৭ জ্বীন

আমার বাসা সোনারগাঁও, এলাকার নাম কালা দর্গা। আমাদের এলাকায় অনেক মাজার শরীফ আছে। প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক আসে এই মাজার শরীফ পরিদর্শন করার জন্য।
তো মূল ঘটনায় আসি। আমার কাকার নাম সুমন। সে ছোটবেলা থেকেই অনেক সুন্দর, যা চোখে পড়ার মতো। লেখাপড়া ছেড়ে অল্প বয়সেই আমার আব্বুর সাথে কাজে লেগে যায়। যখন বিয়ের বয়স হলো, তখন মেয়েদের বাসা থেকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসতো উনার জন্য। কিন্তু আমার দাদী তখন বিয়ে করাতে চাইতেন না। আমার কাকার অনেক মেয়েদের সাথে সম্পর্ক ছিল। এমনকি একটি মেয়েকে একদিন সে আমাদের বাসায়ও এনেছিল। মেয়েটিও দেখতে অনেক সুন্দর ছিল—পা পর্যন্ত লম্বা চুল, কিন্তু খাটো ছিল। আমার আম্মু তাকে আপ্যায়ন করে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
হঠাৎ কাকার বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যায়, আর কাকা বিদেশে চলে যায়। কিন্তু কাকা সেখানে ১৫ দিনও থাকতে পারেনি। তার শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে কাকার মালিক তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। তো রওনা হয়ে আবার কল দিল। আমরা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ শুনলাম, কাকা প্লেনের মধ্যেই বেশ অসুস্থ হয়ে গেছেন। আমরা কাকাকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার কাকাকে দেখে ভয় পেয়ে যান। ডাক্তার যখনই ইনজেকশন দিলেন, তখনই কাকা চোখ বড় বড় করে গর্জন শুরু করে। একটা সময় কাকা বেড থেকে হাওয়ায় ভাসতে থাকে। সবার চোখ তো কপালে! আমরা সবাই ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। ডাক্তার তখন বলেন, “উনাকে এখান থেকে নিয়ে যান। ভালো কোনো কবিরাজ দেখান।”
তারপর আমরা কাকাকে বাসায় নিয়ে আসি। তাকে কোনোভাবেই সামলানো যাচ্ছিল না। একের পর এক কবিরাজ আনা হয়। তারা ৬০ হাজার, ৭০ হাজার, ১ লাখ টাকা করে বাজেট করে ঝাড়ফুঁক করতেন। কিন্তু কাকার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না।
কাকার অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। কাকা মেয়েদের মতো আচরণ করতো—ফুপির লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে দিত, মেয়েদের কণ্ঠে কথা বলতো। আর বারবার মিষ্টি খেতে চাইতো। আব্বু ১০ কেজি, ৭ কেজি করে মিষ্টি এনে দিতেন। কাকা চোখের পলকে সব মিষ্টি একসাথে খেয়ে ফেলত। আমরা ভীষণ ভয় পেতাম এসব দেখে। রাতে সুযোগ পেলেই কাকা দৌড় দিত। আব্বুরা গিয়ে আবার ধরে আনতেন। এভাবে দিন দিন কাকার অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে। অধিক সৌন্দর্যের বিশাল দেহের মানুষটার চোখের নিচে কালি পড়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। সবাই বলতো, কাকা নাকি পাগল হয়ে গেছে।
এরপর আমাদের পাশের এলাকার এক হিন্দু মেম্বার কাকাকে দেখতে আসেন। তিনি বলেন, “আমি ওরে সুস্থ করতে পারবো। আমার ২০ হাজার টাকা লাগবে, ২১ গজ লাল কাপড়, ২১ কেজি মিষ্টি আর ১টি লাল মোরগ লাগবে।” বলা বাহুল্য, তিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, কুরআন শরীফও অনেকবার খতম দিয়েছেন এবং অনেকগুলো সূরা জানেন, যা অনেক মুসলিমও জানে না।
তো আমার আব্বু রাজি হয়ে যান। ওইদিন তিনি হালকা ঝাড়ফুঁক করে বাসায় চলে যান। পরের দিন আসবেন বলে। কিন্তু পরের দিন আর তিনি আসেন না। এরপর আব্বু তার বাসায় যান। উনি সরাসরি না বলে দেন, তিনি এই কাজ করবেন না। না বলার কারণ জানতে চাইলে কিছুই বলেন না। এমনকি এডভান্স দেওয়া টাকাও ফেরত দিয়ে দেন। এরপর আমার দাদী উনার কাছে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করে, হাতে-পায়ে ধরে রাজি করান। তখন উনি বলেন, “কাকাকে বদ জ্বীনেরা ধরেছে। এই জ্বীনগুলো খুবই শক্তিশালী এবং ভয়ংকর। তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে, যাতে আমি কাকার চিকিৎসা না করি।”
জানা যায়, কাকার উপর ৭ জ্বীনের আসর। সব হিন্দু জ্বীন। আর, এই জ্বীনগুলো চালান করেছিল কাকার প্রেমিকা, যাকে সে একদিন আমাদের বাসায় এনেছিল। সেই মেয়ের মা ছিলেন জ্বীন মাতারি। তার কাছে পালিত অনেক বদ জ্বীন ছিল। ওই মেয়েটি জানতে পেরে যায়, কাকার একাধিক প্রেমিকা আছে। কাকা তাকে ঠকাচ্ছে। রাগের বশে সে কাকার উপর বদ জ্বীন চালান করে। কাকার ঘরের বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি বালিশের কভারেও তাবিজ রেখে যায়। এর ফলে কাকার এই অবস্থা হয়।
দীর্ঘ দেড় মাস কাকার চিকিৎসা চলে। কাকা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। কিন্তু শর্ত ছিল, কাকাকে ৫ দিনের মধ্যে বিয়ে করাতে হবে। মেয়ে খোঁজা শুরু হয়। কিন্তু কেউই মেয়ে দিতে রাজি হয় না। সবাই বলে, “কাকা পাগল হয়ে গেছে।” হঠাৎ সেই প্রেমিকা এসে বলে, “আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।” কিন্তু আব্বু-দাদী রাজি হন না। কারণ, যেই মেয়ে বিয়ের আগেই এত কিছু করেছে, বিয়ের পর কালা যাদু করবে না, তার গ্যারান্টি নেই। অবশেষে আরেক মেয়ে, যার পরিবার আগে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল, সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও কাকাকে বিয়ে করে।
বাসর রাতে জ্বীনগুলো অনেক অত্যাচার করে। তবে পরের দিন কবিরাজের অশেষ কৃপায় আর আল্লাহর রহমতে কাকা সুস্থ হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, কবিরাজ কাকাকে সারা জীবনের জন্য কিছু নিয়ম দেন। সেগুলো না মানলে আবার সেই বদ জ্বীনেরা আক্রমণ করবে।
কবিরাজ শেষদিন আমাদের পাওনা টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ওই বদ জ্বীনেরা সমস্যার সৃষ্টি করে। তিনি পাথরে হোঁচট খান আর এতেই তার পুরো ডান পা ফুলে যায় এবং পরে তা কেটে ফেলতে হয়। আমার আব্বু তাকে ১ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। যদিও এটা তার পায়ের মূল্যের সমমান নয়, শুধুই সাহায্য মাত্র। তারপর থেকে আল্লাহর অশেষ রহমতে কাকাও পুরোপুরি সুস্থ।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প