অবশেষে তারা তাদের জোর দিয়ে আমার চাদর টা টেনে নিল।
,আমি আমার হাত দিয়ে মুখ লুকানোর চেস্টা করলাম। কিন্তু তাদের জেদের কাছে হেরে গেলাম।
,
ইতি মধ্যে একটা শোরগোল লেগে গেছে। বাবা চাচারা সবাই জড়ো হয়েছে।
,
আমার হাত দূটো কেউ একজন টেনে ধরছে। কেউ আমার মুখে লাইট মারছে।।।৷
,
অতঃপর কেউ একজন চিৎকার করে বলল নিলয় তুই। ,
,
তারপর কেউ একজন আমাকে উঠিয়ে বসাল। আমার মাথাটা ফেটে গেছে। কেউ একজন বলছে এই ডাক্তার কে ফোন কর।।
,
তার পর আমাকে কেউ তার কাধে তুলে নিয়ে আমার চাচার বাড়ির আজ্ঞিনায় নিয়ে গেল।।।
আমাকে একটা চেয়ারে বসায় দিল। আমার শরিলে খুব ব্যথা হচ্ছে। আমি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতেছিলাম।।।
,
জীবনে এরকম মাইর খাই নাই।।। এ ব্যথা আমি সয্য করতে পারতেছি না।। খুব কষ্ট হচ্ছে।।। ,
,
ইতিমধ্যে লোকজনের অনেক ভির হয়েছে।। কেউ তাদের বাড়ি যেতে বলছে।
,
আমি বুঝতে পারছি না কিছুই, কি হচ্ছে এখানে।। আমার চোখ দুটো ফুলে গেছে।। সব কিছু যেন ঝাপসা ঝাপসা দেখাচ্ছে।
যাদের দেখার জন্য বাড়িতে উকি দিয়েছিলাম তারা সবাই আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।। অথচ আমি তাদের ভালো ভাবে দেখা তো দুরের কথা, আমার হাতটাও আমি ভালো ভাবে দেখতে পারছি না। আমি কথা বলতে পারছিলাম না খুব কষ্ট হচ্ছে।আমার চোখে পানি নেই, জীবনে অনেক কেদেছি,,, আর কত কাঁদব।।
,
কেউ একজন আমাকে পানি এনে দিল। আমার খেতে কষ্ট হচ্ছে, ঠোঁট কাটা গেছে।। তার পরেও খেয়ে নিলাম।
,
ইতি মধ্যে ডাক্তার চলে এসেছে।। ডাক্তার এসে আমাকে স্যাভলন দিয়ে রক্ত ধুয়ে,,, ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিল।।
,
ভুলতো আমিই করেছিলাম।। মানুষ জীবনে ভুল করে কিছু শিক্ষা নেয়।। আর আমি বার বার ভুল করেই যাই করেই যাই।।
,
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।। নিজেকে আজ সত্যিই চোর মনে হচ্ছে।। এখন আর মাথা নিচু করে রাখা ছাড়া আর কি বা করার আছে।।। আজ কিছু বলার নেই।।। কি বা বলব।।। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
,
কেউ কিছু জিজ্ঞাসাও করছে না।। এতদিন কোথায় ছিলি, কিভাবে ছিলি।।।
,
হয়ত আব্বু সামনে দাড়িয়ে আছে বলে কেউ বলার সাহস পাচ্ছে না। আব্বুকে সবাই ভয় করে।।।
,
এক সময় আব্বু বলে উঠলঃ
— তুই কেন এসেছিস এখানে।।??
–আমি চুপ করে বসে আছি??
— আব্বু একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল, আমার কথার উত্তর দে।
কেন এসছিস এখানে??
— ভয় পেয়ে বলে দিলাম,,, তোমাদের দেখতে এসেছি।।।।
— আমাদের দেখতে আসবি কেন। তোকে বলছি না আর আমার সামনে মুখ দেখাবি না।।।
— আমি চুপ করে বসে আছি।।।
,
ও পাশ থেকে আমার মা আরো কেউ কেউ বলে উঠল ওকে এবার অন্তত ক্ষমা করে দিন।। সে আর খারাপ কাজ করবে না।
— ওর পাপের ক্ষমা হয় না,আর ও এখানে থাকবে না। কাল সকালে যেন আমি তাকে আর এখানে না দেখি। যদি দেখি তাহলে আর আমাকে আর কেউ দেখতে পারবে না।। যত তারাতাড়ি সম্ভব ওকে বিদায় করার চেস্টা করব।। ওর মুখ দেখতেও আমার ইচ্ছা করছে না।
,
কথাটা বলেই আব্বু বাসায় চলে গেল। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। আজ আমার কান্না পাচ্ছে না।।
,
অবহেলা সইতে সইতে মনটা আজ পাথর হয়ে গেছে।।।
,
এখনও চেয়ারে বসে আছি, সবাই আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। মা আমার পাশে বসে কান্না করছে।।
,
কিছুক্ষণ থাকার পর, আমার ভাই গুলো আমাকে কোলে করে তাদের একটা ঘরে নিয়ে গেল। আব্বু আবার ফিরে এসে আমার আম্মুকেও নিয়ে গেল।। সবাই শুধু আমাকে একা করে চলে যায়।
,
রাইশা আমার জন্ন্য ভাত আর তরকারি নিয়ে ঘরে এল। আমি আমার ঝাপসা ঝাপসা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছি। পাগলিটা আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে।।।
ভাত আর তরকারি দিয়ে পাগলিটা চলে গেল। একটা কথাও বলল না, এখনো আমাকে অবিশ্বাস করে আছে। আমার সেই প্রিয় ভাবিটাকে দেখতে পেলাম না। হয়ত বাবার বাড়ি গেছে।
,
আমার ছোট ভাইটা এসে আমাকে খাবার গুলো খেতে বলল।। কেউ আর খাইয়েও দিলো না।
আমার হাতে ব্যান্ডেজ, খেতে কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও কিছু খেয়ে ছেড়ে দিলাম। আমি বিছানায় শুয়ে আছি।।।
,
আমার ভাই আমাকে ঘুমাতে বলল,, আমি ঘুমের ভান করে চোখ বন্ধ করে আছি।
,সেও আমার পাশে ঘুমালো। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। এক দিকে শরিরে ব্যথার কষ্ট আর এক দিকে সবাইকে হারানোর কষ্ট,আর অবহেলার কষ্ট।।।
,
সে আমার সাথে কথা বলছে না।। আমিও চুপ করে সুয়ে আছি। সে হয়ত ভেবেছে আমি ঘুমিয়ে পরেছি।।
,
আজ আমার আর ঘুম আসতেছে না। শুধু আজব আজব চিন্তা মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে। । খুব খারাপ লাগতেছে।। রাত প্রায় 1 টা বাজে। সবাই হয়ত ঘুমিয়ে পরেছে।।। আমি জেগে আছি।
,
রাত 4 টা বাজতেই, চারদিকে আজান পরা শুরু করে দিল। আমি বিছানা থেকে উঠে ঘরের দরজা খুললাম।,
,
ভাই দরজা খুলার শব্দ শুনে জেগে উঠল।। বলল কই যাস।। আমি বললাম নামাজ পরতে যাই।।। সে বলল একাই যেতে পারবি।। হ্যা আমি পারব, তুই ঘুমা।।।
আচ্ছা নামাজ পরে সোজা বাসায় চলে আসিস।।আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম।
,
আগের থেকে চোখে একটু ভালো দেখতে পারছি।।।
আমি বাড়ি থেকে বের হলাম।। চারদিক অন্ধকার আর থম থমে পরিবেশ।,
,
আমি বাড়ি দুইটার দিকে শেষ বারের মত তাকালাম। চোখ থেকে অজান্তেই পানি পরে গেল।
,
তার পর হাটা শুরু করলাম শহরের দিকে। ইচ্ছা করেই আর মসজিদে গেলাম না।। কারন মসজিদে গিয়ে নামাজ পরলে আর সময় পাব না এই এলাকা ছাড়ার। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতেছি।
,
,হটাৎ মনে পরল আন্টির কথা। হয়ত তিনি আমার জন্য চিন্তা করতেছেন, এখানে এসে একবারও ফোন দেয়া হয় নি। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি মোবাইলটা ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।। কাল এর উপরও মাইর পরেছে। sim টা দেখলাম ভালই আছে। sim টা বের করে মোবাইল টা ফেলে দিলাম।
,
প্রায় আধা ঘণ্টা হাটার পর 1 কি.মি. রাস্তা পার করলাম।। এত টুকু রাস্তা হাটতে কতবার যে পরে গেছি তা নিজেও জানি না।
কোন গাড়ি নেই। অন্ধকার ফাকা রাস্তায় আমি একা একা জোরে হাটার চেস্টায় চলছি।।।
,
এভাবে চলতে চলতে পিছন থেকে একটা ট্যাক্যি এসে বলল ভাই কই যাবেন এত ভোরে।।।
— ভাই আমি একটু শহরে যাব৷ নিয়ে যেতে পারবেন।।
— হ্যা অবশ্যই পারব।,,, কিন্তু ভাড়াটা একটু বেশি দিতে হবে ভাই।। আপনাকে একা শহরে নিয়ে যাব, পুরো গাড়ি ফাকা।।
— আচ্ছা ঠিক আছে 100 টাকা বেশি দেব চলেন
— বসেন ভাই।।
,
আমি গাড়িতে বসে শহরে যাচ্ছি।
,
কিছু ভাল লাগছে না।।। একবার মনে হচ্ছে আত্মহত্যা করব।এ জীবন আর রেখে কি হবে। আর এক বার মনে হচ্ছে আত্মহত্যা করে কি হবে।।। আত্মহত্যা করেও তো কোন লাভ নেই সোজা জাহান্নাম যেতে হবে,আল্লাহ আমাকে আর ওজুহাত দেয়ার সময়ও দিবেন না।।। বার বার মনে হচ্ছে কোন এক বন্দি জীবন কাটাই। যেখানে কেউ আমাকে খুজবে না,,, আমিও কাউকে খুজার কোন উপায় পাব না।কেউ আমায় অবহেলা করবে না। করব না কোন ভুল। এসব ভাবতে ভাবতে মনে পরে গেল আব্বুর বলা সেই পুরনো কথাটা, এসব ছেলেদের তো পুলিশে দেয়া উচিত।। আজ হয়ত সময় এসেছে বাবার বলা সেই কথাটার পুর্নতা পাওয়ার।
,
আমি শহরে চলে এসেছি, 2 ঘন্টা লাগল। এখানে এসে একটা মসজিদে কাযা নামাজ আদায় করলাম।। বাড়িতে হয়ত কেউ আমাকে খুজছে,, আর একটা মানুষ হয়ত মনে মনে খুব শান্তি পাচ্ছে আমি চলে যাওয়াতে।
,
,
শহরে এসে খুজতে লাগলাম পুলিশ স্টেশন। প্রায় এক ঘন্টা খুজার পর পেয়ে গেলাম।।
সকাল নয় টা বাজতেছে।। পুলিশ স্টেশনের ভিতর ঢুকতেই দেখি একটা পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে আছে।
আমি তার কাছে গিয়ে বললাম।
,
— স্যার, আমি চোর আমি, আমি সন্রাসি, আমি খারাপ লোক স্যার আমাকে গ্রেফতার করুন স্যার।
— তুমি যে চোর, তুমি যে খারাপ তার প্রমান কি।। এমনিতেই তো আর আমি কাউকে এরেস্ট করতে পারি না।
— স্যার এই দেখুন স্যার। আমার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ স্যার। কাল চুরি করার অপরাধে হেব্বি কেলানি দিয়েছে স্যার।
— না এটা আমার বিশ্বাস হয় না। এটা তো এক্সিডেন্ট ও হতে পারে
,
, পুলিশ অফিসার টা এই কথা বলার সাথে সাথে আমি তাকে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলাম। সাথে সাথে অন্যান্য পুলিশ আর কনস্টবল গুলো লাঠি আর বন্দুক নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো।
,
আমি সাথে সাথে বললাম, এই দেখুন স্যার আমি কত খারাপ কথায় কথায় গায়ে হাত তুলি। আপনি পুলিশ তাও আপনার গায়ে হাত তুল্লাম দেখুন স্যার ।
,
পুলিশ অফিসার টা উঠে দারাল, আর সব পুলিশ কে থামতে বলল।। আমি ভাবলাম এই বার হয়ত কাজ হয়ে গেছে, এবার পুলিশটা এসে আমাকে থাপ্পড় মারবে তার পর ঘাড় ধরে জেলে ঢুকাবে।।।
,
কিন্তু না তার উল্টো টা হয়ে গেল।
,
তিনি আমার কাছে আসল,
,
— তুমি আমাকে ধাক্কা দিছ, আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু এটা করা তোমার ঠিক হয় নি। আমি জানি তুমি চোর নও খারাপও নয়। আমি পুলিশ , চোখ দেখলেই বুঝে যাই কে চোর আর কে না।
,
— স্যার আমি আমি আসলেই চোর, আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি। আমাকে পাপের শাস্তি পেতে দিন। এই নিন আমার কাছে দুই হাজার টাকা আছে। এটা আপনি নিন, তবুও আমাকে জেলে ঢুকান স্যার ।৷ বেশি কিছু করতে হবে না শুধু আমার উপর মিথ্যা কেস চালিয়ে আমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেই হবে, রিমান্ডে না নিলেও হবে স্যার ।।
,
— দুই হাজার টাকা কেন দুই লাক্ষ টাকা দিলেও আমি একটা নির্দোষ ছেলেকে জেলেকে ঢুকাতে পারবনা। আর তুমি ভুল পুলিশের কাছে এসেছ,,আমি আর দশ টা পুলিশের মত না। আমি জানি তুমি কোন মানসিক চাপে আছ।। তুমি যেখান থেকে এসেছ তুমি সেখানে চলে যাও।।
নিশ্চয়ই আল্লাহ একদিন তোমার ভালো করবে।।।
,
এবার আমি সত্যি কাঁদতে কাদঁতে পুলিশ অফিসার কে জড়িয়ে ধরলাম।,
আর মিথ্যা অভিনয় করতে পারলাম না।
,তার কাছে ক্ষমা চাইলাম, তাকে ফেলে দেয়ার জন্য।
আর বললাম, স্যার আপনি চোখ দেখলেই বুঝে যান কে চোর আর আমার বাবা মা তার নিজের ছেলেকে চিনতে পারলো না।
নোটিশ গল্পো ভালো লাগলে অবশ্যই রিকুয়েস্ট দিবেন ধন্যবাদ?
,
এই বলে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসলাম।।।
,
এখানে এসে একটা বাসে চরলাম।। আর 5 ঘন্টার পথ বাকি। বাসে চরে ফিরে যাওয়ার পালা। আমার এ অবস্থা দেখে বাসের সবাই তাকাচ্ছিল।
,
বাস থেকে নেমে গাড়ি তে করে আংকেলের বাড়ি চলে আসলাম।।
,
আমি খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাড়িতে ঢুকলাম, আন্টি আমার এ অবস্থা দেখে দৌড়ে আমার কাছে আসল। আর বলল তোর এ অবস্থা হল কিভাবে রে। কোথায়, কিভাবে এক্সিডেন্ট করেছিস।।।