খুন হয়ে যাবো রাজ………..
কথাটি শুনে আতকে উঠি আমি।। সাথে সাথে ওকে
ছেড়ে দূরে দাড়িয়ে গেলাম আমি।। চাপা অস্থিরতা
ছেয়ে নিয়েছে আমাকে।।
হঠাৎ ই তিথি কে ছেড়ে দেওয়ায় ও একটু অবাক হলো
মনে হয়।আমার দিকে ফিরে তাকালো —
–কি হলো রাজ?? হঠাৎ ই ছেড়ে দিলে যে আমায়?
(তিথি)
— না মানে এমনিতেই।। কি যেনো বলছিলে আমায়?? খুন
করে ফেলবে নাকি??
তিথি হো হো করে হেসে ওঠলো। তারপর নিজ থেকে
আমার কাছে এসে আলতো করে শার্ট টা ধরে বললো —
–তোমায় ভালোবাসায় খুন হয়ে যাবো রাজ।।
তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলো তিথি।। বুজলাম ফুফিয়ে
কেদে ফেলেছে ও।।তারপর আবারো বললো —
–যানো রাজ, এই তিনমাসে তোমার ভালোবাসা
কতটা মিস করেছি।। যদিও আমাদের বিয়েটা একটু
অন্যভাবে হয়েছে।। আমিই প্রথম নিজ থেকে তোমাকে
মেনে নিতে পারিনি।। তবে আজ বলছি রাজ,,,,,
—সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় —
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।। আমার অনুভুতির আকাশ
এলোমেলো হয়ে আসছে।। শুধু নিরব দর্শকের মতো
শুনছিলাম তার কথাগুলো।।
কেনো জানিনা নিজেকে আর শান্ত রাখতে
পারলাম না।। তাই কোনোমতো ওকে ছাড়িয়ে
বাহিরে বেরিয়ে আসলাম।।।
।
আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। আমি একটা
সিগারেট বের করে জালালাম।। পরিবেশটা একটু
শান্ত হয়ে আসছে।। মনে হচ্ছে এখনি বৃষ্টি নামবে।।
আমার প্রিয় সান বাধানো পুকুরের পাড়ে বসে আছি।
আর সিগারেটে ছোট করে টান দিচ্ছি।। সিগারেটের
ধোয়া ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।।
হঠাৎ ই বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করলো।। আমিও আর নিজেকে
জল থেকে বাচাবার চেষ্টা করলাম না।। বৃষ্টির জলে
সিগারেট টা নষ্ট হয়ে গেলো।।
নিজেকে আজ বড্ড অসহায় লাগছে।। জানিনা কেনো,
কোন মায়ায় আর নিজের ভেতর তিথিকে শেষ করে
দেবার স্পৃহা জাগাতে পারছি না।। মেয়েটির সামনে
গিয়ে নিজেকে আর কঠোর করতে পারছি না। অথচ
দুদিন আগেও ওকে শেষ করাই আমার প্রত্যয় ছিলো।।।
।
বৃষ্টির বেগ তখনো তেমনি ছিলো, নিজের ভেতরে
আগুন গুলো যেনো সিগারেটের আগুনের মতো নিভে
যাচ্ছিলো বৃষ্টির জলে। নিজের অজান্তেই নিজের
পরিচয় গুলো আবারো ভেসে ওঠছে, নিজের মধ্যে—-
.
—ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠি বস্তির সেই ছোট
ঘরটিতে।।যদিও ছোটবেলা থেকে বুজতে শেখা পর্যন্ত
কে আমাকে বড় করেছে তা আজোও অজানা আমার
কাছে।। সেদিন খুধার তাড়নায় কুকুরের খাওয়ার কেড়ে
নিয়ে খাচ্ছিলাম আমি আর জোড়ে জোড়ে কান্না
করছিলাম।। সেই মুহুর্ত যে কতটা কষ্টের ছিলো, তা
হয়তো আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।।
জীবনের বাস্তবতা কোথায় দাড়ালে, একজন অবুঝ শিশু
কুকুরের খাবার কেড়ে নিয়ে খায়, তা হয়তো ভাবার
ক্ষমতা সবার হয়ে ওঠবে না। কিন্তু আমি সেই
বাস্তবতাকে পার করে নিজেকে দাড় করিয়েছি।।
তেমনি এক কঠিন মুহুর্তে আমাকে কোলে তুলে
নিয়েছিলো বাস্তবতার সেই বাবা —
–সেই ভ্যানচালক মুহাম্মদ কায়সার আহমেদ।সবাই
তাকে একজন ভ্যান চালক জানলেও, আমি জানি তিনি
হলেন, মাফিয়া জগতের ডন মিঃ কায়সার জন।।। আর আমি
হলাম সেই বাবার একমাত্র ডান হাত, অন্ধকার জগতের
ত্রাস – মিঃ রাজ।।।
তিনি আমাকে চরম বাস্তবতায় কোলে তুলে
নিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আমাকে
গড়ে তুলেছিলো অন্ধকার জগতের মাফিয়া।।
নিজের হাতে কতো অন্যায়কারি কে যে খুন করেছি,
তার ইয়ত্তা নেই।। তবে এতটুকু সত্য খুনি হিসেবে বলতে
পারি, আমার জানামতে কেনো ভালো মানুষ কে
দুনিয়াছাড়া করিনি কখনও।। আর আমার বাবা মাফিয়া
ডন কায়সার জন শুধুমাত্র খুনের অর্ডারগুলো আমাকে
দেন,আর বাদবাকি কাজগুলো নিজের হাতে আমিই
করে থাকি।।
বাস্তবতার কড়াকাতে পৃথিবীর অনেক সত্য খুব
ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।। যেনেছি এই
নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কিছু করার চেয়ে, কিছু না করে
টাকা কামানো সহজ।। শুধু থাকতে হবে ক্ষমতা আর
অস্ত্রের জোর আর একটুখানি মাথা খাটানোর ক্ষমতা।
জীবনে যতবার মানুষ খুন করেছি, তার একবারও আমার
এতটুকু হাত কাপেনি। এমনকি প্রথম যেদিন খুন করি,
সেদিনও আমার এতটুকু বিব্রতবোধ হয়নি।। কিন্তু একোন
চরম মুহুর্ত আমাকে আটকে ধরলো, আমি তিথিকে
কোনোভাবেই হয়তো আর খুন করতে পারবো না।।।
বৃষ্টির বেগ কিছুটা কম মনে হচ্ছে, এতক্ষণে ভিজে
একাকার হয়ে গেছি।। শরীরে হালকা কাপুনি অনুভব
করছিলাম আমি।। দাড়িয়ে পানিগুলো ঝেড়ে নিলাম।।
ভেতরে যাবার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু চোখের পলক
আবারো থেমে গেলো আমার, শাড়ি পড়ে খালি নুপুর
পায়ে, চুলগুলো ছেড়ে, বৃষ্টিতে ছাতা হাতে এগিয়ে
আসছিলো তিথি।। আমি আবারো মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে
আছি তিথির দিকে।।
একেবারে কাছে এসে দাড়ালো তিথি।। আমিও
চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলাম।। হঠাৎ ই তিথি বলে ওঠলো —
–খুব সুন্দর লাগছে পরিবেশটা।। তাই না রাজ??
আমি তেমন কোনো উত্তর দিলাম না। শুধু মাথা
নাড়িয়ে ওর কথায় সায় দিলাম।। এবার আমার বাহুটা
ধরে মাথা হেলান দিয়ে দাড়ালো তিথি।। আমি
আবারো শিউড়ে ওঠি।। এভাবে বেশ কিছুসময় দুজনে
নিশ্চুপ ছিলাম।। তারপর আবারো বৃষ্টি পড়া আরম্ভ
করলো।। তিথি আমার ভেজা অবস্থা দেখে
তাড়াতাড়ি ভেতরে যেতে বললো। যদিও তার চোখ
বলে দিচ্ছিল,, এই খোলা আকাশের নিচে চলনা দুজনে
ভিজি একসাথে রাজ ….. । হয়তো আমার কথা ভেবে আর
বলতে পারলো না তিথি।। এমনিতেই আমার জ্বরের ভয়
ও আসার পর থেকেই বলে আসছিলো।।
আমিও আর আগ বাড়িয়ে তেমন কিছু বললাম না।।
সকালের বৃষ্টিস্নান সেরে ঘরে এসে কাপড় চেঞ্জ
করে নিলাম আমি।। আয়নায় নিজের মুখটা ভেসে
ওঠতেই, আবারো ভাবনায় পড়ে যাই আমি।। এরই মধ্যে
ফোনটা আবারো বেজে ওঠে আমার।। ভেতরটা একটু
মুচড়ে উঠলো আবারো।। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে
বলে ওঠলো —
–কাজটা করেছিস রাজ?? তিথি কে শেষ করেছিস
তো??
আমি কোনো উত্তর দিচ্ছিলাম না।। তাই ধমকের সুরে
এবার বলে ওঠলো —
–কিরে কথা বলছিস না কেনো?? তাহলে কি ……??
–না বা…বা…!আমি পেড়ে ওঠছি না বাবা।। আমি
হয়তো তিথি কে খুন করতে পারবো না।। (রাজ)
বলেই চোখ থেকে কয়েকফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।।
বাবা হুংকার ছেড়ে বললো —
–কি বলছিস তুই?? তুই বুজতে পারছিস,,, কি বলছিস তুই??
–হ্যা বাবা ঠিকই বলছি আমি। আমি বোধহয় তিথিকে
ভালোবেসে ফেলেছি বাবা।।। (রাজ)
ওপাশ থেকে জোড়ে শব্দ হলো।। হয়তো ফোনটা আর
সুরক্ষিত নেই।। চোখের জল মুছে পেছন ফিরে
তাকালাম আমি।। পেছন ফিরেই আতকে যাই আমি।।
তিথি দাড়িয়ে আছে আমার পেছনে।। কিছুই বুজতে
পারছি না।। কি করবোএখন?? ও কি সব কিছু জানতে
পেরে গেলো?? সব শুনে নেই নি তো?? হঠাৎ ই ঘাম
ছুটে যায় আমার শরীরে।।
ভাবনা গুলো দীর্ঘ হতে থাকে আমার।। হঠাৎ ই
ভাবনাগুলো কে পেছনে ফেলে আচমকা তিথি এসে
জড়িয়ে নেয় আমাকে।। আমি হতবাক হয়ে গেলাম।।।
তারপর তিথি জোরে কান্না আরম্ভ করে দেয়।। আর
আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।। এবার আর চুপ
থাকতে পারলাম না।।
রংধনুর রং
আমিও জড়িয়ে নিলাম তিথিকে পরম আদরে।। তারপর
তিথি আমাকে অবাক করে দিয়ে অজানা সেই অনুভুতি
গুলো বলতে শুরু করলো —
–আমি জানি রাজ, তুমি আমাকে খুন করার জন্যই
বিয়েটা করেছো।। যদিও আমি বিষয়টা বিয়ের পরপরই
জানতে পারি।। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার আচরন
কখনই আমাকে তা বুজতে দেইনি।। **নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
আমি বিস্ময়ে ওর মাথাটা আমার দিকে তুলে নিলাম।।
তারপর ও আবারো বলা শুরু করলো —
–সত্যি বলতে কি রাজ,, কথাটা যেদিন থেকে জানতে
পেরেছিলাম, সেদিন থেকে জিদের বশে আমিও
সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম তোমাকে শেষ করার
জন্য।। কিন্তু ভাগ্য হয়তোবা তোমাকে আমাকে এক
সুতোয় বেধে দিয়েছে রাজ।। জানো রাজ, ছোটবেলায়
থেকেই নিজের চাচা-চাচীকে বাবা মার আসনে
চড়িয়েছিলাম।। কিন্তু তারা যে শুধুমাত্র, আমার
বাবার সম্পত্তির লোভে আমাকে ভালোবাসার
অভিনয় করেছে তা জানতাম না।।
বলেই আবারো ফুফিয়ে কেদে ওঠলো তিথি।। আমি ওর
চোখের পানির মানে তখনও বুজে ওঠছিলাম না।।
তারপর —
–শুধু তাই নয় রাজ, তারা যে তোমার বাবাকে,
আমাকে খুন করার জন্য অনেক টাকা দিয়েছে, সেটাও
আমি জানতে পারি, আমাদের বিয়ের পর।
আমাকে মিথ্যে বলে তোমার সাথে বিয়ে দেয় রাজ।।
যা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম
না।।।
জানো রাজ, তোমাকে সেদিন রাতে খুন করার জন্যই
রুমে এসেছিলাম, কিন্তু তোমার ছোট্ট ভুলেই বেচে
গিয়েছিলে তুমি।।। তোমার ফোনটা ভুলে ফেলে
গিয়েছিলে তুমি।। আর সেদিনই এক বৃদ্ধ মহিলা ফোন
করে বলে —
–বাবা আমাদের এতিমখানার খাবারগুলো শেষ হয়ে
গিয়েছে বাবা। যদি তুমি কালকে একবার আসতে।।।
যানো রাজ সেদিন ব্যাপকভাবে বিস্মিত হয়েছিলাম
আমি।। আর সেদিনই খোজ নিয়ে আরো অনেক অজানা
সত্য জানতে পারি আমি।। যা তোমার মহত্বের পরিচয়
বহন করে রাজ।।(তিথি)
আমি কোনোভাবেই তিথিকে বুজতে পারছিলাম না।।
শুধু একমনে ওর কথাগুলো শুনে যাচ্ছি লাম।। তিথি
বিরতিহীন ভাবে আবারো বলা শুরু করলো —
–আমি সেদিনই বুজেছিলাম রাজ, যে খুনি নিজের
টাকায় এতিমখানা চালাতে পারে, যে খুনি বৃদ্ধ-
বৃদ্ধাদের শেষ আশ্রয়স্থল হতে পারে,, সে কখনই
বিকৃতমনা, মনুষত্যহীন মানুষ হতে পারেনা।। সেদিন
থেকেই তোমাকে জানতে আর বুজতে চেষ্টা করি
রাজ।।।
যানো রাজ, আমি বিশ্বাস করতাম তুমি
কোনোভাবেই আমাকে খুন করতে পারবে না।। দেখো
রাজ আমার বিশ্বাসই কেমন সত্য হলো??
বলেই আবারো জড়িয়ে নিলো আমাকে। এবার নিজের
অজান্তেই অশ্রু কনা চোখে এসে ভর করলো।।এই প্রথম
নিজেকে জঘন্য খুনি মনে হচ্ছে।। নিজের প্রতি নিজের
ঘৃনা বেড়ে যাচ্ছে।। অনুভুতিগুলো বিকলাঙ্গ হয়ে
আসছে।।।
এই প্রথম কোনো নারীর ছোয়া আমাকে ভালো হওয়ার
উৎসাহ দিচ্ছে।। নিজেকে আবারো ক্ষমতার দাবানল
থেকে চিরতরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করছে।।।।
।
।
আজ ছয় বছর পর তিথিকে নিয়ে দাড়িয়ে আছি জীবনের
এক পরম মুহুর্তে।। আজ মনে হচ্ছে, হয়তো অস্ত্র আর ক্ষমতার
বলে ধরে রাখা যায় রাজত্ব।তবে সেটা ক্ষনস্থায়ীই
হয়েই জীবনে ধরা দেয়।। আসলে প্রকৃত অজর্নগুলো
ভালোবাসার মাঝেই লুকিয়ে থাকে।। তাই হয়তো ছয়
বছর আগে নিজ শহর ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছি, শত মাইল
দুরের অন্য সেই শহরে।। যে শহরের প্রতিটি সকাল স্নিগ্ধ
ভালোবাসায় পূর্ণ থাকে প্রতিটা স্পর্শে।।। অপেক্ষার
শানিত ধারাগুলো পূর্ন আবেশে ছেয়ে নেয়, সকল অপূর্ণ
গ্লানি কে।।। শত অপেক্ষার পরও বেচে থাকে চিরন্তন
ভালোবাসাগুলো।।।
.