সবুজ_ডায়েরীর_আত্মকথা পর্ব০৪

চট করে ফোনটা হাতে নিয়ে কল করলাম বুদ্ধিমান হাবাগোবা মানুষটাকে।
-আমার ডায়রীটা কি এখন ফেরত পাওয়া যাবে?
-হ্যাঁ, অবশ্যই। আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে, যদি ইচ্ছে হয় রাখবেন, আর নাহলে না করে দিয়েন।
-জ্বি, বলুন।
-তবে তার আগে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আপনার স্ত্রীর ডায়রীটা এভাবে না বলে পড়ার জন্য, আর এক প্রকার ব্ল্যাকমেইল করে আপনার ডায়রীটা পড়ার জন্য।
-না কোনো সমস্যা নেই, শুধু কথাগুলো গোপন রাখলেই চলবে।
এখন আবদারটা কি বলুন?
-আমি টুকটাক লেখালেখি করি। তাই চাচ্ছিলাম আপনাদের দুজনের ডায়রীটা মিলিয়ে একটা বই লিখতে। যদি আপনি অনুমতি দেন।
-আসলে এটা তো সম্ভব না, তারপরেও ডায়রি দুটো যেহেতু দুজনের, তাই আমি আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে আপনাকে জানাতে পারি।
-ঠিকাছে, আমি অপেক্ষায় থাকবো।
ফোনে কথা বলা শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার ডায়রীটা পড়ায় মনোযোগ দিলাম,
—সোফায় বসে আছি, সে অনেকক্ষণ ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর তাকানোটা একটু কেমন যেনো লাগছিলো। বললাম,
~কিছু কি বলবে? নাকি এভাবে তাকিয়েই থাকবে। তুমি…
আমার কথা শেষ হতে না হতেই সে বলে উঠলো,
-আমি কিন্ত জানতাম, আগে আপনি আমার অনেক কাজে সন্দেহ করতেন।
~কিন্তু কিছুই বলতেনা যে?
-আপনি তো তখন সন্দেহ মনে মনেই করতেন, মুখে কিছু বলতেননা। যদি মুখে কিছু বলতেন, তখন দেখতেন কি করতাম।
~কি করতে শুনি?
-আপনাকে ছেড়ে চলে যেতাম।
~কি বলো এইসব।
-ঠিক বলছি। তখন আমি সংসারে নতুন এসেছিলাম, আপনিও আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন মানুষ ছিলেন। আর এখনের তুলনায় ঐসময় আমার রাগও বেশি ছিলো। তবে আপনার একটা বিষয তখন খুব ভালো লাগতো।
~কি বিষয়?
-সব কিছুই আপনাকে বলতে হবে নাকি। আমি বলবো না।
~বলো না, প্লিজ!
-মাঝে মাঝে আপনার এইরকম মেয়েদের মত বায়না ধরাটা খুব ভালই লাগে। আসলে তখন প্রথম অবস্থায় আমার তো অনেক ভুল হতো, কিন্তু আপনি তেমন কিছু বলতেননা, সহ্য করতেন। আমাকে তখন সময় দিয়েছিলেন যাতে আমি আস্তে আস্তে সংসারের সাথে নিজেকে মানাতে পারি।
—আজকে আমার এক বন্ধুর বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যাই। বন্ধুর বাসার সামনে এসে কলিংবেলে হাত দেবো, তখনি ভেতর থেকে বন্ধুকে তার স্ত্রী কর্তৃক শাসনের আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমার স্ত্রী মুচকি হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
-এইযে আমি আপনার উপর ঘরে কর্তৃত্ব চালাই, আপনার বিষয়টা খারাপ লাগে না। মনে মনে আবার আমাকে দাজ্জাল বউ বলেন না তো?
~হুম, বলি তো।
-বলেও লাভ নেই, আমাকে নিয়েই আপনাকে বাকি জীবন থাকতে হবে।
~সেটাই! অফিসে বসের অধীনে কাজ করতে হয়, বাসায়েও তোমার অধীনে থাকতে হয়।
-এই! আপনি আমার মতো কথার উত্তর দেয়া শুরু করেছেন কবে থেকে।
~এতদিন ধরে থাকছি তোমার সাথে, একটু না শিখলে কি হয়।
-বাহ্, বোকা জামাইয়ের বুদ্ধি বাড়ছে দিন দিন।
—নামায শেষ করে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। তাই দৌড়িয়ে বাসায় এসে ঢুকলাম। সে হয়তো জানালা দিয়ে আমার দৌড়ে আসা দেখেছিল। বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে যেই বিছানায় বসলাম সে বলে উঠলো,
-চলেন আমি আর আপনি দৌড় প্রতিযোগিতা করি।
~দৌড় প্রতিযোগিতা!
-যেমন ভাব ধরছেন, যেনো কিছুই বুঝেন না। ঐদিনই তো আমরা একসাথে হাদীস পড়ছিলাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার বিবির সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন। এখন না জানার ভান ধরে আছেন কেন।
~কিন্তু এখানে তো এইরকম কোনো জায়গা নেই।
-কে বলেছে নেই। আমাদের ছাদটা কি কম বড়। তাছাড়া আমাদের বিল্ডিং অনেক উঁচু আর ফযরের আগে চারদিকে কোনো মানুষ থাকে না।
~কিন্তু অফিস তো আছে, নির্দিষ্ট টাইমে সকালে উঠতে হয়।
-খালি বাহানা, আমরা তো ছুটির দিনে প্রতিযোগিতা করবো। যে জিতবে তার জন্য থাকবে পুরষ্কার।
~কি পুরষ্কার?
-সেটা তখন বলবো।
—আজ বৃহস্পতিবার। দুপুরে খেতে বসে জিজ্ঞেস করলাম,
~ঐ বুড়ো মহিলাটার খবর কি?
-কোন বুড়ো মহিলা?
~ঐ যে প্রতি বৃহস্পতিবার এক বুড়ো মহিলা তোমার কাছে আসতো, তুমি তাকে দুপুরে খাইয়ে কিছু টাকা দিয়ে দিতে।
-ওই মহিলার ছেলের বিয়ের কয়েকমাস পরেই ছেলে উনাকে বের করে দিয়েছিল। বলেছিল যদি থাকতে হয় মাসে মাসে ভাড়া দিতে হবে। শেষমেশ ছেলের সাথে থাকার জন্য মহিলাটা রাজি হয়ে যায়। পুরো মাস ভিক্ষে করে টাকা জমিয়ে ছেলেকে ভাড়া দিতো। কিন্তু দুই মাস ধরে উনি আসছেন না। কোনো বিপদ-আপদ হলো নাতো, আল্লাহ্ হেফাযত করুক। কিভাবে যে ছেলেগুলো মায়ের সাথে এরকম করে।
—এক মাস হলো পা ভেঙে বিছানায় শুয়ে আছি। অফিস থেকে ছুটি পেয়ে আমি তো আরামে শুয়ে আছি ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর কাজ এখন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। সংসারের কাজের পাশাপাশি আমাকেও সারাদিন সেবাযত্ন করতে হয়। অনেক সময় কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে আমাকে দুটো কথা শুনিয়ে দেয়। আমি আর তর্কে যাই না। এভাবে সারাদিন ফ্রি ফ্রি সেবা পেয়ে দুটো কথা সয়ে নিতে সমস্যা হয় না। মেজাজটা আবার ঠান্ডা হলে সে নিজে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নেয়। আমিও প্রথমে একটু রাগের ভান ধরে পরে হাসিমুখে ক্ষমা করে দেই।
—আজকে দেখি উনি বিছানার শুয়ে শুয়ে কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করলাম,
~আজকেও বুঝি মায়ের কষ্টের কথাগুলো মনে পড়েছে।
-আরে না, আজকে পড়ছিলাম কিভাবে ইসলামের দাওয়াতের জন্য তায়েফের ময়দানে আমাদের নবীজী(স:)কে কি পরিমান কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিলো। তায়েফের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর দুপাশের মানুষগুলো উনাকে পাথর মেরে মেরে রক্তাত্ব করছে। এমনকি ছোট বাচ্চাগুলোও উনাকে পাথর মারছে। কথাগুলো শুয়ে শুয়ে একটু ভাবছি, এই আর কি।
—দুপুরে খেতে বসেছি। মাছের টুকরোটা প্লেটে নিয়ে মুখে দিতেই কেমন জানি লাগলো। জিজ্ঞেস করলাম,
~মাছটা কেরকম জানি লাগছে।
-কেরকম লাগছে?
~একটু গন্ধ গন্ধ করছে।
-কিন্তু মাছটা তো সকালেই আপনি এনেছেন, গন্ধ কেনো লাগবে।
~সেটাই ভাবছি, কেনো এইরকম খেতে লাগছে।
-আরে আমার হাবলা জামাই, এটা আপনার সকালে আনা পঁচা মাছ।
~কিন্তু তখন বললে না যে। আর পঁচা হলে রাঁধলে কেন?
-আর কত বলবো আপনাকে। এর আগে আপনি অনেকবার এই একই ভুল করেছেন, আপনাকে প্রতিবারই বলি মাছটা একটু দেখে আনেন। কিন্তু কথা কি আপনার কান দিয়ে যায়। এখন যদি পঁচা মাছটা খেয়ে একটু ঠিকমত বাজার করেন। এই! আপনি সত্যি করে বলেনতো বিয়ের আগে বাজার-টাজার কি করতেন?
~করতাম তো। কিন্তু কিভাবে যে মাছগুলো বাসায় এসে পঁচা হয়ে যায়, দোকানে থাকতে তো ঠিকই ভালো দেখি।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প