তু সাইবা ছোট থেকেই সাহসী মেয়ে। আমি রাতে এক রুম থেকে আরেক রুম যাওয়ার সময় লাইট অফ করে দৌড় দিতাম ভয়ে। আবার কখনো সাইবাকে বলতাম লাইট অফ করতে। সে লাইট অফ করে উল্টো আমাকেই ভয় দেখাতো।
**সে যাই হোক,**
আসল ঘটনায় আসি। তো, সাইবা আব্বুর মুখে এই কথা শুনে বেশ অবাক হলো। মানুষের সঙ্গে জ্বীন থাকে, কেমন করে? সে এটা সত্য কিনা জানার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠল।
সে রাতে জেগে ছিল অন্ধকারে আয়না দেখার জন্য। আমরা যখন সবাই ঘুমিয়ে গেলাম, তখন সে চুপিচুপি উঠে গেল। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে নিজের অবয়ব দেখতে লাগল আয়নায়! একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।
আমরা তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ সাইবার চিৎকারে আমার ঘুম ভাঙল! দেখলাম, সাইবা দৌড়ে এসে লুটিয়ে পড়ল বিছানায়। অজ্ঞান হয়ে গেল। আমি চিৎকার করে আব্বু-আম্মুকে ডাকলাম। আমি তখনো জানতাম না আসলে কী হয়েছে।
আম্মু আমাকে বলল, কী হয়েছে? আমি নিজেও হঠাৎ এমন চিৎকারে ভীত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ, আমার বয়সও কম ছিল। নিজেই ছোট মানুষ ছিলাম, তাই খুব ভয়ে জড়সড় হয়ে ছিলাম।
সাইবার জ্ঞান ফেরার পর যা জানাল, সেটা শুনে মারাত্মক ভয় পেয়েছিলাম। সাইবার ভাষ্যমতে, “আব্বুর কথায় জানতে চেয়েছিলাম, আসলেই ক্বারিন জ্বীন আছে কিনা আমার সঙ্গে। তাই আয়না দেখছিলাম। আয়নায় আমি আমার অবয়বটাই দেখছিলাম। সব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু যখন সরে আসছিলাম আয়নার সামনে থেকে, তখনই দেখলাম আমার প্রতিবিম্বটা তখনো আয়নার সামনে স্থির দাঁড়িয়ে ছিল এবং মিটমিট করে হাসছিল। আমি আস্তে আস্তে পিছাচ্ছিলাম। কিন্তু আয়নার ভেতরে থাকা জ্বীনটা এক পর্যায়ে আমায় ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। তখনই আমি চিৎকার করে দৌড় দিই।”
আম্মু সাইবাকে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। পরদিন সকালে জ্বরে সারা গা পুড়ে যাচ্ছিল সাইবার। সে নাকি আয়নায় তাকালেই ওই জ্বীনকে দেখতে পাচ্ছিল।
আব্বু দোয়া পড়ে শরীর বন্ধ করে দেওয়ার পর কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হলো কিছুটা।
একদিন রাতে সাইবা ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাচ্ছিল। বাথরুমের সামনে যাওয়ার পর তার নাকি মনে হচ্ছিল ভেতরে কেউ কাঁদছে! দরজা খুলে সে দেখতে পেল, ভেতরে তারই মতো দেখতে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখার সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল সাইবা।
এরপর অনেকদিন পর্যন্ত এই জ্বীন ভয় দেখাত ওকে। আব্বু অনেক কিছু করে জ্বীনটাকে সরিয়েছেন ওর শরীর থেকে।
আসলে মানুষের সঙ্গে ক্বারিন জ্বীন থাকে—সত্যি। কিন্তু সাইবার টা ছিল বদজ্বীন, যা সাইবাকে ভয় দেখিয়ে মজা পেত।
**এরপর আরেকটি ঘটনা বলি,**
২০২২ সালে আমার এক খালাতো বোনের সঙ্গে ঘটে।
তখন ছিল শীতকাল। গ্রামের সবাই নরমালি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। শীতকালে তো আরো তাড়াতাড়ি ঘুমায়। যেহেতু গ্রামে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে, তাই কেউই বেশি রাত অব্দি বাইরে থাকে না।
আমার খালাতো বোনের তখন সবে নতুন বিয়ে হয়েছে। তো, আপা (খালাতো বোন) এবং দুলাভাই আলাদা একটা ঘরে থাকত। মানে সামনাসামনি দুটো বাড়ি—একটি ঘর বড় আরেকটি ছোট ঘর। বড় ঘরে শ্বশুর-শাশুড়ি থাকেন।
আর ছোট ঘরে আপা-দুলাভাই।
দুলাভাই সে রাতে খাওয়া-দাওয়া করে বাইরে বের হওয়ার সময় বললেন, “আজকে আমার আসতে দেরি হবে” (র‍্যাকেট খেলতে যাচ্ছিলেন), “তুমি ঘুমিয়ে যেও।”
আপুও বললেন, “ঠিক আছে, আপনি যান।”
দুলাভাই বের হওয়ার পর আপা শুয়েছিলেন। হঠাৎ ১০/১৫ মিনিট পর দুলাভাই এসে ডাকতে লাগলেন দরজা খোলার জন্য। আপা অবাক হয়ে দরজা খুলে বললেন, “আপনার না দেরি হবে আসতে!”
দুলাভাই কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে গেলেন।
আপা বেশ অবাক হলেন। খেয়াল করলেন, হঠাৎ ঘরে পোড়া পোড়া গন্ধ লাগছে এবং দুলাভাইয়ের ব্যবহারও কেমন অপরিচিত লাগছে। দুলাভাই চুপচাপ শুয়ে পড়লেন বিছানায়। একটা কথাও বললেন না আপার সঙ্গে।
আপাও শুয়ে পড়লেন।
আবারও ঘণ্টা খানেক পর দুলাভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙল। হতবাক হয়ে পাশে শুয়ে থাকা বস্তুটার দিকে তাকালেন আপা। যা দেখলেন, দু’চোখে বিশ্বাস করা কঠিন। পাশে সাদা কাপড় পরে শুয়ে আছে কে যেন। হঠাৎ বন্ধ চোখ মেলে তাকাল আপার দিকে। আগুনের গোলার মতো জ্বলজ্বল করছে।
আপা এ দৃশ্য দেখে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেলেন।
পরে দুলাভাই এসে মাথায় পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরালেন।
দুলাভাইকে দেখেও আপা ভয় পাচ্ছিলেন। অবশেষে যখন বুঝতে পারলেন, আসলেই এটা দুলাভাই, তখন কিছুটা স্থির হয়ে ঘটনাটা খুলে বললেন দুলাভাইকে।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প