কনে_বদল পর্ব০২

রাত শেষ হওয়ার আগেই সাইমুম আমার কাছে এলো। এসে বললো,’তুমি কী ভেবেছো সকাল বেলা আমার মার কাছে সব বলে দিবে?’
আমার মুখ তখনও কচস্টেপ দিয়ে আটা।হাত পা গামছা দিয়ে বাঁধা।সারা শরীর নগ্ন। উত্তর দেয়ার ক্ষমতা নাই।মুখ থেকে শব্দ বাইরে বেরুচ্ছে না।যদি বেরুতো তবে আমি ওকে বলতাম,’তোর মতো একটা কুকুরের সাথে আর এক মিনিটও থাকার ইচ্ছে নাই আমার।কাল সকালে তোর মাকে বলবো, আপনার ছেলের মতো কুলাঙ্গার ছেলের সাথে আর এক মিনিটও আমি নাই। আপনার ছেলেকে আমি তালাক দিলাম।এক তালাক। দুই তালাক। তিন তালাক।
সাইমুম এবার বললো,’আসলে তুমি মনে মনে অনেক কিছুই ঠিক করছো। হয়তোবা কাল আমায় ডিভোর্স দিয়ে চলেও যেতে চাইবে। কিন্তু সেই সুযোগটা তুমি পাবে না আফসান!’
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।
সাইমুম এবার একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,’কারণ, তোমার নগ্ন শরীরের ভিডিও এখন আমার কাছে। আমার ফোনে। আমার মেমোরিতে। তুমি উল্টাপাল্টা কিছু করতে চাইলে মুহূর্তে এটা ভাইরাল হয়ে যাবে। এমনকি তোমার বাবা তার নিজের চোখে দেখবে তোমার সুন্দর নগ্ন শরীর!’
সাইমুম হাসছে। সেই হাসি ভয়ংকর!
আমি ভয়ে কাঁপছি।সত্যিই তো ও ভিডিও করেছে। কিন্তু ওকে আমি বাঁধা দিতে পারিনি। কীভাবে বাঁধা দিবো ওকে আমি? আমার হাত পা মুখ যে ও বেঁধে রেখেছে!
আমার কান্না পাচ্ছে।আমি কাঁদছি।চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে গালের দু পাশে।
সাইমুম এবার আমার কাছে এলো। এসে আমার গালে লেগে থাকা একটুকরো জল ছুঁয়ে দিয়ে হাসি হাসি মুখে বললো,’আজকের শাস্তিটা তো সহজ ছিল। আগামী রাতের শাস্তিটা ভয়ানক হবে আফসান।বড় ভয়ানক হবে।’
কথাটা বলে সাইমুম আমার হাতের বাঁধন খুলে দিলো। তারপর পায়ের বাঁধন খুলতে চাইতেই ওকে আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। সাইমুম দূরে ছিটকে পড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,’এর জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে। কিন্তু মনে রেখো উল্টাপাল্টা কিছু করো না। গোসল করে এমন হয়ে থেকো যেন মা ভাবে তোমার সাথে আমার বাসর হয়েছে।আমরা একসাথে থেকেছি।তোমায় অনেক আদরও করেছি আমি!’
কথাগুলো বলেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।ও চলে যাওয়ার পর আমি আমার মুখ থেকে কচস্টেপ খুলে নিলাম। এরপর পায়ের বাঁধন খুললাম। এবার আমি কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতে আমার শরীরটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম।ফুলে গেছে সুন্দর শরীরটা। কেমন লালচে হয়ে আছে। আর তখনও যন্ত্রণা হচ্ছে শরীরে। ইচ্ছে করছে ছুরি দিয়ে সারাটা শরীর কুঁচি কুঁচি করে কেটে ফেলি। তারপর আবার মুনতাহা আপুর কথা মনে পড়লো।ওর উপর খুব রাগ হচ্ছে আমার।ওর জন্যই তো আজ আমার অত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
দুই হাঁটুর ভেতর আমার মাথা গুঁজে দিয়ে অসহায়ের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি আমি। আমার কান্না শুনে এবার নিশ্চিত সাইমুমের মা আসবে।আমায় জিজ্ঞেস করবে কী হয়েছে?
কিন্তু দুঃখ হলো আমি তো উনাকে সত্যটা বলতে পারবো না! আমাকে মিথ্যে বলতে হবে।বলতে হবে কিছু হয়নি। বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে।মার কথা, বাবার কথা মনে পড়ছে। ছোট ভাইটার জন্য খারাপ লাগছে!

দেয়ালে একটা লাল রঙা ঘড়ি টাঙানো আছে। ওখানে রাত তিনটা কুড়ি মিনিট বাজে।আরেকটু সময় চুপিচুপি কাঁদা যাবে। এরপর ধীর স্থির ভাবে গোসল সাড়তে হবে। ফজরের আজান হলে লক্ষ্মী বউয়ের মতো নামাজ পড়তে হবে। তারপর কিচেনে যাওয়া। শাশুড়ি কাজ না দিলেও জোর করে করার চেষ্টা করা। এখন অবশ্য যুগ পাল্টেছে অনেকটাই। আগে প্রথম কদিন বাড়ির নতুন বউকে কাজের ধারে কাছেও যেতে দিতো না। নতুন বউ মানে বাড়ির রাজরানী। সেজেগুজে লাল টুকটুকু হয়ে বসে থাকবে।ঘরে সুন্দর্যের দ্যূতি ছড়াবে। এখন এমন হয় না। বিয়ের পরদিনই বউ কিচেনে না ঢুকলে শাশুড়ি কিংবা ননদেরা খোটা দিয়ে কথা বলে।বলে,বড় লোকের ঝিঁ এনেছি।কাজ জানে না!

রাত শেষ হলো।আমি নামাজ আদায় করলাম।জায়নামাজে বসে চুপিচুপি কাঁদলাম।আর আল্লাহর কাছে খুব মিনতি করে বললাম,হে পরওয়ার দেগার,আমি তো কোন বড় পাপ করতে জানি না।জেনে বুঝে কখনো কারোর ক্ষতি করিনি! এমনকি অযথা গাছের একটা ফুল পাতা কিংবা কুঁড়ি ছিঁড়ে ফেলিনি। মানুষের মনে আঘাত দেইনি। তবে আমার কপালে অত কষ্ট কেন? আমাকে তুমি এমন কষ্ট আর দিও না।আমি সহ্য করতে পারি না মাবূদ!
দোয়ায় থাকতে থাকতেই আমার শাশুড়ি ঘরে উঁকি দেয়। তারপর ধীর পায়ে আমার কাছে আসে। আমার পেছনে এসে চুপিচুপি দাঁড়ায়।আমি যথারীতি দোয়া শেষ করে চোখ মুছি ওড়নায়। তখন হঠাৎ একজোড়া কোমল হাতের স্পর্শ পাই আমার মাথায়।আমি অজানা অচেনা এক অনুভূতি নিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি আমার শাশুড়ি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার হঠাৎ খুব কান্না পায়। বাঁধন হাড়া কান্না।হু হু করে ধেয়ে আসা উন্মাদ বাতাসের মতো।কূল হাড়া ঢেউয়ের মতো। উপচে পড়ে বালির উপর। তীরের উপর। ভিজিয়ে দিয়ে যায় পথ ঘাট আধ খাওয়া সবুজ দূর্বা দেহ।
শাশুড়ি মা আমার দিকে ঝুঁকে আসেন। তারপর পেছন থেকে আমায় জাপটে ধরে বলেন,’কাঁদছো কেন গো মা? কী হয়েছে?’
আমি কিছু বলি না।আরো জোরে জোরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি।
শাশুড়ি মা তখন আমার পাশে বসে। মুখোমুখি হয়ে। তারপর আমার থুতনিতে ধরে মুখটা উপরের দিকে তুলে বলে,’সাইমুম তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে?’
শাশুড়ি মা হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করবেন?আমি আঁতকে উঠি।মনে ভয় জাগে খুব। আমার কী বলা উচিৎ এখন?বলবো কী, হ্যা আপনার ছেলে আমার উপর রাতভর অমানুষিক অত্যাচার করেছে?নাকি মিথ্যে কথা বলবো?
বলবো, ও ভালো ব্যবহার করেছে। আমার আসলে বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে।
আমি কী করবো বুঝতে পারি না। সবকিছু গুলিয়ে আসে ভয়ে। আমার শুধু মনে পড়ে সাইমুমের কথা।ও আমার নগ্ন শরীরটা ভিডিও করেছে।আমি সত্যটা বলতে গেলেই বিপদ। সাইমুম বলেছে ও ভিডিওটা ভাইরাল করে দিবে!
শাশুড়ি মা আমার একটা হাত টেনে ধরেন। তারপর বলেন,’বলো মা, নির্ভয়ে বলো।আমি তো তোমার মায়ের মতই। তোমার মাকে তো তুমি সবকিছু খুলে বলতেই। আমার কাছে বললে তো অপরাধ হবে না মা!’

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প