শিকল পর্ব০৫(শের্ষ পব

এখন রাত ১১ টা বাজে। মায়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের সুন্দর চাঁদটাকে দেখছে। চাঁদের মাঝে ওর আর আবিরের অনেক পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে। হঠাৎই মায়াকে পিছন থেকে ইমরান জড়িয়ে ধরে আর ওর কানে কানে বলে,
– আজ তোমাকে আপন করে দিব। কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। কেউ না।
~ আপনি আমার সব কিছু পাবেন। কিন্তু কোন দিন আমার মন পাবেন না। কারণ মন আমি আবিরকে দিয়েছি। আমি সারাজীবন শুধু ওকেই ভালবেসে যাবো। আপনার মতো একজন মানুষ শুধু আমার দেহ পাবে কিন্তু মন? কখনো না।
ইমরান মায়াকে ওর দিকে ঘুরিয়ে রাগী কণ্ঠে বলে,
– তুই ওকে ভুলে যাবি। আর কোনদিন ওর নাম মুখে নিবি না।
~ হাজার বার আবিরের নাম মুখে নিব৷ আমি আবিরকে ভালবাসি আপনাকে না। যে বাইরের মেয়েদের সাথে খারাপ মেলামেশা করে তাকে আমি কোনদিনও ভালবাসবো না।
– তুই আবিরকে ভুলবি না?
~ কখনোই না। ও সারাজীবন আমার মনেই থাকবে। ও আপনার মতো অসৎ না। ও আমার মন জয় করেছে। আপনি শুধু ভেঙেছেন।
– আবার বলছি তুই আবিরকে ভুলবি না?
~ না।
– তবেরে…আমার টাকায় দুইজনে চলে আমার সাথে ছিনাজোরি। দাঁড়া আজ তোর খবর আছে। খালি আবির আবির না? আবিরকেও আমি শেষ করে দিব। আমি কতটা খারাপ তুই জানিস না।
ইমরান এতোটা রেগে গেছে যে ওর হিতাহিত জ্ঞান নেই। ও ওর মোটা চামড়ার বেল্টটা বের করে মায়াকে মারতে শুরু করে। মায়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। হাউমাউ করে কাঁদছে। ব্যথায় কাতরাচ্ছে। একসময় মায়া নিস্তেজ হয়ে যায়। ইমরান মারা বন্ধ করে দেয়। আর নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। একবার দেখেও না মায়া বেঁচে আছে কিনা।
পরদিন সকালে,
মায়ার জ্ঞান ফিরে। পিঠে জখম হয়ে আছে। প্রচন্ড ব্যথা করছে। মায়া তাকিয়ে দেখে ইমরান আরামে ঘুমাচ্ছে। আর এদিকে মায়া কষ্টে শেষ। একটা পশুর সাথে ওর বিয়ে হয়েছে। ভালবাসার মানুষ হলে কখনো এভাবে মারতে পারতো না। মায়া অনেক কষ্টে উঠে মলম খুঁজে ওয়াশরুমে চলে যায়। ব্যথায় চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। এই নির্মম বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। সংগ্রাম যে করবে তারও উপায় নেউ। শিকলে যে বাঁধা।
আমাদের সমাজে মায়ার মতো এরকম অনেক স্ত্রীই প্রতিদিন স্বামীর হাতে মার খেয়ে সহ্য করে আছে। তারা না পারে কিছু বলতে না পারে কিছু করতে৷ তাদের শেষ সম্বল একমাত্র আল্লাহ। তার দরবারে এই নির্মম অত্যাচার জমা হয়৷ স্ত্রী কিন্তু মন থেকে একবারও স্বামীর অমঙ্গল চায়না। সে চায় সবাই ভালো থাক। কিন্তু এই মানুষটার উপরই সবাই জোর খাটায় অত্যাচার চালায়। আল্লাহ সব দেখেন। সব জমা করে রাখেন। মেয়েটা আল্লাহর উপর ভরসা করেই বেঁচে থাকে এই নরকের জীবনে। এই মায়ারা প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ তারা যে এক মোটা শক্ত শিকলে বন্দী। এই শিকল থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন। একমাত্র আল্লাহই পারেন এই শিকল থেকে মুক্তি দিতে।
সময়টা পেড়িয়ে অনেক দূর যায়৷ আজ আবির এই জালিমের শহর ছেড়ে অনেক দূর চলে যাবে মাকে নিয়ে। নিচে গাড়ি এসে অপেক্ষা করছে। ইমরানকে না বলেই যাবে। কারণ ও জানলে আবির ভাবে ওকে কখনো যেতে দিবেনা। মায়ের একটা ব্যাগ আর নিজের একটা ব্যাগ নিয়ে আবির চলে যাবে। বাসায় যা আছে সব ইমরানেরই। আবিরের মা বলে,
~ একবার ইমরানের সাথে দেখা করবি না? ও তোকে কতো সাহায্য করছে।
– মা আমারও খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু ওর সামনে দাঁড়ালে ও কখনোই আমাকে যেতে দিবে না। ও যে আমাকে খুব ভাওবাসে। আমিও বাসি। তাই সবার ভালোর জন্যই চলে যাচ্ছি। আমি চাই না আমার জন্য ওর সংসারে কোন ক্ষতি হোক।
~ সত্যিই তোর মতো বন্ধু পাওয়া খুব কঠিন হবে ইমরানের জন্য৷
– হয়তো। সবসময়ই চেয়ে এসেছি ও ভালো থাক। আজও চাইবো। ও আর মায়া সবসময় ভালো থাক। সুখে থাক।
~ আমিন।
– আমিন।
আবির ওর পকেট থেকে ইমরানের দেওয়া ফোনটা বন্ধ করে রেখে যাবে একটা চিঠির সাথে। আবির ফোনটার পাওয়ার অফ অপশনে জাস্ট ক্লিক করবে ওমনি ফোন আসে। অচেনা নাম্বার। আবির কিছু না ভেবে রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে খুব পরিচিত একটা কণ্ঠ কিন্তু খুব অস্থিরতা আর প্রচন্ড কান্নাকাটির আওয়াজ পাচ্ছে আবির। কণ্ঠটা মায়ার।
~ আ…আব..আবির…
– কি হয়েছে মায়া? কাঁদছ কেন? কি হয়েছে??(অস্থির হয়ে)
~ ইমরান…
– ইমরান! কি হয়েছে ওর? মায়া? বলো?
~ আমরা সবাই পিজি হাসপাতালে। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো। তাড়াতাড়ি। (কাঁদতে কাঁদতে)
মায়ার কথা শুনে আবিরের মনে অজানা ভয়ের বাসা বাঁধে৷ আবিরের মা পাশ থেকে বলে উঠে,
~ আবির, কে ফোন দিয়েছিল? কি বলল? তুই এমন করছিস কেন?(চিন্তিত কণ্ঠে)
– মা ইমরান হাসপাতালে।
~ কিহ!
– মা এখনই চলো।
আবির ওর মাকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে যায়। সেখানে গেলেই দেখে ইমরানের বাবা-মা আর মায়া কাঁদছে। আবির পাগলের মতো ছুটে গিয়ে বলে,
– আঙ্কেল, আমার ভাই আমার দোস্ত ইমরানের কি হয়েছে? ও ঠিক আছেতো??
– বাবা ইমরান হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যায়। ওর নাক মুখ দিয়ে কালো রক্ত বের হচ্ছিলো। জানিনা ওর কি হয়েছে। ডাক্তার এখনো কিছু বলে নি।
ইমরানের মা আবিরের কাছে এসে কাঁদতে কাৃদতে বলে,
– বাবা আমার ছেলেটার কিছু হবে নাতো? ও বাবা বলো?
– কিচ্ছু হবে না আন্টি কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ আছেন। আমার ভাইয়ের কিচ্ছু হবে না।
এরপর ইমরানের ইমিডিয়েটলি অনেকগুলো টেস্ট করানো হয়। আর সেই টেস্টের রিপোর্ট যা আসে তা দেখে ইমরানের পরিবার সহ মায়া আর আবির স্তব্ধ হয়ে যায়। ডাক্তার সবাইকে ডাক দিয়ে বলেন,
– ওনার তো ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। এখন উনি লাস্ট স্টেজে আছে। হয়তো আর কিছু দিন বা কিছু ঘন্টা বেঁচে আছেন। কথাটা বলতে খারাপ লাগলেও ওনাকে বাচিঁয়ে রাখা আর সম্ভব না।
– ডাক্তার কি বলছেন! যত টাকা লাগে নিন। আমার ছেলেটাকে বাচিঁয়ে দিন। কোটি কোটি টাকা দিব। তাও আমার ছেলেটাকে বাচিঁয়ে দিন।
– দেখুন টাকা দিয়ে সব হয়না। উপরওয়ালা যাকে যতটুকু হায়াত দিয়েছে সে ততোটুকই বাঁচবে। কোটি কোটি টাকা দিয়েও তাকে বাঁচানো যাবে না। আপনারা চাইলে রোগীর সাথে দেখা করতে পারেন। তার হাতে সময় খুব কম।
আবির স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে সাথে মায়াও। ইমরানের বাবা-মা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷ আবিরের মা কোন ভাবেই তাদের শান্ত করতে পারছেন না। মায়ার বাবা হার্টের রোগী দেখে তাদেরকেও জানানো যাচ্ছে না।
যে ইমরান টাকার অহংকার দেখিয়ে এক মোটা কালো শিকল বেঁধে দিয়েছিল মায়া আর আবিরের জীবনে। আজ তারই জীবন শেষের পথে। আজ তাকেই শিকল বেঁধে হয়তো নিয়ে যাবে পরকালে। সবাই কাঁদতে কাঁদতে ইমরানে কাছে যায়। ইমরানের মুখটা মুহূর্তেই যেন রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। ইমরান মায়া আর আবিরকে ডাক দেয়৷ আবির আর মায়া দুজনেই কাঁদছে। ইমরানের চোখ দিয়েও অশ্রু ঝরছে। আবির ইমরানের হাত ধরে আছে। মায়া ইমরানের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকিরা পাশে দাড়িয়ে কাঁদছে। ইমরান অনেক কষ্টে বলতে শুরু করে,
– আবির, ভাই আমার, আমাকে মাফ করে দিস। আমি আমার বাবার ভালো ছেলে হতে পারিনি। আমি তোদের দুজনের সাথে খুব খারাপ করেছি রে। আমি চলে গেলে মায়া তোকে সব বলবে। মায়া, তুমি এখন ওকে কিছু বইলো না। আমি চাইনা আমি ওর ঘৃনা নিয়ে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে। আবির, সত্যিই রে টাকা দিয়ে কিছুই হয়না। আজ কোটি কোটি টাকা থাকতেও আমি বাঁচবো না। কারণ আমি খুব খারাপ কাজ করেছি। মায়াকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আবির, একটা কথা রাখবি আমার?
– ১০০ টা বল ভাই।
– আমি চলে গেলে মায়াকে তোর করে নিস। আমি ওর সাথে খারাপ কিছু করি নি। আল্লাহ আমাকে ওকে নষ্ট করতেই দেয় নি। কারণ ও যে আমার মতো পশুর কপালে ছিল না। তোর সেই ছয় বছরের ভালবাসার মায়া আজও তোর আছে। ওকে আমি আমার করতে পারিনি। আমি চলে গেলে তুই ওকে আর আমার পরিবারকে দেখে রাখিস। বাবা, আমি তোমার যোগ্য ছেলে হতে পারিনি। আবিরকে তুমি নিজের ছেলে ভেবো। তোমার এই ছেলেটা খুব খারাপ। খুব।
– ইমরান…বাবা এ কথা বলিস না।
– আবির, বল ভাই আমার কথাটা রাখবি? মায়া কখনোই আমার ছিল না। তোর মায়া তোরই আছে।
আবির কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। আবির সেদিন ইমরানকে কিছু বলে নি শুধু ওর অন্য হাত দিয়ে ইমরানের হাতকে চেপে ধরেছিল। ইমরান এরপর আর মাত্র দুদিন বেঁচে ছিল। ইমরান মারা যাবার আগে মায়াকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত করে দেয়।
ইমরানের মৃত্যুর পর আবির মায়াকে বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু মায়া যখন আবিরকে সব খুলে বলে আর ইমরানের পরিবার আর মায়ার পরিবারও আবিরকে জোর করে তখন আবির আর না করতে পারে না। মায়াকে বিয়ে করে ফেলে।
আজ আবির আর মায়ার বাসর রাত। মায়া ঠিক সেদিনের মতো আজও বঁধু সাজে বসে আছে৷ হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলছে। আবির রুমে ঢুকলে মায়া সালাম দেয়। আবিরও সালামের উত্তর দেয়। আবির আস্তে আস্তে মায়ার কাছে এসে বসে। আজ মায়ার মনে কোন সংশয় নেই। কারণ মায়া জানে এটা আবিরই৷
আবিরের প্রচন্ড খুশী লাগছে৷ সে সাথে ইমরানের জন্য খুব খারাপও লাগছে। আবির ইমরানকে মাফ করে দিয়েছে। মায়ার ঘোমটা তোলার আগে ইমরানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে আবির৷ তারপর মায়ার ঘোমটা তুলে। মায়া মাথা নিচু করে আছে লজ্জায়। অথচ এই মানুষটা ওর সেই চিরচেনা। তাও আজ যেন লজ্জায় মাথা যাচ্ছে৷ আবির মায়ার থুতনিতে হাত দিয়ে ওর দিকে মুখ তুলে দেয়। মায়া ওর বড় বড় চোখের পাপড়ি গুলো আস্তে আস্তে উপরে তুলে আবিরের দিয়ে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকায়। আবিরও মায়ার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ ওদের মাঝে কোন দূরত্ব নেই। আছে সীমাহীন ভালবাসা। দুজনের চোখ ভিজে গিয়েছে অজানা কারণে। ওরা কখনো ভাবে নি ভাগ্য আবার ওদের এভাবে এক করে দিবে৷ আবির মায়ার চোখ মুছে দিয়ে বিছানা ছেড়ে মায়াকে ঠাস করে কোলে তুলে নেয়। মায়া হতভম্ব হয়ে যায়। কিন্তু আবিরকে এত্তো কাছ থেকে দেখে মায়া লজ্জা লাল হয়ে যায়। আবিরের কাঁধে মায়া মুখ লুকায়। ও মায়াকে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসে। মায়া আবিরের কোলেই। আবির মায়াকে বলে,
– আজ সারারাত আমরা জ্যোৎস্নাবিলাস করবো আর অনেক গল্প করবো। তোমার জমানো সব কথাগুলো আজ শুনবো।
মায়া অবাক হয়ে যায় আবিরকে দেখে। এই সেই আবির যাকে ও নিজের থেকেও বেশী ভালবাসে। এই আবিরটাই শুধু ওকে বুঝে। বুঝে বলেই ওর দেহপর প্রতি লোভ না দেখিয়ে ওর মনকে জয় করার জন্যই এই জ্যোৎস্নাবিলাস। মায়া খুশী হয়ে আবিরের কপালে জীবনের প্রথম একটি চুমু এঁকে দেয়৷ আবিরও মায়ার কপালে একটা চুমু এঁকে দেয়। এরপর শুরু হয় ওদের গল্প। দুষ্টমি আর আবেগের ভাগাভাগি। শুরু হয় আবির আর মায়ার জীবনের নতুন এক অধ্যায়।
—> গল্পটা সিনেমাটিক হলেও এটাই চরম এক বাস্তবতা। ইমরানের কোটি কোটি টাকা থাকা স্বত্তেও সে নিজেকে বাঁচাতে পারে নি। পারেনি মায়ার হতে। যারা টাকার গরম দেখিয়ে অন্যের জীবনকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে তারা একসময় হেরে যায়। কারণ ওই উপরওয়ালার কাছে সব কিছু জমা হয়। আল্লাহ তোমাকে টাকা দিয়েছে, তা দিয়ে তুমি মানুষের সেবা করো। সঠিক পথে ব্যয় করো। কিন্তু তা না করে ইমরান টাকার শিকলে আবির আর মায়ার জীবনকে বন্দী করে ওদের নিয়ে খেলা করলো। টাকার গরম দেখালো। কিন্তু পরিশেষে সে আজ অন্ধকার দুনিয়াতে। যেখানে টাকার কোন মূল্য নেই। টাকা দিয়ে কখনো কারো সত্যিকারের ভালবাসা বা মন পাওয়া যায় না। এটা সত্যি টাকা সকল সুখের মূল। কিন্তু সেটার সঠিক ব্যবহারের মধ্যমে। নাহলে ইমরানের মতো অন্ধকার জীবন নিশ্চিত। অহংকার, দেমাগ আর কাউকে ছোট মনে করা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে বা কাউকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দেওয়া এসব কাজ খুব জঘন্য। তাই এগুলো থেকে বিরত থাকুন। কারণ মৃত্যু আপনার আমার খুব কাছে।
মনে রাখবেন, আমরা সবাই এক #শিকলে বন্দী। যার চাবি শুধু মহান আল্লাহর কাছে।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প