দেখ ফারিয়া আমার এখন এসব করার মুড নেই।
ফারিয়া কপাল কুঁচকে তাকালো আরাফের দিকে। অতঃপর তার কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
–ছিঃ, আমি মোটেও ওসব করতে চাচ্ছি না। দেখ এই অবস্থায় তোমার স্ট্রেস নেওয়া একদম ঠিক না। তাই তোমাকে রিল্যাক্স করতে হেল্প করছি। এতো স্ট্রেস নিলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তাই এখন থেকে নো স্ট্রেস। তুমি এখন আরামে শুয়ে থাকো। আর যা লাগবে আমাকে বলবে হ্যাঁ? একদম বেশি চলাফেরা করবে না।
বিস্ময় যেন কাটছেই না আরাফের। এটা কি ওরই বউ? যেকিনা আজ পর্যন্ত ওর ঘড়ি টাও কখনো এগিয়ে দেয়নি। আর আজ এতো সেবা করছে? বিষয় টা খুশির হলেও বেচারা খুশি হতে পারছে না। নিজেকে কেমন সাকার্সের জোকার মনে হচ্ছে ওর। ভাবনায় বিভোর আরাফের মুখে হঠাৎ একের পর এক আপেলের টুকরো ঢুকিয়ে দিতে লাগলো ফারিয়া। আরাফ চোখ বড়বড় করে বললো।
–আরে কি করছ? এই অসময়ে ফল কেন দিচ্ছ?
–আরে এখন থেকে সময় অসময় নেই। একটু পর পরই কিছু না কিছু খেতে হবে তোমাকে। বেশি বেশি খেলে হেল্থি হবে। নাও নাও খাও। লক্ষী ছেলের মতো সবগুলো শেষ করবে কিন্তু।
আরাফের আকুতি মিনুতি শুনেও রহম করলোনা তার নির্দয় বউ। সবগুলো ফল তার পেটে চালান করে তবেই থামলো। এ কেমন অবিচার??
__
সকালে ঘুম থেকে উঠে আরাফ চোখ মেলে তাকাতেই চারপাশে বাচ্চার ছড়াছড়ি। রুমের দেয়াল কোথাও এক ইঞ্চিও ফাঁক নেই। সব বাচ্চাদের ছবি দিয়ে ভরে গেছে।আরাফ ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো।
–এসব কি?
–কি আবার বাচ্চাদের ছবি। লোকে বলে প্রেগন্যান্সির সময় সুন্দর সুন্দর ছবি দেখলে বাচ্চাও সুন্দর হয়। আমি চাই আমাদের বাচ্চাও যেন এমন কিউট হয়।
কথা বলতে বলতে ফারিয়া আবারও ট্রে ভর্তি খাবার এনে বসলো আরাফের সামনে। আরাফ কিছু বলার আগেই আস্ত সিদ্ধ ডিমটা ওর মুখে পুরে দিলো। ঠেসেঠুসে সব খাবার আরাফের মাঝে আপলোড করলো। তারপর আরাফের পেটে হাত বুলিয়ে হাসিমুখে বললো।
–বাবুর পেট ভরেছে তো? আম্মু তোমাকে কখনো খালি পেটে রাখবে না।
তারপর আবার আরাফের দিকে তাকিয়ে বললো।
–আচ্ছা একটা কথা। তোমার বাচ্চা হলে তোমাকে কি বলে ডাকবে? মা না বাবা?
ফারিয়ার কথায় আরাফও ভাবান্তর হলো। আসলেই তো,ওর বাচ্চা হলে ওকে কি বলে ডাকবে? ধ্যাৎ কি ভাবছি আমি এসব? আমি সত্যি পাগল হয়ে যাবো।
অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল আরাফ। ফারিয়া এসে তা দেখে বলে উঠলো।
–এই তুমি রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?
–কোথায় আবার? রোজ যেখানে যাই সেখানে। অফিস যাচ্ছি আর কোথায়।
–এই না না। গর্ভবতা অবস্থায় অফিস জার্নি একদম করা যাবে না।
–গর্ভবতা??
–হ্যাঁ গর্ভবতা, গর্ভবতীর মেল ভার্সন।
–হোয়াট রাবিশ? আর অফিস না গেলে আমার চাকরি থাকবে?
–কেন থাকবেনা? আরে সব কর্মচারীরই তো মেটারনিটির ছুটি পায়। তুমি কেন পাবেনা? দরকার পড়লে আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো তোমার অফিসে।
বেচারা আরাফের এবার ভয়ে গলা শুঁকিয়ে আসছে। এখন কি এই পাগলি অফিসেও সবাইকে এই ব্রেকিং নিউজ দিয়ে দিবে? শেষ, আমার মান ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে।সবাই হাসাহাসি করবে আমাকে নিয়ে। রাতারাতি জাতির ট্রোল হয়ে যাবো আমি। এ কেমন বিচার????
রাতে ফারিয়ার সাথে একটু ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো আরাফ। তবে ফারিয়া সোজা রেড এলার্ট জারি করে বললো।
–এই একদম না। প্রেগন্যান্সির সময় এগুলো বন্ধ থাকবে। নাহলে প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা হতে পারে।
বেচারা আবারও ভাবলো, এ কেমন বিচার??
পরদিন বিকেল বেলা হঠাৎ আরাফের সব বন্ধুরা একসাথে হুড়মুড় করে ঠুকে পড়লো আরাফদের রুমে। এসেই ওরা দুষ্টু হেসে গাইতে লাগলো।
♬ বাধাইয়া দিয়া তেনু বাধাইয়া জি
♬ বাধাইয়া তেরে ওতেনু তেরে পতেনু
♬ পার পতেনু বাধাইয়া জি
এই সয়,তান গুলোর ভঙ্গিমা দেখে আরাফ বুঝে গেল ও শেষ। নিশ্চয় এরা এই সু খবর শুনেই এসেছে। এখন আর কেউ বাঁচাতে পারবে না ওকে। কই পালাই এখন? মাটির ভেতর ঢুকে যাবো নাকি? কিন্তু আরাফের বন্ধুরা সেই সুযোগ দিলোনা ওকে। সবাই ওকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে একেকজন একেক টিপ্পনী করতে লাগলো। একজন বললো।
–ইয়ার কেয়া বাত, কেয়া বাত, কেয়া বাত। কি দিলি, উই আর জাস্ট অবাক। ইয়ার কেমনে করলি এই কামাল? এটার কি আলাদা কোন প্রসেস আছে ? আমাদেরও একটু কনা? আমরাও ট্রাই করমু।
আরেকজন বললো,
–ইয়ার ওসব তো ঠিক আছে। বাচ্চা নাহয় কোনভাবে আপলোড করছস। কিন্তু ডাউনলোড ক্যামনে করবি? আই মিন বাইর করবি কোন জাইগা দিয়ে?
আরেকজন বললো,
–আরে ওটাও নাহয় কোনভাবে করলি। কিন্তু বাচ্চারে খাওয়াবি কি? তুই হুনস নাই বাচ্চার জন্য মায়ের দুধই সবচেয়ে আদর্শ খাবার। তো তুই ক্যামনে সেই আদর্শ খাবার দিবি?
আরেকজন বললো,
–আরে বাচ্চা যখন আইছে ওইটাও সময়মত আইসা যাইবো। টেনশন করিস না।
এভাবে সবগুলো নানান বিবৃতি পরিবেশন করতে লাগলো। আরাফ বরাবরের মতোই শুধু ভাবছে, এ কেমন বিচার????
তিনদিন পর হঠাৎ একদিন রাতে আরাফের প্রচন্ড পেট ব্যাথা শুরু হলো। আরাফ ফারিয়াকে ডাক দিয়ে বললো।
–ফারিয়া উঠো আমার ডেলিভারি পেইন শুরু হয়ে গেছে।
ফারিয়া ধড়ফড়িয়ে উঠে বললো।
–কি বলছ, মাত্র এই কয়দিনে কারও ডেলিভারি হয় নাকি ?? না না হতেও পারে। তুমি পুরুষ মানুষ। এইজন্য হয়তো তোমার ক্ষেত্রে অন্যরকমও হতে পারে। চলো চলো ডাক্তারের কাছে যাই।
___
চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিস্কার করলো আরাফ। সামনে তাকিয়ে দেখলো ফারিয়া মুখ ছোট করে বসে আছে। আরাফ জিজ্ঞেস করলো।
–কি হয়েছে???
–হলোই তো না।
–মানে???
তখন সেই ডক্টর এসে বললো।
–মানে আমি বলছি মিঃ আরাফ। উই আর ভেরি সরি। আসলে এখানে একটা গোলমাল হয়েছে।
–কি গোলমাল??
ডক্টর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিস্টারকে দেখিয়ে বললো।
–সিস্টার আপনাদের সব খুলে বলবে।
সিস্টার কিছুটা ভীতুভাবে বললো।
–আই অ্যাম ভেরি সরি স্যার। আসলে সেদিন যখন আপনি স্যাম্পল দিয়ে চলে গেলেন। স্যাম্পল নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায় সেগুলো। আমি এখানে নতুন চাকরি নিয়েছি। তাই অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে আমি বোকামি করে নিজের স্যাম্পল দিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম।
ডক্টর বললো।
–হ্যাঁ মিঃ আরাফ। আর একারণেই এই কনফিউশান ক্রিয়েট হয়েছে। আসলে আপনি কখনো প্রেগন্যান্ট ছিলেন না। আপনার ফুড পয়জনিং হয়েছিল। তাই শরীর খারাপ করছিল।
–সত্যিই?? তারমানে আমি প্রেগন্যান্ট না??
—না।
এই প্রথম কেউ বাচ্চা না হওয়ায় এতো খুশি হলো। আরাফ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। তবে ফারিয়ার মন খারাপ। তাদের বাচ্চা আসার আগেই হাওয়া হয়ে গেল।
___
তিনমাস পর,
আবারও প্রেগন্যান্ট। না না এবার আরাফ না। ফারিয়া প্রেগন্যান্ট। আর তার জন্য আইসক্রিম কিনতে এই মধ্যরাতে বের হতে হয়েছে আরাফকে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকেই তার মুড সুইং আরাফের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। জ্বালিয়ে মেরে ফেলে একেবারে। এরচেয়ে তো নিজের প্রেগন্যান্সিই বোধহয় ভালো ছিলো।