কয়েকদিন পর আমি বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে দেখি আমার রুম সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো।আমি দেখে খুব অবাক হলাম।আমার সাথে আয়ানও ছিল।
–কি ব্যাপার রুম এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে কে?
–কেন?আমি সাজিয়েছি তোমার স্বামী।
হঠাৎ আয়ানের মুখে স্বামী কথাটা শুনে খুব অবাক হলাম।কোনোদিন আয়ান আমাকে এইভাবে বলে নি।
–স্বামী?
–হ্যাঁ,স্বামী।তোমার স্বামী।আর তুমি আমার বৌ।
–আপনার কথা গুলোর মানে বুঝলাম না।আমি এইখানে নাজিয়াত আরিয়ানার মা হয়ে এসেছি।আপনার বৌ হয়ে না।
–আজ তোমাকে আমার কিছু মনের কথা বলতে চাই।
–হ্যাঁ বলেন।
–তুমি আমার এই মেয়েগুলোর জন্য নিজের ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে আমার সংসারে এসেছো।হ্যাঁ,আমি জানি আমাদের মধ্যে এখনো কোনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি।আমি যদি তোমার স্বামী হিসেবে আমার অধিকারটা চাই তাহলে কি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিবে?
আমি আয়ানের মুখে এইসব কথা শুনে খুব অবাক হচ্ছিলাম।আমার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।আয়ান আবার বলতে শুরু করল।
–কি হলো চুপ করে আছো যে?তুমি আমাকে অধিকারটা দিবে না?প্রায় ১বছর আমরা সংসার করছি।এই বছরে তোমার উপর কেমন যেন একটা মায়া জমে গেছে।জানি তোমারও আমার জন্য মায়া জমে গেছে।তোমার আপুকে আমি অনেক ভালোবাসতাম।ভালোবাসার মানুষকে হারানোর কষ্টটা কি আমি জানি।তুমি আমার মেয়েদের জন্য তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে এসেছো।তোমার কষ্টটা আমি কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারছি।জানি আমার কথা গুলো শুনে খুব অবাক হচ্ছো।কিন্তু তোমাকে একটা কথা বলতে চাই তোমাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।আমি তোমার স্বামী হিসেবে তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কি সারাজীবন আমার পাশে থাকবে আমাকে ভালোবেসে?
আয়ানের মুখে কথাগুলো শুনে নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না।আমি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললাম,হ্যাঁ আমি পারবো সারাজীবন আপনার পাশে থাকতে।
আজ থেকে হয়তো আমাদের ভালোবাসার এক নতুন পর্ব শুরু হলো।কয়েক মাস পরেই আমি জানতে পারলাম আমি মা হতে যাচ্ছি।সবাই খুব খুশি।আমি ৩য় সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।আগেই আমার দুটো সন্তান আছে নাজিয়াত আরিয়ানা।
হঠাৎ করে একদিন আমি আমার ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম একটা আইডিতে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এসেছে।নামটা খুব পরিচিত সে ছিল সৈকত।আমি রিকুয়েষ্টটা একসেপ্ট করলাম।সাথে সাথেই সৈকত আমাকে ম্যাসেজ দিল।
–কেমন আছো,নয়না?
— হঠাৎ ম্যাসেজ দিলে যে আজ?
–কথা ছিল তোমার সাথে কিছু।
–হ্যাঁ বলো।
–আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে।জানি খুব অবাক হচ্ছো।তুমি চলে যাওয়ার পর আমার ডিপ্রেশনের সময় আমাকে একজন নিজের মত করে গুছিয়ে নিয়েছিল।আমি চেয়েছিলাম তার মায়ায় না জড়াতে কিন্তু তার ভালোবাসা তার যত্নগুলো আমাকে তার প্রতি দূর্বল করে দিয়েছে।আমি তাকে তোমার আমার সম্পর্কের কথা বলেছিলাম সে সব জেনে আমাকে ভালোবেসেছিল।আমার বিয়েতে চলে এসো কিন্তু।
–যাক আলহামদুলিল্লাহ।এতোদিন তোমাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম।তুমি ওই মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হও।
–শুধু সুখী হতে বললে হবে না।তোমাকে আমার সুখের দিনে উপস্থিত থাকতে হবে।তোমাকে আমার বিয়েতে আসতে হবে কিন্তু।
–আমি তো হয়তো আসতে পারবো না।আমি তো মা হতে যাচ্ছি।তাই শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।আমি আয়ানকে পাঠাবো।আর তুমি তোমার বৌকে নিয়ে আমার বাসায় এসো কিন্তু।
–ঠিক আছে।ভালো থেকো।নিজের শরীরের যত্ন নিও।
আয়ান বাসায় আসলে আমি সৈকতের কথা বলি।আয়ান খুব খুশি হয় সৈকতের কথা শুনে।আমি শরীরের অসুস্থতার জন্য সৈকতের বিয়েতে যেতে পারিনি।আয়ান গিয়েছিল নাজিয়াত আরিয়ানাকে নিয়ে।
আজ দেখতে দেখতে নাজিয়াত আরিয়ানার ১০বছর পূর্ণ হলো।আমার ছেলেরও ৭বছর চলছে।তার নাম রাখা হয়েছিল সমুদ্র।এতোগুলো বছরে আমি নাজিয়াত আরিয়ানাকে তার মায়ের অভাব বুঝতে দেইনি।তারাও আমাকে খুব ভালোবাসে।নিজের ছেলের থেকেও বেশি আদর করি নাজিয়াত আরিয়ানাকে নিয়ে।আয়ান, নয়না, নাজিয়াত,আরিয়ানা আর সমুদ্রকে নিয়ে আমাদের ছোট সংসার খুব ভালোই চলছে।