আড়াল পর্ব ০৩

– এইযে হাদারাম আপনি ঘুড়ি বানাতে পারেন?
– হ্যা পারি কেনো?
– আমাকে একটা বানিয়ে দিবেন প্লিজ?
– নাহ আপনাকে দিবোনা আপনি খুব বাজে।
– কেনো আমি কি করলাম?
– আমাকে সবসময় হাদারাম বলেন আমি কি বোকা নাকি?
– আচ্ছা সরি আর কখনো বলবোনা এবার তো বানিয়ে দেন।
– নাহ ওসব সরি টরিতে আমি বিশ্বাসি না কাজ শেষ হয়ে গেলে আবারও বলবেন আমি জানি।
– না আর বলবোনা।
– তো হঠাৎ ঘুড়ি উড়াতে কেনো মন চাইলো আপনার?
– উড়াবো নাতো!
– তাহলে?
– মানে এমনি ইচ্ছা হলো।
– ছাদে তো রোদ প্রচুর। আপনি আঠা, রঙিন কাগজ শলা আর সুতো নিয়ে আমার রুমে আসেন।
– সবই আছে কিন্তু রঙিন কাগজ নেই। আপনি প্লিজ একটু বাজার থেকে নিয়ে আসবেন?
– মানে আমি কেনো আপনি যান।
– প্লিজ আমি মেয়ে মানুষ বুঝেনই তো বাজারে যাওয়া কেমন একটা হয়ে যায়না?
– বাজারে গেলে তো ঘুড়িই কিনে পাওয়া যায় টাকা দেন কাগজের বদলে ঘুড়িই কিনে আনি।
– নাহ আপনি বানাবেন আমি দেখবো।
বাজার থেকে ফেরার সময় রামিম মনে মনে বলে,
আমি বললাম বানাতে আর সে আমাকে দিয়েই বানিয়ে নিচ্ছে। যাই হোক সে তো চায় আমি তার সামনে আসি।আচ্ছা সে কি মেনে নিবে আমাকে নাকি মানবেনা?
এসব ভাবতে ভাবতে রামিম বাসায় চলে আসে।
রুমে ঢুকে নিজের রুমকে কেনো অপরিচিত লাগছে রামিমের।
সবকিছু এতো সুন্দর করে কে গুছালো?
পেত্নিটা নাকি?
রামিম মনে মনে খুশি হলেও রাগ দেখিয়ে বললো,
– আমার জিনিসপত্রে হাত কে দিয়েছে?.
– আমি কেনো?
– আপনি জানেন না পারমিশন ছাড়া কারো জিনিসে হাত দিতে হয়না?
– ওরে আসছে আমার পারমিশন ওয়ালা। আপনি কাগজ কিনে আনলেন কষ্ট করে তাই আমি ভাবলাম গাধাটার রুমটা একটু গুছিয়ে দেই।
কথাটা বলেই জিবে কামড় দেয় তিন্নি।
– সরি আর বলবোনা ভুলে বলে ফেলছি।
– আপনি চেন্জ হবেন না কোনোদিনও।
– আর বলবোনা প্লিজ ঘুড়িটা বানিয়ে দেন।
– কাগজ যেহেতু আনছি বানাতে তে হবেই।
– থ্যাংকস।
সব জিনিসপত্র নিয়ে তিন্নি মেঝেতে বসে পড়ে।
সামনে রামিম ঘুড়ি বানায়।
তিন্নির চুলগুলা এলোমেলোভাবে সামনে চলে এসেছে। পরি না হলেও রামিমের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মনে হচ্ছে তিন্নিকে।
তিন্নির এতোটা কাছে সে কখনো আসেনি।
নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে রামিম।
রামিমের ইচ্ছে হচ্ছে তিন্নির হাতটা চেপে তিন্নি তোমার নিশ্বাসগুলা আমার বুকের ওপর ফেলো বলতে।
কিন্তু বলা তো যাবেনা সেই সুযোগ তো নেই।
ওদিকে তিন্নি ভাবছে আমি যখন ঘুড়িটা ওড়াবো সে কিভাবে জানবে?
সে কি তবে আমার খুব কাছে আসবে?
আমার আশেপাশেই?
তাকে কি দেখতে পাবো আমি?
দেখলেও তো চিনবোনা। যাই হোক সে বলেছে খুব তারাতারি সামনে আসবে। অপেক্ষাই নাহয় করি। যেদিন সামনে পাবো কষে একটা চড় মারবো তার গালে।
এসব ভাবতে ভাবতে তিন্নি হঠাৎ হেসে উঠে।
রামিম তাকিয়ে দেখে তিন্নি হাসছে। তিন্নির মুচকি হাসি এই প্রথমবার দেখলো সে।
রামিমের পৃথিবী থেমে যায় তিন্নি হাসলে।
রামিম প্রায়ই ভাবে এই মেয়েটাকে আমি যেদিন ছুঁয়ে দেখবো যেদিন তার নিশ্বাসগুলা আমার বুকের ওপর পড়বে সেদিন কি আমি মারা যাবো?
আমারতো এখনি দম বন্ধ হয়ে আসছে।
তখন কি হবে?
– তিন্নি?
– হ্যা বলুন।
– এক গ্লাস পানি খাওয়াবেন? গলাটা শুকিয়ে গেছে।
তিন্নি দৌড়ে নিচে চলে যায়। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে রামিমের জন্য।
যদিও শীতকাল তারপরও রামিম খেয়ে নেয়।
ঘোড়টা কাটেনি এখনো তিন্নিকে তার নেশার মতো মনে হচ্ছে আজ।
তিন্নি ঘুড়িটা নিয়ে তার রুমে চলে যায় রামিম সেখানেই বসে থাকে।
বেশিদিন থাকতে পারবেনা সে তিন্নিকে ছাড়া। খুব তারাতারি চাকরিটা পেতে হবে।
বিকেলে তিন্নি ঘুড়িটা নিয়ে ছাদে আসে।
দুজনে মিলে ঘুড়ি উড়ায়।
পরের দিন সকালে তিন্নির কাছে আরেকটা গিফট বক্স আসে।
তিন্নি বক্সটা খুলে দেখে একপাতা টিপ আর একটা চিরকুট।
– খুশি হলাম আপনি দেখা করবেন বলে। খুব শিঘ্রই দেখা হচ্ছে।
তিন্নির যেনো আর তর সইছে না এখনি চলে যেতে ইচ্ছে করছে ছেলেটার কাছে কিন্তু কোথায় পাবে তাকে?
তিন্নি খেয়াল করলো দুদিন ধরে রামিমের দেখা নেই কোথাও।
তিন্নি রামিমের রুমে গিয়ে দেখে রামিমের জ্বর ভীষণ।
গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। জ্বরের ঘোড়ে শুধু তার মা কে ডাকছে রামিম।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প