আমি রিফাত। আমি যেখানে থাকি সেই জায়গা দেশের অধিকাংশ মানুষই চিনেন। সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের কোয়ার্টারে থাকি। একদিন রাতে বাসায় ইলেকট্রিসিটি না থাকার কারণে আমি বাহিরে বের হই।
হটাৎ করে মনে হলো সৌধের সামনে যাই। যেই ভাবা সেই কাজ। কানে এয়ারফোন গুজে হাঁটতে হাঁটতে সৌধের সামনে থাকা পুকুরের পাশে বসলাম। ভালোই লাগতেছিল মৃদু বাতাসে। সময়টা গরমকালের হওয়ায় আমি খালি গায়েই বের হয়েছিলাম। হটাৎ করে আমার পিঠে তীব্র ঠান্ডা বাতাস অনুভব করলাম। এই বাতাসে আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল ঠান্ডার কারণে। আমি পুকুরটি কে উলটো করে বসে ছিলাম।
আমি পিছন দিকে ঘুরে তাকাই, দেখি পাকা করা পুকুরের সাথেই বসে আছে একটি পিচ্চি ছেলে। ছোটদের জন্য জায়গাটা একটু বিপদজনক। সেখানে বসলে পানিতে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি বলে উঠলাম, “এই তুমি ওখানে বসছো কেন? পানিতে পড়ে গেলে কী করবা?”
আমার কথা শুনেই ছেলেটি কেঁদে দেয়। ছেলেটি তখনও মাথা নিচু করেই কাঁদছিল। আমি জীবনেও এমন কান্না শুনিনি, এতো বীভৎস কান্নার আওয়াজ। আমি আবার ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললাম, “কী হলো? কাঁদছো কেন তুমি?”
এবার আরও জোরে কেঁদে দিয়ে আমার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দেয় আর কান্নার সুরে বলে, “আমাকে বাঁচান, আমি দম নিতে পারতেছি না।”
ছেলেটিকে দেখে মনে হলো সাত কী আট বছরের ছেলে। দম নিতে পারতেছে না কেন বুঝতে পারলাম না। তখনই আমার এক বন্ধুর কথা মনে পড়ল। নিরব, তার শ্বাসকষ্ট ছিলো দম নিতে কষ্ট হতো। সৈকতেরও এই সমস্যা আছে। তাই আমি এক প্রকার দৌড়ে তার কাছে গেলাম। আমি যেই তাকে কোলে নিতে যাবো তখনই সে আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো।
আমি কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলাম। কী হচ্ছে আমার সাথে এটা? আমি কখনোই ভূতে বিশ্বাস করি না। ভৌতিক সব ঘটনারই যুক্তিগত ব্যাখা আছে।
কিন্তু আমি যা দেখলাম। ছেলেটির চোখ দুটো নেই। আর গর্ত হয়ে যাওয়া চোখ দুটোর একটি থেকে রক্ত পড়ছে, আর অন্যটি থেকে পানি। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে এখনো। হাতগুলো দেখে মনে হচ্ছে এই হাতটি কয়েকদিন ধরে পানিতে চুবিয়ে রাখা হয়েছে। কেমন যেনো স্যাতস্যাতে হাত।
তখনই আমার মনে পড়লো, লকডাউনে স্মৃতিসৌধে বাহিরের মানুষ প্রবেশ নিষেধ ছিল। কুরগাও, নিরিবিলির মতো আশেপাশের মানুষ দেয়াল ডেঙিয়ে ভিতরে ঢুকতো। তেমনি করে একদিন ভরদুপুরে আট কি নয় বছরের তিনটি ছেলে এসেছিল। তার ভিতর একটি ছেলে এই পুকুরে পড়ে যায়। অন্যদুজন ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়, কারণ তারা চুরি করে ঢুকে ছিল। আর তাই তারা কাউকে ডাকেনি, যদি তাদের শাস্তি দেয় চুরি করে ভিতরে ঢোকার জন্য।
সাথে সাথে ভয়ে আঁতকে উঠলাম। সাথে সাথে দোয়া দরূদ শরীফ পড়া শুরু করে দেই। আমার পা নড়তে ছিল না। হটাৎ করে ছেলেটি হাত নামিয়ে নেয়। তারপর,
তারপর যা হলো সেটা আমার কাছে আরও ভয়ানক লেগেছ। পুকুরের দিকে হাত তুলে ছেলেটি আমাকে বললো, “বাঁচান আমারে।”
পুকুরে একটি ছোট্ট বাচ্চার লাশ ভেসে আছে। আর তা থেকে এত্তো তীব্র ঘন্ধ আসছে। আমার বমি চলে আসতেছিল।
আমি আর একটু একটু করে পিছনের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। ছেলেটিও উঠে হাত আমার দিকে এগোতে থাকে আর বলতে থাকে, “যাইয়েন না। আমারে বাঁচান।”
তখনই আমার কানে এশার আজান ভেসে আসলো আমাদের মসজিদ থেকে। আর সাথে সাথে ছেলেটি উধাও, আর সাথে লাশটিও উধাও।
আমি দ্রুত দৌড়ে বাসার দিকে চলে যেতে লাগলাম।
কী ভাবছেন? এখানেই গল্প শেষ? এখানেই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই গল্পের শুরু।