চমক পর্ব ১ সূচনা পর্ব

চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিল আতিক। একটুখানি সুখের আশায়। যেন বউ, বাচ্চা, বাবা আর মা ডাল ভাত খেয়ে সুখে দিনাতিপাত করতে পারে। কেউ যেন বেকার বলতে না পারে।
তার ঠিক ছয় মাস পরে সন্তান ভূমিষ্ট হলো। সবাই যখন নবজাতককে কোলে নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি তে ব্যস্ত তখন সে প্রবাস থেকেই ভিডিও কলে নিজের চোখের তৃপ্তি মিটিয়েছে। বাবা হওয়ার ভিন্ন স্বাদ আর অনুভূতি অনুভব করেছে দূর থেকেই। ছোট ছোট হাত পা একটুখানি মুখ আর পুতুলের মতো শরীরটাকে তারও ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল।
ইচ্ছে করছিলো, নরম সেই শরীরটাকে বুকে লুকিয়ে রাখতে। সাথে আরো ইচ্ছে করছিল বউয়ের কপালে উষ্ম স্পর্শ দিয়ে বলতে, ‘ধন্যবাদ বউ, আমাকে একটা তুলতুলে পুতুল উপহার দেওয়ার জন্য।’ তবে সেটা বলা হয়ে উঠেনি। দূর থেকে বলবে না। বউকে সে এই সামান্য কথা সরাসরি বলতে চায়।
দেড় বছরে পা দিল মেয়ে। তবে আজও আতিকের ভাগ্য হয়নি মেয়েকে ছুঁয়ে দেখার। মন আর চোখ যেন দিনকে দিন চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠছে। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে ভিডিও কলে মেয়েকে দেখে আর তার মুখের আধো আধো বুলিতে ‘বাব্বা…হ্’ ডাকটা শুনে তখন সারাদিনের ক্লান্তি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কলিজাটা কেমন শীতল হয় তার। আজকাল তো মোবাইলের মাঝেই হাত বাড়ায় বাবাকে ছুঁয়ার জন্য। মোবাইলের ভিতর থেকে বাবাকে বের করতে চায়। যতবার মেয়ে বাবা ডাকে ততবারই তার মনে হয় বাবা ডাকে এতো সুখ? তার বাবারও নিশ্চয়ই এমন সুখ লাগে যখন সে ডাকে? শায়লা যখন মেয়েকে বলে,
– ‘কুহু বাবাকে তোমার দাঁত দেখিয়ে দাও তো।’
কুহু তখন অধর যুগল ফাঁক করে ‘ইইই’ করে বাবাকে সদ্য গজানো দাঁত দেখায় আর হাসে। আতিক তখন তার মেয়ের ফোকলা দাঁতের হাসি দেখে। বড্ড নিষ্পাপ সেই হাসি। আজ সেও একটা কন্যা সন্তানের বাবা। কথা ভাবতেই বুকে কেমন প্রশান্তির ঢেউ খেলে।
রাতের খাবার পর্ব শেষ করে বউকে কল দিল সে। তখন বাংলাদেশে আনুমানিক রাত বারোটা বাজে। দু’বার রিং হওয়ার পর মোবাইল রিসিভ করে শায়লা। মেয়ের দিকে মোবাইলের ক্যামেরা তাক করা। প্রায় দশ মিনিট মেয়েকে দেখার পর আতিক বললো,
– ‘মেয়েকে তো দেখলাম। মেয়ের মা কি একটু ক্যামেরার সামনে আসবে? মেয়ের মাকে দেখার জন্য মনটা আকুপাকু করছে।’
শায়লা সেভাবেই মোবাইল ধরে রাখল। কোনো হেলদোল হলো না তার।
– ‘আর কত অভিমান করে থাকবে বলো তো। দূরেই তো আছি। অভিমান করে যে আরো দূরে ঠেলে দিচ্ছ।’
তৎক্ষনাৎ নিজের দিকে ক্যামেরা ঘুরায় শায়লা। চোখে অভিমানের অশ্রু টলমল করছে।
– ‘হায় হায় এতো বড় মেয়ে কাঁদে কেন?’
– ‘রঙে কাঁদে।’
– ‘কেঁদে কেটে এখনই সব উগ্রে ফেললে চলবে? আমি দেখার জন্যও কিছু রাখো। নাহলে তো পরে বলবো বউয়ের অনুভূতি ম’রে গেছে।’
– ‘আপনি বিদেশই থাকেন দেশে আসা লাগবে না। টাকাই কামাই করে যান। বউ আর বাচ্চা দিয়ে কি করবেন?’
– ‘দেখি তোমার কপালটা ক্যামেরার সামনে আনো তো হালকা করে একটা চুমু দেই।’
– ‘আপনি ভালো হবেন না তাই না।’
– ‘ভালো হলে কি মেয়ের বাপ হতে পারতাম বলো?’
_________
গত হয়েছে দুইদিন। পড়ন্ত বিকেল!
শায়লা মেয়ের দুই হাত ধরে হাঁটা শিখাচ্ছে। ঠিক তখনই গেটের বাইরে থেকে কেউ কড়া নাড়ে।
শায়লা গোমটা টেনে গেট খুলে দেখে আতিকের বন্ধু শাকিল।
– ‘এইদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম ভাবি। ভাবলাম কুহুকে একটু দেখে যাই। একটু পানি খাওয়ান না। তৃষ্ণা পেয়েছে খুব।’
কুহুকে শাকিলের কাছে দিয়ে শায়লা পানি আনতে গেল। কুহু যখন শাকিলের শার্টের বোতাম নিয়ে খেলতে ব্যস্ত ঠিক তখন তার সামনে আরো একজন এসে দাঁড়ায়। চোখে কালো চশমা আর মুখে মাস্ক। ওইটুকু কুহু তখন মানুষটাকে চিনার জন্য ব্যস্ত।
লোকটা প্রথমে নিজের চোখে চশমা খুললো। তারপর খুললো মাস্ক খুলতেই……

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প