লাশের ভয়(২পর্ব)

আমি কখনোই ভূতে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু সেদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা আমার মনে বিশেষভাবে ছাপ ফেলেছে। সেদিনের ঘটনা নিয়ে আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে। আমি চাইলেও ভুলে যেতে পারছি না।
ইলিউসন বলে বিষয়টি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা আর হয়নি। সেদিন রাতেই কাপুনি দিয়ে আমার জ্বর চলে আসে। মনের ভিতর ভয় এখনো রয়ে গেছে। তার পর দিন আমার এতোটাই জ্বর আসলো, যে আমি বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।
সপ্তাহখানিক জ্বর ছিল, আর এই সপ্তাহে আমি অনেকটা শুকিয়ে যাই। শরীরও খুব দূর্বল ছিল। আমি বাসার মানুষদের সবটা খুলে বলি। তারাও চিন্তিত হয়ে যান আমাকে নিয়ে। তারপর ঠিক করা হলো, আমাকে কবিরাজি চিকিৎসার জন্য গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে।
দুইদিন পর আমি চলে যাই মানিকগঞ্জ। আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশে একটি পুরনো কালি মন্দির। আর মন্দিরের উত্তর পাশে পুরনো কর্মকার বাড়ি। কর্মকার বাড়ির পিছনে রয়েছে জঙ্গল। আমি আগে রাত ১২ টার পরও এই মন্দিরের সামনে দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু আজ সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকেই ঘর থেকে বের হতে মন চাচ্ছে না। আমাদের বাড়ির চারপাশ ঘিরে আছে বড় বড় গাছগাছালি। আর আমি যেই ঘরে রয়েছি, তার পিছনে বিশাল বড় বাশঝোড়। আমার শরীর খারাপ থাকার কারণে আমি তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ি।
হটাৎ করে, গভীর রাতে আমার প্র*সাবের চাপ আসে। আমি বাড়িতে এসেছি তা আমার মনে আছে। কিন্তু আমি বাড়িতে কেন এসেছি তা ভুলে গেছিলাম কিছুক্ষণের জন্য। আমি একাই ঘর থেকে বের হয়ে পরি। গ্রামের বাড়িতে আমাদের ওয়াসরুম কিছুটা দূরে। তাই আমি ঘর থেকে বের হয়ে ঘরের পিছনে বাশঝোপে যাই প্র*সাব করতে।
হটাৎ করেই মনে হলো আমার সামনের কয়েকটি বাশ প্রচন্ড বাতাসে নড়ে উঠলো। মনে হলে এই বাশগুলোর উপর ঝড় হচ্ছে। কিন্তু এত্তো বিশাল বড় একটি বাশঝোপের আর অন্য কোন বাশ নড়ছে না। আমার সামনের কয়েকটি বাশই শুধু নড়ছে। বাশঝোপের পাশেই একটি ডোবা। চাঁদের আলোয় ডোবার পানি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। হটাৎ করে,
হটাৎ করে খেয়াল করলাম ডোবার পানিতে কিছু একটি ভাসতেছে। আর তারপর যা দেখলাম, এক সেকেন্ডের জন্য আমার শরীর জমে গেল। আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটি শীতল হাওয়া বয়ে গেল মনে হচ্ছে। ডোবার পাশে কেউ বসে আছে। তখনই সে আমার দিকে তাকালো। এবার আমার এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো আমি দুনিয়ায় নেই।
এ তো সেই ছেলেটি। বীভৎস সেই মুখ। আবার আমার দিকে দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে কান্না শুরু করেছে। কী বীভৎস সেই কান্নার আওয়াজ। কান্নার সুরে সুরে ছেলেটি বলছে, “আমারে বাঁচান। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমারে বাঁচান।” তারপর যা হলো সেটা মোটেও কাম্য নয়।
আমি পিছনে ঘুরে দৌড়ে ঘরে যাবো, তখনই খেয়াল করলাম আমার পা সেই বাচ্চাটির দিকে এগোচ্ছে। বাচ্চাটি এখনো দুহাত উঁচু করে কাঁদছে। আমিও হাত দুটো বাড়িয়ে বাচ্চাটির দিকে এগোচ্ছি। আমি কেন যাচ্ছি বাচ্চার দিকে? কীভাবে যাচ্ছি? কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমি যেতে চাচ্ছি না, কিন্তু কেউ আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। তখনই –
তখনই কেউ আমাকে পিছন থেকে হাত ধরে। আর সাথে সাথে আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। কে ধরল আমার হাত?

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প