আমার_ঘর_আমার_সংসার পর্ব ১ সূচনা পর্ব

আমার বিয়ে হয়েছে ১ সপ্তাহ হয়েছে।কিন্তু আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্কটা তেমন ভালো না।বিয়ের রাত থেকে উনি আমাকে যতবার কাছে নিয়েছে তা শুধু শারিরীক চাহিদার জন্য।এর বাইরে উনি আমার সাথে ঠিক মত কথাও বলে না।আমাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিক সূত্রে।আমার স্বামী আমাদের পরিচিত ছিল।কিন্তু উনারা ঢাকায় থাকার কারনে তেমন কোন যোগাযোগ ছিল না।
আমার শ্বাশুড়ি কিছুদিন আগে গ্রামে বেড়াতে আসে।আর সেখানে আমাকে দেখে উনার পছন্দ হয়।আর বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা মুটামুটি।আর আমি সবে মাত্র ১২ ক্লাসে পড়ি।পাত্রের তুলনায় আমি অনেক ছোট।কিন্তু পাত্র যোগ্য আর আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার দরুণ আমার পরিবারও অমত করে নি।বিয়ের আগে আমি আমার স্বামীকে দেখে নি।আমার স্বামীও আমাকে দেখতে আসে নি।বিষয় টা নিয়ে আমি একটু আপত্তি জানালে আমার মা বাবা বলেছিল যে
-ছেলে হয়ত মায়ের কথা শুনে তাই মায়ের পছন্দের বাইরে বিয়ে করবে না।তাই মা যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করবে।এজন্য হয়ত আলাদা করে দেখার কোন প্রয়োজন মনে করে নি।
-কিন্তু মা তবুও তো উনার মত আছে কি না।আর উনি তো শহরে থেকে বড় হয়েছে আর আমি গ্রামে।একটু দ্বিমত তো থাকতেই পারে।উনার সাথে কথা বললে হয়ত ভালো হত।
মা একটু রাগ হয়েই বলল
-অমত থাকলে তো ছেলের মা সব জানাত।আর বিয়ের ব্যাপারে তোর এত নাক গলাতে হবে না।এত ভালো পাত্র পাচ্ছিস তবুও মনে এত দ্বিধা কেন?
মায়ের কথাটা শুনে তখন খুব খারাপ লেগেছিল।হয়ত আমি যোগ্যতায় উনার কম।তবুও তো আমার একটা মতের মূল্য দেওয়া উচিত ছিল।তবুও মা বাবার কথাটাকে মেনে নিয়েছিলাম।তারা যা বলেছে তাই করেছি।বিয়ের দিন যখন বরকে প্রথম দেখি তখন মনটা বেশ আনন্দে নেচে উঠেছিল কারন মনে হয়েছিল আমি মা,বাবার কথা শুনে ঠকে নি।আমি উনাকে দেখে চোখ সরাতে পারছিলাম না।এত সুন্দর ছেলে আমার স্বামী হবে ভেবেই ব্যাকুল হয়ে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু সে খুশি আমার বেশিক্ষণ টিকল না।বাসর রাতে আমার বর প্রথমে এসেই আমাকে বলেছিল
-তোমার মত মেয়েকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না।মা পছন্দ করেছে আর মায়ের অসুস্থতার জন্য শুধু তোমাকে বিয়ে করেছি।
কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগল।মুখ ফুটে কোন জবাব দিতে পারলাম না।কষ্ট হতে লাগল খুব।চোখে একফোঁটা শিশিরবিন্দু নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।রাত তখন ২ টা।খেয়াল করলাম কেউ আমার শরীরের নরম মাংসে হাত বুলাচ্ছে।আমি চিৎকার দিয়ে উঠতে নিতেই আমার মুখটা চেপে ধরল।আদু আদু আলোতে আমি চোখ মেলে দেখতে লাগলাম এটা কে?খেয়াল করে দেখলাম এটা আমার স্বামী।বুঝে উঠার আগেই উনি আমাকে একের পর এক স্পর্শ করতে লাগল।কেন জানি না সে স্পর্শ টা আমার শরীরে কাটার মত লাগছিল।শারিরীক সেই সময়টাই আমার স্বামী আমাকে বেশ কয়েকবার জান ভালোবাসি তোমায়,এ কথাটা বলেছে।যখন শারিরীক চাহিদাটা শেষ হয়ে গেল তখন সে আমাকে রেখে চলে গেল।
একেই বুঝি স্বামীর ভালোবাসা বলে।বয়সটা খুব বেশি না আমার।তবে হাজার খানেক স্বপ্ন নিয়ে এ বাড়িতে ঢুকেছিলাম।কি চেয়েছি আর কি হচ্ছে।উনি আমার সাথে তেমন কোন কথা বলে না।শুধু রাতের ঐ সময়টুকুতেই বলে জান ভালোবাসি তোমায়।এছাড়া উনার মুখে আমি ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণ করতে দেখি নি।মা,বাবাকে সবটা বলার সাহস হল না।কারন তারা কষ্ট পাবে।
বেশ কিছুদিন পর খেয়াল করলাম আমার স্বামীর অনেক বাজে নেশাও রয়েছে।সে সাথে প্রধান ছিল মেয়ের নেশা।টাকা পয়সার অভাব আমার স্বামীর নেই।আমার শ্বশুর সাহেব মারা গিয়েছেন অনেক আগেই।আমার শ্বাশুড়ি সব কিছু সামলিয়েছেন এরপর।আমি কাঁদতে কাঁদতে আমার শ্বাশুড়িকে বললাম
-মা আপনি আপনার ছেলের সব বাজে নেশার কথা জানতেন।বিয়ের আগে একটু বলতে পারতেন।আমি কিভাবে এসব সহ্য করব আপনিই বলুন।একেক দিন একেক মেয়ের সাথে থাকে কিছু বললেই গায়ে হাত তুলে।আমাকে আপনিই বলেন কি করব।
আমার শ্বাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
-প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তখন বুঝে ছিলাম তুমি অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে।সংসার, ব্যাবস্যা সামলাতে গিয়ে আমার তুর্জকে বেশি সময় দিতে পারে নি।(আমার স্বামীর নাম তুর্জ আর আমার নাম ইশিতা)।কখন যে তুর্জ বিগড়ে গিয়েছে বুঝতে পারে নি।কাজের মানুষের কাছে বড় হয়েছে তাই ওর খেয়ালটা আমি নিতে পারে নি।আর বুঝতে যখন পেরেছি সেটা অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পর।তখন আমার করার কিছু ছিল না।মা আমাকে ক্ষমা করে দিও।বিয়ে যেহুত হয়ে গিয়েছে একটু মানিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর।ভেবেছিলার বিয়ের পর হয়ত সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু ঠিক হয় নি।তুমি একটু বুঝাও।তোমার সংসার তুমি গুছিয়ে নাও মা।
মায়ের কথাগুলো শুনার পর আর কিচ্ছু বলতে মন চাইল না।কত সহজ করে উনি বলে দিলেন আমার সংসার আমি গুছিয়ে নিতে।অথচ কাকে নিয়ে সংসার গুছাব যে কিনা আমাকে ভালোবাসে না।শারিরীক চাহিদার বাইরে কিছু ভাবতে পারে না।মদ, সিগারেটের নেশার সাথেও মেয়ের নেশাও আছে।মনটা ভেঙে গেল।আমি আমার মাকে বলার পরও আমার মাও বলল
-দেখ মা মেয়েদের বিয়ে একবারেই হয়।তুই আর অহেতুক ঝগড়া করিস না।মানিয়ে নে
মানিয়েই সংসার করতে হয়।আমরাও মানিয়েই সংসার করেছি।
মায়ের কথাগুলো শুনেও আজকে নিজেকে বেশ পরগাছা মনে হতে লাগল।কেউ আমার মনের কথাটা ভাবল না।আমার পরিস্থিতি টা চিন্তা করল না।যে যার মত করে বলে দিল।বুঝে গিয়েছি অহেতুক আর সুখের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।এ স্বপ্ন আর আমার কপালে টিকবে না।
প্রতিরাতেরই একেই ঘটনা একেই কাজ।খুব কষ্ট হলেও সহ্য করে নিতে হবে।সেদিন আমার পিরিয়ড হয়েছিল।আমি খেয়াল করলাম আমার স্বামী নেশা করে ঘরে ফিরেছে।আমি আমার স্বামীকে ধরে ঘরে ঢুকালাম।খাবার দিতে চাইলাম।খাবার খাবে না বলে দিয়েছে।আমারও আর খেতে মন চাইল না।না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।খানিকক্ষণ পর উনার স্পর্শ অণুভব করলাম উনাকে বললাম আমার তো এখন পিরিয়ড চলছে দয়াকরে এ সময়টায় আমাকে কষ্ট দিবেন না।এমনিতেও আমার অনেক কষ্ট হয়।উনি আমার কথায় কোন সাড়া না দিয়ে উনার মত যা করার করে নিল।আমার সেদিন মনে হয়েছিে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে।স্বামীরা বুঝি এমনি হয়?তখন উনার মুখে ভালোবাসি শব্দটা আমাকে শুধু যন্ত্রণায় দিল।অমানসিক এ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে সারারাত পার করলাম।সকালে উঠার শক্তি পাচ্ছিলাম।কোন রকমে উঠে কাপড় চেন্জ করলাম।মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলাম।কাকে বলব আমি এসব কথা।কাকে বলব আমি আমার স্বামীর কাছে প্রতিদিন রেইপ হচ্ছি।আইন তো এমন কোন কথা বিশ্বাস করবে না।সবাইকে বললে বলবে নিজের স্বামী চাইবে না তো কে চাইবে?কিন্তু কেউ আমার মানসিক অবস্থাটা বুঝতে চাইবে না।নিজেকে আজ বেশ অসহায় লাগছে।
এসব অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলাম না।একবার মনে হচ্ছিল নিজেকে শেষ করে দেই।কিন্তু সে সাহসটা আর পেলাম না।কয়েকদিন পর একটা বিষয় জানতে পেরে কষ্টে বুক ফেটে গেল।আমার বাবা,মা টাকার লোভে পড়ে ছেলের কোন খুঁজ খবর না নিয়েই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল।হায়রে সমাজ। এ সমাজে মানুষ শুধু টাকাটাই দেখে।ভালো মানসিকতা আর কেউ দেখে না।আজকে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হতে লাগল।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াটায় যেন পাপ মনে হতে লাগল।কারন আমি জানতে পারি আমার স্বামী…

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প