আমার ঘর আমার সংসার ৫ম পর্ব

খানিকক্ষণ পর উনার রুমে এসে চমকে গেলাম কারন উনি একটা কাগজে লিখেছেন
-সরি তোমাকে এতদিন এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য।তোমার সব ঠিক আছে।তবে তুমি বকবক টা একটু বেশি কর।বকবকানি আমার একদম ভালো লাগে না।
আমি উনার এ লিখাটা পড়ে এত খুশি হয়েছি যে কি বলব।আমি খাুশিতে নাচতে নাচতে বললাম
-বকবক তো একটু করতেই হবে।না হলে আপনি সুস্থ হবেন না।
কাগজে পুনরায় লিখলেন
-তোমার মত এরকম বকবক লামিসাও করত।কেমনে পার এত বকবক পকপক করতে?
লামিসার কথাটা শুনে কেন জানি না লামিসাকে বেশ হিংসা লাগল।হিংসার পাহাড় টা নাক ফুলে বের হল।নাক ফুলাতে ফুলাতে বললাম
-আপনি মনে হয় লামিসাকে খুব বেশি ভালোবাসেন তাই না।
উত্তরে উনি লিখলেন
-সত্যি বলতে লামিসাকে অনেক ভালোবাসি আর আগেও ভাসতাম।লামিসা যে কোথায় চলে গেল বুঝতে পারলাম না আজও।কোন টাকা পয়সা নেয় নি।টাকা পয়সা নিলে হয়ত ভাবতাম টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।কিন্তু কোথায় যে গেল আজও তার হদিশ মিলল না।খুব কষ্ট হয় মাঝে মাঝে উত্তর খুঁজে না পেয়ে।
আমি বুঝতে পারলাম উনার ভিতরে বেশ কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এখন কোনভাবেই উনাকে কষ্ট পেতে দেওয়া যাবে না।আমাকেই যা করার করতে হবে।আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
-আমাকে কি লামিসা ভাবা যায় না।লামিসার মত আমাকে ভালো না বাসুন লামিসার ভালোবাসার থেকে একটু ভালোবাসা তো দিতে পারেন।আমি না হয় ঐটা নিয়েই থাকব।আমি তো আপনার স্ত্রী আমাকে কি ভালোবাসা যায় না।কাছে রাখা যায় না।আবার কি নতুন করে সব শুরু করা যায় না?
এবার ও উনি কথাগুলো শুনে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল।কিন্তু আমি নাছোড়বান্দার মত ধরেই ছিলাম।উনি হুট করে আমাকে চিমটি দিয়ে বসল।চিমটি খেয়ে আমি আহ করে বলে উঠলাম
– কি ব্যাপার চিমটি দিলেন কেন?
উনি কাগজে রাগ রাগ মুখে বললেন
-তুমি হুট করে এভাবে ঝাপটে ধর কেন।
আমি লজ্জা মাখা মুখে উত্তর দিলাম
-আমার মন চাইছে।আমার কথার উত্তর গুলো কিন্তু পাই নি।
উনি গজগজ করে কাগজে লিখলেন
-সব তো শুরু করা যায় তবে আমার যে অনেক বদঅভ্যাস সেগুলো একদিনে ঠিক হবে না।আর লামিসার জায়গা দিতে পারব না।ওকে আমি যে কতটা ভালোবাসি বলে বুঝাতে পারব না।ওর জায়গা না দিয়ে যতটা পারা যায় শুরু করব।
যাক উনি যে নতুন করে সব শুরু করতে রাজি হয়েছে এটাই অনেক।আমি একটু হেসে বললাম
-আমার শুধু একটা রিকুইস্ট আপনি কোন রুব্বান বাসায় আনবেন না।মানে মেয়ের নেশাটা বাদ দিতে হবে।
উনি মাথা ঝাকিয়ে বললেন আচ্ছা।
আমার যে কি খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারব না।এত খুশি আগে কখনও লাগে নি।আমিও এখন বলতে পারব এটা আমার ঘর আমার সংসার।তুর্জকে আবার ঝাপটে ধরে বললাম
-আমি অনেক খুশি হয়েছি।আমার এতেই হবে।আমি আপনাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি।
উনি আবারও আমাকে চিমটি দিয়ে বসল।চিমটি খেয়ে আমি উনাকে ছাড়লাম।উনি আবারও লিখলেন
-তোমার সমস্যা কি?আর এভাবে ঝাপটে ধর কেন?ঝাপটে ধরতে না করেছি না।হুট করে ঝাপটে ধরে দম বন্ধ করে দাও।তোমার মত পাগল কম দেখেছি।
আমি একটু কপালটা কুচকে কানটা ধরে জিহ্বায় কামড় দিয়ে জবাব দিলাম
-জানি না কেন এমন করে ফেলি।অটো হয়ে যায়।
-পড়া লিখা কতদূর করেছ?
-এইচ.এস.সি দিব।সামনে পরীক্ষা।
-এই মেয়ে তোমার সামনে পরীক্ষা আর তুমি এখানে এভাবে সময় নষ্ট করছ?
– না মানে আমি তো বই নিয়ে আসে নি।
উনি আবার কাগজে লিখে বললেন
-মাকে গিয়ে এটা দিয়ে আসবে।
কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলাম উনি লিখেছেন
-মা ইশিতার সামনে পরীক্ষা আমি না হয় জানতাম না।তুমি তো জানতে।তাহলে বই কেন কিনে দাও নি।আজকেই বই কিনে দিও।
আমি দৌঁড়ে লিখাটা মায়ের কাছে নিয়ে গেলাম।মা লিখাটা পড়ে হাসতে হাসতে বললেন
-তুর্জ একটু পড়া পাগল ছেলে ছিল।তোমাকে দেখো পড়ার জন্য কত প্রেসার দেয়।আজকে তোমার জন্য বই যদি না কিনে আনি দেখবে আমার উপর রাগ করে বসবে।আমি তোমার জন্য বই কনে আজকেই আনব।এখন তুমি তুর্জের গোসলের ব্যাবস্থা কর।
-আচ্ছা মা আমি যাচ্ছি।
এ বলে আমি তুর্জের রুমে গিয়ে তুর্জকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যেতে লাগলাম।বেচারা জানি কি বলতে চাচ্ছে।বেচারার হাতে খাতা কলম ও নাই আর কিছু বলতেও পারছে না।আমি তুর্জকে জোর করে ধরে গোসল খানায় এনে গোসল করাতে লাগলাম।বুঝতে পারছিলাম উনি বেশ রেগে যাচ্ছে।তবুও গোসল করাতে লাগলাম।গোসল শেষে উনাকে বললাম
-হয়েছে এবার রুমে যান এ তোয়ালেটা পড়ে।আর খাটের উপর কাপড় রাখা আছে পড়ে নিবেন
তুর্জ আমার হাত থেকে তোয়ালে টা জোরে টান দিয়ে রুমে প্রবেশ করল।আমিও গোসল টা সেড়ে ফেললাম।।
গোসল থেকে বের হয়ে বেশ সারপ্রাইজ পেলাম।কারন এত অল্প সময়ে যে শ্বাশুড়ি মা বই নিয়ে আসবে বুঝতেই পারি নি।চক চকা তক তকা বই গুলো যেন টেবিলের উপর জলকাচ্ছে।আর তুর্জ সেগুলো হাত দিয়ে দেখছে।কি যে আনন্দ লাগছে।আমি আনন্দের চুটে তুর্জকে গিয়ে আবার ঝাপটে ধরে ছেড়ে দিলাম।জিহ্বায় কামড় দিয়ে কান ধরে বললাম
-ভুল করে ধরে ফেলেছি।আবেগে।রাগ করবেন না।প্লিজ।
উনি মুচকি হাসি দিয়ে হাতে ইশারা দিয়ে বললেন ঠিক আছে।আর আমাকে হাতে ইশারা দিয়ে বুঝালেন।এখন যেন খেয়ে পড়তে বসি।আমি মাথা নেড়ে হ্যা বলে দৌঁড়ে খাবার নিয়ে আসলাম।উনাকে খাবার দিলাম।নিজেও খেতে বসলাম।উনি আমাকে ভালো ভালো মাছের পিছ দিয়ে ইশারা করে খাওয়ার জন্য।আমি কত করে বললাম।আপনি খান। নাহ উনি কথা শুনলই না।উনি বুঝাল আমাকে অনেক পড়তে হবে আর খেতে হবে।খাওয়ার পর্ব শেষ করে পড়তে বসলাম।
আহ….কতদিন পড় বই হাতে নিলাম।নতুন বইয়ের গন্ধ যেন আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে।বইগুলো দেখে খুশিতে নাচতে লাগলাম।ঠিক এ সময় খেয়াল করলাম।তুর্জ আমার ঘাড়ে তার ঠোঁট দিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে।আজকে তুর্জের স্পর্শ আমার কাছে অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে এ স্পর্শ পেয়ে আমি আবেগে ডুবে যাচ্ছি।নিজেকে সামলানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলাম।মুহুর্তের মধ্যেই কি যে অণুভুতি জাগল বুঝতে পারি নি।তুর্জের ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে ভালোবাসার সাগরে ডুবে গেলাম।শীতল অণুভুতিতে মনটা শান্ত হয়ে গেল।প্রবল জড় যেন সবকিছু তছনছ করে দিয়ে আবার থেমে গেল।এক পশলা ভালোবাসার মেঘ আমার চোখ দিয়ে নামল।ইশ এ ভালোবাসার ছোঁয়ায় তো আমি এতদিন খুঁজছিলাম।আজকে পেয়ে যেন আমার অশান্ত মন শান্ত হল।আমি স্বস্তি পেলাম।তুর্জকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলাম।আদো আদো হাতে তুর্জ আমার কপালে পড়ে থাকা চুল সরিয়ে একটা চুমু একে দিল।মনের গহীনে থাকা সব কষ্ট যেন নিমিষেই মিলিয়ে গেল।আমি এক আদুরে লজ্জাবতী লতা হয়ে গেলাম।খানিকক্ষণ পর তুর্জের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম কিন্তু তুর্জ ছাড়ল না।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম এত ভালোবাসা আমার কাপলে সইবে তো।ভাবতে ভাবতে নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।তুর্জের চিমটি খেয়ে ভাবনার ঘোর কাটল।আমি তুর্জকে ছেড়ে উঠলাম।আর বললাম
-হুট করে চিমটি দিলেন কেন।
তুর্জ ইশারা দিয়ে বলল আমি এত চুপ হয়ে আছি কেন।আমি বললাম।
-এমনি।
পরের দিন সকালে খেয়াল করলাম তুর্জ কোথায় জানি যাচ্ছে।আমি জিজ্ঞেস করলাম
-আপনি এ অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন।
তুর্জ কাগজের গুটা গুটা অক্ষরে লিখলেন
-আমি এখন ঠিক আছি।আর একটু বাইরে যাচ্ছি।আর এখন আবার ঝাপটে ধর না। আমি বাইরে থেকে এখনেই চলে আসব।আর মায়ের ফোনটা হাতে রেখ।মাঝে মাঝে মেসেজ দিব ওকে।আর তুমি এখন পড়তে বস।
এ বলে উনি চলে গেলেন।
আমি পড়তে বসলাম।খানিকক্ষণ পর উনি মেসেজ দিলেন
-তোমার বডি সাইজ কত?
মেসেজটা দেখে কেমন জানি লাগছিল।হুট করে উনি বডি সাইজ জিজ্ঞেস করল কেন?আমি একটু লজ্জাও পাচ্ছিলাম।মেসেজের রিপ্লাই এ সাইজটা বললাম।কিন্তু কিছুটা রাগ ও হল।কতটা শয়তান।কিসব জিজ্ঞেস করে।
বেশ কিছুক্ষণ পর কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে গেলাম।বুঝতে পারলাম উনি এসেছে।দরজা খুলে দেখলাম উনি দাঁড়ানো হাতে কিছু জিনিস পত্র নিয়ে।আমি সব কিছু নিজ হাতে নিয়ে উনাকে সাথে করে রুমে ঢুকলাম।আর বললাম
-লজ্জা কি নাই আপনার কি সব মেসেজ দেন?
উনি হাসতে হাসতে ইশারা দিল।ব্যাগ গুলো খুল।আমি ব্যাগ গুলো খুলে অবাক হয়ে গেলাম।কারন উনি আমার জন্য অনেক গুলো জামা,ড্রেস আর শাড়ি এনেছে।
বেশ ভালোই কাটছিল আবার দিনগুলো।তুর্জকে নিয়ে কিছুদিন পর হাসপাতালে যাই।হুট করে তুর্জ….

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প