আড়াল পর্ব ০৪ এবং শেষ পর্ব

তিন্নি ডাক্তার ডাকে। ডাক্তার এসে মেডিসিন দিয়ে যায় আর তিন্নিকে বলে কাওকে রামিমের সাথে থাকতে। রামিম ছেলেটা এই পরিবারেরই একজন হয়ে গেছে তাই তিন্নি তার সাথে থাকবে বলায় কেউ আপত্তি করেনি।
দুদিন পর জ্বর কমে রামিমের। এই দুদিন তিন্নির প্রচুর খাটনি গেছে রামিম সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। এক সেকেন্ডর জন্যও তার থেকে দুরে যায়নি। তিন্নিও জানেনা কিসের টান, কি যেনো একটা মায়া কাজ করছিলো রামিমের ওপর। রামিম ভাবে এবারে আর দেরি করা যাবেনা এই মেয়েটাকে এবার নিজের করে নেওয়ার সময় হয়েছে।
মোটামুটি ভালো একটা জব হয়ে গেছে আম্মুকেও জানিয়ে দিয়েছে রামিম।
বাসায় আম্মু ছাড়া আর কেউ নেই তার তাই আম্মুকেও একা রাখা যাবেনা বয়স হচ্ছে একটা সঙ্গি দরকার। এসব ভেবেই এতো তারাতারি বিয়ের ডিসিশন নইলে তো আরো কিছুদিন যেতো।
দুদির পর তিন্নির কাছে আরেকটা গিফট আসে।
গিফটটা খুলে দেখে একটা কানের দুল আর একটা চিরকুট। এক কানের দুল দেখে তিন্নির কিছুটা মন খারাপ। দুলটা ভিষন পছন্দ হয়েছে কিন্তু একটা আছে আরেকটা নাই।
চিরকুটটা পড়ে দেখে তিন্নি,
– একটা দুল পেয়ে কি মন খারাপ নাকি রাগ হচ্ছে?
আরেকটা দিবো যেদিন দেখা হবে সেদিন। তাহলে দেখা হচ্ছে খুব তারাতারি। হুট করে আপনার সামনে চলে আসবো আমাকে খুজতে হবেনা আমিই আপনাকে খুজে নিবো যদি ভালোবাসার প্রস্তাবে উত্তরটা হ্যা হয়। ভালোবাসবেন কি এই অধম কে? উত্তরটা দিয়েন পরন্ত বিকেলে ছাদে দাড়িয়ে একবার মুচকি হেসে আমি উত্তর খুজে নিবো।
তিন্নি এবার একটু ঘাবড়ে যায়। চিনিনা জানিনা দেখিনি কোনোদিন উত্তরটা কি দিবো?
যে এসব করতে পারে সে আর যাইহোক খারাপ মানুষ হবেনা। বিকেলে ছাদে গিয়ে আড়ালে থাকা ছেলেটার ইচ্ছা পুরন করে তিন্নি।
পরের দিন তিন্নির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেয় রামিমের আম্মু। রামিম ছেলে ভালো আর জবও করছে তাই তিন্নির বাবা দ্বিমত হয়না আবারে বিয়ে ঠিক হলো তিন্নির। তিন্নি কিছুটা অবাক রামিমের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ায়। তবে সমস্যা নেই বিয়েটা হচ্ছেনা । আগের মতো এবারও কেও বিয়েটা ভেঙে দিবে তাই নিশ্চিন্ত তিন্নি।
তিন্নি বাবার কথা কখনো অমান্য করেনি তাই গত পাচ বারের মতো আবারও বাবার টাকা খরচ করে শপিং করছে সে।
ভালোই লাগে তিন্নির কত শপিং কিন্তু বিয়েটা হয়না ফ্রিতে বিনোদন আর শপিং দুইটাই হয়ে যায়।
কিন্তু এবার যেনো সব অন্যভাবে চলছে কেউ যেনো সবকিছু ইশারায় চালাচ্ছে।
তিন্নির ফোনে মেসেজ আসে ১০ তারিখ দেখা হচ্ছে।
তিন্নি তাড়াহুড়ো করে রিপ্লাই দেয় সেদিন তো আমার বিয়ে।
কল দেয় তিন্নি কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ। এবার টেনশন ঘিরে ধরে তিন্নিকে।
তিন্নির বাবা আজ রামিমের আশেপাশেই ঘুরঘুর করতাছে। এই বিয়েটা ভাঙতে দেওয়া যাবেনা।
তিন্নিও বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে কাকে যেনো খুজছে। রামিম হাসে আর ভাবে আজ আর বিয়ে ভাঙবেনা শ্বশুরমশাই কারন প্রতিবার বিয়ে ভাঙা ছেলেটাই আজ বিয়ে করতে বসেছে।
তিন্নির মুড সারাদিন ভালো থাকলেও এবার সময় এসেছে কবুল বলার।
নাহ বিয়েটা ভাঙেনি কোথায় গেলো তিন্নির আড়ালে থাকা লোকটা? সে বলেছিলো আসবে আজ দেখা হবে। তবে কি সে আসেনি? তিন্নি কাঁদতে থাকে।
শুধু রামিম বুঝে তিন্নির কান্নার আসল কারন বাকিরা ভাবে বাবাকে ছেড়ে যাচ্ছে তাই কাঁঁদছে তিন্নি।
বিয়েটা এবার হয়েই যায়। রামিম তৃপ্তিকর হাসি দেয়।ভালোবাসাটা আজ সফল। অবশেষে পেলো তাকে নিজের করে। শুকরিয়া জানায় আল্লাহর কাছে।
বারোটা বাজতে দু মিনিট বাকি।
বাসর ঘরে ঢুকে রামিম। ঘরে ঢুকতেই তিন্নি বলে,
– দেখুন আমি আপনাকে স্বামি হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা।
– কি? মানে কেনো? তাহলে বিয়ে কেনো করলেন?
– রামিম প্লিজ আপনি আমার কাছে আসবেন না আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি।
– কাকে?
– জানিনা কিন্তু ভালোবাসি।
– তাহলে আমাকে কেনো বিয়ে করলেন? আগে বললেই পারতেন আমি মানা করে দিতাম। এখন এসব বলার কি মানে?
– আমি ভাবছিলাম সে এবারও বিয়েটা ভেঙে দিবে কিন্তু আজ সে আসেনি।
– এখনতো আপনি আমার বউ তাইনা? তাহলে তাকে ভুলে যার প্লিজ আমার বাসর রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন, কত কি করবো ভাবছিলাম।
– ওই আপনি চুপ করবেন? যান সোফায় গিয়ে ঘুমান।
,
ধমক খেয়ে রামিম চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ে আর ভাবে হায়রে রামিম বাসর রাতে বউয়ের কাছে ঝাড়ি খাস? কপাল তোরই ভাই।
রামিম ভাবে এবার কি বলে দিবো?
না থাক কাল বলবো।
আবার ভাবে নাহ বলেই দেই বাসর রাত বলে কথা এতোদিনের অপেক্ষার পর আজ আর দুরে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছেনা রামিমের।
– আচ্ছা তিন্নি আপনি যে ছেলেটাকে ভালোবাসেন তার নাম কি?
– জানিনা।
– কেনো? না জেনে কিভাবে ভালোবাসলেন?
– সে বাধ্য করেছে ভালোবাসতে।
– কিভাবে?
– অনেক কাহিনী তবে আড়ালে থেকে লোকটা আমার অনেক উপকার করছে কিন্তু এবারের বিয়েটা যে কেনো ভাঙতে পারেনি সেটাই ভাবতাছি।
– তার মানে ওই ছেলেটাই আপনার আগের পাচ টা বিয়ে ভেঙেছে?
– হ্যা।
– আপনি তাকে দেখেনওনি?
– নাহ।
– যদি বলি আমি সেই আড়ালে থাকা ছেলেটা তবে?
– হাহা ও আপনার মতো হাদারাম না।
রামিম হঠাৎ পকেট থেকে কানের দুলটা বের করে তিন্নির হাতে দিয়ে বলে দেখেনতো চিনেন কিনা?
তিন্নি অবাক হয়ে দেখে এটাতো সেই দুলটা।
– এটা আপনি কোথায় পেলেন?
– কোথায় যেনো পাইছি মনে নাই আরেকটা হারিয়ে গেছে শুনলাম ওইটা নাকি আপনার কাছে?
এবারে রামিমকে অবাক করে দিয়ে তিন্নি বলে,.
– আমার বুকের তিলটা আপনি কিভাবে দেখলেন?
– মানে আপনি এসব জানেন কিভাবে?
তিন্নি তার ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি বের করে রামিমের হাতে দেয়।
রামিমের বুঝতে বাকি নেই এটা তারই ডাইরি।
– আপনি এটা কোথায় পেলেন?
– আপনার রুম গোছানোর দিন হঠাৎ নজর গিয়েছিলো ওটার ওপর তারপর পড়ে সবটা জানতে পারলাম।
– তো জানেনই যখন বলেন নি কেনো? আমি আরো কত কি করলাম।
– আপনি যখন এতো অভিনয় করতে পারছেন কিছুটা আমি করলে দোষ কি?
– ডাইরি দেন।
– আমার দুল দেন।
– দিবো আগে ডাইরি।
– নাহ আগে দুল।
.
রামিম লাইটটা নিভিয়ে দেয়।
– একি লাইট কেনো অফ করলেন?
– দুল নিবেন না?
– হ্যা নিবোতো কিন্তু লাইট কেনো বন্ধ করবেন?
– ফ্রিতে কেউ কিছু দেয় নাকি? আমার পাওনা আমি মিটিয়ে নিচ্ছি সকালে দুলটা নিয়েন।
– রামিম কাছে আসবেন না।
রামিম আরেকটু কাছে যায়।
– আসবেন না বলছি কিন্তু!
রামিম আরো কাছে যায়
– রামিম ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।
রামিম আরো কাছে যায়।
– রামিম….
হঠাৎ সবকিছু নিরব।
রাত গভির হয়েছে মেঘ এসে আকাশটা কালো করে রেখেছে। কখন যে বৃষ্টি নামে!
মেঘের আড়ালে চাঁদ ডেকে গেছে।
শুধুই কি মেঘ আড়াল করেছে?
আড়াল করেছে লজ্জা।
রামিম তিন্নির আজ ফুলসজ্জা।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প