আমার ঘরের দেয়ালে কে যেন টোকা দিতো রাতের বেলায়।’ বলেই নিধি আপু চারা মেরে আমগাছ থেকে দুটো আম ফেলে দিলো। আমি অবাক হয়ে আপুর দীঘল কালো খোলা চুলের আন্দোলন দেখলাম।
ঈদের দিন বিকেল। আমি আর নিধি আপু বসে আছি আমাদের আমবাগানের সামনে। আপু তিনবছর পর এলেন মামাবাড়ি বেড়াতে। এর আগের প্রত্যেক ঈদেই তার পরীক্ষার ডেট পড়তো, তাই আসতে পারেননি। এই মাসের শুরুতে মাস্টার্সের শেষ এক্সাম দিয়ে আসছেন আপু। রেজাল্ট দিবে শিগগিরই। হাতে তার অফুরন্ত সময়।
শেষ বিকেল। সূর্যের কমলা রোদ পড়ছে আপুর গায়ে। কেমন অদ্ভুত মায়াবী লাগছে আপুকে দেখতে। তিনবছর পর আপুকে দেখছি, মনে হচ্ছে আরো সুন্দর হয়েছে আপু। আপুর বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে। দুই একজনের সাথে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে। আপুর পাত্র খোঁজার খবর শুনে কেমন যেন খারাপ লাগছে আমার। কেন লাগছে, জানি না।
আপু পড়ে থাকা আম দুটো কুড়িয়ে এনে বললো, ‘নে, খা। একটা তোর, একটা আমার। গ্রামে আসলে এটাই ভালো লাগে রে, যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। ঢাকায় থাকলে এতোকিছু করা যায় না। এইকাজে মানা, ঐকাজে বাধা। জীবনটা একদম তেজপাতা বানিয়ে দেয়।’
আমি বললাম, ‘তাহলে চলে আসো গ্রামে পার্মানেন্টলি।’
আপু অদ্ভুত সুন্দর ভঙ্গিতে ভ্রু উঁচিয়ে বললো, ‘কিভাবে?’
‘গ্রামে বিয়ে করো।’
‘গ্রামে ছেলে পাবো কই? তুই বিয়ে করবি?’
‘আরে না ধুর পাগল। তোমার মতো রেবেল কুইনকে বিয়ে করে লাইফ বরবাদ করবো নাকি।’
আপু মুচকি হেসে বললো, ‘তাহলে আর কথা বলিস না। ‘ আপুর হাসিটা খুব সুন্দর।
আমি বললাম, ‘তোমার কাহিনী তো বললে না? কে যেন টোকা দিতো?’
‘ও আচ্ছা, বলছি। তখন তো আমি ছোট, এই ধর ক্লাস ফাইভে পড়ি। তখন আমার জন্য প্রথম একটা নিজস্ব রুম দেয়া হয়েছে। আমার নিজের একটা রুম, বুঝতেই পারছিস, কি পরিমাণ এক্সাইটেড আমি। শুধু রাতে ঘুমাতে একটু খারাপ লাগতো। জন্মের পর থেকেই তো আব্বু আম্মুর সাথে ঘুমাই, তাই একা শুতে একটু কেমন খালি খালি লাগতো। ভয় অবশ্য আমি পেতাম না। তুই জানিস কেমন সাহসী আমি। ছোটবেলা থেকেই তো আমার মধ্যে ভয়ডর বলে কিছু ছিলো না। তো ঐ একা একা থাকার ব্যাপারটার জন্য খারাপ লাগতো একটু, আর তেমন কিছু ছিলো না। মোট কথা, নিজের একটা রুম পেয়ে আমি খুব এনজয়ই করছিলাম।
তো একরাতে এরকম ঘুমিয়েছি। আমার রুমের কোণার দিকটা একটু অন্ধকার থাকতো। সোহেল, তুই কিন্তু দেখেছিস রুমটা। আমাদের আগের ভাড়া বাসায় যে রুমটা ছিলো আমার, ঐ রুমটার কথা বলছি।’
‘ও হ্যাঁ। দেখেছি তো রুমটা। তোমরা তো ঐ বাসায় অনেকদিন ছিলে।’
‘হ্যাঁ, ঐ রুমটার গল্পই বলছি। রুমের এক কোণা একটু অন্ধকার থাকতো। আমার ঘরে ডিমলাইট জ্বালানো থাকতো রাতে, তবু ঐ কোণের অন্ধকারটা যেত না। একরাতে, আমি ঘুমিয়েছি। হঠাৎ কেমন একটা শব্দে ঘুম ভাঙলো। মনে হলো, ঐ অন্ধকার কোণটার দেয়ালের কাছে কেউ শব্দ করছে। শব্দটা এমন, যেন কেউ টোকা দিচ্ছে দেয়ালে। আমি একটু ভালোমতো তাকালাম দেয়ালের দিকে। দেখলাম, কেউ নেই।
আমি উঠে দেয়ালটার কাছে গেলাম। তখন তো আমার ভয়ডর বলতে কিছু ছিলো না, আগেই বলেছি। দেয়ালে কান পাতলাম। কিছু শুনতে পেলাম না। তবে একটু আগেই কিন্তু স্পষ্ট ঠকঠক করার আওয়াজ পেয়েছি। আমার দেয়ালের ওপাশে আরেকবাড়ির দেওয়াল, তারপর সেই বাড়ির একটা ঘর। সেই ঘরে লোক থাকে। ঢাকা শহরের গায়ে গা লাগানো ফ্ল্যাটবাড়ি কেমন হয়, তুই তো জানিসই। ঐরকম আমাদের বাড়ির লাগোয়া বাড়ি ছিলো ওটা। ঠকঠক শব্দ শুনে মনে হলো পাশের বাড়ির কেউই হয়তো ওপাশে দেয়ালে টোকা দিচ্ছিলো, সেই শব্দ দেওয়াল পেরিয়ে আমার ঘরে চলে এসেছে। তখন আমি ফাইভে পড়ি, কিন্তু এটুকু বোঝার বুদ্ধি আমার ছিলো। আমি বিছানায় গিয়ে আমার টেডিকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। রাতে আর কোনো সমস্যা হলো না।
কয়েকদিন ঠিক ছিলো। আবার একরাতে সেইরকম ঠকঠকের শব্দ পেলাম। আমি আবারো দেওয়ালে গিয়ে কান পাতলাম। কোনো শব্দ নাই। আমি এবার একটা কাজ করলাম। আমার দেওয়ালেও একইরকম আঙুলের টোকা দিয়ে ঠকঠক শব্দ করলাম। বোঝার জন্য, ঐপাশ থেকে কোনো রেসপন্স আসে কিনা। না। আসলো না কোনো রেসপন্স।
গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বুঝলাম, ঐপাশের বাড়ি থেকে কেউ মজা করছে আমার সাথে।
পরদিন ব্যাপারটা মাকে বললাম। মা গিয়ে পাশের বাড়িতে কথা বলে এলো। ওরা যেন আকাশ থেকে পড়লো এ কথা শুনে। বললো, আমার ঘরের পাশে ওদের যে ঘর, সেখানে নাকি কেউ থাকে না। তাহলে, রাতে টোকা দেয় কে?
আম্মা চলে এলো। আসার সময় বলে এলো, একটু খেয়াল রাখতে। এমনটা যেন কেউ না করে। আমার মেয়ে ঘুমায় এপাশের ঘরে, ও ভয় পায় রাতে।
আম্মুর কথাটা শুনে রাগই করেছিলাম। আমি কি ভয় পাই? শুধু শুধু ভুল একটা কথা ওদের বলতে গেলো কেন?
এরপর বেশ কিছুদিন আর কোনো সমস্যা নাই। কয়েকরাত পর আবার সেই সমস্যা। দেয়ালে ঠকঠক। আমিও এবার গিয়ে দেওয়ালে ঠকঠক করলাম। এরপর কান পাতলাম কিছু শোনার জন্য। আমি জানতাম, কিছু শুনতে পাবো না। অন্যান্য দিনের মতোই নীরব থাকবে দেওয়ালের ওপাশ।
আমাকে অবাক করে দিয়ে দেওয়ালের ওপাশ থেকে শব্দ হলো। একটা শ্বাস টানার শব্দ। কে যেন ভীষণ কষ্টে টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছেন।
আমি দেওয়ালে মুখ লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে, কে ঐপাশে?’
ওপাশ থেকে কোনো সাড়া এলো না।
আমি আবার কান পাতলাম। নীরব, সব নীরব। ওপাশে কোনো শব্দ নেই।
আমি আবার এসে শুয়ে পড়লাম। বুঝতে পারলাম, ঐপাশের বাড়িরই কেউ ফাজলামি করছে। ওকে পাত্তা দেওয়া ঠিক হবে না।
পরের কয়েকটা দিন ঐরকম ঠকঠক শব্দ করা হলো দেওয়ালে। ঠকঠক শব্দ তো হতোই, তার সাথে টেনে টেনে শ্বাস নেওয়ার শব্দটাও হতো। আমি আমার বিছানা থেকেই শব্দটা পেতাম। এটা অবশ্য আমার মাথায় ঢুকতো না, টেনে টেনে শ্বাস নেওয়ার শব্দ এতো দূর থেকেও আমি পাই কি করে।
এর পরের কয়েকদিন আর কোনো শব্দ নেই। মনে হলো, ওপাশে যে ফাজলামি করছিলো, সে তার ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেছে। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক, রাতে ঘুমে আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না।’
নিধি আপু থামলেন। তার সুন্দর চুলে বিলি কাটলেন। তাকে এমন অবস্থায় দেখতে যে কি ভীষণ সুন্দর লাগে, তিনি কি তা জানেন?
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরপর কি হলো?’
নিধি আপু চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘এর কিছুদিন পরের কথা বলছি। আব্বু আম্মু বাসায় নেই, কি এক কাজে বাইরে গেছেন। আসতে রাত হবে। আমার জন্য খাবার বেড়ে রেখে গেছেন। আমি খাবার দাবার শেষ করে ঘুমাতে চলে এলাম। রাত তখন যে খুব বেশি হয়েছে, তাও না। বারোটার মতো বাজে। ঘুমের প্রস্তুতি নিয়েছি, ঘুমও কিছুটা এসেছে চোখে, এসময় আবার সেই ঠক ঠক ঠক। আবার শব্দ হচ্ছে ওপাশে। আবার শ্বাস টানার শব্দ। আমার ঘুমটা গেলো চলে।
সোহেল, তুই তো আমাকে চিনিস। আমি কোনো কিছুতে ভয় পাই না, তুই তো জানিস। তবে সেই রাতে আমার কেমন যেন ভয় করছিলো। অদ্ভুত ভয়। এমন ভয় আমার আর কখনো লাগেনি। ঘরের সেই অন্ধকার কোণটার দিকে তাকাতে আমার ভয় লাগছিলো। আমি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছিলাম না।
এইদিকে ঠকঠক শব্দ কেমন যেন বাড়ছিলো। সাথে শ্বাস টানার শব্দটাও বাড়ছিলো পাল্লা দিয়ে।
আমি চোখ বন্ধ করে রাখলাম। বারবার মনকে বোঝাতে লাগলাম, যা শুনছি, সব ঐপাশের বাড়ির লোকেদের করা শব্দ। ভয়ের কিছু নাই। ঐ বাসার মানুষ আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
মন কেন জানি মানছিলো না আমার কথা।
তারপর, হঠাৎই, সব থেমে গেলো। ঠকঠক শব্দ, শ্বাস টানার শব্দ, কিচ্ছু নেই। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
চারদিক কেমন যেন একটু নীরব হয়ে আছে। আমি ঘুমানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু ঘুম আসছে না। মাথা ওলোটপালোট হয়ে গেছে। ভাবলাম বাথরুমে গিয়ে চোখমুখে একটু পানি দিয়ে আসি। তাহলে হয়তো ঘুম আসতে পারে।
আমি চোখ খুললাম।
আমার মুখটা ঘরের সেই অন্ধকার কোণার দিকে ফেরানো ছিলো।
আমি দেখলাম, একটা মানুষ।
দেওয়ালে একটা মানুষের অবয়ব।
মানুষটা যেন দেওয়াল ছিঁড়ে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে।
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভয়ে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। আমি যে চিৎকার দিবো, সেই শক্তিও নাই। সব শক্তি এক করে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করছি, এসময় ভীষণ এক চিৎকারে আমার হৃদস্পন্দন যেন বন্ধ হয়ে গেলো।
দেওয়ালের ভেতরের লোকটা চিৎকার করছে। কি মর্মান্তিক, বিভৎস, ভয়ংকর সেই চিৎকার।
আমি আর পারলাম না। চিৎকার করতে করতে বাইরের ঘরে দৌড় লাগালাম। ভাগ্য ভালো, সেসময় আব্বু আম্মুও চলে এসেছেন। তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন, কি হয়েছে, কি হয়েছে। আমি তাদের কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু ঘরটার দিকে আঙুল দিয়ে দেখালাম।
তারা ঘরটায় গেলেন আমাকে নিয়ে। ঘরের ভেতর কিচ্ছু নেই। একটা ক্লাস ফাইভের বাচ্চার ঘর যেমন থাকে, তেমনই স্বাভাবিক একটা ঘর।’
আপু চুপ করলো। আমি বললাম, ‘এতোটুকুই?’
আপু বললো, ‘হু। পরের দিন আমার রুম চেঞ্জ করা হলো। অন্য একটা রুমে আমাকে মালামাল সমেত পাঠানো হলো। আব্বু আম্মু বুঝিয়ে বললেন, রাতে আমি কোনো একটা আজগুবি স্বপ্ন দেখেছিলাম, তাই অমন ভয় পেয়েছি।’
আপু থামলেন। সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসছে। আমাদের বাড়ি ফেরার দরকার।
আমি আপুকে বললাম, ‘আর কিছু নেই?’
আপু মাথা নাড়লেন। আর কিছু নেই।
সন্ধ্যার আঁধার বাড়ছে। ফেরার দরকার আমাদের। আপু উঠছে না বেঞ্চ থেকে। আমি আপুকে বললাম, ‘কিছু বলবা আপু আর?’
আপু আমার দিকে তাকালো। এরপর বললো, ‘সোহেল। তুই তো জানিস আমি অলৌকিকে বিশ্বাস করি না। আমি মানি, এই পৃথিবীতে যাই ঘটুক, সবকিছুর একটা ব্যাখ্যা আছে। আমি চাই না আমার দ্বারা একটা অযৌক্তিক গল্প সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক। অথচ আমার সাথেই অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটলো। কেমন, তাই না? আমি এই গল্পটা এজন্যই কাউকে বলতে চাই না। সবসময় নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখি।’
আমি বললাম, ‘তাহলে আমাকে কেন বললে?’
আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কাছের জনকে সব বলা যায়।’
আমি চমকে আপুর দিকে তাকালাম। আপুর চোখটা কেমন যেন মায়াবী। না, শুধু মায়া না। আরো কিছু আছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে ঠিক বুঝতে পারছি না।
আপু বললো, ‘এরপরের কথাটাও আমি কাউকে বলবো না। শুধু তোকেই বলছি। যে ঘটনাটা শুনে আমার সমস্ত বিশ্বাস, সমস্ত যুক্তি ভেঙে পড়েছিলো, সেটাই তোকে বলবো।’
আমি বললাম, ‘বলো।’
আপু বললো, ‘এরপর অনেকদিন কেটে গিয়েছে। আমি আব্বু আম্মুর যুক্তিই মেনে নিয়েছিলাম। ছোটবেলার নিছক স্বপ্ন ছিলো সেই ঘটনাটা। আর কিছু নয়। কিন্তু, কিন্তু, কিছুদিন আগের একটা ব্যাপার আমার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি ব্যাপার?’
আপু বললো, ‘তুই খবর পড়িস না?’
আমি বললাম, ‘মাঝে মাঝে পড়ি। কেন?’
আপু বললো, ‘কিছুদিন আগে খবর বেরিয়েছে। ঢাকার এক ফ্ল্যাট থেকে একটা কংকাল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, কেউ একজন লোকটাকে খু*ন করে বাড়ি তৈরির সময় সেই দেওয়ালের ওপাশে লা*শটা রেখে প্ল্যাস্টার করে দিয়েছিলো। তাই এতোদিন কেউ খুঁজে পায়নি লা*শটা। পুলিশ লা*শের পরিচয় এবং খু*নির পরিচয়, দুটোই উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তুই কি বুঝতে পারছিস, কোন বাড়ির কোন ফ্ল্যাট থেকে ঐ কংকাল উদ্ধার করা হয়েছে?’
আমি মাথা নাড়লাম। ‘বুঝতে পারছি। তোমার আগের বাড়ির তোমার সেই রুমের কোণের দেওয়াল থেকে।’
আপু কিছু বললো না আর। ভয়ে কাঁপছে সে। আমি বুঝতে পারছি। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতেই সে তার একখানা হাত বাড়িয়ে দিলো আমার জন্য।
আমি সেই হাতটা ধরবার জন্য হাত বাড়ালাম।