নরখাদক পর্বঃ ০১

|১|
কাল সারা রাত বৃষ্টি হওয়ার পর রাস্তা ঘাট সব কাঁদা কাঁদা হয়ে গেছে। মেন রোডে গাছ ভেঙে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। মেন রোড দিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। এদিকে ভাইয়ের লাশ কিভাবে গ্রামে নিয়ে যাবে এই নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলেন খালিদ। সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে লাশ! আর পিছনে একটা মাইক্রো গাড়ি করে আত্মীয় স্বজন মিলে প্রায় দশ জনের মতো হবে!
অ্যাম্বুল্যান্সে চালকসহ খালিদের ছোট মামা রয়েছে। চালকের সাথে সহকারী একজন রয়েছে। মাইক্রো গাড়িতে খালিদ তার স্ত্রী, মৃত ভাইয়ের স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন কান্না করছে।
রাস্তা ব্লক হওয়ার কারণে গাড়ি আর সামনে যেতে পারবে না। খালিদ নিচে নামলেন। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে সহকারী নিচে নামলো। সহকারী বললো,
– স্যার, সামনে এগুনোর কোন ওয়ে নেই। আমাদের ফিরে যেতে হবে!
– কি! আমি কোনভাবেই ফিরে যাবো না। আমার মা গ্রামে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে চেয়েছেন। আমি যে করেই হোক, নিয়ে যাবোই! দেখো আশেপাশে কোনো না কোনো রাস্তা অবশ্যই আছে!
– স্যার, আশেপাশে কোন রাস্তা নেই। কাল রাতে ভয়ঙ্কর বৃষ্টি হয়েছে। সব বন্ধ হয়ে গেছে।
– কত টাকা চাই তোমার?
– এটা টাকার প্রশ্ন নয় স্যার! আপনিও তো দেখছেন।
– আচ্ছা শোনো, ঐ পাশে একটা জঙ্গল আছে। যতদূর সম্ভব ঐ জঙ্গলের পথ ধরে আমরা এই ব্লক অংশ পার হতে পারবো!
জঙ্গলের কথা শুনে সহকারীর চোখ কপালে উঠে গেলো। তার চোখ মুখের রং বদলে গেছে। সব কিছু কালো হয়ে গেছে। সহকারী বললো,
– স্যার, আপনি জানেন ঐ জঙ্গলটা অভিশপ্ত! ওখানে শয়তানদের বাস। ওরা মানুষ মারে। মানুষের মাংস খায়!
– এসব রাবিশ মার্কা কথাবার্তা বাদ দাও। আমি তোমাকে দ্বিগুনেরও বেশি টাকা দিবো।
– যদি জীবনই না বাঁচে তো টাকা দিয়ে কি করবো?
– আমি কিন্তু তোমার নামে কমপ্লেন করবো! ড্রাইভারকে বলো তাড়াতাড়ি স্টার্ট দিতে। আর ভিতরে গিয়ে বসো যাও!
খালিদের কথায় অনেকটা বাধ্য হয়েই সহকারী গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসে। আর চালককে বলে, গাড়ি জঙ্গলের পথে নিয়ে যেতে। এই চালক সম্পুর্ণ নতুন। গাড়ি চালানো ছাড়া তেমন কিছুই জানে না। পথ ঘাটও খুব একটা চেনে না। তাই সহকারী হিসেবে সব সময় একজন থাকে। অ্যাম্বুল্যান্স জঙ্গলের ভিতরে ঢুকতেই সহকারী দোয়া দরুদ সব পড়তে লাগলো। কিছু দূর এগিয়ে যাওয়ার পর খালিদ লক্ষ্য করলেন যে, অ্যাম্বুল্যান্সের ছাদের উপর কিছু একটা আছে! হয়তো কোন বনমানুষ জাতীয় কিছু হবে! কিন্তু এই জঙ্গলে বনমানুষ এলো কোথায় থেকে? বন দফতরের লোকদের ব্যাপারটা জানাতে হবে। কিন্তু তার আগে ঐটা যে বনমানুষই নিশ্চিত হতে হবে! খালিদ গাড়ি দ্রুত চালিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের আগে গেলেন। আর অ্যাম্বুল্যান্স থামালেন। সহকারী একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
– আবার কি হলো?
– মনে হয় অ্যাম্বুল্যান্সের ছাদের উপর বনমানুষ রয়েছে। দেখতে হবে।
খালিদের কথা শুনে সহকারী ঘাবড়ে গেলো। আর চিৎকার করে বলতে লাগলো,
– স্যার, আপনি গাড়ি থেকে নামবেন না! নামবেন না স্যার! বিপদে পড়বো সবাই। ওটা বনমানুষ না! ওটা একটা শয়তান। ওরা নরখাদক স্যার!
– ধুর মিয়া! তুমি কি পাগল নাকি? এই একটা অ্যাম্বুল্যান্স চাইছি। আর পাগলের প্রলাপ বকা সহকারীসহ গাড়ি দিয়েছে! তোমার নামে আমি গিয়েই কমপ্লেন করবো।
– স্যার, আপনি কমপ্লেন করুন। যা ইচ্ছে তাই করুন। কিন্তু গাড়ি থেকে নামবেন না প্লীজ।
খালিদ গাড়ি থেকে নামলেন। চারপাশে অনেক ঝোপঝাড় আর অন্ধকার! গাড়ি থেকে নামতেই তার পা এক গিঁড়া কাদায় ডুবে গেলো। তিনি মুখে এই ছিঃ ছিঃ বলে পা গাড়ির চাকার উপর রেখে পরিষ্কার করলেন। সহকারী ততক্ষণে নেমে পরেছে। সে বললো,
– স্যার, এখনো কিছু হয়নি! আপনি গাড়িতে উঠে বসুন। আপনাদের বাঁচানো আমার দায়িত্ব।
– তুমি গিয়ে বসো যাও। আমি এখুনি যাচ্ছি।
বলেই খালিদ ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালালেন। ফ্লাস অ্যাম্বুল্যান্সের ছাদের দিকে দেওয়ার সাথে সাথে উনার মোবাইল বন্ধ হয়ে গেলো। আলোও বন্ধ হয়ে গেছে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চলন্ত গাড়ি থেকে জোৎস্নার আলোয় দেখা গেছিলো। খালিদ বিরক্ত হয়ে বললেন,
– আলো আছে কার কাছে?
গাড়ির ভিতর থেকে খালিদ তার স্ত্রীর ব্যাগ বের করলেন। তার স্ত্রীর ব্যাগে লাইট রয়েছে। তিনি সেই লাইট জ্বালিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ছাদের উপর দিতেই লাইট অফ হয়ে গেলো। এবার তার ভয় হচ্ছে! কি হচ্ছে এসব?
তিনি তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময় হঠাৎ কেউ তার পিঠে প্রচন্ড জোরে চিমটি কাটলো। তিনি চিৎকার করে উঠলেন। তিনি পিঠে হাত বুলিয়ে দেখেন যে, রক্ত বের হচ্ছে।
খালিদ তাড়াতাড়ি গাড়ির উপর একটা পা রাখলেন। আর সাথে সাথে কেউ তার আরেক পা ধরে জোরে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। খালিদ জোরে চিৎকার করে উঠেন। ভিতরে থেকে তার স্ত্রী চিৎকার করে বললো,
– কি হয়েছে তোমার?
অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতর থেকে সহকারী বললো,
– ঐ শয়তানগুলো এসে গেছে! এবার আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না! কেউ না!
বলেই সে কাঁদতে লাগলো। তার কান্না দেখে ভয় পেয়ে চালকও কাঁদতে লাগলো। ভিতরে খালিদের ছোট মামাও খুব ভয় পেয়ে যায়। কেউ একজন খালিদের পা ধরে টানছে! আর খালিদ চিৎকার করছে।
হঠাৎ সবাই দেখলো যে, একটা বনমানুষের মতো ছায়া খালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পরলো। আর তাকে ছিঁড়ে ফেলতে লাগলো। খালিদের স্ত্রী এই অবস্থা দেখে জ্ঞান হারান। কিছুক্ষণের মধ্যেই খালিদকে ওই জন্তু ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। তারপর খাওয়া শুরু করে। সবার সামনেই।
মাইক্রো গাড়ির দরজা বন্ধ করা ছিলো। অ্যাম্বুল্যান্সেরও দরজা বন্ধ। চালক চিৎকার করে বলতে লাগলো,
– আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না! আমাকে বাঁচাও। বাড়িতে আমার বৌ বাচ্চা আছে!
সহকারী পাশ থেকে ধমক দিয়ে বললো,
– চুপ! না হলে আমরা সবাই মারা যাবো।
চালক চুপ হয়ে গেলো। ঐ কালো বনমানুষের মতো ছায়াটা খালিদকে পুরো খেয়ে ফেলেছে। ওখানে আর এক ফোঁটা রক্তও নেই। সবাই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
মাইক্রো চালক হঠাৎ চিৎকার করে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সবাই চুপ করতে বললো। কিন্তু মাইক্রো চালক চুপ করলো না। গাড়ি স্টার্ট হলো। চালক ফুল স্পিডে টান দেয়। একটু যেতেই একটা গাছের মোটা ডাল এসে গাড়ির উপর পরে। গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। চালক ভয়ে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়াতে লাগলো। একটু যেতেই বনমানুষের মতো অনেকগুলো ছায়া তার উপর ঝাঁপিয়ে পরলো। আর বিশ্রী শব্দ করতে করতে তাকেও ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে খাওয়া শুরু করলো।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প