অফিস থেকে এসে শুয়ে আছে আবির। ইদানীং বড্ড কাজের প্রেশার। কয়েক মাস হলো বিয়ে করেছি। অথচ রুমিকে সময় দিতে পারছি না। সাতপাঁচ ভাবতে থাকলো আবির। এমন সময় রুমি এসে বললো,
” আবির একটু আমার সাথে বেলকনিতে আসো।”
” হঠাৎ বেলকনিতে?”
” এত কুয়েশ্চন করো কেনো? প্রয়োজন আছে বলেই আসতে বলেছি।”
আবির দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেলকনিতে গেলো। রুমি তার এক পাশে দাঁড়িয়ে হাতের ইশারায় বললো,
” এগুলো কিসের ছাপ দেখতে পাচ্ছো?”
বেশ কিছুক্ষণ ছাপের দিকে তাকিয়ে আছে আবির। সাবলীল ভাষায় বললো,
” তোমার পায়ের ছাপ।”
” তুমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর আমি বেলকনিতে আসি নি। তাছাড়া আমি অলওয়েজ স্যান্ডেল পড়ে থাকি। এত বড় বড় পায়ের ছাপ আমার হওয়া অসম্ভব।”
রুমি তো ঠিক কথায় বলেছে। সবসময় স্যান্ডেল পড়ে থাকে সে। বাসায় কেবল দুজন থাকে। ব্যাপারটা রহস্যজনক লাগছে। তার নিরবতা দেখে রুমি বললো,
” ফিসফিস করে কি বলছো?”
” বাসায় তুমি আর আমি। বাহিরের কেউ প্রবেশ করার রাস্তা নেই। হতে পারে এ ছাপ গুলো গতকালের। এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই। টায়ার্ড লাগছে রুমে গেলাম।”
আবির বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রুমি আশপাশ ভালো করে আড়চোখে দেখে নিলো।
রাতের বেলা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আবির। অনেকক্ষণ হলো রুমির কোন পাত্তা নেই। এদিকে পেটের তাড়নায় অস্থির সে। বাধ্য হয়ে রান্না ঘরে গেলো আবির। রান্না ঘরে এক পা রাখতেই চমকে গেলো। রুমি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। গ্লাস করে পানি এনে তার মুখে ছিটিয়ে দিয়ে রুমি রুমি বলে ডাকতে লাগলো আবির। মিনিট খানেক পর মিটমিট করে চোখ খুললো সে। নাক মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। চোখ দুটো লাল টুকটুকে হয়ে আছে। আবির তার মাথায় হাত দিয়ে বললো,
” কি হয়েছে রুমি?”
রুমির শরীরটা থরথর করে কাঁপছে। কথা বলার মত শক্তি পাচ্ছে না। আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে রুমে এনে বিছায় শুয়ে দিলো।
” রুমি বেশী খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?”
রুমি কেবল মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো। শক্ত করে আবিরের হাত দুটো ধরে আছে। এমন সময় ড্রয়িং রুম থেকে কাঁচ ভাঙার মত আওয়াজ পেলো আবির। বুকের ভেতরটা ছেদ করে উঠলো। নরম গলায় বললো,
” রুমি আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি ভয় পেয়ো না। মাত্র দু মিনিট লাগবে।”
রুমি ধীরে ধীরে তার হাত দুটো ছেড়ে দেয়। আবির চট করে ড্রয়িংরুমে এসে সব কিছু খুটিনাটি দেখছে। টেবিলের উপর চোখ পড়তেই দেখে ল্যাম্প লাইট ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে আছে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এত বড় ল্যাম্প লাইট টেবিলের উপর থেকে এমনি এমনি পড়া অসম্ভব। সব কিছু তার কাছে খটকা লাগছে। একটু আগে রান্নাঘরে রুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আর এখন ল্যাম্প লাইট মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে আছে। বিষয়টা আমলে নিতে হবে। রুমি দেখার আগেই কাচের টুকরো গুলো সরিয়ে ফেলতে হবে।
বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার কাঁচ বেয়ে টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। আবির খাটে হেলান দিয়ে তার পাশে শুয়ে আছে। চোখ দুটো ঝাপটে ধরেছে। মাঝ রাতে রুমির গোংরানির আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তার। কপালে হাত রাখতেই শিউরে উঠে আবির। মনে হয় আগুনের লেলিহান শিখায় হাতের তালু ক্ষত হয়ে যাবে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এত রাতে ডাক্তার পাওয়াও মুশকিল। অন্যদিকে বৃষ্টি কমার লক্ষন নেই। ঝটপট রান্নাঘর থেকে বাটি করে পানি এনে আধ ঘন্টার মত জলপট্টি দেওয়ার পর তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। আবিরের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুমি। চোখ দুটো ছলছল করছে। আবির ভারী গলায় বললো,
” এখন কেমন লাগছে?”
রুমি আস্তেধীরে উত্তর দিলো,
” আগের থেকে একটু ভালো।”
আবির কপালে চুমো দিয়ে বললো,
” টেনশন করো না কাল সকাল বেলায় ঠিক হয়ে যাবে।”
” রাতে তুমি খাওনি?”
” তোমাকে ছাড়া কখনো খেয়েছি?”
রুমি বিছানা থেকে উঠার জন্য প্রস্তুত হলো। শরীর বড্ড দূর্বল হয়ে আছে। ঠিকমত নাড়াচাড়া করতে পারছে না।
” কিছু লাগবে তোমার?”
” রাতে তো কিছু খাও নি। তুমি একটু বসো আমি ভাত নিয়ে আসছি।”
আবির তার হাত দুটো ধরে বললো,
” পাগলি মেয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে সে ভাত আনতে যাচ্ছে। তুমি শুয়ে থাকো। আমি ভাত নিয়ে আসছি দুজনে এক সাথে খাবো।”
রুমি মুচকি হেসে বিরবির করে কিছু একটা বললো। আবির রান্নাঘর থেকে ভাত নিয়ে আসলো। রুমি কোন ভাবেই খাবে না। জোরজবরদস্তি করে এক লুকমা খাওয়ালেন।
সকাল বেলা এলার্ম টোনে সজাগ পেলো আবির। রুমি তখনো ঘুমে আচ্ছন্ন। সূর্যের আফসা আলো জানালার কাচ বেয়ে রুমির নরম গালে আঁচড়ে পড়েছে। বড্ড মায়াবী লাগছে। মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। সারা রাত না খেয়ে কাটিয়েছে রুমি। এখন ও খালি মুখে থাকলে বিছানায় পড়ে যাবে। কিন্তু সে ও বেশ অলস। বিয়ের পর থেকে আরও বেশী অলসতা তার ঘাড়ে চেপে বসেছে। সব কিছু ভেবে অনলাইনে খাবার অর্ডার করলো। রুমি অসুস্থ থাকায় তার আর অফিসে যাওয়া হয়নি। কিছুক্ষণ পর আলতো ভাবে কপালে হাত দিয়ে বললো,
” রুমি অনেক বেলা হয়েছে উঠবে নাকি শুয়ে থাকবে?”
আবিরের হাতে জাদু আছে। মাঝে মাঝে রুমি বলতো তোমার হাতের ছোয়ায় আমার শরীরে কারেন্ট বয়ে যায়। রুমি সজাগ পেয়ে দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে আটটা বাজে। সে থতমত হয়ে বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো,
” ইস তোমার অফিসের টাইম ওভার হয়ে যাচ্ছে। একটু ওয়েট করো আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।”
আবির হেচকা টানে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে তাকে।
” বাহিরে এত রোমান্টিক ওয়েদার। আর তুমি নাস্তা বানাতে যাচ্ছো?”
” কি করছো সাজসকালে ছাড়ো এখন। তোমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
” একদিন অফিস না গেলে তেমন একটা সমস্যা হবে না।”
রুমি বিস্ময়ের চাহনি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আবির বললো,
” কাল রাতে জ্বর নিয়ে কাঁপছিলে আর সাজ সকালে নাস্তা বানাতে যাচ্ছো?”
” সিরিয়াসলি তুমি অফিস যাবে না?”
রুমিকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললো,
” না গো বউ আজ কোত্থাও যাবো না। সারা দিন আমার বউয়ের সাথে গল্প করবো।”
” সারাদিন গল্প করলেই পেট ভরবে?”
” সেটা তোমার চিন্তা করা লাগবে না। অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়েছি একটু পরেই চলে আসবে।”
” এই তোমার না গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা?”
” তাতে কি একদিন খেলে কিছু হবে না।”
তখন কলিং বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি অর্ডার দেওয়া খাবার হাজির।
দুপুর বেলা সোফায় বসে টিভি দেখছি। রুমি এসে পাশে বসলো। আমি টিভির ভলিউম কমিয়ে বললাম,
” শরীর খারাপ লাগছে?”
রুমি চুপচাপ মাথা তাক করে বসে আছে। আমার কোন কথায় তার কান পর্যন্ত পৌছালো না। কাঁধে হাত দিতেই চমকে উঠলো রুমি।
” তুমি ঠিক আছো তো?”
” হ্যা ঠিক আছি।”
আমি টিভি অফ করে রুমির হাত ধরে বললাম,
” একটা কুয়েশ্চন করি?”
রুমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো।
” গতকাল রাতে কি হয়েছিলো?”
গতকালের কথা বলতেই রুমির শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে উঠলো। শ্বাস প্রশ্বাস দীর্ঘতর হতে লাগলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
” কই কিছু হয়নি তো। এমনি শরীরটা খারাপ লাগছিলো। চোখ মুখে অন্ধকার দেখছিলাম। এক পর্যায়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তোমাকে ডাকার মত সময়টুকু পাইনি।”
” রুমি তুমি আমার কাছে কিছু একটা আড়াল করতে চাচ্ছো। তোমার নাক মুখ সেটাই বলছে। বিয়ের পর থেকে চোখ বন্ধ করে তোমাকে বিশ্বাস করি। সো এই কথাটা মিথ্যা হলেও আমি বিশ্বাস করেছি। যদি কখনো আঁচ করতে পারি সেদিন খুব কষ্ট পাবো। হতে পারে বিশ্বাসটুকু উঠে যাবে।”
কথাগুলো বলে আবির রুমে চলে গেলো। রুমি মনমরা হয়ে বসে রইলো। গতকালের ঘটনা মনে পড়ায় আবির বেলকনিতে যেয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু আজ কোথাও ছাপ দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ দেওয়ালের ওপারে তাকাতেই চোখ আটকে যায়। লাল টুকটুকে রক্তের মত কিছু একটা লেপ্টে আছে। দূর থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেয়ালের কাছে যায় আবির। হাত দিয়ে স্পর্শ করতেই বুঝতে তার বাকী রইলো না এটা মানুষের রক্ত। মিনিট খানেক এর জন্য মূর্তির মত জমে যায় আবির। বাসায় এসব কি হচ্ছে। রুমি দেখলে আরও বেশী ভয় পেয়ে যাবে। রুমে উঁকি দিয়ে দেখে রুমি শুয়ে আছে। আবির বালতি করে পানি এনে ঘষে ঘষে দেয়াল পরিস্কার করে আগের মত করে নিলো। এমন সময় রুমের ভেতর থেকে রুমির চিৎকারের আওয়াজ পেলো। তারাতাড়ি রুমে যেয়ে দেখে খাটের এক কোনে গুটিসুটি হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে রুমি। আবিরকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরে বললো,
” খাটের নিচে কেউ খটখট আওয়াজ করছে।”
আবির খাটের নিচে তাকিয়ে কিছু দেখতো পেলো না। সে রুমিকে বললো,
” তুমি অযথায় ভয় পাচ্ছো। খাটের নিচে কিচ্ছু নেই।”
” আবির আমি স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি সেই শব্দ?”
” হতে পারে তোমার মনের ভুল।”
রুমি মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বললো,
” তুমি কেনো আমার কথা বিশ্বাস করতে চাইছো না? আমি বলছি শব্দ শুনেছি। কিন্তু তুমি মনের ভুল ধরে বসে আছো।”
” রুমি ওভার রিয়েক্ট করছো কেনো? বিশ্বাস না হলে নিজে দেখো।”
রুমি কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে ঠিকি খটখটে আওয়াজ শুনেছে।
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রুমি। গোধূলী মাখা বিকেল বেলা প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিতে তার খুব ভালো লাগে। পরোক্ষণেই গতকাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায় তার। রান্নাঘরে প্লেট পরিস্কার করছিলো রুমি। এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন রুমিকে জড়িয়ে ধরে মুখে রুমাল চেপে ধরে রাখে। ছটফট করছিলো রুমি। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো সোহেল। কিন্তু সে তো এক বছর আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলো।
বছর খানেক আগের কথা। রুমি তখন অনার্স প্রথম বর্ষে পদার্পণ করলো। সে ভার্সিটির সিনিয়র ভাই ছিলো সোহেল। রুমিকে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় তার। এরপর প্রতিনিয়ত রুমির পিছু পিছু ঘুরঘুর করতো। কখনো মুখ ফোঁটে কিছু বলতে পারেনি। রুমির কাছে বিষয়টা অসহ্য লাগে। প্রতিদিনের মত রুমির পিছু পিছু হাটছে সোহেল। রুমি হঠাৎ দাঁড়িয়ে বললো,
” ভাইয়া কিছু বলবেন?”
সোহেল আমতা আমতা করছে। রুমি অভয় দিয়ে বললো,
” ভাইয়া সমস্যা নেই আপনি যা বলতে চান বলেন। প্রতিদিন ফলো করেন ব্যাপারটা আমার কাছে আনইজি লাগে। তার থেকে বরং যেটার বলার জন্য আমার পিছু নেন সেটা বলে আমাকে মুক্তি দেন। বন্ধু বান্ধব সবায় এটা নিয়ে হাসাহাসি করি।”
সোহেল কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললো,
” রুমি তোমাকে প্রথম দেখার পর থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি। আমার জীবনে তুমি সেই প্রথম মেয়ে। এক নজর চোখের আড়াল হলে ছটফট করি আমি।”
রুমি রাগে দাঁত কটমট করছে। নরম গলায় বললো,
” দেখেন ভাইয়া মা বাবা ভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়েছে। প্রেম করার জন্য নয়। যদি ভাবেন পিছু পিছু ঘুরলেই আপনার প্রপোজাল একসেপ্ট করবো তাহলে ভুল ভাবছেন। সে ভাবনা থেকে বের হয়ে আসুন। আমার কাছে এসব জঘন্য লাগে।”
” কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।”
” আমি বাসি না ঠিক আছে। আশা করি আর কখনো ফলো করবেন না।”
কথাগুলো বলে চুপচাপ চলে গেলো রুমি। সোহেল তার পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুদিন পর বাসা থেকে ভার্সিটিতে আসার পথে রোড এক্সিডেন্টে করে রুমি। আশেপাশের লোকজন সদর হাসপাতালে এডমিট করে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। ব্লিডিং হয় প্রচুর। ঘন্টাখানেক এর মাঝে ডোনার ব্যবস্থা না হলে আশংকাজনক অবস্থার সম্ভাবনা রয়েছে। সে সময় হাজির হয় সোহেল। ইউনিভার্সিটির ব্লাড গ্রুপিং প্রোগ্রামে সোহেল দেখেছিলো রুমির ব্লাড গ্রুপ। ব্লাড ট্রান্সফিউশন কমপ্লিট করার পর রুমিকে বললো,
” ঠিক সময়ে ওনি এগিয়ে না আসলে আপনার জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।”
ডাক্তারের কথা শুনে রুমি সোহেলের দিকে আরচোখে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। চুপিস্বরে বললো,
” ধন্যবাদ আমার লাইফটাকে পুনরায় জীবিত করার জন্য।”
সোহেল মুচকি হেসে হাসপাতাল থেকে চলে আসে।
পরেরদিন রাস্তার পাশের দোকানে বসে চা খাচ্ছে সোহেল। সেখান দিয়ে যাচ্ছিলো রুমি। সোহেলকে দেখা মাত্রই রিকশা থামিয়ে বললো,
” ভাইয়া আপনি কি ব্যস্ত?”
সোহেল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
” বেশী একটা না।”
” তাহলে রিকশায় উঠুন আপনাকে কফি খাওয়াবো।”
” তার আর প্রয়োজন নেই।”
অতঃপর রিকশা থেকে নেমে সোহেলের হাত ধরে টেনে তুললো রুমি। ধীরে ধীরে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়। একটা সময় সোহেলের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে রুমি। কিন্তু এপথে পা বাড়াতে সাহস পাচ্ছে না রুমি। সামনে সোহেলের বার্থডে। সেদিন না হয় তাকে ভালোবাসি বলে অবাক করে দেওয়া যাবে।
একদিন বিকেল বেলা ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে সোহেল আর তার দুই বন্ধু। মাঝখান থেকে একজন বললো,
” দুস্ত মনে হয় রুমি তোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে।”
এমন সময় রুমি এসে উপস্থিত। তারা টের পায়নি। তখন সোহেল বললো,
” আমাকে ইগ্নোর করে আজ অব্দি কেউ পার পায়নি। আর ওই ছোটকে মেয়ে পার পাবে অসম্ভব। তবে তোরা যদি হেল্প না করতি তাহলে এতদূর বিষয়টা এগোত না।”
সোহেলের কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে রুমি। বুকের ভেতর হাড় ভাঙা অনুভব করছে সে। পুরো বিষয়টা জানার জন্য নিজেকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে। সোহেলের বন্ধু বললো,
” তোর বুদ্ধির তারিফ করতে হবে। আর একটু উল্টাপাল্টা হলেই সব কিছু শেষ হয়ে যেতো। তুহিনকে বারবার বলেছি রিকশায় ধাক্কা দেওয়ার সময় বাইকের গতি একটু কমিয়ে রাখবি। সেটা না করে ফুল স্পিডে ধাক্কা দিয়েছে। কপাল ভালো রুমি বেঁচে গেছে।”
” মরলেও আমার কোন যায় আসতো না। মাঝখান থেকে ডাক্তারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা বকশিস দিতে হলো। ওকে বিক্রি করেও মনে হয় পঞ্চাশ হাজার টাকা হবে না।”
কথা গুলো বলতেই সবাই খিলখিল করে হেসে উঠলো। রুমি মুখে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। বুক ফেটে কান্না আসছে তার। সোহেল তার সাথে এমন কিছু করতে পারে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। সেখানে আর এক মিনিট ও দাঁড়ালো না।
রাতের বেলা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে রুমি। বেশ কয়েকবার ফোন আসলো সোহেলের। রুমি নাম্বার ব্লক করে বালিশের পাশে ফোনটা রেখে দিয়েছে। দু চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। জীবনে প্রথম বার তাকে কেউ বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিয়েছে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে গেলো রুমি। সোহেল পথ আটকে বললো,
” কি ব্যাপার রুমি হঠাৎ করে আমাকে ইগ্নোর করছো? নাম্বার ব্লক করে রেখেছো কেনো?”
” সোহেল সামনে থেকে চলে যাও। তোমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না।”
” এমন করছো কেনো বলবে তো কি হয়েছে? কি করেছি আমি?”
রুমি চিৎকার করে বললো,
” আমি বলছি না আমার সামনে থেকে চলে যাও।”
” আমার উত্তর না পেলে আমি যাবো না।”
” আমি তোমাকে কোন উত্তর দিতে পারবো না।”
” তোমাকে উত্তর দিতেই হবে।”
” আর না দিলে কি করবে? আবার এক্সিডেন্টে এর প্ল্যান করবে?”
কথাটা শুনে সোহেলের চোখ দুটো কপালে উঠে গেলো। থতমত হয়ে বললো,
” এক্সিডেন্ট এর প্ল্যান মানে?”
” নিজেকে অনেক চালাক ভাবো তাই না?”
” রুমি বিশ্বাস করো আমি তোমার কোন কথায় বুঝতে পারছি না।”
” বুঝতে হবে না। সামনে থেকে সরো।”
হঠাৎ সোহেল রুমির হাত ধরে বললো,
” রুমি প্লীজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।”
রুমি আর কিছু না বলে সোহেলের গালে থাপ্পড় মেরে সেখান থেকে চলে আসে। এরপর থেকে সোহেলের সাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। রুমি ভার্সিটিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিছুদিন পর আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে রুমির নাম্বারে। রিসিভ করতেও ওপাশ থেকে বললো,
” রুমি আমি সোহান সোহেলের বন্ধু।”
সোহেলের কথা শুনামাত্র ফোন কেটে দিলো সে। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন আসলো। রুমি বিরক্ত হয়ে রিসিভ করে বললো,
” সোহেল নামে কাউকে আমি চিনি না।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। মাত্র একটা মিনিট কথা বলবো। এরপর না হয় কেটে দিলেন।”
” কি কথা বলেন।”
” দুদিন আগে সোহেল রোড এক্সিডেন্ট করেছে। অবস্থা বেশী একটা ভালো নয়। ডাক্তার বলেছে দেশের বাহিরে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।”
” এ কথা আমাকে বলছেন কেনো?”
দেখন ভুল মাত্র মানুষই করে। যুদ্ধ এবং ভালোবাসা জেতার জন্য যায় করা হোক সেটাই ঠিক। তাছাড়া সে তার ভুলের শাস্তি পেয়েছে। এখন বারবার আপনার কথা বলছে। জাস্ট একটাবার এসে তার সাথে কথা বলুন।”
সোহান আর কিছু বলার আগেই রুমি ফোন কেটে অফ করে দিয়েছে। কয়েকদিন পর জানতে পারলো চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল মারা গেছে। রুমির কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। তার জন্য এক ফুটাও চোখের জল বের হয়নি।
অতীতের কথা মনে পড়ে কেঁপে উঠলো রুমি। যে সোহেল এক বছর আগে মারা গেছে সে কোথা থেকে আসবে। এমন সময় ড্রয়িং রুমে আবিরের চিৎকার শুনতে পেলো রুমি।