“বড় আপাকে আমি ঘৃণা করতাম। হ্যা যে মানুষটাকে ছাড়া আমার একটা মিনিটও চলতো না তাকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করতাম।”
আমরা তিন ভাইবোন। আমি সবার ছোট। ভাইয়া আর আপার সাথে আমার বয়সের পার্থক্য প্রায় ১৫ ও ১২ বছরের। ছোট বলে সবার খুব আদরেরও ছিলাম আমি। ভাইয়া আর আপার খুব বেশিই ভালোবাসা পেয়েছি আমি।
বাবা একটা সরকারি কলেজে ইংরেজি পড়াতেন। ভালোই নামডাক ছিলো তার। বাবার চাকরির সুবাদেই শহরে আসা তার।আমার মা আপাদমস্তক একজন গৃহিণী। বাসা ভাড়া, পড়াশোনার ব্যয় বাবদ খরচ পড়তো অনেক। তাই বাবা বাসায় ব্যাচ পড়াতেন। অনেক স্টুডেন্ট ছিলো বাবার। চার কামরার ফ্লাটের একটা কামরা বাবার পড়ানোর জন্যই ফিক্সড ছিলো।
আমার যখন জন্ম হলো ভাইয়া তখন ক্লাস টেন এ পড়ে আর আপা সপ্তমে।আপা আর ভাইয়া সারাক্ষণ আমাকে নিয়েই পড়ে থাকতো। আমি ছিলাম ওদের খেলার পুতুল। আমার ঝিনুক নামটা আপা আর ভাইয়াই রেখেছিলেন। আপার নাম ঝুমুর আর ভাইয়া যারিফ।
ভাইয়া অন্যসব ছেলেদের মতো বাইরে যেতো না।কোনো আড্ডায়ও কখনও দেখা যায় নি তাকে। পড়াশোনায়ই ব্যস্ত থাকতেন সারাক্ষণ। আর বাকি সময় আপা আর আমাকে নিয়েই কাটতো তার।
আপা খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। আপা অনেক সুন্দরীও ছিলেন। আগুন সুন্দরী যাকে বলে। আপা বাবার মতো হয়েছিলেন। বাবার উচ্চতা গায়ের রং চেহারা সব আপার মধ্যে ছিলো। ভাইয়ার মতো আপাও পড়াশোনায় ভালো ছিলেন।
আমার আম্মা খুব সাধারণ একজন মানুষ।নিরেট ভালো মানুষও বটে।তার সন্তান আর সংসার নিয়েই তিনি পড়ে থাকতেন। আমি আর ভাইয়া বাবার হাইট ছাড়া বাকি সবদিক আম্মাকে নকল করে এসেছিলাম। আম্মার গায়ের রং কিছুটা চাপা ছিলো।আমাদেরও তাই।
বাবা ছিলেন প্রচন্ড রাগী। গম্ভীর আর চুপচাপ একজন মানুষ।খুব স্ট্রং এটিটিউড ছিলো তার। বাবাকে খুব কমই হাসতে দেখেছি আমি।ভাইয়া আমি বাবাকে অনেক ভয় পেতাম। তবে আপা বাবাকে ভয় পেতেন বলে মনে হতো না। বাবা আসলে আপাকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। আপা ছিলো বাবার গল্প করার সঙ্গী।আপা বাবাকে রোজ সকালে খবরের কাগজ পড়ে শোনাতেন।বিভিন্ন খবর নিয়ে আলোচনাও করতেন দুজন। আমি আর ভাইয়া বাবার চোখ এড়িয়ে চলতো পারলে বাচতাম।
তবে আম্মা আর বাবার মধ্যে খুব মিল ছিলো। বাবা এতো রাগী হওয়া সত্বেও কখনও আম্মার সাথে উচু স্বরে কথা বলেননি। বাবা কোনো কাজ করার আগে আম্মাকে জিগ্যেস করতেন
” রানু তুমি কি বলো? এটা করলে ভালো হবে তো?
আম্মা বলতেন ” তুমি যা ভালো বোঝো তাই কর।
” আহা তোমার কি মত।
আর আপা যখন একটু বড় হলেন আম্মা বাবা দুজনই আপার সাথে পরামর্শ করতেন। আপা খুব বুদ্ধিমতী ছিলেন ছোট থেকেই।
আমার বয়স যখন ২ বছর পেরোলে আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পর পর দু’ বার অপারেশন করা হয়। আমার দায়িত্ব এসে পড়ে আপার ওপর। সে বছর আপার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি।
এক বছর গেপ হয়ে যায় আপার। মা অপারেশন এর রোগী তার ওপর আরও নানা জটিলতায় বেড রেস্ট এ যেতে হলো তাকে। আপা তখন একহাতে সব সামলাতেন। দাদাবাড়ির দিকে কেউ ছিলোনা। দাদা দাদি বেচে নেই আর বাবা একমাত্র সন্তান ছিলেন তাদের। আর নানো নিজেই অনেক অসুস্থ। অগত্যা আপাই আমার দেখাশোনা, মায়ের দেখাশোনা করতেন। বাবা একটা কাজের মহিলা রাখলেন রান্নাবাড়া আর বাকি কাজ করার জন্য।
আমার খাওয়া ঘুম গোসল সব আপার দায়িত্বে ছিলে। মাকেও দেখতে হতো।
তখন থেকেই আপার সাথে আমার সখত্যা আরও বাড়লো। রাতে আপার গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম। আপার হাতে ছাড়া খেতাম না। সারাক্ষণ আপার কোলেই থাকতাম। আপা আমার বিন্দু মাত্র অযত্ন করেনি।
মায়ের পুরোপুরি সুস্থ হতে দেড় বছর লেগেছিলো। আমি ততোদিনে আপা ভক্ত হয়ে গেছি। আপাকে ছাড়া ঘুম খাওয়া দাওয়া গোসল কিছুই হতো না আমার। মা সুস্থ হওয়ার পরও আমি আর মায়ের সাথে ঘুমাতে যাইনি। আপা স্কুলে চলে গেলে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতাম। কখন আপা আসবে সে অপেক্ষায়। মা আমাকে গোসলের জন্য নিতে পারতেন না।মায়ের হাতে খেতামও না। মাঝে মাঝে ভাইয়া বুঝিয়ে খাওয়াতেন। মায়ের অসুস্থতা মায়ের সাথে আমার দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলো অনেকটা।
আপা যখন স্কুল থেকে ফিরতেন তার কোলে ঝাপিয়ে পড়তাম। আপাও আমাকে ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারতেন না। স্কুল ছাড়া কোথাও যেতেনও না। আমাকে পাশে নিয়ে না শুতে পারলে তার ঘুম হতো না।
আমার চুলগুলো ছোটবেলা থেকেই সুন্দর ছিলো। আপা খুব যত্ন করতেন আমার চুলের। আমাকে খাওয়ানো শেষ করে তবে আপা খেতেন। আপা তার হাত খরচ আর টিফিনের টাকা জমিয়ে রাখতেন। সে টাকা দিয়ে আমার জন্য জিনিসপত্র কিনতেন। আপা নিজে সাজতেন না কখনও। কিন্তু আমাকে সাজাতেন। আমি খুব চঞ্চল ছিলাম। সারাক্ষণ ছুটাছুটি করতাম।জিনিসপত্র নষ্ট করতাম।আপার জন্য আমাকে কেউ কিছু বলতে ও পারতো না। আপা পাশে না থাকলে ঘুমাতাম না বলে আপা আমাকে ঘুম পারিয়ে রাত জেগে পড়তেন। আমাকে আপা রোজ একটা করে গল্প বলতেন। বলতেই হতো।তা না হলে জেদ ধরতাম ঘুমাবো না।
আপার কাছে রোজ আবদার করতাম যতীন্দ্র মোহন বাগচীর কাজলা দিদি কবিতা শোনানোর জন্য। কেন যানি খুব ভালো লাগতো। আবার কষ্টও হতো। (ঘটনাগুলো আম্মা আর ভাইয়ার কাছেই শুনেছি। কিছুটা বড় হওয়ার পর নিজেই তো দেখতাম)
বাবাকে ভয়টা খুব বেশীই পেতাম।বাবা যখন ছাত্রদের পড়াতেন তখন দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম।কখনও বাবার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলে দিতাম ভূ করে দৌড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি আপার হাতেই।
একটু যখন বড় হলাম স্কুলে ভর্তি হলাম বাবা মাঝে মাঝে বলতেন তার কাছে বই খাতা নিয়ে যেতে। বাবা তার কাছে যেতে বললেই পেটে ব্যথার অজুহাতে শুয়ে থাকতাম। সেটাতে অনেক সময় কাজ হতো না। বাবা যখন পড়া ধরতেন আমার জানা পড়াগুলোও ভুলে যেতাম। আর ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিতাম। আপা ছুটে এসে বাবাকে বলতেন “তুমি আবার ওকে বকেছো?
বাবা বলতেন ” আমি তো কিছুই বলিনি। ও এমনিতেই কাঁদছে।
আপা আমাকে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতেন আর বাবাকে বলতেন ” থাক, তোমার আর ওকে পড়িয়ে কাজ নেই।
যেদিন উক্ত ঘটনা ঘটত সেদিন রাতে আর ডাইনিং টেবিলে খেতে যেতাম না। ঘুমের ভান ধরে শুয়ে থাকতাম। আপা তখন রুমে এসে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতেন ” আজকে ডাইনি বুড়ির নতুন একটা গল্প বলবো ভেবেছিলাম।কি আর করা ঝিনুক তো ঘুমিয়েই গেছে।
আমি তৎক্ষণাৎ উঠে বসে বলতাম “আপা বলো গল্পটা। আমি ঘুমাই নি।
আমার কান্ড দেখে আপা হেসে গড়াগড়ি খেতেন।
বাবা বা আম্মা কেউই কখনও আপার কথার বাইরে যায়নি। বাবা দেখতাম সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপার সাথে আলোচনা করতেন। আম্মাও তাই।
আমি মুটেও আপা আর ভাইয়ার মতো হইনি। পড়াশোনার কাছ দিয়েও যেতাম না। সারাক্ষণ দুষ্টুমি আর খেলাধূলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। আপা টুকটাক পড়াতেন। একটু পড়েই উঠে যেতাম।বই ছিড়ে কুটিকুটি করা ছিলো আমার একটা খেলা। পড়ার চেয়ে বেশি বই ই ছিড়েছি আমি।
ভাইয়া ততোদিনে মেডিকেল এ চান্স পেয়ে চলে গেছেন অন্য শহরে। আপা বাবার কলেজেই পড়তেন। আমাদের বাসা থেকে খুব একটা দূরে ছিলো না কলেজ।
পাশের ফ্লাটের ছেলেমেয়েদের সাথে রোজ খেলতে বেরুতাম আমি। সেদিনও খেলা শেষ করে বাসায় ঢুকলাম। তবে বাসার পরিবেশ টা কেমন যেন থমথমে হয়ে আছে।
আপা, আম্মা, বাবা সবাই চুপচাপ।বাবা প্রচন্ড রেগে আছেন বোঝাই যাচ্ছে।আম্মা বারবার আঁচলে চোখ মুছছেন।
আপাকে আস্তে করে জিগ্যেস করলাম “কি হয়েছে আপা? আম্মা কাঁদছেন কেনো?
আপা বললেন ” তুই হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। বড়দের কথার মধ্যে থাকতে হয়না বলেছি না। যা তুই। আপা আসছি।
আপার কথামতো রুমে চলে আসি। তবে একটু পর পর উকি দিচ্ছিলাম কি হয়েছে জানার জন্য। বুঝলাম না কিছুই। শুধু বাবাকে বলতে শুনলাম ” এ বাসায় ওর নাম আর তুলবে না।ওর সাথে কেউ যোগাযোগ রাখবে না। ও যেন এদিকের পথও না মাড়ায়।
বাবা কার কথা বলেছেন বুঝতে পারিনি।
তবে এরপর থেকে দেখতাম ভাইয়া আর আসতেন না। আম্মা আর আপা বাবাকে লুকিয়ে ভাইয়ার সাথে কথা বলতেন। আমাকে নিষেধ করতেন ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে সেটা বাবাকে না বলার জন্য। আপার কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম।
ভাইয়া আসছে না দেখে আম্মাকে জিগ্যেস করতাম ভাইয়া আসছেনা কেন? কবে আসবে। আম্মা ভাইয়ার কথা শুনলেই কেমন উদাসীন হয়ে যেতেন। আপা আশ্বাস দিতেন আসবে।
ভাইয়া সবসময় আসার সময় জিগ্যেস করতেন ” তোর কি লাগবে বল? অনেক কিছু বলে দিতাম নিয়ে আসতে।ভাইয়া নিয়ে ও আসতেন। ভাইয়া বাসায় এলে স্কুলে যাওয়া বাদ দিয়ে দিতাম। ভাইয়ার সাথেই সারাক্ষণ থাকতাম। ভাইয়া আসছে না দেখে আমিও অস্থির হয়ে উঠলাম। ভাইয়া কল করলেই আম্মার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিতাম।
” তুমি কবে আসবে? আমার পুতুলটা তো নষ্ট হয়ে গেছে। আমার নতুন একটা পুতুল লাগবে।?
মোবাইল কানে দিয়ে এসবই বলতাম।ভাইয়া বলতেন ” আসবো আপু।তোর পুতুল নিয়েই আসবো।”
ভাইয়া কথা রেখেছিলেন। ভাইয়াকেমন?
এসেছিলেন। তবে একা না। ভাইয়ার সাথে আরেকজনও এসেছিলো।
স্কুল থেকে ফিরে দরজা দিয়ে ঢুকতেই বসার ঘরে ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমাকে আর পায় কে! ব্যাগ ফেলেই দৌড়। ভাইয়ার কোলে ঝাপিয়ে পড়লাম। ভাইয়াও জড়িয়ে ধরলেননা আমাকে।
” কেমন আছিস তুই ঝিনুক?
“ভালো আছি ভাইয়া। তুমি এতোদিন আসো নি কেনো?
” ভাইয়ার কাজ ছিলো যে তাই। তোর পড়াশোনা কেমন চলছে? ফাকি দিস এখনো?
” নাহ। তুমি কতোদিন থাকবে ভাইয়া?
” তোর খিদে পায়নি?
” নাহ, বলো না কতোদিন থাকবে?
” তোমার পুতুলটা দেখবে না ঝিনুক?
অপরিচিত কন্ঠস্বরটা আমাকে লক্ষ্য করালো রুমে আরও একজন আছে।
মানুষটা সম্পুর্ণ অপরিচিত। এর আগে এই আপুটাকে আমি কখনও দেখিনি।
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
” আমার কাছে এসো ঝিনুক।
আপা আমাকে অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে কারও সাথে যেতে বা অপরিচিত কারও দেওয়া কিছু খেতে নিষেধ করেছিলেন। তাই তার কাছে যাচ্ছিলাম না।
” যা ঝিনুক। ওনি তোর ভাবি হয়।
” ভাবি??
” হুম, ভাইয়ার ওয়াইফ। তোর ভাবি। যা ওনার কাছে।
আপার কথায় আশ্বস্ত হয়ে ওনার পাশে গিয়ে বসলাম।
” আসসালামু আলাইকুম।
” ওলাইকুম আসসালাম। কেমন আছো তুমি ঝিনুক?
” ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
” আমিও ভালো আছি। আচ্ছা দেখো তো তোমার এই ডল আর খেলনাগুলো পছন্দ হয় কিনা?
আমি জিনিসগুলো নিতে ইতস্ততর করছিলাম। আপা চোখের ইশারায় জালালেন আমি জিনিসগুলো নিতে পারি। তাই নিয়ে নিলাম। খেলনাগুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম।
” তোমার পছন্দ হয়েছে?
” হ্যা। থ্যাংকস।
” মোস্ট ওয়েলকাম ডিয়ার।
” আপনি অনেক সুন্দর।আমার আপার মতো।
আসলেই ভাবি অনেক সুন্দর। তাই আমি বলেই ফেললাম।আমার কথা শুনে ভাবি হেসে ফেললেন।
” আচ্ছা! তুমিও মাশআল্লাহ অনেক সুন্দর।
ভাবি অনেকগুলো চকোলেট দিলেন আমাকে। সেগুলো নিয়ে আবার ভাইয়ার পাশে বসলাম।
” ভাইয়া তুৃমি বিয়ে করেছো?
” হ্যা।
” তাহলে আমরা গেলাম না কেনো? সুপ্তির( পাশের বাসার আমার সমবয়সী) ভাইয়ার বিয়েতে ওরা কতগুলো গাড়ি নিয়ে গেলো। কতো মানুষ এসেছিলো। কতো অনুষ্ঠান হলো। সুপ্তিরা তো গিয়েছিলো ওদের ভাবির বাসায় আমরা যাই নি কেনো?
ভাইয়ার মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেলো দেখলাম।
” তোর পুতুলটা পছন্দ হয়েছে?
” হ্যা, অনেক সুন্দর।
” ঝিনুক তুই ফ্রেস হবি চল।
আপা আমাকে নিয়ে গেলেন। সেদিন না বুঝতে পারলেও এখন বুঝি ভাইয়া কথা এড়িয়ে গিয়েছিলেন তখন।
বাবা বাড়ি ফেরার আগেই ভাইয়া চলে গেলেন। আমার সে কি কান্না। ভাইয়া কোলে নিয়ে আমাকে অনেক আদর করলেন।
” কাদিস না আপু। ভাইয়া আবার আসবো। তোর জন্য আরও খেলনা নিয়ে আসবো। কাঁদিস না।
” ভাইয়া আজকে থেকে যাও। কালকে যেও।
” ভাইয়ার যে কাজ আছে আপু।
ভাইয়া চলেই গেলেন। আপা আর। আম্মাও কেদেছিলেন সেদিন।
ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আমি বারান্দায় বসে ছিলাম খেলনা নিয়ে।
আপাও এসে বসলেন।কে
” খেলনাগুলো পছন্দ হয়েছে?
” খুব।
” ভাইয়ার জন্য মন খারাপ?
” হুম,,?
” ভাইয়া আবার আসবে, মন খারাপ করিস না। আচ্ছা আপু এই যে ভাইয়া এসেছিলো ভাবী এসেছিলো এগুলো তুই বাবাকে বলিস না কেমন?
” কেনো?
” এমনি, বাবাকে বললে বাবা রাগ করবে।ভাইয়াকে আর আসতে দেবে না।তুই কি সেটা চাস?
” নাহ আপা।
“তাহলে বাবাকে বলবি না তো?
“না
কিন্তু আপা বাবা যদি জানতে চায় এ খেলনাগুলো কে দিয়েছে?
“বলবি আপা দিয়েছে।
” আচ্ছা
“শিউর?
“হুম।
সময় গড়ালো। আপা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেন। আপার ভার্সিটি আমাদের শহরেই। আপাকে আর দুরে যেতে হয়নি। আমিও বড় হলাম। বুঝতে পারলাম ভাইয়া নিজে বিয়ে করেছে বাবার অমতে। তাই এ বাসায় আসে না।
আপার সাথে সম্পর্কের ভীত আরও মজবুত হলো। তখনও আপার গলা ধরে ঘুমাতে হতো। আপার গল্প বলতে হতো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে হতো।
খায়িয়ে দেওয়ার জন্য বায়না করতাম। আমার চুলের যত্ন তখনও আপা ই করতেন। সব কিছু থেকে আগলে রাখতেন। আপাকে ছাড়া আমার চলত ই না।
চঞ্চলতা কমে নি আমার তখনও। এটা সেটা নিয়ে দুষ্টুমি লেগেই ছিলো। আম্মা বিরক্ত হয়ে মাঝে মাঝে ধমক দিতেন।দু একবার পিঠে কয়েক ঘা ও পড়েছে। আপা বাসায় ফিরে যখন শুনতেন আম্মা বকেছে বা মেরেছে আপা খুব রাগ করতেন। আপা কখনও আমার সাথে জোরে কথা বলেননি। আম্মার সাথে রাগারাগি করতেন আমাকে কিছু বললে।
আম্মা মাঝেমধ্যে বলতেন ” তোর আশকারা পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠছে ও।