তর্কের এক পর্যায়ে তুর্জ আমাকে কষিয়ে চড় দিতে নিল।আমি এবারও তুর্জের হাত ধরে বললাম
-অনেক সহ্য করেছি, সহ্যের মাত্রা অতিক্রম করলে আমিও আর সহ্য করব না।আমি বোকা না।নিজের অধিকার আদায় কিভাবে করতে হয় আমি জানি।আপনার আগের বউ এর মত অবলা না।আগেরটা পালিয়ে গিয়েছে বলে আমি আপনার মার খাওয়ার পর পালিয়ে যাব সেটা ভাববেন না।বউকে সম্মান দিতে পারবেন না তো বিয়ে কেন করেছেন?কাপুরুষের মত আচরণ করেন আবার মেয়েদের গায়ে হাত তুলে নিজের পুরুষত্ব ফলাতে চান।আপনার আগের বউ পালিয়ে গিয়ে ভালোই করেছে। কারন আপনার মত কাপুরুষের সাথে থাকার চেয়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক ভালো। আমি তো বাধ্য হয়ে আপনার কাছে থাকতেছি।
আরও কিছু বলতে নিব ঠিক এ মুহুর্তে তুর্জ আমার হাত থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আমার গালে জোরে একটা চড় দিল।আমি চড়টা খাওয়ার পর উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি বেশ গম্ভীর হয়ে গিয়েছে আমার একথা গুলো শুনে আর আমাকে চড়টা দিয়ে।আমাকে চড়টা দেওয়ার পর কেমন জানি দম ধরে বসে পড়ল।খেয়াল করলাম কিছুক্ষণের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।আমি বুঝতে পারছিলাম না তুর্জের কি হল?মুহুর্তের মধ্যে তুর্জ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।আমার কলিজার পানি যেন শুকিয়ে যাচ্ছিল।হঠাৎ কি এমন হল যে তুর্জ এভাবে জ্ঞান হারাল।আমি তু্র্জকে ধরে ডাকতে লাগলাম।তু্র্জের কোন সেন্স কাজ করতেছিল না।আমি পানি এনে তুর্জের মুখে ঝাপটা দিতে লাগলাম।তুর্জের জ্ঞান ফিরতেছিল না তবুও।এর মধ্যে তুর্জের রুমে থাকা মেয়েটা চলে গেল।বাড়িতে শুধু আমি একা।আমার শ্বাশুড়ি মা বাইরে।এখন কি করব কোনভাবেই বুঝতে পারছিলাম না।অনেকটা অসহায়ের মত নিজেকে মনে হল।আমার কোন আলাদা মোবাইল ও নাই যে কাউকে কল দিব।আমার শরীরটা বেশ কাঁপতে লাগল।কোনভাবেই তুর্জের জ্ঞান ফিরছিল না।আমি কোন দিশা না পেয়ে তুর্জের মোবাইলটা খুঁজতে লাগলাম।তুর্জের মোবাইলটা দেখলাম ওয়ারড্রবের উপর পড়ে আছে।মোবাইলটা কাঁপা কাঁপা হাতে নিলাম।এর আগে কখনও উনার মোবাইল আমি হাতে নেই নি।যতবার মায়ের সাথে কথা বলেছি সেটা শ্বাশুড়ি মায়ের ফোন দিয়ে।তাই মোবাইলটা নিতেও আমার বেশ ভয় লাগছে।তবুও সাহস করে মোবাইলটা হাতে নিলাম।মোবাইলটা একটা চাপ দেওয়ার সাথে সাথে লক স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠল।বেশ সুন্দরী পরিপাটি একটা মেয়ে।মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগল এ মেয়ে কে?হতে পারে কোন বাইরের মেয়ে।উনার জীবনে তো মেয়ের অভাব নেই।এসব ভেবে লাভ নেই।কিন্তু মোবাইলটা লক করা খুলব কিভাবে?মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না।একের পর এক চেষ্টা করে যেতে লাগলাম।কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না।হুট করে মনে হল মোবাইলে তো ফিঙ্গার দেওয়া আছে তাই তারাহুরা করে উনার কাছে গেলাম।উনার হতটা দেওয়ার সাথে সাথে মোবাইলের লক টা খুলল।লকটা খুলার সাথে সাথে খেয়াল করলাম ঐ মেয়েটার আরেকটা ছবি।আমি বেশ চমকালাম।এটা কোন মেয়ে আর এ মেয়ের ছবি উনার ফোনে কেন?
সাত পাঁচ ভাবার সময় এখন না।তাই সাত পাঁচ না ভেবে আমি আমার শ্বাশুড়ি মাকে কল দিলাম।শ্বাশুড়ি মাকে সবটা খুলে বললাম।আমার শ্বাশুড়ি মা বললেন
-না জেনে এত কিছু না বললেও পারতে।আমি ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছাবে।তুমি ওকে পানির ঝাপটা দিতে থাক।দেখ জ্ঞান ফিরে কি না।
এই বলে উনি ফোনটা কেটে দিলেন।আমার শ্বাশুড়ি মা ফোনটা কাটার পর আমি উনার শরীরে হাত দিয়ে খেয়াল করলাম উনার শরীরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি উনার শরীরটা মালিশ করতে লাগলাম।খানিক্ষণ এর মধ্যে ডাক্তার চলে আসল।ডাক্তার তুর্জকে দেখে বলল
-রোগীর অবস্থা তো তেমন ভালো মনে হচ্ছে না।রোগীকে এখনি হাসপাতালে নিতে হবে।
কথাটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।মনে মনে নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হতে লাগল।কেন জানি না মনে হতে লাগল এসবের জন্য আমিই দায়ী।আমার উচিত হয় নি উনাকে এভাবে কথা বলা।আজকে উনার কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।এর মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসল।উনাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম।আমার শ্বাশুড়ি মা তুর্জের এ অবস্থা শুনে বেশ স্তব্ধ হয়ে গেল।ফোনটা কেটে দিল।আমি এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে গেলাম।তু্র্জকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেল।আমি বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম।আমার মনটা বেশ ছটফট করতে লাগল।এতটা বাড়াবাড়ি আমার করা উচিত হয় নি।কিন্তু কেন উনি এভাবে জ্ঞান হারাল আমার মাথায় সেটাও আসছে না।খানিকক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল
-রোগীর ছোটখাট একটা এটাক হয়েছে।এক সাইড অবশ হয়ে গিয়েছে।প্রচন্ড মানসিক আঘাতে এমন হয়েছে।জ্ঞান ফিরতে আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে।আর হাঁটা চলা তেমন করতে পারবে না।কথাও বলতে পারবে না।থেরাপি এক্সারসাইজ করলে হয়ত ঠিক হতে পারে।তবে সেটাও সময় সাপেক্ষ। আপনার শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় এসেছে।উনাকে সবটা বুঝিয়ে বলা হয়েছিল এর আগে।তবুও কেন সতর্ক হয় নি।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-এর আগেও বলা হয়েছিল মানে?
-এর আগেও উনার এরকম এটাক হয়েছিল।তখনেই উনাকে না করে দেওয়া হয়েছিল যে কোনরকম উত্তেজিত যেন না করা হয়।তবে উনাকে এভাবে কি বিষয়ে উত্তেজিত করল সেটা জানা দরকার।আপনার শ্বাশুড়ি কোথায়?
-মা জ্যামে আটকে আছে।কাছাকাছি চলে এসেছে।এর আগে কিজন্য এমন হয়েছিল আমাকে বলুন প্লিজ।
-সেটা আপনি আপনার শ্বাশুড়ির কাছ থেকে জেনে নিবেন।আপাতত কিছু টাকা একাউন্টে জমা দিতে হবে সেটার ব্যাবস্থা করুন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম
-আমার হাতে তো এখন এত টাকা নেই।মা আসলেই সবটা দিবেন।আপনি চিকিৎসা করতে থাকুন
-আচ্ছা ঠিক আছে।চিকিৎসা চলেতেছে।আপনার শ্বাশুড়ি আসলে দ্রূত আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলবেন।
-আচ্ছা।
তুর্জের এ অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।কেন যে এমন হল।আল্লাহ আমার আর কত পরীক্ষা নিবেন জানি না।আমার ভিতটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।ভিতরটা বেশ শূন্য শূন্য লাগছে।কেন আমি এমন করতে গেলাম এ প্রশ্নটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে।তবুও কাঁদতে পারছি না।হুট করে খেয়াল করলাম মা এসেছে।মাকে দেখে একটু ভরসা পেলাম।দৌঁড়ে মায়ের কাছে গেলাম
-মা ডাক্তার সাহেব বলেছে আপনাকে দ্রূত উনার সাথে যোগাযোগ করতে।
-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেই এসেছি।এখন তুর্জ একটু ভালো আছে।তবে আবার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে।এর আগে এমন হয়েছিল অনেক চিকিৎসা, থেরাপি নেওয়ার পর ভালো হয়েছিল।এখন আবার হয়েছে।কি হবে কে জানে।কে ওর দেখাশুনা করবে আমি সেই টেনশনে আছি।
-মা আপনি দেখাশুনার চিন্তা করবেন না সেটা আমিই করতে পারব।কিন্তু এর আগে উনার এরকম কেন হয়েছিল।
-এগুলো বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে তবুও কথা শেষ হবে না।
-মা আমি উনার স্ত্রী । আমার জানার অধিকার অবশ্যই আছে।আপনি আমাকে বলুন।
-কি শুনবে মা?শুনলে কি তুমি সহ্য করতে পারবে?
-এতকিছু সহ্য করতে পেরেছি আরও কঠিন কিছু হলেও পারব।কপাল তো এমনেই ফাটা আর কত ফাটবে।আপনি বলুন।
-তাহলে শুন তুর্জ যখন…..
চলবে,,,,,,,,
-তাহলে শুন।তুর্জ যখন ভার্সিটিতে পড়ত।তখন তুর্জের সাথে লামিসা নামের এক মেয়ের রিলেশন হয়।প্রথমে ভালো বন্ধুত্ব হয় পরে আস্তে আস্তে সে বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।তুর্জের তখন মদের নেশা, অন্য কোন মেয়ের নেশা ছিল না।তখন আমার সোনার টুকরা ছেলে ছিল তুর্জ।লামিসার সাথে বন্ধুত্বটা আস্তে আস্তে প্রেমে গড়ায়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সম্পর্ক।একদিন আমার ছেলে এসে আমাকে লাজুক মুখে বলল
-মা একটা কথা বলব।রাগ করবে না তো।
আমি হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম
-কি কথা?রাগ কেন করব।টাকা লাগবে?
-আরে মা টাকা লাগবে না।তবে…
-কি রে আটকে গেলি যে।
-নাহ মানে।
-কি রে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিস মেয়েদের মত ঘটনা কি?
আমার ছেলে লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিল
-মা আমি লামিসাকে খুব পছন্দ করি।তুমি যদি চাও আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
আমারও মনে মনে লামিসাকে বেশ পছন্দ ছিল।মেয়েটা সুন্দরীও ছিল আর শিক্ষিতাও ছিল।আচার ব্যাবহার ও অনেক ভালো ছিল।তাই আমি ছেলের প্রস্তাবে আর অমত করেনি।তুর্জকে হাসতে হাসতে বললাম
-এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?লামিসাকে আমার ও বেশ পছন্দ।কবে ওদের বাড়ি যাব আমাকে বলিস।
তুর্জ মাথা চুলকাতে চুলকাতে জবাব দিল
-তুমি যদি চাও কালকেই যাব ওর বাসা থেকেও অন্য জায়গায় বিয়ের প্রেসার দিচ্ছে।এজন্য যত তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় ততই ভালো।
-আচ্ছা। কালকেই যাব তাহলে।ওদেরকে জানাতে বল।
পরদিন সকালে আমি আর তুর্জ লামিসাদের বাসায় যাই।লামিসার মা,বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখি।তারাও অমত করে নি।তারাও হাসি মুখে বলেছিল
-ছেলে মেয়ে পছন্দ করেছে এখানে আমাদের অমতের কিছু নেই।
কিছুদিনের মধ্যেই লামিসা আর তুর্জের বিয়ে হয়।বেশ ভালোই কাটছিল ওদের সংসার।কোন জগড়া বিবাদ কিছুই ছিল না।হাসি খুশি সুখী সংসার বলতে পার।
মা এবার কথাগুলো বলে একটু দম নিতে লাগলেন।আমি বুঝতে পারলাম না এত সুখী সংসার রেখে লামিসা কেন চলে গেল।তার মানে লামিসা কি পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল।আমি মাকে প্রশ্ন করলাম
-মা লামিসাকে কি তাহলে পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়েছিল?অন্য ছেলের সাথে কি চলে গিয়েছিল।
মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল
-নাহ এমন কিছুই হয় নি।
-তাহলে?
-জানি না লামিসার কি হয়েছিল কোথায় গিয়েছে আর কেন গিয়েছে।লামিসাকে ৫ বছর যাবত পাওয়া যাচ্ছে না।বিয়ের ১ বছর পর যে কোথায় চলে গিয়েছিল বুঝতে পারে নি।জানতেও পারি নি।অনেক খুঁজ নিয়েছি খুঁজ পায় নি।সবাই তো বলে বসল পালিয়ে গিয়েছে কোন ছেলের সাথে।তুর্জ ও এখন ভাবে হয়ত লামিসা পালিয়ে গিয়েছে।এরপর থেকে তুর্জের বদঅভ্যাস গুলো বাড়তে থাকে।অনেকবার বিয়ের কথা বলেছি রাজি হয় নি।লামিসাকে কোনভাবেই তুর্জ ভুলতে পারে নি।লামিসার কথা শুনলেই তুর্জ রেগে যায়।লামিসা চলে যাওয়ার পর এমন একটা এটাক হয়েছিল।আর আজকে তুমি ওকে এসব নিয়ে বেশ কথা শুনিয়েছ তাই আবার এমন হল।
আমার ভিতরেও একটা প্রশ্ন জাগল তাহলে লামিসা কোথায় গেল?মনে মনে বেশ অপরাধবোধ ও হল। কারন না জেনে উনাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।এমনটা করা আমার উচিত হয় নি।কথা শুনতে শুনতেই ভোর হয়ে গিয়েছে।মসজিদে ফজরের আযানের ধ্বনি শুনা যাচ্ছে।আমি অযু করে নামাজে দাঁড়ালাম।রবের কাছে আমার স্বামীর সুস্থতা কামনা করলাম।আমার দুই নয়নে শ্রাবনের মেঘ যেন বেয়ে চলেছে।নামাজ শেষ করে এসে দেখলাম ডাক্তার সাহেব এসেছে।ডাক্তার সাহেবকে উদ্বিগ্ন গলায় জিজ্ঞেস করলাম
-তুর্জের অবস্থা কেমন?
ডাক্তার সাহবে স্বস্তি ভরা গলায় জবাব দিলেন
-আমরা তো ভেবেছিলাম উনি হাঁটতে চলতে পারবে না।কিন্তু এটা তো ক্ষতি উনার হয় নি।হাঁটতে চলতে পারবে তবে কথা বলতে পারবে না।উনার মুখের ব্যায়াম গুলো বেশি বেশি করাতে হবে আর উনার সামনে বেশি বেশি কথা বলতে হবে।তাহলে হয়ত কথা বলতে পারবে আবার।আর আবারও সাবধান করে দিচ্ছি উনাকে কোনভাবে উত্তেজিত করা যাবে না।
আমি শান্ত সুরে জবাব দিলাম
-সেটা মাথায় থাকবে।আমি কি একটু দেখা করতে পারি উনার সাথে?
-হ্যা পারবেন।তবে যেকোন একজন যেতে পারবেন।আপনাদের মধ্যে কে যাবেন ভেবে একজন যান।
আমি কথাটা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।মনে হয় আমার শ্বাশুড়ি মা যেতে চাইবে।কিন্তু ঠিক এ মুহুর্তে আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
-মা তুমিই যাও।
কথাটা শুনে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না।দৌঁড়ে তুর্জের কাছে চলে গেলাম।দেখলাম উনি তাকিয়ে আাছে।আমি উনাকে ধরে কাঁদতে লাগলাম।উনি আমাকে ছাড়াতে চাইলেও আমি উনাকে ছাড়তে চাইলাম না।ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম
-আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আর এমন করব না।আমি কিছু না জেনে এমন করেছি।আপনি যে সুস্থ আছেন এতেই আমি খুশি।
একের পর এক এসব বলতে লাগলাম।হঠাৎ করে খেয়াল করলাম তুর্জ আমায় চিমটি দিয়ে বসল।আমি তুর্জের চিমটি খেয়ে তুর্জের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তুর্জ কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না।হাতে ইশারা দিয়ে যেন কি বুঝাতে চাচ্ছে।অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম উনি খাতা কলম চাচ্ছে।আমি একটা খাতা আর কলম জোগাড় করে উনাকে দিলাম।উনি কি একটা যেন লিখছেন।লিখার পর আমাকে দেখালেন।আমি লিখাটা দেখে বেশ লজ্জা পেয়ে বসলাম।উনি লিখেছেন
-তুমি আমার উপর এভাবে হামলে পড়েছ কেন?আর যা হয়েছে তো হয়েছেই এটা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই।এত মাফ চাইতে হবে না।আর দয়াকরে আবার আমাকে ঝাপটে ধরে আমার উপর হামলে পড় না।
আমি লজ্জায় লাল মুখ হয়ে মাথা নেড়ে বললাম
-আচ্ছা।
দুইদিন হাসপাতালে থাকার পর উনাকে বাসায় নিয়ে গেলাম।ডাক্তারের কথা মত উনার সাথে অনেক কথা বলতে লাগলাম।বেচারা মাঝে মাঝে আমার কথা শুনে হাসে আবার বিরক্ত ও হয়।কিন্তু আমার কথার ফুলঝুরি আর থামে না।উনি বিরক্ত হয়ে খাতায় লিখল
-তুমি এত বক বক কেন করছ পাগলের মত।বেশ বিরক্ত লাগছে।আমার রাগ উঠার আগে এখান থেকে বের হও তো।
-হ্যা আপনার কথায় আমি বের হয়ে যাই।আর আপনি এভাবে পড়ে থাকেন।আমি বের হওয়ার পর আপনার সেবা কে করবে শুনি?ঐদিন বাসায় যে রুব্বানকে নিয়ে এসেছিলেন।যে রুব্বানের জন্য আমাকে ঘর থেকে বের করে উনার সাথে থেকেছিলেন।সে রুব্বান তো আপনার এ হাল দেখে চলে গিয়েছিল।ঐগুলা তো আসে টাকার জন্য।কেন আপনি এসব করবেন।আমি আপনার স্ত্রী। একজন মানুষের জন্য তো আপনি আরেকজনকে কষ্ট দিতে পারেন না।আর সবাই তো এক না।আর এটা ভাব্বেন না যে আমি চলে যাব।চলে যাওয়ার হলে এত কিছু সহ্য করতাম না।আপনি শুধু আমার থাকেন।আপনার এ অবস্থা না হলে জানতামেই না আমি আপনাকে কতটা ভালোবেসেছি।আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন উপলব্ধি করেছি যে আমি আপনাকে মনের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।আর শুনেন আজকে নাকি চকলেট ডে।তাই আপনার জন্য চকলেট এনেছি।
উনি আবারও বিরক্ত মাখা মুখে কাগজে লিখলেন
-তুমি যাও তো।আমি চকলেট খাব না।আর পরের বার ঘরে আসলে একটা কস্টেপ নিয়ে আসবা।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম
-আপনি কস্টেপ দিয়ে কি করবেন?
কাগজে লিখে জবাব দিলেন
-তেমার মুখে মারব।
আমি হাসি হাসি মুখে বললাম
-আপনি চকলেট টা না খেলে কিন্তু আমি আরও বক বক করব।জানেন তো কলেজে আমি অনেক বকবক করতাম।আমার পাশে কেউ বসত না আমার বকবকের জ্বালায়।
কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে হাসি হাসি মুখে লিখে জবাব দিলেন
-সে তোমাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আর চকলেট খানা দাও।আমি খাচ্ছি।আর তুমি এখন বিদায় হও।
আমি চকলেটটা দিয়ে চোখ টিপুনি দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
খানিক্ষন পর উনার রুমে এসে বেশ চমকে গেলাম।কারন উনি…