রবিবার সকাল। শহরের ব্যস্ততা যেন আজ একটু স্তব্ধ। অয়ন ঘুম থেকে উঠে চা বানায়, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তার মাথার মধ্যে একটাই নাম — অনুরাধা।
গত কিছুদিনে তার জীবনে এই মেয়েটা যেন নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। অয়নের ভাবনারা আগে যেমন ছিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, এখন তারা যেন একটা কেন্দ্র খুঁজে পেয়েছে – সেই কেন্দ্রে আছে অনুরাধার হাসি, কথা, আর সেই চোখ… যা পড়ে ফেলে অয়নের না বলা অনুভব।
—
সন্ধ্যে – অনুরাধার ডায়েরি থেকে এক পৃষ্ঠা
> “আজ আবার তার সঙ্গে হাঁটলাম। সে অদ্ভুত, একরকম বোবা!
কিন্তু তার চোখ আমার দিকে তাকালে মনে হয়, আমি আমার চুপ করে থাকা আত্মাটাকে ওর মাঝে খুঁজে পাই।
আমি জানি না এটা কী… ভালবাসা? নাকি নিছক কল্পনা?”
অনুরাধা আজকাল প্রতিদিন লিখছে। প্রতিদিন অয়নকে দেখতে পাওয়ার পর তার ভেতরের আলোড়ন বেড়ে যায়। অয়নের মতো চুপচাপ কেউ কীভাবে এত গভীর হতে পারে, তা সে ভাবতেই পারে না। কিন্তু তার একটা সমস্যা আছে—সে ভয় পায় সম্পর্কের গভীরতা। অতীতে কেউ তাকে ভরসা দেয়নি।
—
ক্যাফের দিনগুলো
প্রতি বৃহস্পতিবার তারা দেখা করে ক্যাফেতে। বই পড়ে, চুপচাপ বসে থাকে, কখনো খুব সামান্য কিছু কথা হয়।
একদিন, হঠাৎ অনুরাধা অয়নকে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কখনো প্রেমে পড়েছো?”
অয়ন একটু থেমে বলে,
“হয়তো পড়েছি। কিন্তু সেটা যদি কাউকে বলা না হয়, তাহলে সেটা প্রেম ছিল কি?”
অনুরাধা একটু চমকে যায়।
সে ভাবে – এটা কি তার জন্য বলা কথা?
—
তাদের নীরব বন্ধন
তাদের মধ্যে একরকম নীরব বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। কথার দরকার পড়ে না সব সময়। চোখের দিকে তাকালেই যেন তারা বুঝে যায় কে কী বলতে চাইছে।
এক সন্ধ্যায়, তারা ধানমন্ডির লেকে বসে। চারপাশে পাখির ডাক, বাতাসে শীতের আমেজ।
অনুরাধা ধীরে ধীরে বলে,
“তুমি জানো, ছোটবেলায় আমি ভাবতাম—যদি কেউ আমাকে সত্যিকারে ভালোবাসে, সে আমার হাত ছাড়বে না কোনোদিন।”
অয়ন বলে না কিছু।
কিন্তু সে ধীরে ধীরে তার হাতটা বাড়িয়ে দেয় অনুরাধার দিকে।
অনুরাধা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে, তারপর হালকা করে অয়নের আঙুলগুলো স্পর্শ করে।
সে মুহূর্তে তাদের চারপাশে যেন সময় থেমে যায়।
—
কিছুদিন পরে
অনুরাধা আর অয়নের দেখা কমে যায় কিছুদিনের জন্য।
অনুরাধার মা হঠাৎ অসুস্থ, গ্রামের বাড়ি যেতে হয়।
অয়ন বুঝতে পারে—সে প্রতিদিন অপেক্ষা করে। ফোন নেই, মেসেজ নেই।
সে ভাবে, ‘সে কি ফিরে আসবে? নাকি আমার জীবন থেকে সবাইয়ের মতো চলে যাবে?’
—
এক চিঠি — অয়নের নোটবুকে লেখা
> “যদি তুমি থাকো… আমি থাকবো।
যদি হারিয়ে যাও, আমি প্রতিদিন পথ চেয়ে বসে থাকবো।
আমি চাই না তুমি কিছু বলো, শুধু… থাকো আমার পাশে।”
—
শেষ বিকেলে
একদিন হঠাৎ ক্যাফের টেবিলে ফিরে আসে অনুরাধা। অনেকটা শুকিয়ে গেছে, চোখে ক্লান্তি, মুখে একরকম আবেগ।
অয়ন চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অনুরাধা বলে,
“আমি এসেছি, কারণ আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি — তুমি আমার সেই মানুষ, যার কাছে আমি হারিয়ে যেতে পারি।”
অয়ন এবার প্রথমবার, সত্যিকার হাসে।