সতিত্বের_কালো_দাগ (০২)

রাত তখন প্রায় তিনটা।ঘরের সবকিছু অন্ধকার, নিঃস্তব্ধ, শুধু ঘড়ির কাঁটার টিকটিক শব্দটা শোনা যাচ্ছে।আমি চুপচাপ বিছানায় শুয়ে, তাকিয়ে আছি সিলিংয়ের দিকে। বুকের মধ্যে এক অজানা আগুন। দীর্ঘদিনের সব সহ্য করার পর আজ মনে হচ্ছে, আমার সহ্য করার ক্ষমতাটাও ক্লান্ত।রিয়াজ ঘরে নেই। ফোনে কথা শুনেছিলাম,
আজকে বাইরে থাকি… মধুচক্র জমে উঠেছে… হাহা।এই লোকটা আমার স্বামী! সমাজ যাকে আমার রক্ষক বানিয়ে দিয়েছে, সে-ই আমার ভক্ষক।
সকালবেলা চোখে ঘুম নেই, মুখে হাসি নেই। হাতে চায়ের কাপ। কাপটা টেবিলে রাখতেই মনে হলো হাত কাঁপছে।
হয়তো ভয় নয়, বরং অভ্যস্ততা।আজ তিনমাস হয়ে গেল আমার গর্ভপাতের। রক্তপাতের দিনগুলো, হাসপাতালে একা বসে থাকার সেই মুহূর্তগুলো… সব কিছু এখনো মাথার ভেতর ঘুরপাক খায়।
আমি চুপচাপ বসে আছি। জানালার ফাঁক দিয়ে আলো পড়ছে মুখে। আর তখনই মনে হলো—এই আলোটা আমার না, এটা কারো দয়া নয়, এটা আমার প্রাপ্য।আমি কি তাহলে সব হারিয়ে ফেলেছি?আমি কি শুধু একটা নির্যাতিত মেয়ে?না, আমি শুধু একটা ভুক্তভোগী না, আমি একজন মানুষ। আমার নিজের স্বপ্ন, ভালোবাসা, সম্মান আছে।
সেদিন রাতে আমি প্রথমবারের মতো ভেতরে একটা শক্তি টের পেলাম। ভাঙাচোরা আমি, কিন্তু সম্পূর্ণ শেষ না।ঘরের এক কোণে রাখা ছোট্ট একটা ব্যাগ খুলে কয়েকটা কাপড় রাখলাম, কিছু টাকা গুঁজে নিলাম টিউশনি থেকে জমানো। কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র, কিছু দরকারি কাগজ।মনের ভিতরে শুধু একটাই কথা—আর না। এখন বাঁচতে হবে। নিজের মতো করে। নিজের নামে।
পরদিন ভোরে বাসে ছেড়ে মায়ের বাড়িতে ফিরলাম। মা দরজা খুলতেই থমকে গেলেন।এই অবস্থায় এলি কেন?আর থাকতে পারি না মা। ও মারে, গালি দেয়, মানুষ মনে করে না। আমি মরার আগে বাঁচতে চাই মা। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর হঠাৎ চিৎকার করে বললেন,তুই কি পাগল? এত কেলেঙ্কারি করে বাপের বাড়ি ফিরেছিস?আমি তো কোনো অন্যায় করিনি মা!না করলে তো কেউ তোকে মারতো না! তোকে তো সমাজের লোকজন এখনই বাজে নজরে দেখবে!
আমার বোনও এসে বলল,তুই আবার এ বাড়ি ফিরেছিস কেন? সমাজে আমাদের মুখ দেখাবার জো রাখিস না তুই।
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,আমি কোথায় যাব? একটা কোণ দাও মা, শুধু একটু বাঁচতে দাও।মা বললেন,কোথাও জায়গা নেই। তুই যা। এখন এই বাড়িতে তোর ঠাঁই নেই।
রাত তখন আটটা। গায়ে একটা পাতলা ওড়না। হাতে সেই ব্যাগ। চোখে জল নেই আর—শুধু একটা বোবা যন্ত্রণা পেছনে মায়ের বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেছে।চোখের সামনে অচেনা শহরের রাস্তা, রাস্তার আলো, আর আমি—এক ভাঙা মেয়ে, একটা জ্যান্ত লাশ, একটা নির্ভীক প্রাণ।
নিজেকে বললাম,তুই এবার নিজেকে প্রমাণ করবি মিথিলা। তোর আর হারানোর কিছু নেই।রাতটা কাটল রেলস্টেশনের বেঞ্চে বসে। চারপাশে শীতল বাতাস, মানুষের ভিড়ের মাঝে একাকী আমি। চোখে ঘুম নেই, বুকের ভেতর টানটান ভয়। কিন্তু এই ভয়টাই আজ আমার শক্তি।ভোরবেলা একটা ছোট্ট শহরে নেমে পড়লাম—শহরের নামটাও ভালো করে জানি না। পকেটে হাতে গোনা কয়েকশো টাকা, আর একটা পুরনো ব্যাগ।তবুও বুকের ভিতর সাহস—এবার কেউ আমাকে হারাতে পারবে না।
সহায় হয়ে এলো এক অচেনা মেয়ে,একটা ছোট দোকানে পানি খেতে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ এক তরুণী পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, চোখাচোখি হতেই থমকে দাঁড়ালো।আপনি কি ঠিক আছেন?আমি চুপচাপ রইলাম কিছুক্ষণ। এরপর মাথা নিচু করে বললাম,না। আমি কিছুই ঠিক নেই।
মেয়েটি নাম বললো—জেরিন। বয়সে আমার চেয়ে একটু বড়। শহরেই একটা অফিসে চাকরি করে। সে আমাকে দেখে বলল,চলেন, আমার বাসায় চলুন। আপনার খুব ক্লান্ত লাগছে। কথা বলতে বলতে বোঝা যাবে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
আমি প্রথমে ভয় পেলেও ওর চোখে-মুখে কোনও অস্বস্তিকর উদ্দেশ্য দেখলাম না। ভরসা করলাম। আর এই প্রথম, কাউকে দেখে আমার মনে হলো—এই মানুষটা আমার মতো কাউকে বোঝে।
জেরিনের বাসা ছোট, কিন্তু পরিপাটি। সে একাই থাকে। আমাকে বাথরুম, খাবার সব ব্যবস্থা করে দিলো।
রাতটা বিছানায় শুয়ে, আমি জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদ দেখতে দেখতে মনে মনে বললাম,তুমি শুরু করেছো, মিথিলা। আর পেছনে ফিরবে না।
পরদিন সকালে জেরিন বলল,তুমি কি অফিসে কাজ করতে পারবে? আমি যে অফিসে কাজ করি, সেখানে একজন রিসিপশনিস্ট দরকার।আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফিরে এলো বহুদিন পর।আমি পারবো। আমি চেষ্টা করবো। শুধু একটু সুযোগ দাও।
সেইদিনই আমাকে নিয়ে গেলো অফিসে—একটা ছোট প্রাইভেট কনসালটেন্সি কোম্পানি। ম্যানেজার একটু কড়া ধাঁচের মানুষ, নাম রাশেদ সাহেব।আমাকে পরীক্ষা করে দেখে বললেন,বায়োডাটা, অভিজ্ঞতা কিছু নেই… কিন্তু তোমার চোখে একরকম সৎ মানসিকতা আছে। ঠিক আছে, ট্রায়াল বেসিসে রাখছি। একটা মাস যদি ঠিকভাবে চালাও, চাকরি পাকা।আমি সেদিন অফিস থেকে বেরিয়ে জেরিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,তুমি আমার কাছে একটা ফেরেশতার মতো।সে হেসে বলল,না রে মেয়ে, তুই নিজেই নিজের ফেরেশতা হবি একদিন।
প্রথম দিন অফিসে গিয়ে নিজেকে অদ্ভুত লাগছিল। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ। কিন্তু কেউ গালি দিচ্ছে না, কেউ মারছে না, কেউ অবহেলার চোখে তাকাচ্ছে না।এক কাপ চা হাতে নিয়ে নিজেই ভাবলাম,এই না হয় আমার নতুন জীবনের শুরু…
প্রথম দিনের সকালটা খুব গুছানো।জেরিন আমাকে অফিসে নিয়ে গেল, গাইড করে বলল,এই ডেস্কটা তোমার, আর এখানে বসেই রিসিপশন সামলাবে। ফোন ধরবে, অতিথিদের গাইড করবে, আর ক্লায়েন্ট এলে চা বা পানি অফার করবে।
আমি মাথা নেড়ে বললাম,আমি সব শিখে নেবো।জীবনে বহুবার বইয়ের মধ্যে নিজেকে খুঁজেছি, আজ প্রথম বাস্তব জীবনে নিজের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি।অফিসের পরিবেশ ও ম্যানেজার সাহেব,রাশেদ সাহেব (ম্যানেজার) প্রথম দিকে সন্দেহের চোখে দেখতেন।প্রতিদিন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন, টাইমিং ঠিক আছে কিনা, কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বুঝলেন—মিথিলা সিরিয়াস, পরিশ্রমী।একদিন দুপুরে ডেকে বললেন,তুমি এই অফিসে নতুন হলেও, কাজের প্রতি তোমার দায়িত্ববোধ অনেক বেশি। আমি খুশি।সেদিন অফিস থেকে বের হওয়ার সময় একটা হালকা হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটে। দীর্ঘদিন পর কারো প্রশংসা শুনলাম। এটা আমার কাছে কোনো সাধারণ শব্দ নয়—এটা একটা সম্মান।
ধীরে ধীরে অফিসের সবাই আমাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করল।চোখের দিকে তাকিয়ে হাসে, নাম ধরে ডাকে—মিথিলা আপু, মিথিলা আপা পানি দেবেন?আমার ভিতরে এক নতুন মিথিলার জন্ম হচ্ছে যেন—ভাঙা নয়, গড়া আরেকটা ভালো বিষয়, জেরিন আমার পাশে থাকে সবসময়। রাতে একসাথে রান্না করি, টিভি দেখি, গল্প করি।
জেরিন প্রায়ই বলে,তুই এমনই ছিলি, শুধু সমাজ তোকে ভেঙে দিয়েছিল।
একদিন অফিসে একটু হুলস্থুল অবস্থা।স্যার আসছেন, সবাই ঠিক হয়ে দাঁড়ান!আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কোন স্যার?আমাদের কোম্পানির মালিকের ছেলে—আবির রহমান। লন্ডনে থাকেন, আজ হঠাৎ আসছেন।
আমি চুপচাপ ডেস্ক গুছিয়ে নিলাম।ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ১১টা। হঠাৎ দরজার কাছে গাড়ির শব্দ। তারপর এক সুদর্শন তরুণ ঢুকলেন। লম্বা, গম্ভীর চেহারা, চোখে গভীর এক আকর্ষণ—আবির রহমান।আমি চোখ তুলে তাকালাম। তার চোখে চোখ পড়তেই যেন এক মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গেল।
সে একবার আমার দিকে তাকিয়ে হালকা ভ্রু কুঁচকে বলল,
নতুন রিসিপশনিস্ট?রাশেদ সাহেব বললেন,জ্বি স্যার, নাম মিথিলা।সে মাথা নেড়ে চলে গেল ভিতরের কেবিনে।
কিন্তু যাওয়ার আগে তার চোখে এক অদ্ভুত কৌতূহল দেখেছিলাম।
সেই সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আমি ভাবছিলাম,এই ছেলেটা… তার চোখে যেন অনেক কিছু লুকানো ছিল। কেমন যেন এক অপূর্ণ প্রশ্ন।আমি জানি না, আমার জীবনে সে কীভাবে জড়াবে। তবে এটুকু বুঝেছি, আমার ভাগ্য যেন ধীরে ধীরে কোনো অজানা দিকে এগিয়ে চলেছে।
পরদিন সকালে অফিসে ঢুকেই টের পেলাম আজকের বাতাসটা কেমন যেন অস্বাভাবিক।সবাই ফিসফিস করছে। কেউ পেছনে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে, কেউ চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।আমি ডেস্কে বসে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম, আজ কিছু একটা হবে।
১০টা বাজতেই আবির রহমান এলেন।চেহারায় গাম্ভীর্য, চোখে চশমা, পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট। হেঁটে চলে গেলেন সামনের কেবিনে।আমার দিকে একবারও তাকালেন না।
১১টার দিকে রাশেদ সাহেব এসে বললেন,মিথিলা, স্যার তোমাকে কেবিনে ডাকছেন।আমি ভেতরে ঢুকতেই দেখি আবির রহমান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন।বসুন।আমি চুপচাপ বসে পড়লাম।
তিনি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে সরাসরি আমার চোখে তাকালেন।তুমি এখানে কিভাবে চাকরি পেয়েছো?
প্রশ্নটা শুনে আমি কিছুটা কেঁপে গেলাম।জেরিন আপু… আমাকে রেফার করেছেন… আমি চেষ্টা করছি কাজ শিখতে।আবির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,তোমার মুখটা খুব চেনা লাগছে। তুমি আগে কোথায় কাজ করেছিলে?
আমি… আগে কখনও অফিসে কাজ করিনি।তিনি ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন,তবে এমন আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে আসে?আমি এবার একটু জোর পেলাম গলায়।আত্মবিশ্বাস কাজের প্রয়োজন, অতীত নয়।
তার চোখের মধ্যে একটু ক্ষীণ বিস্ময় খেলে গেল, কিন্তু মুখে বললেন,আচ্ছা, তুমি তোমার কাজ করো, তবে ভুল করেছো তো—তোমার জায়গা আর এখানে থাকবে না।আমি মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু বুকের মধ্যে কিছু একটা গেঁথে গেল—সে আমাকে আগে থেকেই যেন চেনে… কিংবা আমি তার কোনো ধারণার বাইরে একজন।
বাইরে বেরোতেই দেখি কয়েকজন সহকর্মী চোখে চোখ পড়তেই মুখ ঘুরিয়ে নিল।একটা মেয়ে, নাম মলি, বলল,
নতুন রিসেপশনিস্টকে স্যার একদম পছন্দ করছে না… ওর তো বেশি দিন নেই মনে হয়।আমি এসব কথা শুনেও কিছু বললাম না। চুপচাপ কাজ করলাম।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে জেরিন সব শুনে বলল,আবির রহমান খারাপ ছেলে না, কিন্তু খুব রিজার্ভ। ওর কোনো দুর্বলতা নেই বললেই চলে।আমি বললাম,সে আমার সাথে কিছুটা খারাপ ব্যবহার করেছে। অথচ আমি তো কিছু করিনি।
জেরিন হেসে বলল,কারও জীবনে যদি নিজেকে চেনার সময় আসে, তাহলে সেটা হয় সবচেয়ে অচেনা মানুষের চোখে। হতে পারে, তুমি তার জন্য অদ্ভুত কেউ।আমি জানি না ওর কথায় সত্যি ছিল কি না।কিন্তু মনে মনে ঠিক করে ফেললাম—আবির রহমান যদি আমাকে ছোট করে দেখে, তবে আমি নিজের কাজ দিয়ে প্রমাণ করবো আমি কতটা যোগ্য।
পাঁচদিন কেটে গেছে সেই প্রথম কথোপকথনের পর।
আবির রহমান এখনো ঠিক আগের মতোই গম্ভীর, মুখে কোনো হাসি নেই, চোখে কোনো অনুভূতির রেখা নেই।
তবে আমি লক্ষ্য করছিলাম—সে মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকায়।আড়চোখে। গোপনে। কিন্তু আমার চোখ পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নেয়।আমি ভাবতাম,সে কি সন্দেহ করছে আমাকে? নাকি কিছু বোঝার চেষ্টা করছে,
একদিন অফিসে হঠাৎ ক্লায়েন্ট এলেন, কিন্তু রাশেদ সাহেব অসুস্থ, জেরিনও বাইরে।সবাই ব্যস্ত, কেউ এগিয়ে আসছে না। ক্লায়েন্ট রেগে গিয়ে বললেন,এমন একটা ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর দেবার কেউ নেই এখানে?
আমি তখনই এগিয়ে গিয়ে বিনয়ের সাথে বললাম,স্যার, আপনি যদি বসেন, আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর আপনি যেটা জানতে চাচ্ছেন, সেটার জন্য ডকুমেন্ট এই ফোল্ডারে আছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসছি।ক্লায়েন্ট বিস্মিত হয়ে তাকালেন।পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আবির রহমান চুপচাপ সব দেখছিলেন।
দিনের শেষে রাশেদ সাহেব এসে বললেন,স্যার তোমার কাজ দেখে সন্তুষ্ট। কিছু বলেননি, কিন্তু বুঝেছি।আমি চমকে গেলাম।আবির রহমান?প্রশংসা করলো?তবে চুপচাপ?
আমি শুধু মুচকি হেসে বললাম,আচ্ছা, আমি চেষ্টা করছি… আরও ভালো করতে।
পরদিন দুপুরে কেবিনের দরজা খুলে সে বেরিয়ে এলেন, হাতে একটা ফাইল।আমার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,তুমি কি এই চিঠিটা টাইপ করে এক কপি বের করে দিতে পারবে?আমি মাথা নেড়ে বললাম,জি, অবশ্যই।
ফাইলটা হাতে দিয়ে চলে গেলেন।কিন্তু যাওয়ার সময় আবার তাকালেন, চোখে একটা অদ্ভুত নীরব প্রশ্ন।
আমি ফাইলটা খুলে দেখি—ওটা আরেকটি ক্লায়েন্টকে অফিসিয়াল চিঠি, কিন্তু ভাষায় একটু ভুল আছে।আমি চুপচাপ চিঠিটা ঠিক করে টাইপ করলাম, সুন্দর করে ছাপা করলাম, তারপর সাথে এক কপি সংশোধিত খসড়া ও মূল ভুলগুলোর একটা ছোট্ট নোট দিলাম।
চমকে উঠলো আবির,দুপুরে কেবিনে ফাইল দিয়ে আসার পর, সে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।তারপর বলল,
তুমি ভাষার উপর এত দক্ষ কিভাবে হলে? আগে কোথায় কাজ করেছো তুমি?
আমি শান্তভাবে বললাম,আমি অনেকদিন টিউশন করতাম। আর বই পড়তাম প্রচুর। এখনো পড়ি।সে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলো।তার চোখে আজ অবজ্ঞার জায়গায় যেন প্রশংসার একটি অদ্ভুত রেখা।কিন্তু মুখে সে বলল,হুম… ঠিক আছে, তুমি যেতে পারো।ভেতরে জন্ম নিচ্ছে কৌতূহল
সেদিন রাতে বাসায় ফিরে জেরিন বলল,আবির তোমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে পড়েছে।তুমি এত নিশ্চিত কীভাবে?
ও আজ আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘মিথিলা কোথায় থাকে? আগে কোথায় ছিল? মানে, ওর ভিতরে কৌতূহল জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু সে সেটা গোপন রাখে।আমি কিছু বললাম না।
শুধু মনে মনে বললাম—আমি এবার নিজের পরিচয়ে পরিচিত হবো, কারো করুণায় নয়।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প