বন্ধুত্ব

আজ বহুদিন বহুবছর পর নিশা একা। নিশার ঠিকানা নোভোটেল ব্যাঙ্গালোর। আবার অনেকটা সময় পর কলম ধরেছে নিশা কিছু লিখবে বলে । আজকের জীবনে নিশা যা করছে সে জানেই না সে ঠিক করছে না ভুল করছে।
যাকে নিয়ে আগের কথাগুলো লেখা হবে তার নাম রূপ। নিশা আর রূপের বন্ধুত্ব বেশ কিছুটা সময় হয়ে গেছে। খুব অদ্ভুতভাবে চলা এই বন্ধুত্ব। নিশা বলে সে যেমন দিয়েছে অনেক কিছু তেমনি পেয়েওছে অনেক কিছু এই বন্ধুত্ব থেকে। সেই শুরুর দিন থেকে আজ অব্দি সে চেষ্টা করে চলে কিভাবে রূপকে ভালো রাখবে, আনন্দে রাখবে, আনন্দ দেবে। কিন্তু কেন? কেন ভাবে সে এই রকম? কিসের তাগিদে চলে নিশা? কি এমন ভালোলাগা, ভালোবাসা যে তার নিজের কষ্ট চেপে, কান্না লুকিয়ে, সমস্ত মন্দলাগা গুলো সরিয়ে রেখে চলতে থাকে। কেন? সে কি সত্যিই মানুষটা এরকম?
নিশা বন্ধু ভালোবাসে, বন্ধুত্বও ভালবাসে, মানুষ ভালোবাসে, কিন্তু সবার আগে সে নিজেকে ভালোবাসে। নিজের ফিলিংস, ইমোশন ভালোবাসে। তবে কেন আজ তার মনে হয় নিজেকে কোথাও সে ডিপ্রাইভ করছে। রূপকে ভালবাসতে গিয়ে অনেক বাধা, অনেক কিছু এসেছে। বন্ধুত্বের শুরুতেই নিশা এটুকু বুঝতে পেরেছে যে রূপের একটা একাকীত্ব আছে, একটা বিষন্নতা আছে। এই ভাবনাটাই কোথাও নিশাকে তার সবকিছু মেনে নিতে বাধ্য করেছে। সেই রকমই একটা চলা নিয়ে আজ এই লেখা।
ধরে নেওয়া যাক আমি সেই নিশা। ভেবেছিলাম রূপকে এতটাই বন্ধুত্ব দেবো যে জীবনে আগে চলতে হলে ওর কোন কিছু কম মনে হবে না। কিন্তু তা যে আমার দ্বারা হবে না তা আগেই বুঝেছিলাম আর আজ এই একা ঘরেও বুঝতে পারছি। বন্ধুত্বের শুরুতে আমি বুঝতে পারি যে ওর লাইফে একজন ভালোবাসার মানুষের খুব প্রয়োজন, যে ওকে সব রকমের আনন্দ পেতে সাহায্য করবে তা সে শারীরিক হোক কিংবা মানসিক। কিন্তু আমি যেভাবে ওকে পাই তাতে মনে হয় এরকম একটা মানুষকে একটা বিবাহ বর্জিত সম্পর্ক করতে বা এগোতে বলাটুকুও খুব সহজ হবে না। বাইরে থেকে ও যে একটা কঠিন এর আস্তরণে মোড়া। আমি রূপকে নিয়ে খুব আবেগপ্রবণ ছিলাম, আজও আছি তবে আজ আমি এক অন্য মানুষ আর রুপ ও একদম অন্য মানুষ। বন্ধুত্বে চলতে চলতে বহুবার মনে হতো চলাটা হয়তো খুব সহজ হবে না। বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম বহুবার কিন্তু পারিনি। কেন যে পারিনি তা আজও বুঝতে পারি না। রূপের মেয়েও হয়তো তার মায়ের এই ফাঁকা জায়গাটুকু বুঝতে পেরেছিল। তাই সে রূপকে একটি ডেটিং অ্যাপে রেজিস্টার করে দেয়। সেখানে সারাদিন বহু মেসেজ আসত। রুপ-ও সেইসব নিয়ে খুবই ব্যস্ত রাখতো নিজেকে। যেটুকু বন্ধুত্বের স্বাদ আমি পেতে চলেছিলাম সেটুকুও আবছা হতে শুরু হল।
বুঝতাম না সেটা। পরে বুঝলাম নতুন মানুষের মধ্যে মনোননিবেশ করা খুব স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মেয়েদের মধ্যে। রূপ- এর আর একটা অভ্যাস আছে, ও যদি কোন কিছু নতুন শুরু করে সেটার মধ্যেই পুরোপুরি ভাবে মনসংযোগ করে ফেলে। তাই সেভাবেই ও নিজেকে ওই ডেটিং অ্যাপে ব্যস্ত রাখতো। পাশে বসা বন্ধুকে সুপ্রভাত বলার আগে প্রাধান্য পেত দূরের বন্ধুরা। হোয়াটসঅ্যাপে আমার গুড মর্নিং পড়ে থাকত দু’ঘণ্টা। মানতে পারছিলাম না একদম, আমি রোজের বন্ধুর চেয়ে বেশি দূরের বন্ধুকে প্রাধান্য দিতে শিখিনি। কষ্ট পাচ্ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম না কি করব, চেষ্টা করতে শুরু করলাম বন্ধুত্বটাকে একটা সুন্দর জায়গায় ছেড়ে এগিয়ে যাওয়ার। আমার চেনা, আমার বন্ধু, অচেনা লাগতে শুরু করলো। আমার সব চেনাজানা জিনিস মনে হলো জানিই না। যেন এক নতুন মানুষ দাঁড়িয়ে আমার চোখের সামনে। চেষ্টা করেও পারলাম না বেরিয়ে আসতে। মনে হলো বন্ধুত্ব আর তাহলে কি হলো যদি না বন্ধুকে বুঝে তার সাথে রইলাম? আবার শুরু হলো চলা। কত আঁকাবাঁকা পথ, বহুবার নিজের ফিলিংস, ইমোশন বলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে গেছি, তাও চলেছি। আজ ও চলছি। ভোর চারটে প্রায় বাঁচতে চলল, আমি একটু নেশায় আছি, হাত আর চলছে না, চোখ বন্ধ হচ্ছে। আবার কাল লিখব।
আজকের সকাল খুব অদ্ভুত। মনে যে কি হচ্ছে নিজেই জানিনা। বুঝতেও পারছি না। রূপ- এর অনেক পুরুষ বন্ধুদের মধ্যে যাকে নিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতা বা যাকে নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি আবেগপ্রবন, আজ সেই সম্পর্কটা নিয়ে আমার লেখা। মানুষটির নাম “মন”। ভদ্রলোক দেখতে ভালো, আমুদে, সামাজিক, যত্নশীল, প্রেমময়, ভদ্র, সহানুভূতিশীল এবং সর্বোপরি উনি একজন গায়ক। এতগুলো কথা আজ লিখতে পারছি তার কারণ একটাই, ভদ্রলোকের সঙ্গে গতকালই আমার পরিচয় হয়েছে । সম্পর্কটার শুরু ওই ডেটিং অ্যাপ। শুরুর দিন থেকে রূপের ওনার প্রতি একটা অদ্ভুত ঝোঁক অনুভব করি । যেটা আমার সামনে খুব পরিষ্কার ছিল। তখন রূপ কে আমি ভালোবাসি খুবই। কিন্তু হয়তো চিনি না ভালোভাবে। নিতে পারছিলাম না ওর জড়িয়ে পড়াটা। কোথাও খুব বাদ পড়ে গেছি মনে হতো নিজেকে। মনে হতো কিছুই হয়তো দিতে পারলাম না বন্ধুত্বটাকে। বুঝতে পারতাম না শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার জন্য সম্পর্কটা নাকি সবটাই। রূপের বর তখন হসপিটালে। যে রূপ মানুষটা আমার সঙ্গে সাধারণ বন্ধুত্ব চালাতো সেই মানুষটা কতটা দূরে হয়ে গেল কত তাড়াতাড়ি। আমার ফোন, আমার লেখা, আমাদের কথা সবকিছু বদলে যেতে লাগলো। ভাবলাম সত্যিই হয়তো আমার বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা টা আর নেই। আবার ও বেরিয়ে আসতে চাইলাম। পারলাম না। মনে হলো বন্ধুত্ব আমি তো এভাবে করি না। রাগ হতো, প্রকাশ করে ফেলতাম, রূপ ভাবতো আমি সম্পর্কটা নিতে পারছি না। বলেই ফেললাম একদিন, আমায় দূরে না করে সাথে নিয়ে চলে দেখো কিভাবে সাহায্য করব আমি আমার বন্ধুকে।
আবারো চলা শুরু হল, তখন সময়টা ছিল খুব আলাদা। রূপের মেয়ে তখন মুম্বাই তে। রূপের একটা একাকীত্ব বোধ, একটা পরিবর্তন চলছে নিজের জীবনে। সেই সঙ্গে চলছে রূপের আরও একটি সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক বহু বছর আগের, তার নাম জয়।
খুব বিভ্রান্ত লাগতো। কোন সম্পর্কটা কিভাবে দেখব, কতটা দেখব বুঝতে পারতাম না। জয়ের সম্পর্কটা রূপের সেই সময়ে অগ্রাধিকার পেতো কিন্তু মন কে ও নিজের আলাদাই একটা জায়গায় রাখতো। আমার মনে হতো আমি শুধু একটা টাইম পাস বন্ধু। যাকে সবকিছু বলে দেওয়া যায়, তার সঙ্গটা নেওয়া যায় কিন্তু তার বন্ধুত্বটা কে অতটা প্রাধান্য দেওয়া যায় না। নানারকম প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলতাম, বলে ফেলতাম কিছু না বলতে চাওয়া কথা। বুঝতে পারতাম না আমার বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তাটা। আমার নিজের অনেক কথাই বলে ফেলতাম যা আজও সবার কাছে অজানা বা গোপন আছে। ঘোরা বেড়ানো শুরু হল আমাদের। কোথাও কোথাও মনে হতো রূপের সাথে কমপ্লিট ২৪ ঘন্টা যদি পেতাম? পেতাম না। শারীরিকভাবে আমার সঙ্গেই চলত কিন্তু মানসিকভাবে জুড়ে থাকতো জয় আর মনকে নিয়ে।
আমি প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলি বলে রূপ কোথাও মন সম্পর্কটা আমার কাছে লুকিয়ে রাখত। আমি মন-এর সাথে চলার সব দিক নিয়ে নিতে পারতাম আর সেটা হয়তো রূপের প্রতি ভালোবাসার জায়গা দিয়েই। হয়তো একটু প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলতাম কিন্তু সঙ্গ দিতাম। ওই লুকোচুরিটা একদম নিতে পারতাম না, খুব রাগ হত। মনে হতো কোথাও তো বন্ধুত্বের ফাঁক আছে তাই লুকোচুরি চলছে। যখন যেভাবে যেরকম সঙ্গ দরকার সব দিচ্ছিলাম। একদিন কোথাও থেকে ফেরার পথে একটা ছোট অঘটন ঘটেছিল রূপের সাথে। সেটার জন্য রূপ মন-এর কাছে সাহায্য চাইল। যেখানে আমি পুরো সময়টা শুধু ভেবেই গেলাম সব যেন ঠিকমতো থাকে। নিতে পারিনি, প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলেছিলাম। রূপ ভাবল আমি সম্পর্কটা নিতে পারছি না। সেটা সেদিনও ভুল ছিল, সেটা আজও ভুল-ই। আমি নিতে পারছিলাম সবই শুধু আমার প্রতি অবজ্ঞাটা নিতে পারছিলাম না। আবার ভাবছিলাম ঠিক আছে এইসব সম্পর্কে নতুন জড়িয়েছে তাই বুঝতে পারছে না কি করবে। আবার মেনে নিলাম চলতে থাকলাম।
কোথাও দিয়ে আমাদের বন্ধুত্ব একটা জায়গা পেতে শুরু করল। জড়িয়ে ধরতে পারতাম, আদর করতে পারতাম খুব একটু, তাও ভাবতাম এই মন মানুষটি কে মানতে মানতে চললে বন্ধুত্বটা আরো কিছু সুন্দর দিন দেখবে। আরো কিছুদিন খুব ভালো কিছু মুহূর্ত তৈরি হবে। কিন্তু তার সাথে সাথে নিজে যে কতটা ডুবে গেলাম এই রূপ-এ সেটা বোধহয় বুঝতে পারছিলাম না বা বুঝেও বুঝতে চাইছিলাম না। খুব ভালো লাগতো একসাথে ঘোরা, বেড়ানো, হাসি, মজা সবকিছু। আদর বারলো, আদান-প্রদান বারলো, খুব ইচ্ছে হতো একটা ২৪ ঘন্টা পেতে। সব সময় আমি থাকলেও মানসিকভাবে কোথাও সব জায়গায় মন-এর উপস্থিতি। সুন্দর সাজগোজ, খাওয়া দাওয়া যা কিছুই করছে সবটাই মনে হতো নিজের জন্য আর না হলে ওই মন ভদ্রলোকের জন্য করছে। সব ছবি ওই মন ভদ্রলোককে পাঠাতে হবে। মানতে মানতে চলতাম। ভাবতাম যতটা আমার পাওয়ার পাচ্ছি তো, সেটাও যদি হারিয়ে ফেলি? তাই থাক মেনে নিয়েই চলি। একটু বিরোধিতা করলেই তো রূপ সেটা নিতে পারত না। আমাকে অনেক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিত, সেটা আমি নিতে পারতাম না। আমি বন্ধুত্বের মধ্যে কোনদিনই বিচার, বুদ্ধি ইত্যাদি কথাগুলো বা ভাবনা গুলো আনতে চাইতাম না। কোথাও থেকে বেরিয়ে আসার পর আমাকে যেটুকু বলতো, যা বলতো আমি সেইটুকুই বিশ্বাস করতাম। কোনদিন পাল্টা দুটো প্রশ্ন করিনি। কিন্তু রূপ যখন আমায় প্রশ্ন করতো তখন সেটা আমি নিতে পারতাম না। আমার নিজের ভাবনাটা সরিয়ে একটা অন্য ভাবনা দিয়ে মেনে নিতাম যে আমি ভুল, রুপ-ই ঠিক। জানতাম এই মন ভদ্রলোকের সম্পর্কের জন্য আমার বন্ধুত্বটা অনেক জায়গায় অনেক পথ দেখবে। শুধু হারাতে চাইনি তাই চলতে চলে গেছি।
ততদিনে আমার আর রুপের সম্পর্কটাও সুন্দর আর গভীর হয়েছে এইসব পথ চলায়। আমার বন্ধুত্বের স্বাদ রূপ পেয়েছে, আমিও পেয়েছি নিজের সবকিছু শেয়ার করার একটা জায়গা। বন্ধুত্ব যত বাড়তে থাকে হয়তো চাহিদাও তত বাড়তে থাকে। খুব বেশি বাড়াইনি চাহিদাগুলো কারণ সবটাই যে আমার জানা। রূপের সব চাহিদা তো আর আমি মেটাতে পারবো না।
একটা সময় এলো যখন রূপকে আবারও একটা নতুন রূপে দেখলাম। যে মানুষটা একটা সাধারণ হাত ধরা, কি একটু জড়িয়ে ধরায় এত অস্বস্তি বোধ করে, সেই মানুষটাই একজন অপরিচিতের সঙ্গে খুব সহজে শারীরিকবন্ধনে জড়িয়ে পড়ল। আসলে এটাই হয়তো মানব জীবনের সত্যতা। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। একটি বন্ধুকে আদর করা ও একটি সম্পর্কে শারীরিক মিলনের মধ্যে যে বৈষম্যতা সেটা বোঝার মতন মানসিকতা বহু মানুষের তৈরি হয় না। এটিকে গুলিয়ে ফেলা খুব সহজ। রূপ ও তাদের মধ্যে আলাদা কিছু ছিল না। আমার ভাবনার ভুল ছিল যে রূপ হয়তো সত্যিই আলাদা ভাবনার, মানসিকতার একজন মহিলা।
যাই হোক বন্ধুত্ব এভাবে এগোতে থাকলো বহু পথ চলে অনেক কিছু নিয়ে খুব ধীরে ধীরে ফিরল আমাদের সম্পর্কটা একটি সহজ রাস্তায়। আমার জন্মদিনে রূপ জানতে চেয়েছিল আমি কি চাই? এই মন ভদ্রলোককে সবসময় মানসিকভাবে নিয়ে চলতে চলতে কোথাও আমিও হয়তো একটু ক্লান্ত হয়ে বলে ফেলেছিলাম “একটা ২৪ ঘন্টা দেবে আমায় তোমার লাইফের ৩৬৫ দিন থেকে”। আজও আমি সেই ২৪ ঘন্টার অপেক্ষা করছি।
কি চাই আমি এই 24 ঘন্টায়? খুব বেশি কিছু না। শুধু আর কেউ থাকবে না এই ২৪ ঘন্টায়। সাজ, পোশাক, কথা, গল্প, সবকিছু শুধু আমার জন্য, আমার সাথে, আমার মতো করে। আমাদের বন্ধুত্ব আজ অনেক পরিপূর্ণ। আমাদের বন্ধুত্বে আজকাল কোথাও হয়তো একটু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ও আছে বা তৈরি হয়েছে। কিন্তু সব কিছুর পরও সেই ২৪ ঘন্টা আজও আসেনি। যত জায়গায় গেছি, যাই করেছি ঐ মন ভদ্রলোক সব সময়ই মানসিকভাবে সাথে থেকেছেন। একটা ২৪ ঘন্টাও কি আমার দেওয়া বন্ধুত্ব থেকে আমার পেতে নেই?
সত্যি কথা বলতে কি আজ হয়তো আর আমি চাইনা ওই 24 ঘন্টা। জানি হয়তো জোর করে রূপ আমায় সেটা দেবে, কিন্তু আমার বন্ধুত্ব তো জোর করে কিছু করতে চায় না। চাহিদা যত কম তত ভালো। কিন্তু সেটা কি সব সময় হয়? আমি চেষ্টা করি আজও। সব চলা, সব বলা লিখতে গেলে অনেক সময় লাগবে, অনেক ভাবনা চলে আসে। পুরনো সেসব কথা আর নাইবা সব মনে করলাম।
এভাবেই ভালো-মন্দ পথে চলতে চলতে আজ এই দিনটা এলো। মন ভদ্রলোকের সঙ্গে রূপের আগে আরো তিনবার দেখা হয়েছে, একসাথে ওরা কাটিয়েছে ২-রাত আবার কখনো ৩-রাত, প্রতিবারই কলকাতায়। এই মহামারীর সময় বিগত দেড় বছর কোন দেখা হয়নি। আবার ও ওই বন্ধুত্বের তাগিদ, ভাবলাম এই ব্যাঙ্গালোরে মন ভদ্রলোককে ডেকে নিলে সহজ হয়ে যাবে ওদের দেখা করা। আর আমি বুঝতে পারছিলাম রূপ এর শারীরিক চাহিদাটা । ওই কারণে আমি বলেছিলাম মন ভদ্রলোককে ডেকে নিতে। বুঝলাম ভদ্রলোকেরও খুব সহজ হয়ে যাবে ব্যাঙ্গালোরে এসে রূপের সঙ্গে দেখা করা। শুধু একটা জিনিসই চেয়েছিলাম ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার যেন দেখা না হয়। কিন্তু সেটা আটকানো গেল না। রূপ যদিও সবটা আমার ওপর ছেড়েছিল কিন্তু ওটাও ভদ্রলোক কি মনে করবে সেই ভেবেই করেছিল।তাই দেখা হয়েই গেল। আমি চাইনি আমরা এক হোটেলে থাকি। কিন্তু রূপের বরের ফোন কল গুলো ঠিকমতো যাতে নেওয়া যায় তার জন্যই থাকলাম। কারণ রূপের বরের সঙ্গেও আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। উনি আমাকে ফোন করে রূপকে চাইতেই পারেন তখন যাতে অসুবিধা না হয় তাই আমাদের নোভোটেল হোটেলেই মন ভদ্রলোক অন্য একটি রুম বুক করে থাকার ব্যবস্থা করলেন।
প্রথম দিনটা অনেক সহজ ছিল আমার কাছে। শুধু এটুকু বুঝলাম ভগবান হয়তো আমায় কিছু শিক্ষা দিতে চাইছে। বন্ধুত্ব এবং সম্পর্কের মধ্যে তফাৎটা ভগবান আমায় বুঝিয়ে দিতে চাইছে। আমি হয়তো শুরুর দিন থেকে বুঝতেই পেরেছিলাম এই মন ভদ্রলোক একদিন আমার পাশ থেকে, আমার সামনে দিয়ে আমার বন্ধু নিয়ে চলে যাবে।ঠিক তাই হলো খাওয়া দাওয়া গল্প গুজব করে একটি সন্ধ্যে কাটানোর পর মন ভদ্রলোক আমার সামনে দিয়ে রূপকে নিয়ে অন্য রুমটিতে চলে গেল। দেখতে হল, দেখলাম অনেক কিছু, জানলাম অনেক কিছু, বুঝলামও। চোখ এড়ালো না কোন কিছুই। খুব চেনা সব কত অচেনা লাগলো।
কেন চললাম আমি এই পথে? বন্ধুত্ব করা বন্ধুকে খুশি দেখতে চাওয়ার ফল কি এটা? এক মুহূর্তে সব কেমন পাল্টে গেল। বুঝতে পারছি না কোনটা লিখব, কোনটা ভাববো, কি ভাববো? রূপকে আমি সব সময় সুন্দর করে দেখতে চাই। কতবার বলেছি একটা সন্ধ্যে একটু কাটাই শুধু আমরা আর একটু সুন্দর করে সাজো। কি আর করব? বড়জোর একটু বেশিক্ষণ গল্প করব, একটু কাছাকাছি বসবো, একটু ভালো-মন্দ খাব, একটু হাসাহাসি করব, এইটুকুই তো। সেটা তো এখন আমাদের মধ্যে হয়ই । কিন্তু রূপ সবসময়ই খুব সাধারণ ভাবে আসে। আর ওই ভদ্রলোকের উপস্থিতি তো সব সময় আছে রূপ-এর মনের মধ্যে। রূপের যে ওই ভদ্রলোকের প্রতি একটা ঝোঁক থাকবে এটাই তো খুব স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিক জিনিসটা বুঝতে আমার যে কেন এত সময় লেগে গেল বুঝতে পারলাম না। তাই ধাক্কাটাও জোরেই লাগলো। আসলে বন্ধুত্ব তার নিজের পরিধিতে সীমাবদ্ধ এইটুকু বুঝতেই আমার খুব সময় লেগেছিল এবং বোঝার ভুল হয়ে গেছিল। কোথাও হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে। আবার ও সেই প্রশ্ন কেন হারালাম? যে আমি এত ভালোভাবে সমস্ত সম্পর্ককে নিয়ে চলি সেই আমি এত বড় ভুল করলাম। কাকে বুঝতে ভুল করলাম? নিজেকে, রূপকে, নাকি বন্ধুত্বটাকে? বন্ধুত্বে বিচার বুদ্ধি আসে না, সীমা পরিসীমা হয় না, লুকোচুরি হয় না এসব ভাবনা, এত বছরের চলা, সব কি ভুল? অন্য দিকের গল্পটারও খুব অদ্ভুত দিকে মোর ঘুরলো। রূপ আর জয়ের সম্পর্ক। সে কথা পরে লিখব।
কি চাইলাম আমি রূপের থেকে? ভালোবাসা। ওটা আমি একটা সম্পদের মত পেয়েছি। ও ওর মত করে আমায় ভালবেসেছে আর আজও খুবই বাসে। আমি বেশি তাই ওকে ওর মতো করে ভালোবেসেছি। কি জানি সবটা সবরকম ভাবে ওকে বোঝাতে পেরেছি কিনা বা সামনের দিনেও পারবো কিনা।
নিশা কি সত্যিই রূপ আর মন ভদ্রলোকের সম্পর্কটা, তাদের শারীরিক চাহিদা, তাদের মানসিক চাহিদা, সেই রাতে একটু নেশার আমেজে নিশার চোখের সামনে তাদের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত, সবকিছু কি নিতে পেরেছিল? নাকি আজও নিশা রূপের সঙ্গে থেকেও কোথাও বড্ড একবন্ধুত্ব

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প