ভুল পর্ব / ২

আমার স্ত্রী মাইশা বেলকনিতে দাড়িয়ে কারো সাথে হাসতে হাসতে কথা বলতেছিলো।
যা আমার একদম সহ্য হয় নি।
তাই মাইশাকে গিয়ে বললাম কার সাথে কথা বলছো
তাও আবার এতো সকালে।

আমার কথা শুনে মাইশা একটু চমকে গেলো।
আর বললো
আরে তুমি এখানে?? নামাজ পড়া হয়েছে???

আমি তোমাকে প্রশ্ন করলাম আর তুমি উত্তর না দিয়ে কিনা উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করছো।
বাহহ

আরে ওওওও,, আমার কলিগ নিলয়। একটা প্রবলেম এ পরেছিলো তাই কল করেছে।
বলেই বেলকনি থেকে চলে গেলো মইশা।

আমি ওকে বাধা দিতে গিয়েও পারলাম না।
আমি আর কি বা প্রশ্ন করতে পারি???
কোন প্রশ্ন করলে হয়তো উত্তরটা এমনি হবে।
কলিগ,কিছুনা, এমনি
এই টাইপের।
তবে বুঝতে পারলাম আমাদের দুজনের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তিটি নিলয়। ছেলেটাকে একটু একটু চিনি আমি।
মাইশা একদিন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। দেখতে সুদর্শন, বড়লোক বাপের কোন আদরের দুলাল হবে হয়তো।

মাইশা চলে যাওয়ার পর জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছি।
কিছুক্ষন পর মাইশা নিজে এলো দুই কাপ চা নিয়ে।
একটা কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
কি ব্যাপার হুমমম।
তোমাকে কে তো আগে এভাবে জানালার গ্রীল ধরে দারিয়ে থাকতে দেখি নি।

আমি কোন উত্তর না দিয়ে
নিজের মতো করে চায়ের কাপ টা নিয়ে চুমক দিচ্ছি।

মাইশা আবার বললো।
কিছু বলছো না যে।

এমনি,,,,, সব সময় তো আর মন এক রকম থাকে না।

হুমমম,,, ঠিক বলেছো তুমি।
তো অফিস কেমন চলছে??
আসলে নানা ঝামেলায় তোমার সাথে তেমন কথা বলা হয় না।

জ্বী ভালই।

এভাবে আরো কিছু প্রশ্ন করলো মাইশা।
আমি শুধু উত্তরটাই দিলাম।
উল্টো কোন প্রশ্ন করলাম না।

তারপর সময় মতো দুজনে দুজনের অফিসে চলে যাই।

আর এভাবেই কেটে যায় বেশ কিছু দিন।।
এর মাঝে,, দিনদিন মাইশার মাঝে পরিবর্তন লক্ষ করছি আমি।
আর ভিতরে ভিতরে যেন শেষ হয়ে যাচ্ছি।কতো ভালোবাসা ছিলো আমাদের। আর এখন???

কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝলাম না মাইশা এরকম টা কেন করছে।
ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছি আমরা।
হঠাৎ করে আমার মাঝে কি এমন কম পড়লো যে ওকে অন্যের কাছে যেতে হচ্ছে। অন্য কারো ভালোবাসা কেয়ার প্রয়জন হচ্ছে??

যত দিন যাচ্ছে আমার অফিস,, বাসা
সব কিছুর উপর যেন কেমন একটা বিরক্তি চলে আসতেছে।

এমনি এক দিন আমি অফিসের কাজে লান্স আওয়ারের পরে বসুন্ধরায় যাই।
ক্লাইন্ডের সাথে মিটিং করতে।
মিটিং শেষে
আবার অফিসে ফিরবো
এমন সময় বসুন্ধরা সপিং কমপ্লেক্স এর গেটে মাইশা ও নিলয়কে দেখলাম খুব হাস্যউজ্জল ভাবে বের হচ্ছে।
দুজনকে দেখে অনেক খুশি মনে হচ্ছে.
আমি নিজেকে আড়াল করে সেখান থেকে চলে আসি। কারণ সেখানে দাড়ানোর না ছিলো সময় না ছিলো ইচ্ছা।
ড্রাইভার কে গাড়ী র্স্টট করতে বলে চলে আসি।

বিকালে অফিস শেষ করে বাসা এসে দেখে
মাইশা আগেই চলে এসেছে।
রুমে বসে টিভি দেখছে।

আমি রুমে ঢুকে অফিসের ব্যাগটা টেবিলে রেখে
ওয়াশরুমে চলে যাই।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়তেই মাইশা আমার গলা জরিয়ে ধরে বললো
আমার হিরোটার মুড অফ কেন হুমমম।

আগে মাইশা যখন আমাকে এভাবে জরিয়ে ধরতো তখন ওর মাঝে নিজেকে খুজে পেতাম।
ভালবাসায় মোরানো ছিলো সেই মহুর্ত গুলো।
কিন্তু আজ ওর হাত গুলো আমার কাছে কেমন যেন ভারি ভারি লাগছিলো। অসহ্য লাগছিলো আমার। তাই,,,, আমার এখন এসব ভালো লাগছেনা বলে মাইশার হাত ছাড়িয়ে হালিমাকে ডেকে নাস্তা করে
বাইরে বের হই।
বুঝতে পারছিলাম মাইশা মন খারাপ করেছে কিন্তু
তাতে আমার কি??
ওর তো এখন মন ভালো করার মতো অন্য কেউ আছে।

বাইরে বের তানিয়াকে (আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড) কল দিয়ে দেখা করতে বললাম।

ও রাজি হয়ে গেলো আর একটা কফি শপ এর নাম বললো সেখানে ওয়েট করতে বললো।
আমিও চলে গেলাম ওর বলে দেওয়া কফি শপ এ।

তানিয়ার জন্য বসে ওয়েট করছি।
ওর সাথে দেখার করার উদ্যেশ্য হলো
ওর কাছে সব খুলে বলবো আর এই অবস্থায় কি করা উচিৎ
একটু সাজেশন নিবো।

প্রায় ৩০ মিনিট ওয়েট করার পর তানিয়া আসলো।

ওকে সব খুলে বললাম
আর আমি কি করবো সেটা জানতে চাইলাম।

ও উত্তর দিলো ওর মতো করে।
ও বললো
দেখ দোস্ত আমিও একটা মেয়ে তাই আমি ভালো করে জানি মেয়েদের মন কখন কোন দিকে ঘুরে যায় সে নিজেও জানে না।
দেখ এখন হয়তো মাইশার নিলয় কে মনে ধরেছে।
তাই তোর থেকে স্পেস নেওয়ার জন্য এসব করছে।
তুই শিক্ষিত ছেলে এটা নিশ্চয় বুঝতে পারছিস যে,,, মাইশার মনে এখন তুই নাই।

আমি মাথা নিচু করে বসে আছি।

তানিয়া আবার বলতে শুরু করলো।
তুই একটা কাজ করতে পারিস।
তুই বরং ২-৩ দিন মাইশাকে একটু স্পেস দে।
দিয়ে দেখ ও কি করে।

স্পেস??? কিরকম

তুই ২-৩ দিনের জন্য,,, ওকে একা রেখে কোথাও ঘুরে আয়।

কিন্তু এতে কি কাজ হবে??

হবে কি না জানি নাহ। ট্রাই করে দেখ।
এর মধ্যে কিন্তু মাইশা তোকো চায় কি না সেটা বোঝা যাবে।
আজ আমার কাজ আছে আমি উঠলাম।
বলেই চলে গেলো তানিয়া।

আমি কিছক্ষন কফি শপ এ বসে থেকে বাসা চলে আসলাম।
বাসায় আসতে আসতে রাত প্রায় ৯ টা বেজে গেছে।

রুমে এসে দেখি মাইশা খাবার রেডি করে টোবিলে বসে বসে ঝিমাচ্ছে।

আমি রুমে ঢুকতেই বললো
কই ছিলা তুমি??

কাজ ছিলো

কি কাজ তোমার হ্যা?? এতো রাতে কেউ বাসায় আসে?
জানো না তোমায় ছাড়া আমি খাই না?

মাইশার এই কথা গুলো আগে ভালো লাগলেও আজ স্রেফ নেকামো লাগছে।
তাই কিছু না বলে টেবিলে বসে পড়লাম।

মাইশা ভাত বেরে দিলো।।
কিন্তু আমার সেটা মুখে নিতেও কেমন যেন লাগছে।
মাইশাকে বুঝতে না দিয়ে।
বাইরে খেয়ে এসেছি বলে হাত ধুয়ে উঠে পড়লাম।

তারপর মাইশা ও আমি দুজনেই শুয়ে পড়লাম।

মাথার পিছনে হাত দিয়ে শুয়ে শুয়ে সেই দিন গুলোর কথা ভাবছি।
কতো সুন্দর ছিলো সেই দিন গুলো।
কত সুখ ছিলো আমাদের এই ছোট্ট সংসারে।
কিন্তু আজ সব অতীত।
এসব ভাবতেই বুঝতে পারলাম চোখের কোন এক ফোটা জল চলে আসছে।

মাইশা আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাছে।
রুমের ড্রিম লাইটে ওকে সুন্দর লাগছে।
ঘুমের সময় মাইশাকে দারুন লাগে।
কতো রাত যে ওর ঘুমানো চেহারা দেখে পার করেছি তা আপনাদের হিসাব দিতে পারবো না।
কিন্তু আজ ১ মিনিট ও ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে না।।
এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেও জানি নাহ।

পরের দিন সকালে আমি অফিসে যাবো তাই নিজে নিজে রেডি হচ্ছি। আগে প্রতিদিন মাইশাই আমাকে রেডি হতে হেল্প করতো।
টাই বেধে দিতো।
কিন্তু আজ আমি নিজে নিজে রেডি হওয়ার ট্রই করছি। কিন্তু টাই টা বাধতে পারছিলাম না।
যা দেখে মাইশা অবাক হয়ে বললো যেটা পারো না সেটা করতে যাও কেন??
আর হুমমম টাই টা নিজে নিজে বাধা শিখে নিও। উপকার হবে।
টাই বেধে দিয়ে মাইশা কোন কারনে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাইশার বলে যাওয়া কথাটার মানে খোজার চেস্টা করছি।
টাই বাধা শিখে নেব??
তাহলে মাইশা সত্যি আমাকে ছেরে চলে যাবে??
এসব ভাবছি আর ওমনি মাইশার মোবসইলের ম্যাসেস টোন টা বেজে উঠলো।

আমার ইচ্চা না থাকা সত্তেও মোবাইলটা হতে নিয়ে,,,
অবাক!
মোবাইলের পর্দায় পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি নিলয় এর ম্যাসেস।

তারাতারি করে ম্যাসেসটা সিন করে দেখে মথা চক্কর দিয়ে উঠলো।
ম্যাসেস টা ছিলো।
“””” আর প্রেম নয়,, এবার সোজা বিয়ে,, আমি অলরেডি কার্ড ছাপানোর অর্ডার দিয়ে দিয়েছি”””

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প