আড়াল পর্ব ০১

বুঝলেন মশাই আপনার হবু বউয়ের দুই স্তনের মাঝে একটা তিল আছে আপনি খুব ভাগ্যবান এমন একটা বউ পেয়েছেন।
বিয়ের ঠিক ১০ মিনিট আগে অপরিচিত একজনের মুখে একথা শুনে পাত্রের অবস্থা কি সেটা তো বুঝতেই পারছেন। কোনোরকমে বললো,
– মানে? কে আপনি আর আপনি এতোকিছু কিভাবে জানেন?
– জানি জানি আরো অনেক কিছুই জানি সেসব পরে বলবো তবে মেয়ে খুবই ভালো দেখতে শুনতে সব দিক দিয়ে মাশাআল্লাহ্। বিয়ে করলে সুখী হবেন।
– আচ্ছা আপনি বসুন আমি একটু আসছি।
পাত্র উঠে যেতেই রামিম মুচকি হেসে নিজের গন্তব্যে পা বাড়ায়। এরপর কি হবে সেটা কারো অজানা নয়।
আগের ৪ বারের মতো এবারও তিন্নির বিয়েটা ভেঙে যায়। তিন্নি বিয়ে ভাঙার কথা শুনে ফোনটা চেক করে দেখে আগের ৪ বারের মতো এবারও অচেনা একটা নাম্বার থেকে একটা মেসেজ – খুশিতো?
তিন্নি কিন্তু সত্যিই খুশি! পড়ালেখা শেষ না করে সে বিয়ে করতে চায়না আর তার বাবা লেগেছে বিয়ে দিতে।
৩ মাসে ৪ বার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা এই নিয়ে ৫ বার। তিন্নি দেখতে বেশ ভালো সেজন্য পাত্রপক্ষ একবার দেখেই পছন্দ করে ফেলে। আগের ছেলেগুলা মোটামুটি ভালোই ছিলো তবে এবারের ছেলেটা আসলে ছেলেটা বলা যাবেনা লোকটা বলতে হবে কারন লোকটার বয়স তিন্নির দ্বিগুণ প্রায়। তাই বিয়েটা ভাঙায় তিন্নি খুবই খুশি এবার।
নাম্বারটাতে কল দিয়ে আগের মতোই এবারও বন্ধ পেলো। তিন্নির ভিষন ইচ্ছে হচ্ছে ছেলেটা কে সেটা জানতে।
আরমান সাহেব (তিন্নির বাবা) মাথা নিচু করে বসে আছে। তিন্নির বিয়ে নিয়ে আর ভাববেনা ঠিক করলো। নইলে মান সম্মান যতটুকু আছে সেটুকুও আর থাকবেনা। তিন্নির মা এসে খবরটা দিতেই তিন্নি খুশিতে নাচতে শুরু করলো।
তিন্নি খুব একটা কারো সাথে মিশেনা তার বাবা পছন্দ করেনা।
বেশিরভাগ সময় ঘরে বসেই কেটে যায় তার। বন্ধুবান্ধব তেমন নেই আর বাকি মেয়েদের মতো ঘুরাঘুরি তার হয়না বলতে গেলে ঘরবন্দি। বাবার কোনো কথাতেই সে না করেনা তাই বিয়েতেও রাজি হয়ে যায় তবে এখন কে চিন্তামুক্ত কারন সে জানে এরপর বিয়ে ঠিক হলেও সেটা বিয়ে পর্যন্ত গড়াবেনা তার আগেই লুকিয়ে থেকে কেউ বিয়েটা ভেঙে দিবে।
তিন্নির মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় রামিম ছেলেটা এসব করছে নাতো? ছাদে উঠলেই তিন্নি খেয়াল করে রামিম তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। বেশ বোকাসোকা টাইপের ছেলে রামিম। সবসময় সাদা ফ্রেমের একটা চশমা পড়ে থাকে। নাহ রামিম এসব করার সাহস পাবেনা ভাবে তিন্নি।
রামিম তাদের বাসার দোতলায় ভাড়া থাকে।
প্রথম প্রথম তিন্নির সাথে ঝগড়া হলেও পরে রামিমের বোকাবোকা কথাবার্তায় তিন্নি বুঝতে পারে ছেলেটা খারাপ না। আর রামিম ছেলেটা প্রেমে পড়ে বাড়িওয়ালার মেয়ের কি আর করার বিয়ে তো আর এখন করতে পারবেনা তাই তিন্নির খুশি আর নিজের ভালোবাসার টানে বিয়ে ভাঙতে থাকে একটার পর একটা।
তিন্নি মেয়েটা চঞ্চল হলেও বাসায় যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ খুবই নম্রভাবে থাকে। মাঝে মাঝে রামিমের সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করে। তখন রামিমের বোকাবোকা চাহনী দেখে তার খুব হাসি পায়। তিন্নি মন খুলে হাসে আর রামিম মুগ্ধনয়নে দেখে তাকে।
তিন্নি রামিমের একটা নামও দিয়েছে হাদারাম।
তিন্নির সাথে রামিমের মেলামেশাটা বাসার সবাই সাধারনভাবেই নেয় কারন রামিম ছেলেটার কোনো খারাপ অভ্যাস বা খারাপ কিছু আজও খুজে পায়নি কেউ। তবে তিন্নি রামিমের একটা সিক্রেট জানে ছেলেটা মাঝে মাঝে সিগারেট খায়। যখন তার অঙ্ক না মিলে তখন।
দুদিন পর তিন্নির ফোনে একটা মেসেজ আসে আগের নাম্বারটা থেকে,
– সুভাষিণী একটা ছোট্ট অনুরোধ রাখবেন? দরজাটা খুলে আমাকে উদ্ধার করুন।
অদ্ভুত এক মেসেজ। রিপ্লাই দিতে গিয়েও দেয়না তিন্নি তবে দরজাটা ঠিকই খুলে। এতো ভোরে কেউ জেগে থাকেনা সকাল ৬ টা বাজে তখন দরজার সামনে একটা গিফট বক্স পায় তিন্নি।
তড়িঘড়ি করে নাম্বারটাতে কল দেয় তিন্নি নাম্বারটা আবারো বন্ধ।
বক্সটা নিয়ে ঝটপট রুমে ঢুকে যায় তিন্নি।
উত্তেজনায় হাত কাপতে থাকে তিন্নির বক্সটা খুলে প্রথমেই একটা চিরকুট পায়,
– খুশিতো?
তিন্নি ভাবতে থাকে কে এই ছেলেটা যার আমার খুশি নিয়ে এতো ভাবনা?
একবার খুজে পেলে ইচ্ছেমতো বকবো তাকে সামনে আসতে কি হয়?
এবার আরো অবাক হয় ভিতরে কাচের চুড়ি দেখে।
একেকটা একক রঙের। তিন্নির এটা বেশ পছন্দ হয় তার ইচ্ছে ছিলো সব রঙের চুড়ি একসাথে করে পড়বে।
নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসির আভাস পায় তিন্নি।
ভালোবেসে ফেলেছে কি ছেলেটিকে?
তিন্নি এটা বুঝতে পারে ছেলেটা তার আশেপাশেই আছে। এলাকারই কেউ হবে হয়তো তবে যেই হোকনা কেনো তাকে যে করেই হোক ধরতে হবেই।
এরপর কেটে যায় কিছুদিন কোনো খোজ নেই ছেলেটার না আসছে মেসেজ না অন্যকিছু।
তিন্নি কিছুটা চিন্তিত এইটা নিয়ে।
তার কিছুদিন পর হঠাৎ আরেকটা গিফট আসে তিন্নির কাছে,
গিফট বক্সটা খুলে তিন্নি অবাক হয়ে যায়…

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প