বাড়িতে শুধু বলি ছেলেটা সব সত্য স্বীকার করেছে। তাই ধাক্কা না সামলাতে পেরে জ্ঞান হারায়।
আমি হাসপাতালে পৌঁছে যাই। ছায়ার রুমে প্রবেশের সাথে সাথেই কেউএকজন আমার গাল দুটা লাল করে দিল।
চড়টা এতই জোরে লেগেছে যে তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাই। আমি পড়ে গিয়েই ভাবতে থাকি কে আমাকে মারতে পারে?
এমন সম্পর্ক তো কারো সাথে এখানের নেই। সিরিয়াস অবস্থার কথা বলে আমাকে ডেকে আনলো। আর উল্টো আমারই সিরিয়াস অবস্থা করে দিল।
তবে এটা তো সেই হারামিটা নয় আবার? মনে মনে চিন্তা করি।
উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতেই আবারও গালে আরেকটা চড় পড়ে। এইবার সাথে একটি ছেলের কন্ঠও ভেসে আসছে।
শালা এখানে এসেছিস একবারও বলার প্রয়োজন মনে করলি না? সেই তো চার বছর আগে দেবদাস হয়ে একা থাকা শুরু করলি। আর আমাদের বন্ধুত্বের কথা তো তুই ভুলেই গেছিস। (ছেলেটি)
কথাটা শুনা মাত্রই বুঝে গেলাম এ আর কেউ নয় বরং রাকিব। কারণ এভাবে চড় শুধু আমাকে ওই মারতো। আর যেহেতু বন্ধুত্বের কথা তাহলে শতভাগ নিশ্চিত এখন।
ছায়া ছেড়ে যাওয়ার পর নিজেকে একা থাকতেই শিখেছি। একা একাই ছিলাম। যদিও এমনটা না হলেও পারতো। কিন্তু নিজের জেদের কাছে নিজের মন সেদিন হার মেনেছিল।
মারছিস ভালো কথা? তবে এত জোরে মারার কি আছে? (আমি)
ওরের বাবা!! বাবুটা ব্যাথা পাইছে। আসো একটু আদর করে দেই। (রাকিব)
বলেই আরো একটা বসিয়ে দিল। আমি যতটা অন্যায় করেছি তার কাছে এই আঘাতগুলো হয়তো অল্পই। কারণ রাকিব ও আমি ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি।
আর সেই আমিই শুধু নিজেকে কষ্ট দিতে গিয়ে সাথে আরো অনেককে কষ্ট দিয়েছি। তাইতো আজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মারটা সহ্য করছি।
বিয়ে করলি? বাচ্চার বাবাও হয়ে গেলি। জানালি না? ভাগ্যিস আমার নেটওয়ার্ক এখানে ছিল নাহলে কিছুই জানতে পারতাম না। (রাকিব)
এক মিনিট এক মিনিট!!! বিয়ে করেছি? আমার বাচ্চাও হয়েছে? মজা নিচ্ছিস? (আমি)
ওমা মজা নেওয়ার কি আছ? ছায়া তর বউ না? ছায়ার সন্তান তর সন্তান না? ওহহহ এখন নিজে আবারও সব লোকাতে চাচ্ছিস? (রাকিব)
দাঁড়া দাঁড়া!! কে বললো ছায়া আমার বউ? (আমি)
দেখতো এই ডাক্তারকে চিন্তে পারিস কিনা? (রাকিব)
সেখানে উপস্থিত একজন মেয়ে ডাক্তারকে দেখিয়ে বললো। তার চোখগুলো আমার কাছে খুবই পরিচিত কিন্তু মনে করতে পারতেছি না।
কিছুক্ষণ ভেবে তারপর জবাব দিলাম,
কে রে? তর কোন আত্মীয় নাকি? (আমি)
ভাইয়া দেখছিস বলছিলাম আমার কথা উনার মনে নেই। তুই না বাজি ধরেছিলি। এখন আমার টাকা দে। (মেয়েটি)
করুন ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,
তুই সত্যিই চিনতে পারতেছিস না? (রাকিব)
কেন জানি না তার আওয়াজটা আমার পরিচিত লাগছে। তাও যন মনে করতে পারতেছি না। খুবই কাছের একজন ছিল হয়তো।
হঠাৎই মনে পড়ে যায়। মুখে হাসি অজান্তেই ফুটে উঠে। আর অস্পষ্ট ভাবে নামটা উচ্চারণ হয়ে যায়।
মুমু….. (আমি)
নামটা বলার সাথে সাথেই মুমুর মুখে একটা হাসি ফুটে। আর বাজি জেতার খুশিতে রাকিব উরাধুরা নাচতে থাকে। তবে মূহুর্তেই মুমু ছায়ার দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়ে যায়।
আরেহ মুমু? প্রথম দিন থেকেই তোমার চোখগুলো চেনা চেনা লাগতেছিলো। তবে ছোটবেলার সেই মুমু এত সুন্দর ও স্মার্ট হয়ে গেছে কখনো কল্পনাতেই আসেনি। (আমি)
হ্যা আর কত কি বলবেন? আমি তো প্রথম দিনই চিনেছিলাম। তবে দেখতে চাইছিলাম আমার কথা আপনার মনে আছে কিনা? বাই দ্যা ওয়ে কনগ্রেচুলেশন আপনার কন্যা সন্তানের জন্য। (মুমু)
মুমু ও রাকিব আমরা বাইরে গিয়ে কথা বলতে পারি? বাইরে কোথায় নিরব পরিবেশে? (আমি)
চলেন আমার কেবিনে বসে কথা বলি। (মুমু)
সবকথার মাঝেও এক জোড়া চোখ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তার মনে কিছু প্রশ্নের ঢেউ চলছে। সেও কিছু বলতে চাচ্ছে হয়তো!!
তবে সেদিকে খেয়াল না করে রাকিব ও মুমুর সাথে কথা বলতে চলে গেলাম। কেবিনে যাওয়ার পর।
কি বলবেন? যার জন্য নিরব পরিবেশ প্রয়োজন? (মুমু)
আপনি? এতটাই পর করে দিলে এখন!! যাই হউক সময়ের সাথে মানুষ পরিবর্তন হয় শুনেছিলাম আজ দেখেও নিলাম। তাহলে তুমিই রাকিবকে বলেছো আমার কথা। আর এই বিয়ে বাচ্চার কথা? (আমি)
যা সত্যি ততটুকুই তো বলেছি। কোন ভুল বলেছি কি? (মুমু)
নাহ্!! তুমি ভুল বলোনি সবই সঠিক বলেছো। তবে সেটা শুধু স্বপ্নে আকা সত্যিটা। বাস্তব হলো সে এখন অন্য কারো স্ত্রী ও সন্তানের মা। (আমি)
মানে কি বলতে চাচ্ছিস? তাহলে তুই ওকে নিয়ে আসলি? সব কিছু ব্যবস্থা করে দিলি এসব? (রাকিব)
অদ্ভুত? একটা মানুষ একটা মানুষের সাহায্য করতে পারে না? আমিও সেটাই করেছি মনে কর (আমি)
শুন সে চলে যাওয়ার পর থেকেই একা ছিলাম। আর এখানে আমার জন্য পাত্রি দেখতে আসে। সেখানেই স্টেশনে তার সাথে দেখা। তার স্বামীর সাথে হয়তো থাকে না কোন সমস্যার কারণে। তারপর সবটাই খুলে বললাম ওদের৷
বড়ই অদ্ভুত!! তবে রহস্য থেকেও যেন আবার নেই। (মুমু)
সেটাই। (আমি)
তবুও ওর সাথে তর একবার হলেও সরাসরি কথা বলা দরকার। দেখ ওর মুখ থেকে সত্যটা কতটুকু জানা যায়। শুন তর মুখে তর জীবনের কোন গল্প বললে তুই নায়ক আর ভিলেন তর প্রাক্তন। আবার সেই একই গল্প তার কাছে শুনতে চাইলে তুই ভিলেন সে নায়িকা। তাই তর ওর কথাগুলো শুনতে হবে। (রাকিব)
হুম শুনবো। কিন্তু ওর অবস্থাটা একটু ভালো হউক তারপর। তাছাড়া আজ রাতেই ওর মুখের কথাগুলো জানবো। যখন ওর বাবা চলে যাবে। (আমি)
সেটাই ভালো। তবে ভুলটা আমারও ছিল। না জেনেই যা চোখে দেখেছি সেটাই বলেছি। আসলে যা দেখা যায় তা সবসময় হয় না। (মুমু)
সমস্যা নেই। তোমার সাথে তো আজ প্রায়ই ১২বছর বা ১৪ বছর পর দেখা হলো। তোমার জীবন সম্পর্কেও জানবো চিন্তা কর না। তবে তোমার স্বামী কথা তো কিছুই বললে না? (আমি)
আমার কথাটা শুনে সে হাসতে লাগলো। তার এই অদ্ভুত হাসি দেখে মোটেও অবাক হয়নি। কারণ এখনো সেই আগের মতোই হাসতে জানে সেটা দেখে বিস্মিত হয়েছি।
আমি এখনো বিয়ে করিনি। কারো অপেক্ষায় আছি। রাকিব ভাইয়ে কি খবর? (মুমু)
ওমা তোমরা এতদিন যোগাযোগ করেছো আর এটা জানো না? ও তো আমার খালাতো বোন ইশরাতের উপর লাইন মারছে। শীঘ্রই বিয়ের প্রস্তাব দিবে শুনলাম। (আমি)
আপনা…..(মুমু)
আর কিছু বলতে দেয়নি ওকে। আমিই বললাম,
আর একবার আপনি বললে আর কথাই বলবো না। উঠে চলে যাব এখান থেকে। (আমি)
ওকে বাবা সরি সরি। আর বলবো না। কিন্তু তোমার বোনের সাথে লাইন মারে যেনেও চুপ থাকার কারণ? (মুমু)
দেখো ও আমার বন্ধু। ওরা যখন একে অপরের প্রতি দূর্বল হতে থাকে। তখন ও ইশরাতের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কারণ ইশরাত আমার বোন। আর ও জানে বিষয়টা এগিয়ে নিয়ে গেলে হয়তো বন্ধুত্ব নষ্ট হবে। ও যদি খারাপ হতো তাহলে এত দিন হাত পা ভেঙে দিতাম। (আমি)
হুম সেটাও কথা। (মুমু)
তারপর পুরাতন সবার সাথে অনেকক্ষণই আড্ডা দেই। দিতে দিতে বিকেল হয়ে যায়। ছায়া মোটামুটি সুস্থ তাই আমি ওর সাথে কথা বলার সিধান্ত নেই।
আর মুমুর সাথে মুমুদের বাসায় যায় রাকিব। আমি ছায়ার কাছে যাওয়ার জন্য হাঁটতে থাকি।
মুমু ও রাকিব দু’জনেই আমার ছোটবেলার বন্ধু। যদিও মুমু আমাদের বয়স ও ক্লাসের দিক থেকে ছোট ছিল। তবে আমাদের তিনজনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং খুব ভালো ছিল।
ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকার সময়ই মুমুর বাবার চাকরির জন্য ওরা চলে যায়। মুমু রাকিবের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নাম্বার নিয়ে গিয়েছিল। আমারটাও ছিল।
তবে ভার্সিটি উঠে ছায়ার সাথে পরিচিয় ও সম্পর্ক শুরুর পর সবই যেন আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তাই হয়তো মুমু আমাকে আর খুঁজে পায়নি।
আর আজ এতবছর পর দেখা। কতটাই না পরিবর্তন হয়ে গেছে।
ভাবতে ভাবতে ছায়ার কেবিনে এসে যাই। ছায়া ওর সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেছে। সুন্দর লাগছে দু’জনকেই।
বাইরে থেকেই নক করে বলি,
আসবো? (আমি)
তোমার আসতে আবার অনুমতি নেওয়ার কি আছে? (ছায়া)
তুমি অন্যের স্ত্রী। তার উপর একজন মেয়ে মানুষ। আমি পুরুষ হয়ে তোমার কাছে সরাসরি এভাবে চলে আসতে পারি না। (আমি)
ওহহ!! দেখো আমার মেয়েটা কত সুন্দর হয়েছে।আমি তো ভেবেছিলাম ওর মুখ দেখতেই পারবো না।(ছায়া)
এখানে আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে এসেছি তোমার কাছে থেকে। (আমি)
কথাটা শুনে দু’জনেই নিরব হয়ে যাই।
নিরবতা ভেঙে সেই আগে বললো। হয়তো যা শুনতে চাচ্ছি তাই বলবে। শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ জেগে গেল।
কেন জানি সব সত্য হওয়ার ভয়টাই হচ্ছে। তবুও নিজেকে শক্ত করলাম। আর ও বলতে শুরু করলো,
ক্ষমা করে দিও। তোমাকে ঠকাতে চাইনি আবার হারাতেও চাইনি। কিন্তু প্রকৃতির কি লীলা খেলা? তোমাকে হারিয়েছি আবার ঠকিয়েছি। (ছায়া)
হুম। (আমি)
রাব্বির সাথে হঠাৎই পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার ধরণটাও অদ্ভুত ছিল। তবে আমার মনে তার জন্য অন্য কিছুই ছিল না। আমাদের সম্পর্কের ইতি ঘটার চার মাস আগেই তার সাথে আমার পরিচয়। (ছায়া)
এতটুকু বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আমিও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আর অস্পষ্ট ভাবে উচ্চারণ করি,
তারপর (আমি)
সে আমাদের এলাকার এক ফ্রেক্সিলোড দোকানদের বন্ধু। সে দোকানদার আবার আমার ভাই হয়। সেটা তো তুমি জানতেই। সেখান থেকে সালাম ও কথা বার্তার ফর্মালিটিস থেকেই আসতে আসতে পরিচয়। (ছায়া)
তারপর? (আমি)
তোমার সাথে আমার ঝগড়া হলে আমার খুব মন খারাপ থাকতো। তখন উনিই আমাকে সাহস ও মনজোর দিতেন। আসতে আসতে তার দিকে আকৃষ্ট হতে থাকি। (ছায়া)
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি,
তারপর? (আমি)
তুমি যখন উনাকে নিয়ে আমালে সন্দেহ করতে এবং ঝগড়া করতে তখন তোমার উপর খুব রাগ হতো। সবসময় মনে হতো তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পারো না। (ছায়া)
তারপর? (আমি)
সবকিছুই আমি উনার সাথে আলোচনা ও নিজের কষ্টটা বুঝানোর চেষ্টা করি। উনি খুব সহজেই তখন বুঝে যায়। আর তোমার বিরুদ্ধে যতটা বললে আমি তোমাকে অবিশ্বাস করবো সেও ঠিক ততটাই বলে। (ছায়া)
এইবার আর কিছুই বলি না। নিরব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।
তোমার থেকে দূরে আমি একা ছিলাম। যদিও যোগাযোগ হতো তবুও একাকিত্ব আমার পিছু ছাড়তো না। তার সাথে পরিচয় ও আমার কষ্টগুলো সহজে বুঝে আমার প্রতি তার বিশ্বাস দেখে তার সকল কথাই আমি বিশ্বাস করতে থাকি। আর তোমার থেকে দূরে যেতে থাকি। (ছায়া)
অতীতের ঘোরে যে কখন চোখে জল চলে এসেছে তা খেয়ালই করি নি। নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
তারপর? (আমি)
আমার একাকিত্ব যেন রাব্বি দূর করে দিতেছিল। যতই দিন যাচ্ছিলো তার প্রতিটা কাজ আমার ভালো লাগতে শুরু করে। আর তোমার প্রতিটা কথায় আমার রাগ হতে থাকে। আমি রাব্বির গার্লফ্রেন্ডের সাথে ওর ব্রেকআপ করিয়ে আমি সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। নিজের অজান্তেই হয়। (ছায়া)
কোন কিছুই নিজের অজান্তে হয় না। বরং স্বার্থই টেনে আনে সব কিছু। (আমি)
হতে পারে। সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার এখন আমার দু’দিক থেকে যেকোন একদিকে যেতে হবে। হয় তুমি না হয় রাব্বি? (ছায়া)
তুমিতো আমাকে বিয়ের কথা বলেছিলে? তাহলে এসব কেন হলো? (আমি)
আমি চাইনি আমার মিথ্যা নাটকে সবার চোখে খারাপ হয়ে যাই। তাই আমি রাব্বির দিকটাই বেছে নেই। নিজের স্বার্থ ও সবার চোখে নিজেকে ভালো রাখতে তোমার সাথে পালানোর নাটক করি। কিন্তু সেদিন আমি স্টেশন এ যাইনি তোমার সাথে। বরং গিয়েছিলাম রাব্বির সাথে। (ছায়া)
উঠে দাঁড়িয়ে পড়ি। আর হয়তো সহ্য করার ক্ষমতা আমার হচ্ছিলো না।
দাঁড়াও এখনি কোথায় যাচ্ছো? (ছায়া)
যা জানার ছিল তা তো জেনেই নিয়েছি। আরই বা জেনে কি করবো? (আমি)
তোমার নিজের মনের প্রশ্নগুলো করবে না? (ছায়া)
কিছু কিছু জিনিসের অপূর্ণতাই শ্রেয়। (আমি)
হয়তো!! তবে সেদিন একই ট্রেনের রাব্বির সাথে এখানে যাত্রা করেছিলাম। যাতে কখনো তুমি বুঝতেই না পারো যে আমি এখানে থাকবো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসের কাছে হেরে গিয়েছি। অনিচ্ছায় হউক বা ইচ্ছায় ঠিকই তোমার চোখের সামনে পড়ে গিয়েছি। (ছায়া)
আচ্ছা একটা কথা!! (আমি)
হুম বলো! (ছায়া)
তাহলে তোমার বাবা কেন বললো? তোমার বোন মায়া আছে? যাকে রাব্বি ধর্ষন করেছে? আর কেনই বা তুমি তোমার বাবার সাথে মিথ্যে বলবে? (আমি)
উনি আমার চাচা। বাবার জমজ ভাই। বাবা বছর দুয়েক আগেই মারা গিয়েছে। তবে উনাকে বাবা সবটাই বলে গিয়েছে। আর উনার মেয়ের নামই মায়া। যাকে রাব্বি নামের একটি ছেলেই ধর্ষন করে। ছেলেটির শাস্তি এখনো হচ্ছে। তবে বাবা মারা যাওয়ার উনি অদ্ভুত হয়ে গিয়েছে। তাদের দু’জনের জীবনের ঘটনা একত্রে করেই বলে। (ছায়া)
ওহহহ!! (আমি)
অদ্ভুত তাই না? তবে এটাই সত্যি। জমজ মানুষের ক্ষেত্রে অনেকটা সময় এরকম হয়। তবে উনি মিথ্যে বলেননি বরং দুটো ঘটনাকে একত্রে করে একটি বানিয়ে বলেছেন। (ছায়া)
ওহহ আচ্ছা। (আমি)
আর আমার এই অবস্থা হয়তো আমারই পাপের ফল। সে আমার রুপকেই ভালোবেসেছিল। কাজের চাপে যখন আমার রুপ নষ্ট হতে থাকে তার সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে থাকে। এ নিয়ে ঝগড়া অশান্তি তো লেগেই থাকতো। এক পর্যায়ে সে আমায় পতিতা পল্লীতে বিক্রি করেই দিতে চেয়েছিল। পুলিশের কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলাম। তাইতো স্টেশনই ছিল আমার শেষ ভরসা। (ছায়া)
তারপর দু’জনেই আবারও নিরব হয়ে যাই। নিরবতা বজায় থাকে আমাদের মাঝে অনেকক্ষণ। তবে এইবার নিরবতা ভেঙে আমিই বলি,
কালই চলে যাচ্ছি এখান থেকে। ভালো থেকো। নিজের এবং স্বামী সন্তানের খেয়াল রেখো। (আমি)
স্বামী? সে স্বামী হওয়ার যোগ্য নয়!! (ছায়া)
আজ তোমার মুখে ভুলটা তার। এখানে তোমার কম ভুল নেই। সে যদি ভুল বুঝতে পেরে সবটা ঠিক করতে পারে তাহলে তুমি কেন নয়? (আমি)
সে কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। কারণ কেবিনে নিপা,ছায়ার বাবা ও রাব্বি প্রবেশ করে। তাদের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
আমিও মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে আসি।
জানি না সে হাসিটার মানেটা বুঝতে পেরেছে কিনা? তাকে আজও যে ভালোবাসি না তা নয়!!! বরং তাকে আজ ভালোবেসেও ভালোবাসি না।
আমি তোমার হাসির মানেটা বুঝতে পেরেছি। এই হাসিটা যে চার বছর আগের সেই হাসিটা। যেটা দিয়ে তুমি আমাকে বুঝাতে আমার কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারো না। তুমি থাকতে আমাকে কষ্ট পেতেও দিবে না। কিভাবে তুমি অসম্ভব কে সম্ভব কর জানা নেই? এর আগেও করেছো তবে কখনো উত্তর দেওনি। তাই আজ আর জিজ্ঞেস করলাম না। তুমিও ভালো থেকো প্রিয়। বলতে চেয়েছিলাম তোমায় তবে বলতে পারলাম না। (ছায়া)
কথাগুলো মনের গহীনে বলেই এক ফোঁটা চোখের জল ফেললো।
যখন বাড়িতে ফিরি সবটা যেন আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। সবাই হাসিখুশি ভাবে রয়েছে। অবাক করার বিষয় আজ সে মেয়েটাও হাসছে যার কিনা নিরাশ হওয়ার কথা।
সবার সাথে আমিও আনন্দে মেতে উঠলাম। রাতের বেলা খাবারের পর লিলু আমাকে ছাঁদে ডাকলো। জানি না কেন? তবে আমিও গেলাম।
আমি সব শুনেছি পরিবারের লোকের কাছে। সে ছেলেটা ঠিক নয় সেটা প্রমাণ করার জন্যই আপনি এমনটা করেছেন। আজ প্রথমবার মনে হচ্ছে কাউকে পেলে নিজের জীবনটা স্বার্থক হবে। আর সেই মানুষটা যে আপনি? (লিলু)
আমি মুচকি হাসি। তবে শব্দ করি না।
হাসছেন যে? (লিলু)
আপনি সুন্দর মায়াবী তবে আমি আপনাকে কখনো নিজের অনুভুতিতে অনুভব করতে পারিনি। তাই আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। (আমি)
একবার বিয়ে হয়ে গেলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। (লিলু)
আমি এখন বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি।শরীরটা অনেক দূর্বল। যদি কিছু মনে না করতেন আমি ঘুমাতে যেতে পারি? (আমি)
সে আর আটকায় নি। ভাবে তার প্রতি রাগ করে কথাগুলো বলতেছি। তাই মন খারাপ করে হ্যা সম্মতি দেয়।
আপনি হয়তো আজ না করেছেন? তবে একদিন হ্যা করবেনই। আমি সে দিনটার অপেক্ষায় থাকবো। আমি জানি আপনার জীবনে কেউ নেই। তাইতো কেউ হয়ে উঠতে চাই। কাল সবার সামনেই আপনি হ্যা বলবেন। (লিলু)
মনে মনে কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে যায়।
বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই চোখদুটো বন্ধ হয়ে এসেছিল। সারাদিনের দখল যেন অনেকটাই দূর্বল করে তুলেছে।
আবার কাল যখন চলে যাওয়ার কথা বলবো তখন হয়তো আরো এক মানসিক দখল যাবে। অদ্ভুত জীবনটা!!
পরের দিন সকালে যখন সবাই নাস্তা করতেছিলাম তখন চলে যাওয়ার প্রসঙ্গটা তুলি।এমন কথায় সবাই অবাক হয়। লিলুও সেই তালিকার বাইরে নয়।
সে ভেবেছিলো হয়তো কাল রাতে মজার ছলে বলে দিয়েছি। তবে এতটা সিরিয়াসলি বলেছি সেটা আর বুঝতে পারেনি।
আমার কাছে সবাই নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছে। তবে আজ কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। তাইতো চুপচাপ তাদের প্রশ্নগুলো শুনেও না শুনার বান করে বসে আছি।
এত কথা বলার পরও যখন উত্তর পায় না তখন তারা ঠিকই বুঝে যায়,আর কথা বাড়িয়ে লাভ হবে না। আমিও নাস্তা শেষ করে রাকিব, মুমুদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ি।
মুমুর বাড়ি যাওয়ার কথা দুপুরে তবে আমি একটু আগেই যাচ্ছি। জানি না কেন যেন মুমুর প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করছি। আমি সেখানে পৌঁছে দেখি রাকিব ও সেখানে রয়েছে।
আমাকে দেখে দু’জনেই ভূত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছে।
কিরে এভাবে এত তাড়াতাড়ি? (রাকিব)
কেন এসে কি বিপদে ফেললাম নাকি? (আমি)
আমার প্রশ্নের উত্তর শুনেও তারা শুনেনি। একে অপরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো।
কিরে কি ইশারা করছিস? কি লোকাতে চাচ্ছিস? (আমি)
চল আমার সাথে ঐদিকটায়। (রাকিব)
আর কিছু বলতে না দিয়ে টানতে টানতে বাড়ির পশ্চিম দিকে নিয়ে আসে। আর মুমু বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
এখানে নিয়ে এসে কি সব আজগুবি কথাবার্তা বলছে আমার মাথায় ঢুকছে না। তবে মুমুর এভাবে চলে যাওয়া আমাকে খুব ভাবাচ্ছে।
হঠাৎই নজর গেল ঘরের জানালা দিয়ে ভেতরটায়। হয়তো অবাক নয় বরং শকড হওয়ার মতোই কিছু ছিল।
তার কিছুক্ষণ পর মুমু চলে আসে। দুপুর পর্যন্ত সবাই জমিয়ে আড্ডা দেই। তারপর দুপুর ৪টায় ট্রেনে যাওয়ার পালা আসে। সবাইকে নিয়ে স্টেশনে চলে আসি।
অপরদিকে লিলুর পরিবার ও আমার পরিবারও চলে আসে। ট্রেন ছাড়ার ঠিক মিনিট পাঁচেক আগে হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে এক পা দু পা করে এগিয়ে যাচ্ছে লিলু।
তবে সে পৌঁছানোর আগেই মাহিন মুমুর সামনে হাঁটু ঘেরে বসে পড়ে,
এই ছন্নছাড়া জীবনের একজন হবে কি? ভালোবেসে এই অমানুষটাকে মানুষকে করবে কি? হাসতে শিখাবে কি নতুন করে আবার? হবে কি আমার হাসি কারণ? রোজ সকালে চোখ খুলে তোমাকে দেখতে চায় এ দুটো চোখ। সকালে ভিজে চুলে যখন চিরুনি ধোয়াবে তখন তোমার চুলের গ্রাণ নেওয়ার সুযোগটা কি দিবে? ভালোবেসে সারাটা জীবন পাশে চলতে চাই। অধিকারটা কি দিবে? রাগ অভিমান করার অধিকারটা কি দিবে? ভালোবাসি প্রিয়। অনেক বেশি ভালোবাসি। চলোনা দু’জন নীল আকাশে ভাসি। বিয়ে করবে আমায়? (আমি)
মুমু অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে। সে হয়তো এটা কল্পনাও করতে পারেনি। তবে এমন প্রপোজ দেখে রাকিবও বলতেছিলো এই সুযোগটা আর মিস করিছ না।
স্টেশনে থাকা প্রত্যেকটা ব্যক্তির নজরে ছিলাম। হ্যা করবে জানতাম। তবে না করতেও পারে বিষয়টা মনে ভয় নিয়ে এসেছিলো। তবুও বলে দিয়েছি। আর সে হ্যা করেছে।
পিছনে ফিরে লিলুকে দেখতে পাই। সে একগুচ্ছ গোলাপ এগিয়ে দিয়ে শুভকামনা জানায়। চোখের জলগুলো আড়ালেই রেখে দেয়।
সে ট্রেনেই আমরা সকলেই ফিরে আসি।
লিলু হয়তো সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলেছে। তবে সে মাহিনের হাসিতেই নিজের সুখটা দেখে নিয়েছে। তাই সবটা হাসি খুশি মেনে নিয়ে শুভ কামনা জানিয়েছে।
মুমুর বাড়িতে জানালা দিয়ে শুধু মাহিন তার নিজের ছবিগুলোই দেখতে পেয়েছে। মুমুর খাটে মাথার উপরে মাহিনের ইয়া বড় একটি ছবি। যার মধ্যে লিখা ভালোবাসি প্রিয়। এমন করে কেউ ভালোবাসতে জানে সেটাও অজানা ছিল। তাইতো হারাতে চায়নি।বরং ভালোবেসে আঁকড়ে নিতে চেয়েছে। সে ভালোবাসে না এরকমও নয় বরং তার মনের অনুভুতি গুলোও জেগে উঠেছে।
ছুপছুপ ট্রেন চলছে। ট্রেনের সাথে সাথে নতুন একটি জীবনের সূচনাও চলছে।