বেলিফুল পর্ব ০৩

মেয়েটা থাপ্পড় খেয়ে দুরে সরে গেলোনা বরং অবাক করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
মেয়েটা তো সেদিন বলেছিলো না মারতে তবুও কেনো মারলাম আমি?
মেয়েটার কান্নায়ও আলাদা একটা মায়া আছে।
শুধু সুন্দরী না, পৃথিবীর সব মেয়েরই আছে। তারা কাঁদলে একটা আলাদারকম ভালোলাগা কাজ করে মেয়েটার ওপর। প্রচুর দূর্বলতা এই কান্নায়। বাস্তবিক জিবনেও এই কান্নার কারনেই একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম সে কথা নাহয় অন্য একদিন বলবো।
মেয়েটার গালের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফুলে গেছে খানিকটা।
মেয়েটার কান্না থেমেছে তবুও ছাড়েনি আমাকে।
সেভাবেই জড়িয়ে ধরে আছে বরং একটু শক্ত করেই ধরেছে।
ইচ্ছা হচ্ছে একটু ভালোবাসি মেয়েটাকে কিন্তু তিন্নি?
আমিতো তিন্নিকে ভালোবাসি।
আদিরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
মেয়েটার চোখের দিকে তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে নিলো। লজ্জা পেয়েছে খানিকটা।
– সরি আমি আসলে মারতে চাইনি। আপনি বললেন তিন্নি কখনো ভালো থাকতে পারবেনা তাই রাগ উঠে গেছিলো।
– এতকিছুর পরও তিন্নির খারাপ চাননা আপনি?
– কেনো চাইবো?
– সে যে আপনাকে ধোঁকা দিলো?
– দিলেই কি আমি তার খারাপ চাইবো? এটা ভালোবাসা না আদিরা, কাওকে ভালোবাসলে পুরোটা দিয়েই বাসতে হয় সে থাকুক আর না থাকুক খারাপ কেনো চাইবো। সবসময় চাই সে ভালো থাকুক।
মেয়েটা কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে তারপর বললো,
– আপনি আমাকেও একটু ভালোবাসবেন? বেশিনা তিন্নি আপুর অর্ধেক বা তারও অর্ধেক।
উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম। এটাই ভালো নয়কি?যখন উত্তর থাকেনা তখন পালিয়ে যাওয়াই ভালো।
মেয়েটাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।
সেদিন সকালে দেখলাম আমার সিগারেটের প্যাকেটটা নেই।
কোথায় গেলো? খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে এসে দেখলাম মেয়েটা সিগারেট গুলা একটু একটু করে পোড়াচ্ছে।
আমি বললাম,
– একি করছেন? সিগারেট কেনো পোড়াচ্ছেন।
– চুপচাপ দেখুন কি হয়।
– কি হবে সিগারেটটা পুড়ে যাচ্ছে।
– হ্যা ঠিক এভাবেই আপনার হ্রদপিন্ড টাকেও পোড়াচ্ছে এই সিগারেট।
– হুম তো?
– শুনুন আপনি আজ থেকে সিগারেট কম খাবেন দুই একটা চলবে তবে প্যাকেট প্যাকেট খাওয়া বন্ধ।
আমি চাইনা আপনাকে এত তারাতারি হারিয়ে ফেলি।
ধরুন আপনি আমাকে মেনে নিলেন কিন্তু সেটা আজ থেকে ১০ বছর পর আর তখন আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত আমি কি করবো তখন?
এটারও জবাব দেইনি। মেয়েটা বড্ড বোকা আবার ভিষন চালাক। বোকামিটা বাইরে বাইরে তবে ভিতরে প্রচুর চালাকি এমনটাই মনে হয় আমার।
সন্ধা হলো, মেয়েটা বেলকনীতে দাড়িয়ে চা খাচ্ছে।
মেয়েটা আবার শাড়ি পড়া শিখলো কিভাবে? থাকতো তো আমেরিকা সেখানেও শাড়ি পাওয়া যায় নাকি?
কালো একটা শাড়ি। বরাবরই কালো রংটা আমার পছন্দ। গায়ের রংয়ের সাথে বেশ মিলে যায় তাই অতিরিক্ত পছন্দের কারন।
মেয়েদের পিঠের দিকটা বেশ মসৃন হয়।
ঘাড়ের নিচের জায়গাটুকু ভিষন মসৃন হয়।
আমি আদিরাকে না ছুঁয়েও কল্পনা করলাম তিন্নি থাকলে হয়তো এখন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতাম হয়তোবা খোলা জায়গাটুকুতে একটা কিসও করতাম।
আদিরাকেও করতে পারি সে মানা করবেনা তবে অবাক হবে।
বেশ অনেকটাই অবাক হবে।
বেশিক্ষণ তাকালাম না কারন যৌনতা একবার বাসা বাধলে ভালোবাসা তখন উড়ে যায়।
মাথায় থাকেনা স্বাভাবিক কথাগুলো তখন পুরো পৃথিবী জুড়েই শুধু নারী দেহ আর যৌনতার ঘ্রান ভাসে।
সামনে সুন্দরী বউ। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা কখনো ভালোবাসা নিয়ে ভাববেনা অন্তত বাঙালি ত নয়ই।
বাঙালির স্বভাব হলো, ধর তক্তা মার পেরেক।
আমিও ব্যতিক্রম নই তবে আমি চাইনা এমন কিছু হোক যার কারনে পরে আফসোস করতে হয়।
নিজেকে সংযত করলাম ফিরে আসলাম রুমে।
আপনারা কখনো খেয়াল করেছেন?
গোলাকৃতি মুখে সাদা চশমা কিন্তু বেশ মানায়।
বিশেষ করে মেয়েদের। সাদা চশমা আর গোল মুখ যেনো একে অপরের জন্যই তৈরি। মেয়েরা লম্বা মুখে চশমা পড়লে ভালো লাগেনা তা না তবে ততটাও ভালো লাগেনা যতটা মাঝারী গোল একটা মুখে লাগে।
আদিরার দিকে তাকালে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।
মাঝারী গোল মুখ, দুর থেকে দেখলে গোল মনে হয় কাছে গেলে কিছুটা লম্বা লাগে।
আমি বহুবার তিন্নির প্রেমে পড়েছি এ কারনে। আজ আদিরার প্রেমে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে তবে তিন্নি যে পিছু ছাড়ছেনা কিছুতেই।
প্রতিটা সেকেন্ডে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে আমাকে।
সারাদিন যতই দুরে থাকি রাত হলে এক বিছানায় মাত্র কয়েক ইন্চি দুরে শুয়ে কেউ আমাকে ভালোবেসে যাচ্ছে গোপনে আর সেটা আমি জানি তবুও কিছু বলতে পারিনা, মাঝে মাঝে প্রচন্ড খারাপ লাগে আদিরা মেয়েটার জন্য।
আমি চাইলেই কি পারিনা মেয়েটাকে হাসিখুশি রাখতে?
সত্যিই কি পারি? যদি পারবোই তবে কেনো করছিনা?
ও হ্যা তিন্নি।
মেয়েটাকে ভালোবাসতাম, সে তো চলেই গেছে তবে আমি কেনো এই মেয়েটাকে কষ্ট দিবো প্রতিনিয়ত?
হ্যা এগুলা আমিও ভাবি তবে দিনশেষে আদিরার দিকে তাকালেও সেই তিন্নিকেই দেখি আমি। মেয়েটার স্মৃতি যে পিছু ছাড়ছেনা কিছুতেই।
কিভাবে ভুলে যাবো তাকে?
কোনো উপায় আছে কি?
পাশ থেকে মেয়েটা চিমটি কাটলো।
ব্যাথায় উহ বলে উঠলাম আমি।
মেয়েটা আমাকে নিয়ে খেলছে, খেলুক আমি বরং কিছুটা ঘুমাই।
আদিরা আর কিছু করলোনা।
এরপর থেকে প্রায় রাতেই খেয়াল করতাম আদিরা আমাকে প্রচন্ড জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আগে উল্টো হয়ে ঘুমাতাম আমার পিঠের সাথে মেয়েটা ব্যাথা পেতো তাই এখন তার দিকে ফিরে ঘুমাই।
বুকের সাথে পারলে মিশে যায় মেয়েটা।
মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙলে খেয়াল করি মেয়েটা কেঁদেছে।
কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
আমি দির্ঘশ্বাস ছাড়ি। এছাড়া আর কি করবো?
আজ রাতে হঠাৎ তিন্নি বললো,
– একটা কথা বলবো রাগ করবেন?
– কি কথা?
– আগে বলুন রাগ করবেন কিনা।
– রাগ করার মতো কথা হলে তো রাগ করবোই।
– না থাক তাহলে বলবোনা, আপনি রেগে গেলে মারেন আমি কখনো মার খাইনি সেদিনই প্রথম প্রচুর ব্যাথা লাগে আপনি মারলে।
মেয়েটার কথায় না হেসে পারলাম না।
মেয়েটা যেনো মুহুর্তেই মন ভালো করে দিতে পারে আবার চাইলেই ঝলমলে রোদের দিনেও আষাঢ়ের মেঘ জমাতে পারে।
– বলুন কি বলবেন রাগ করবোনা।
– আমি কি আপনাকে একটা কিস করতে পারি? প্লিজ। আমার খুব ইচ্ছা লিপ কিস করার।
মেয়েটাকে কি আবার মারবো? নাকি কিস করবো।
মনে হয় এবার আরো দুইটা চড় বেশি মারা উচিত।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প