পোস্ট করে ফেসে যাই

‘ ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’
এই গানটা শুনেছেন কখনো?

আমার ম্যাসেঞ্জারে এমন একটা ম্যাসেজ এসেছে, তাও একজন সুন্দরী তরুণীর। আমি তো ভিতরে ভিতরে উল্লাসে ফেটে যাচ্ছি। তাহলে আমারো প্রেম হবে। সেহেরি পর্যন্ত কথা বলার মানুষ হবে। ঈদে পাঞ্জাবি উপহার দিবে। আচ্ছা আমার প্রিয়তমা যদি আমাকে পাঞ্জাবি দেয়, তাহলে তো আমাকেও ম্যাচিং করে একটা শাড়ি উপহার দিতে হবে। আচ্ছা ঈদে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়? আর একসাথে ছবি তোলার পর ক্যাপশন কী দেওয়া যায়? ধুরু কিছুই জানি না এর আগে প্রেম হইনি তো। মেয়েটি কত কিউট
কোনো ভনিতা নয়, ঢং নয় সরাসরি রোমান্টিক গান দিয়ে প্রপোজ। এইসব ভাবতে ভাবতে উনার আরেকটি ম্যাসেজ আসলো কী হল উত্তর দেন।

– জ্বি শুনেছি। আমার অত্যন্ত প্রিয় গান।

– আপনি গানও শুনেন। আবার প্রেমের গান আপনার প্রিয়।

– হুম শুনি তো। আর প্রিয় গান থাকতেই পারে।

– আচ্ছা এই গান বিষয়ে পরে আসছি। নয়তো আসল কথা উড়ে যাবে।

– জ্বি বলুন আমি আপনার আসল কথা শুনতে আগ্রহী। ( আমি তো মনে মনে রোমান্টিক কথা সাজাচ্ছি। সে হয়তো বলবে আপনি এখন থেকে আমার। আপনাকে আমার ভালো লাগে)

– আকাশের ঠিকানায় চিঠি পাঠাতে চাইলে সমস্যা নাই। আমি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মানুষকে সেহেরির সময় জাগাতে চাইলেই আপনার সমস্যা হয়?

আ্যা ! আমি বুঝলাম না কোথাকার পানি কোথায় গড়ালো। এই মেয়ে কী বলছে ওর তো বলার কথা ছিলো আমাকে ভালোবাসি বলার। মনটা অত্যাধিক খারাপ হয়ে গেলো। ব্যথিত মন নিয়ে তাকে রিপ্লাই দিলাম।

– ঠিক বুঝলাম না কী বুঝাতে চাচ্ছেন।

– আহা কী অবুঝ বালক আমার। কিছু বুঝে না। পুরাই ইয়াক্কা বুলবুল

– ইয়াক্কা বুলবুল আবার কী?

– ইয়াক্কা বুলবুল মানে আবুল, মানে বোকা

– তা আমি কিঞ্চিৎ আছি, অস্বীকার করছি না। আপনি বুদ্ধিমান তরুণী বিষয়টা আপনি বুঝিয়ে বলুন।

– আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছি। ‘ঘুম থেকে উঠুন সেহেরি খান’ আর আপনি আমার সেই পোস্টে হা হা রিয়েক্ট দিয়েছেন।

বুঝলাম এই গর্দভীর সাথে তর্ক করে লাভ নাই সরি বলে মামলা সেট করে নিই। গর্দভী হলেও রূপবতী, দেখা যাক কিছু একটা হয় কি না।

– সরি। ভুলে হয়তো হা হা রিয়েক্ট পড়ে গেছে। আমি এখনই হা হা তুলে কেয়ার দিচ্ছি। কতই না কেয়ারিং পার্সন আপনি!
ভুলেও হোক আমার মারাত্বক ভুল হয়ে গেছে। সরি।

– ভুলে দিছেন? ফাজালমো করেন মিয়া। (সাথে অনেকগুলো এংরি রিয়েক্ট)

– কী হল এত রেগে যাচ্ছেন কেন?

– রাগ করবো না? হা হা রিয়েক্ট পর্যন্ত ঠিক ছিলো। আপনি আবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘ধন্যবাদ আপনাদের পোস্টের জন্য। আপনারা পোস্ট দিয়ে না জাগালে, সেহেরিতে উঠতেই পারতাম না ‘

ফেসবুকে এই টাইপের পোস্ট দেখলে রাগ উঠে যায় আর প্রথম সেহেরিতে তো এমন অযৌক্তিক পোস্ট দেখে পোস্ট দিয়েছিলাম। হয়তো অজান্তে এই সুন্দরীর পোস্টে হাহা রিয়েক্ট পড়ে গিয়েছে।

– সরি, আসলে আপনাকে মিন করি নাই।

– আরে মিয়া রাখেন আপনার সরি। শুধু এতটুকু? পোস্টের কমেন্টে গিয়ে আবার কমেন্ট করেছেন ‘ যারা যারা আজকে এই উপকার করছেন জীবনেও ভুলবো না আপনাদের অবদান। আপনাদের ব্রেনকে আমার সালাম।’

– বিশ্বাস করেন, আমি আপনাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলি নাই।

– এই ছেলে আপনার এইচএসসিতে জিপিএ কত? এখন সিজিপিএ কত?

এই কী মুশকিল সুন্দরী তরুণী হুট করে আন্টিদের মত আমার রেজাল্ট জানতে চাইবে কেন? সে চাঁদের কথা বলবে, ফুলের কথা বলবে, ফুচকা, আইসক্রিম খেতে চাইবে, সে কেনো আমার রেজাল্ট জানতে চাইবে৷

– কী হল বলেন? বলবেন কীভাবে টাইনাটুইনা পাশ করেছেন হয়তো। আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি। আমার রেজাল্ট সবসময় ভালো হয় আর সেই আপনি আমাকে বলেন ব্রেন নাই?

এখন তো আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। সবই ঠিক আছে রেজাল্ট নিয়ে খোঁটা দিবে কেন?

– হ্যা যা বলেছি ঠিকই বলেছি।

– কিহ! আবার বলে ঠিক বলছি। ঠিক বললে এইবার বলেন, আকাশের ঠিকানায় কীভাবে চিঠি পাঠাবে?

– আকাশ আমার বন্ধুর নাম। ওর বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পাঠাবে সিম্পল। আর শুনেন শুধু মুখস্ত করে এ প্লাস পেলেই জ্ঞানী হওয়া যায় না জেনারেল নলেজ লাগে। যা আপনাদের মত সুন্দরীদের মাথায় নাই।

– আপনি আসলে খুবই অভদ্র, অশিক্ষিত ( সাথে কিছু অশ্রাব্য গালি) । গানে তো নায়িকাও বলছে আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো। এখন বলেন, নায়িকার নামও আকাশ?

– আকাশ কী আর কারো নাম হতে পারে না? নায়িকার বান্ধবীর ছোট ভাইয়ের নাম আকাশ। তার ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলছে। নায়িকা আপনার মত বোকা না। সে জানে তার ঠিকানায় চিঠি লিখলে ধরা খাবে। আর শুনেন আমি অভদ্র নই। যথেষ্ট ভদ্র আছি। নয়তো আপনার মত ব্রেনলেসকে এমন এমন গালি দিতাম কোমায় চলে যেতেন। গানের মানে বুঝে না আসছে আমাকে জ্ঞান দিতে। আবার আসছে ফেসবুকে পোস্ট করে জাতিকে ঘুম থেকে উঠাতে। শুধু রুপচর্চা না করে ব্রেনচর্চা কইরেন। পারলে কোথাও গিয়ে ব্রেনটা খুলে হুইল পাউডার দিয়ে ধুইয়েন।

প্রচন্ড রাগে এইসব লিখে সাথে শ-খানিক এংরি রিয়েক্ট দিয়ে এই ম্যাসেজগুলো দিই। আমার নরম মনটাই ভেঙে দিলো ফাজিল মেয়ে। দেখছি মেয়েটি টাইপিং করছে। হয়তো এমন কিছু লিখছে যা পড়লে আমি গিয়ে সত্যিই ব্রেনটা খুলে নিয়ে আসব। তাই ইতিহাসে প্রথম কোনো সিঙ্গেল তরুণ , সম্ভাব্য প্রেম দূরে ঠেলে দিয়ে একজন সুন্দরী তরুণীকে ব্লক দিলো।

ব্লক দেওয়ার পর চোখের অশ্রু মুছলাম। কতশত স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলাম। সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। আহারে প্রেম, আহা ব্রেন

ঘন্টাখানেক পর, মাথা ঠান্ডা হওয়ার পর নিজেকে বুঝালাম একটা মেয়ের ব্রেন নেই, তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত ছিল না রেগে। তাই ব্লক খুলে তাকে ম্যাসেজ দিতে যাব এই সময়ে অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো,

– হ্যালো মিস্টার আতিফ বলছেন?

– জ্বি আমি আতিফ

– আমি রমনা থানা থেকে বলছি। দুই ঘন্টার মধ্যে থানায় আসুন। নয়তো আপনাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে আসব।

– আমার অপরাধ কী স্যার?

– তুই অপরাধ জিজ্ঞাসা করছিস আবার?
তোর নামে সাইবার ও নারী নির্যাতনের মামলা হইছে। আমার প্রেমিকাকে তুই গালি দিয়েছিস। এত সুন্দরী, ভালো মেধাবী, জ্ঞানী, পরোপকারী একটা মেয়েকে তুই গালিগালাজ করেছিস। সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মানুষকে জাগ্রত করে আর তুই উনাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করিস। তুই শেষ, তাড়াতাড়ি থানায় আয়।

আমাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়ে ফোন রেখে দিলো।
এ্যাহ কি হল এইটা? খোদা এইবারের মত আমাকে বাঁচান, আমি আর ফেসবুক চালাবোই না।

আচ্ছা, আপনাদের জানাশোনা কোনো ভালো উকিল আছে?

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প