– ” জ্বীনহুজুর শুনছেন? এখানে গোসল করার জায়গা কোনটা? গোসলখানার মতো কোনোকিছুই তো চোখে পড়ছে না। ”
মায়ার কথায় পেছন ঘুরে তাকালো মুহিব। এতক্ষন সামনে থাকা ঝর্ণার দিকে চেয়ে ছিলো ও।
– ” ঝর্নায় করতে পারো। এদিকটায় কেউ আসবে না।”
মায়া নিচে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো ভয়ে।
– ” এতো নিচে? আপনিও চলুন। একা গোসল করতে যাবো না। আচ্ছা আপনি গোসল করবেন না? ”
– ” গোসল? ”
মুহিব কিছু একটা ভেবে মায়াকে কোলে তুলে নেয়। মায়া চোখ বুজে মুহিবের গলা জরিয়ে ধরে। মুহিব মায়াকে কোলে নিয়ে ঝর্ণার একেবারে কাছে চলে আসে। ছিটে ছিটে পানি এসে পড়ছে মায়ার মুখে। ঝর্ণার পানি মায়ার শরীরের যে অংশে পড়ছে সে অংশটুকু ক্রমোশ নীল হচ্ছে। পানিতে মায়ার ছাঁয়া ছটফট করছে। মায়া আধুবুলিতে বলে
– ” আমার হাতে আর কতটুকু সময় আছে মুহিব? আমি আর কতদিন এখানে থাকতে পারবো? ”
মায়ার কথায় ভ*ড়কে যায় মুহিব। নিজেকে সামলে উত্তর দেয়।
– ” রাদ আর ছাঁয়ার বিনা*শের পর আমরাও শেষ হয়ে যাবো। তোমার আর আমার জন্ম হয়েছে জ্বীন জাতিকে রক্ষা করার জন্য। তাই আমাদের এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। ”
মায়া হাসলো মুহিবের কথায়। মুহিবের কোল থেকে নেমে পানিতে পা রাখলো। পা দুটো অসম্ভব জ্বলছে তবুও মায়া পা সড়ালো না। মুহিব এসে মায়ার পাশে বসে।
– ” তবে কেন বলেছিলেন আমাদের তাজওয়ার আসছে? আপনি কি অভি*শা*পটার কথা ভুলে গেছেন? আমার বাবা নিজে আমাকে অভি*শা*প দিয়ে গেছে আমার ছেলে জ্বীন হয়ে জ্বীনজাতিকে ধ্বং*স করবে, আমার বোন বাবার মৃ*ত্যুর প্রতি*শো*ধ নেবে আর আপনার ভাই জ্বীনরাজ্যে হাসিনের শা*ষন চালাবে। ”
– ” জানতাম তোমার সব মনে পড়ে যাবে। ”
– ” স্বাভাবিক নয় কি? আমি সেই মায়া যে নিশিষে সবটা শেষ করতে পারে আবার রক্ষা করতেও পারে। আমি সেই মায়াজান যে শুধু ধ্বং*সে খুশি হয়। আমি কোনো মায়াপরি নই যে ভালোবাসা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে। কাউকে ভালোবাসি না আমি। শুধু নিজেকে ছাড়া। তাই আজ থেকে এটা মায়ারাজ্য হবে। মায়াজানের মায়ারাজ্য। ”
মায়ার কথায় মুহিব বিষ্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারে না। এতোবছরের এতো কিছু কি তবে বৃথা হয়ে গেলো? মায়া কি আগের মতোই আছে?
মায়া নিজের চোখ রাখলো প্রাসাদের দিকে। সাথে সাথে সেখান দিয়ে আ*গুনের ফুলকি ছড়িয়ে পড়ে । মুহিব মায়ার কাজে হকবাক। জ্বীন আ*গুনের তৈরি হলেও প্রাসাদের আ*গুন নে*ভানোর ক্ষমতা ওদের নেই। এটা একমাত্র তাজওয়ারের মা’ই নে*ভাতে পারবে।
– ” মায়া আ*গুন নেভাও। দয়া করে আ*গুন নেভাও মায়া। ”
মায়া শব্দ করে হাসে। পানির নিচ থেকে ছাঁয়াকে উঠিয়ে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো মায়া। তারপর সদর দরজায় ইশারা করলো। রাদ দাড়িয়ে আছে।
– ” ভেতরে আসুন রাদ। নিজের প্রাসাদ, নিজের রাজ্যে প্রবেশ করুন।”
– ” ধন্যবাদ তোমাকে মায়াজান। ”
মায়া উঠে রাদকে হু*কুম করে।
– ” সবাইকে ব*ন্দি বানিয়ে রাখো। কাল আমার তাজ অভিষেকের পর এদের শেষ করবো আমি। ”
মুহিবের চোখ জ্বলছে। মায়া কি করতে যাচ্ছে? তবে কি রাদের অশুভ শক্তি মায়ার ভেতরে চলে এসেছে? মায়াও দুষ্টুপরিতে পরিনত হয়েছে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে মায়া। রাদ পেছন থেকে মায়ার কোমর জরিয়ে ওর কাধে নিজের চিবুক রাখে। মায়া কিছু বলছে না। শুধু নিজের সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। রাদ মায়ার ঘাড়ে নিজের ঠোট রাখলো।
– ” রাদ বাইরে যাও। আমার সাজতে অসুবিধা হচ্ছে। বিরক্ত লাগছে তোমার এই স্পর্শ। ”
– ” কাল থেকে তুমি আমার হবে মায়াজান,, আমার স্বপ্ন সত্যি হবে। আমার মন আজ খুব ভালো। মুহিবকে শেষ করবো আমি। ”
– ” হুম। শেষ করো সবাইকে। এতোগুলো বছর আমাকে অন্ধকারে রাখার জন্য ওদের শা*স্তি পেতে হবে। আমার বোনকে ওরা রাজ্য থেকে বের করে দিয়েছিলো, তোমাকে বের করে দিয়েছিলো এই সবের শা*স্তি পাবে ওরা । ”
– ” আমি গিয়ে দেখি ওদের কি অবস্থা। ”
রাদ চলে যেতেই মায়া নিজের কোমরে ছু*রি গুজে দিলো। র*ক্ত আ*টকে দিলো ওরনা দিয়ে বে*ধে। পেট ব্যাথায় পা দুটো থরথর করে কাঁপছে। বিছানায় বসে পা দুটো নাড়াতে নাড়াতে আয়নায় তাকালো মায়া। ছাঁয়াপরিও একই য*ন্ত্র*ণায় কাঁপছে।
– ” তুই ভুল করছিস মায়া। তুই কিছুতেই ওকে মা*রতে পারিস না। আমাদের বাবার স্বপ্নের কথা ভুলতে পারিস না। এতোটা স্বার্থপর হতে পারিস না তুই। ”
– ” মায়াজান হলো পরিলোকের সব থেকে খারাপ পরি। তোর থেকেও খারাপ। আর আমি যেটা চাই সেটা যেকোনো মুহূর্তেই আমি পূরন করবো। ”
– ” ওদের মে*রে প*স্তাবি তুই। ”
ছাঁয়ার চোখের দিকে তাকালো মায়া। তারপর নিজের শক্তি দিয়ে ছাঁয়ার বা*কশক্তি কেড়ে নিলো।
– ” তোকে কিছুক্ষন চুপ থাকতে হবে বোন। নাহলে যে তুই’ই আমার পথের কা*টা হয়ে উঠবি। সেটা মায়াজান কিভাবে হতে দিতে পারে? ”
ছাঁয়া ছটফট করছে মায়ার কথা শুনে। মায়া একটা চাদর এনে আয়না ঢেকে দিলো।
মুহিবকে মায়াজাল দিয়ে বে*ধে রাখা হয়েছে। রাদ মায়া*চা*বুক দিয়ে আ*ঘা*ত করছে মুহিবকে। মায়া ওখানে গিয়ে রাদের হাত থেকে চা*বুকটা ছিনিয়ে নেয়।
– ” এবার আমি। তুমি গিয়ে বিশ্রাম নাও রাদ। ”
– ” যেমন তোমার ইচ্ছা। তবে একেবারে মে*রো না। কাল আমি নিজে শেষ করবো ওকে। ”
মায়া মুচকি হাসলো। রাদ চলে যেতেই মুহিব মায়ার দিকে অসহায় চোখে তাকালো।
– ” তুমি যাই করো না কেন মায়া, মুহিব কখনো তোমাকে ঘৃণা করবে না। শেষ হয়ে যাবে মুহিব তবুও তার মায়াপরিকে সে ভালোবেসে, ভালো দেখে, ভালো রেখে যাবে। ”
– ” অতি উত্তম কথা। তবে মায়াপরি না, মায়াজান আমি। আর এখানে আসার কারন টা হলো তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিলো। ”
– ” কি কথা? রাদ কি তোমাকে কোনো ভয় দেখিয়েছে? তার জন্য তুমি এমন করছো? আমাকে বলো আমি সব ঠিক করে দিবো। ”
– ” জ্বি না। কথাটা হলো আপনি যে সন্তানকে আমার গ*র্ভে দিয়েছিলেন? সে এখন নিশ্চিন্তে জান্নাতে বসে খেলছে। ”
মায়ার কথা শুনে কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে গেলো মুহিব। মায়া কি করে পারলো বাচ্চাটাকে শেষ করে দিতে? এটা কি সত্যিই সেই সাদিয়া যে একটু কষ্ট পেলেই কাঁদতো, ভয় পেতো, বাচ্চা ভালোবাসতো।
– ” আমি সাদিয়া নই মুহিব আমি মায়াজান,, যার ভেতরে কোনো মায়া নেই। আছে শুধু রাগ, ধ্বং*স। ”
– ” তোমার শ*ত্রুতা তো আমাদের সাথে ছিলো মায়া। আমার বাচ্চার সাথে না। ”
– ” তোমারই তো বাচ্চা। তাই শ*ত্রুতা সরাসরি তৈরি হয়ে গেলো। জানোই তো মায়াজান নিজের কোনো শ*ত্রু*কেই রেহাই দেয় না। ”
মুহিব ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। মায়া শব্দ করে হাসছে। তারপর মায়াচাবুক তুলে মুহিবকে আ*ঘা*ত করতে শুরু করে।
আজ মায়াজানের অভিষেক। মায়াকে তাজ পড়াবে ফারহান তাজওয়ার, আর তারপরেই মায়া হয়ে উঠবে সবচেয়ে শক্তিশালি পরি। রাদ তাজ হাতে নিয়ে দূরে দাড়িয়ে আছে। ফারহানকে মায়ার পায়ের কাছে বসিয়ে রাখা হয়েছে।
মায়া হাতের ইশারায় তাজ আনতে বলে।
– ” মুহিব তাজ পড়িয়ে দাও আমাকে। ”
– ” অসম্ভব। আমার সন্তানের খু*নিকে আমি তাজ পড়াবো না। কিছুতেই না। ”
– ” মায়া*চা*বুক আনো। ”
মুহিবকে মায়া*চা*বুকের বা*রি দিতেই আ*ৎকে ওঠে মুহিব।মায়া মুহিবের গাল চেপে ধরে ওর হাতে তাজের স্পর্শ করালো।
– ” স্পর্শেই হবে। এখন তাজ আমি নিজেই পড়ে নিতে পারবো। ”
কথাটা বলে মায়া তাজ নিজের মাথায় রাখলো। মুহিব চিৎকার দিয়ে মায়াকে থামতে বলছে। মায়া তাজ পড়ে শূণ্যে ভেসে ওঠে। সারা শরীরে সোনালি আভা ফুটে উঠছে। মায়ার চোখের পুরো অংশটা কালো হয়ে গেছে।
– ” আম্মুজান কষ্ট হচ্ছে আমার। ”
একটা বাচ্চাকন্ঠ শুনে চমকে আকাশের দিকে তাকালো সবাই। মায়ার পাশে ছাঁয়া ভাসছে। সেহের আর রিফাতকে আনা হয়েছে। সেহের নিজের খ*ঞ্জ*র বের করে শূণ্যে উঠে আসলো। মায়াজান নিজের মায়া দিয়ে সেহেরকে নিচে নামিয়ে দেয়। তারপর সেহেরের দিকে তাকিয়ে একটা তীর্যক রশ্মি ছু*ড়ে দেয়।
– ” রাদ বিবাহ করবে না আমাকে? ”
রাদ খুশিতে আটখানা হয়ে উত্তর দিলো।
– ” কবুল। ”
– ” কবুল। ”
মুহিবের শক্তি কমে আসছে। মুহিব মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে কেঁদে উঠলো। মায়া রাদকে নিজের পাশে দাড়াতে বললো। তারপর মুহিবের দিকে তাকালো।
– ” মুহিব! আপনার মায়াপরি আজ অন্যকারোর হয়ে গেলো। আপনি কিছু করতেই পারলেন না? আফসোস আপনার বাচ্চাটা এগুলোর স্বাক্ষী হতে পারলো না। ”
মুহিব রেগে মায়াজাল থেকে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। সফলও হয়। মুহিব নিজের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে উঠে দাড়ায়।
– ” মায়াজান আর রাদকে শেষ করার দায়িত্ব আমাকেই দিয়েছিলো আব্বুজান। যদিও আমি আমার মায়াপরিকে কখনো আ*ঘা*ত করতে পারতাম না। তবে মায়াজানকে শেষ করতে পারবো, আমার বাচ্চার খু*নিকে শেষ করতে হাত কাঁপবে না আমার। ”
বলেই নিজের ত*রবা*রি প্রদর্শন করলো মুহিব। রাদের দিকে মুহিব এগিয়ে আসতেই মায়া মুহিবের পথ রোধ করে। মুহিব মায়ার হাতে তর*বা*রি দিয়ে আ*ঘা*ত করে। মায়া লু*টিয়ে পড়ে মাটিতে। মুহিব নিজের তর*বা*রির এক আ*ঘা*তে রাদের ম*স্তক কা*ধ থেকে আলাদা করে ফেলে। মুহিব পেছনে ফিরে ছাঁয়ার দিকে তাকাতেই মায়া উঠে দাড়ায়। মায়ার হাত বেয়ে র*ক্ত পড়ছে। মুহিব অবাক হয় এটা দেখে, কারন পরিকন্যাকে একমাত্র তার স্বামী মা*রতে পারবে, তবেই সে আ*ঘা*তপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু মায়া তো এখন রাদের স্ত্রী। মায়ার চোখের ইশারায় সেহেরের হাতের খ*ঞ্জ*র মায়ার হাতে চলে আসে। ছাঁয়া চিৎকার দিয়ে বলে।
– ” তুই এটা ঠিক করলি না মায়া। এর জন্য তোকে প*স্তাতে হবে। তোকেও শেষ হতে হবে। রাদকে মা*রার ফল তুই তোর জীবন দিয়ে পাবি। কিভাবে বাঁচাবি এই রাজ্য? নিজের সন্তান? ”
মায়া আলোর বিপরীতে দাড়ালো। যার কারনে ছাঁয়া ঠিক মায়ার সামনে উপস্থিত হয়। মায়া ছাঁয়ার গলা চে*পে ধরে ওর বুকের বা-পাশে খ*ঞ্জ*র ঢু*কিয়ে দেয়। নিমিষে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো ছাঁয়া।
মুহিব মায়ার কাছে আসতেই মায়া আকাশের দিকে উঠে যায়। চারপাশ থেকে কালো ধোয়া এসে মায়াকে আষ্টেপিষ্ঠে বেঁ*ধে ফেলছে। সেহেরের পেট থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে।
– ” আম্মুজান। আমাকে আপনার সঙ্গে নিয়ে যান। ”
আবারও বাচ্চাকন্ঠ শুনে সেহের নিজের পেটের দিকে তাকায়। পেটটা ফুলে আছে। রিফাত অবাক হয়ে সেহেরকে ধরে আসনে বসিয়ে দিলো। মুহিবের হাত-পা কাঁপছে। মায়াকে নিচে পড়তে দেখে মুহিব ছুটে যায় মায়ার কাছে। মায়ার সারা শরীর কালোবর্ণ ধারন করেছে।
– ” আপনার বাচ্চা সুরক্ষিত আছে মুহিব। সেহেরের গ*র্ভে আছে। আপনার মায়াপরি কখনো মায়াজান হতে পারবে না। কারন আপনার ভালোবাসায় সিক্ত সে। আপনাকে যত আ*ঘা*ত করেছি তার দশগুন আ*ঘা*ত নিজে সহ্য করেছি। আপনি ভাবলেন কিভাবে একজন মা তার সন্তানকে মা*রবে? যদিও ভেবে ভালোই করেছেন।মায়া পরির তো নিজের স্বামীর আ*ঘা*ত আর ঘৃণার প্রয়োজন ছিলো। আজ সেটা নিয়েই আমার সমাপ্তি হোক। ‘ মাহতাব ‘ কোনো শক্তি পাবে না। একজন মানুষের মতো হবে ও। দয়া করে ওকে পৃথিবিতে আব্বু আম্মুর কাছে রাখবেন। আমার অপূর্ণতা ও পূরন করবে। আসছি আমি। ”
– ” মায়াপরি!!!! ”
– ” একবার ভালোবাসি বলবেন? শেষ মুহূর্তে খুব ইচ্ছে করছে এটা শুনতে।”
– ” ভালোবাসি মায়াপরি,, খুব ভালোবাসি তোমাকে। দয়া করে আমাকে ছেড়ে যেওনা। আমি তোমাকে ঠিক করবো। ”
– ” রাদের সব অশুভ শক্তি যাদের মধ্যে রেখে গিয়েছিলো তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছে আপনার মায়াপরি। আর এখন মায়াপরির যাওয়ার সময় হয়েছে। নিজের সাথে সাথে সব অশুভ শক্তিকে শেষ করতে হবে। সবাইকে রক্ষা করতে হবে তো। ”
– ” তুমি এমন করতে পারো না মায়াপরি। তোমার মাহতাব তোমাকে চায়। ”
– ” ওর জন্য সবাই আছে। সবার ভালোবাসা পাবে ও। তখন ও ভুলেই যাবে আমার কথা। আল্লাহ হাফেজ।”
– ” মায়াপর ”
মুহিবের কথা শেষ হবার আগেই মায়ার শরীর অদৃশ্য হতে শুরু করে। মুহিব মায়াকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
🥀🥀🥀
পরিশিষ্ট:-
ছোট ছোট পাঁচটা পৃষ্ঠা হাতের ভাজে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে সাফিন চললো ওর মায়ের কাছে। রান্নাঘরে না ঢুকে মন খারাপ করে বললো।
– ” আম্মু আমি তো এখন বড় হয়েছি। তাহলে বলো না মায়াপরি কেন, কিভাবে এসব করেছে? মায়াপরির এই গল্পটা পড়লে কেন আমার এতো কান্না আসে?”
সাফিনের কথা শুনে ওর মা গ্যা*সের চু*লা বন্ধ করলো। সাফিনকে কোলে নিয়ে ঘরে এসে খাটে বসিয়ে দিলো। সাফিন ওর মায়ের কোলে গুটিসুটি মে*রে বসে আছে।
– ” সত্যি তো আমার সাফিন তো অনেক বড় হয়ে গেছে। তা আমার সাফিন বাবু কি জানতে চায়?”
– ” মায়াপরি কেন মা*রা গেলো? পুরোটা বলবা। অর্ধেক শুনতে চায় না সাফিন। ”
– ” মায়াপরিকে অভি*শাপ দিয়েছিলো ওর বাবা,, যে ওর ছেলে জ্বীনদের ধ্বং*স করবে। সেই শক্তি ওর ছেলের মধ্যে থাকবে। মায়াপরি চেয়েছিলো সবার খারাপ শক্তি নিজের ভেতর নিয়ে পুরো রাজ্যকে সুরক্ষিত করতে। ”
– ” তাহলে ওর বাবু ও সেহেরকে কেন দিলো? ”
– ” কারন মায়াপরি মা*রা যাবে। মা যদি মা*রা যায় তাহলে কি বাবু বাঁচে? বাবুও তো দ*ম আটকে মা*রা যাবে। তাইনা? ”
– ” হ্যা তাই তো। আচ্ছা ও কেন মুহিবকে কষ্ট দিলো? মুহিব কেন ওকে মারলো? মুহিব প*চা। ”
– ” কে বলেছে মুহিব প*চা? মুহিবও ভালো। মায়াপরিও ভালো। মায়াপরি তো মুহিবকে মিথ্যা বলেছিলো। বলেছিলো ও বাবুটা মে*রে ফেলেছে। পরিরা মিথ্যা বললে পা*প হয় তাই মুহিব রেগে গিয়ে মায়াকে ঘৃণা করে।”
– ” ওহ,, রেগে গেলে বুঝি মানুষ ঘৃণা কররে? আমি কখনো কারোর ওপর রাগ করবো না। রেগে গিয়ে ঘৃণা করলে তো তাকে মে*রে ফেলবো আমি। ”
– ” আমার সাফিন বাবু তো খুব সুইট। ও কারোর ওপর একটুও রাগ করে না। ”
– ” কিন্তু ওখানে কেন বলা হয়েছে? স্বামী মা*রলে মায়াপরি ম*রে? মুহিব তো ওর স্বামী না।রাদ ওর বর। ”
– ” এখানে মায়াপরি নিজের মায়ার সাহায্য নিয়েছিলো। মায়াপরি মায়া দিয়ে রাদকে বশ করে রেখেছিলো। তাই মায়া নিজেই রাদের মুখ দিয়ে কবুল বলেছে। ”
– ” তার মানে ওদের বিয়ে হয়নি। মুহিবই মায়ার বর? ”
– ” আমার ইন্টেলিজেন্ট সাফিন বাবু সব বুঝে গেছে। ”
– ” আমি ইন্টেলিজেন্ট যে তাই। আচ্ছা মায়াপরি নীল কালো হয়েছে কেন? ”
– ” নীল হয়েছিলো কারন তখন মায়ার মধ্যে ছাঁয়া ছিলো। আর কালো হয়েছিলো কারন অশুভ লক্ষনের চিহ্ন কালো, মায়াপরি তখন পরিলোকের জ্বীন রাজ্যের সবার খারাপ শক্তি নিজের মধ্যে নিয়েছিলো তাই ও কালো হয়ে গিয়েছিলো। ”
– ” আচ্ছা মায়াপরি বাবুটাকে মা*রেনি কেন? তাহলেই তো সব মিটে যেতো। ”
– ” তুমি বুঝবে না সাফিন। এটা মায়ের ভালোবাসা। প্রতিটা মা নিজের শেষ র*ক্ত*বিন্দু দিয়ে হলেও নিজের সন্তানকে রক্ষা করে। যদি তার প্রাণও চলে যায় তবুুও আফসোস করে না। তুমি বড় হয়ে যখন বাবা হবে তখন বুঝবে সন্তানদের মা-বাবা কতটা ভালোবাসে। ”
হঠাৎ সাফিন খিলখিল করে হেসে ওঠে। মুখ হাত দিয়ে ঢেকে বলে।
– ” একটা জিনিস দেখেছো আম্মু। আমার নাম সাফিন মাহতাব। তুমি সেহের, বাবা রিফাত আর বড়আব্বু মুহিব। আমাদের নামের অনেক মিল তাইনা? শুধু একটা মায়াপরি নেই। ”
মুহিব দরজা বাইরে থেকে এটা শুনেই দাড়িয়ে যায়। সেহেরের চোখে পানি চলে এসেছে। রিফাত নিচ থেকে সাফিন সাফিন বলে ডাকতেই সাফিন দৌড়ে নিচে চলে যায়। মুহিব ঘরে ঢুকে সেহেরের দিকে একনজর তাকালো।
– ” মায়াপরি আছে। সাফিনের মধ্যেই আছে।মাহতাবের মা হয়ে। আর সর্বদা এভাবেই থাকবে। মায়াপরি কোথাও যায়নি, কোথাও না। ”
মুহিবের কাঁপাকন্ঠের কথাটা যেন দেওয়ালের সাথে বার বার বা*রি খেয়ে ফিরে আসছে। চারপাশ থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
– ” মায়াপরি কোথাও যায়নি। মায়াপরি আছে। মিশে আছে, মাহতাবের সাথে। “