বেলিফুল পর্ব০২

– বেলিফুলের মালাটা আমাকে দিবেন?
– কেনো?
– আমি নাহয় তিন্নি হয়েই থাকি। আদিরা নামটা নাহয় ভুলে যান।
– নাহ।
– কেনো? আমিতো তিন্নির মতই দেখতে।
– বাইরের দিক থেকে হয়তো আদিরা তিন্নি চেনা যাবেনা তবে তিন্নির স্মৃতি সমসময় ঘুরবে মাথায়।
– একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন?
– হ্যা বলুন।
– আপনি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হবেন? আমার না কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলোনা কখনো। আর শুনেছি এ দেশে নাকি মেয়েকে পছন্দ না হলে স্বামি মারধর করে, আপনি আমাকে মারবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে বিরক্ত করবোনা।
মেয়েটার কথায় অবাক না হয়ে পারলাম না।
এত সহজে কিভাবে মেনে নিলো সবকিছু? আর স্বামিকে কেউ বেস্টফ্রেন্ড হতে বলছে এই প্রথমবার শুনলাম।
– কি হলো কথা বলছেন না কেনো?
– ভাবতেছি কি করা যায়।
– দেখুন আমরা বন্ধু হয়ে থাকলে তো আপনার জন্য ভালোই হবে। আংকেল আন্টি বুঝতেই পারবেনা যে আপনি আমাকে মেনে নেননি।
– কালকে জানাবো।
– আমার ঘুম পাচ্ছে আমি কি ঘুমাবো?
– ঠিক আছে ঘুমান।
রাত তখন দুইটা পনের। তাকে ঘুমাতে বলে একটা সিগারেট ধরালাম। কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি পোড়াচ্ছে আমাকে। মাথা ঝিমঝিম করছে এখনো।
তিন্নি মেয়েটা যে আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রায় পাগল হয়ে গেছিলো সে নিজেই পালালো!
মেনে নিবো কিভাবে?
হঠাৎ আদিরা উঠে বললো,
– আমাকে একটা দিবেন?
কিছুটা ধমকের সুরে বললাম,
– সাহস তো কম না আমার কাছে সিগারেট চাচ্ছেন?
– আপনি কেনো খাচ্ছেন?
– আপনাকে কেনো বলবো? চুপচাপ ঘুমান বেশি কথা বলবেন না।
মেয়েটা কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো,
– সিগারেট তো দিলেনই না উল্টা বকা দিচ্ছেন।
– আচ্ছা দু টান দিবেন এর বেশি না ওকে?
– থাংকু
মেয়েটার হাতে সিগারেট দিয়ে ভরসা পাচ্ছিনা।
যা ভাবছি তাই।
দুই টান দিয়েই মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।
ধরার আগেই সে বিছানায় পড়ে গেলো।
বাসর রাতে সিগারেট খেয়ে বউ অজ্ঞান।
আমি রিপোর্টার হলে সিওর এই খবরটা ছাপাতে ভুলতাম না।
মেয়েটার কান্ড দেখে হাসি পাচ্ছে।
সিগারেটটা তুলতেই দেখলাম সিগারেটের গোড়ায় লিপস্টিক লেগে গেছে।
টানবো নাকি টানবোনা ভাবার সময় নেই,
পুড়ছে সিগারেট, উড়ছে ধোঁয়া।
তারপর কি?
ছন্দ আসছেনা।
তিন্নির কথা ভাবতে ইচ্ছা হচ্ছেনা।
এই মেয়েটার মোহে আটকা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
মেয়েটার দিকে তাকালাম, এত রাতে চাঁদ থাকার কথা না তবুও বাইরে মস্ত বড় একটা চাঁদ।
জানালার পর্দা সরিয়ে দিলাম, চাঁদের আলো মেয়েটার মুখে এসে পড়লো।
এবার পরিপূর্ন।
কথা ছিলো তিন্নিকে এভাবে দেখবো।
তিন্নিকেই দেখছি তবে নাম তিন্নি না।
এর নাম আদিরা।
শীতকাল,
ঠান্ডায় মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।
আমি গিয়ে শুয়ে পড়লাম মেয়েটার পাশে।
কিছুক্ষণ যেতেই মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তার শরিরের উষ্ণতা আমাকে কিছুটা কামুকী করে তুললেও সেটাকে মাথা থেকে নামিয়ে দিলাম।
পরদিন সকাল,
মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছিনা।
হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখলাম আদিরা আম্মুর সাথে রান্নাঘরে।
চা বানাচ্ছে। আমি বললাম আমাকে চিনি বেশি দিয়ে এক কাপ চা দিয়েন।
চায়ের অর্ডার করে বাইরের দিকে তাকালাম।
ভাবখানা এমন যে একটা কফিশপে বসে বসে অর্ডার করছি আর বাইরের প্রকৃতি দেখছি।
মেয়েটা চা আনলো,
নাহ চা বেশ ভালো বানায় মেয়েটা, ভেবেছিলাম হয়তো খাওয়া যাবেনা এখন দেখছি রোজ খেতে হবে।
আম্মুর সামনেই বললাম,
– প্রতিদিন সকালে চা নিয়ে আমার ঘুম ভাঙাবেন। কাপ পিরিচের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙা সকাল কখনো খারাপ হবেনা মনে হয়।
মেয়েটা লজ্জা পেলো কিনা জানিনা তবে এবার আম্মুকে ভালোভাবে খেয়াল করতেই উঠে চলে এলাম।
বিয়ের ব্যস্ততা কাটতে কাটতে আরো পনের দিন।
এর বাড়ি যেতে হয় ওর বাড়ি যেতে হয়।
এত ব্যস্ত কোনোদিন হইনি তবে একটা জিনিস হাজার ব্যস্ততায় ও ভুলতে পারিনি।
তিন্নি,
চোখের সামনে মেয়েটা হাসে, দৌড়ায় কথা বলে আমি ছুঁয়ে দেখতে পারিনা আমি ভালোবাসতে পারিনা মেয়েটার সাথে মন খুলে কথাও বলতে পারিনা।
কেনো পারিনা?
সেটাইতো কেনো পারিনা।
ভাবাচ্ছে বিষয়টা প্রচুর। আমার কেনো জানি এখনো বিশ্বাস হচ্ছে এই মেয়েটা আদিরা। আমার মনে হচ্ছে এটাই তিন্নি। একটা মজার খেলা চলছে আমার সাথে।
আমি কি জোকার? সার্কাস দেখাতে এসেছি?
যদি কখনও এটা প্রমানিত হয় এই মেয়েটাই তিন্নি তবে মেয়েটাকে এতটা মারবো আমি এতটাই মারবো যে মে প্রায় মারা যাবে আবার বেচে ফিরবে।
– শুনছেন?
– জ্বি বলুন।
– আপু কল করেছিলো।
– মানে?
– তিন্নি।
– কই ফোন দিন আমি কথা বলবো।
– আপু কোনো রিসিপশন থেকে কল করেছিলো।
– ঠিকানা নেন।
– দরকার নেই। আপু আপনাকে কিছু বলতে বলেছে।
বলবো?
– বলুন।
– আপু আপনাকে কোনোদিনও ভালোবাসেনি তার আরো একটা রিলেশন ছিলো হিমাদ্র নামের এক ছেলের সাথে তার সাথেই পালিয়েছে আপু। কোথায় আছে খোজ নিয়ে লাভ নেই কারন তারা আবার অন্যকোথাও যাচ্ছে।
আদিরার কথা শুনে হার্ট অ্যাটাক হয়তো করিনি তবে মৃত্যুর ইচ্ছাটা খুবই তিব্রতর হলো।
সিগারেটে টান দিয়ে ভাবলাম উত্তর কি দিবো।
আদৌ কি মনকে বুঝানোর মত উত্তর আমার কাছে আছে?
নেই হয়তো।
আদিরার দিকে তাকালাম।
তার চোখে স্পষ্ট ভালোবাসা দেখতে পেলাম আমি।
আমি ডাকলাম,
– তিন্নি।
আদিরা ছলছল চোখে বললো,
– আপু কেনো এমন করলো? আপনার মতো মানুষকে কষ্ট দিয়ে সে কখনো ভালো থাকতে পারবেনা, কখনোই না।
আমি আদিরার গালে ঠাস করে দুইটা চড় মেরে দিলাম।
গালে ৪ আঙুলের দাগ পড়ে গেছে।
মেয়েটা এবার কেঁদেই ফেললো।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প