চমক পর্ব ২ শেষ পর্ব

ছোট্ট কুহুর চোখ দুটো চকচক করে উঠে খুশিতে। ‘বাব্…বাহ্’ বলে সে লাফিয়ে পড়ল আতিকের কোলে। কতক্ষণ চোখ স্পর্শ করছে তো কতক্ষণ নাক স্পর্শ করছে। খানিক বাদে লেপটে রইল বাবার বুকের সাথে। আবার মাথা উঁচিয়ে দেখতে লাগল বাবাকে। আবারও লেপটে গেল বুকের সাথে।
মেয়ের পাগলামো দেখে মুচকি মুচকি হাসছে আতিক। মেয়েকে বুকে নিতেই বুক কেমন শীতলতায় ছেয়ে গেল। অজানা এক সুখে এসে ঘিরে ধরল চারপাশে। আচ্ছা এটাই কি সন্তান সুখ? হয়তোবা।
– ‘দুস্ত, আজ যদি এখানে উপস্থিত না হতাম তাহলে হয়তো এতো সুন্দর দৃশ্য কখনোই দেখতে পেতাম না। বলতে বাঁধ্য হচ্ছি মেয়েরা বাবা ভক্ত হয়। আর আজ বুঝলাম বাবারা কেন মেয়েকে এতো ভালোবাসে। তোকে কখনো দেখিনি সরাসরি অথচ দেখ কতটা নিশ্চিন্তে তোর বুকের সাথে মিশে রয়েছ।
মেয়েরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হয়তো বাবার ছায়ায় থাকে। হয়তো ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দেয় সকল প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করার জন্য মাথার উপর বাবা আছে। তোর অবুঝ মেয়েটাকে কেমন তোর উপস্থিতি উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। হয়তো একেই র’ক্তের টান বলে।’
– ‘সেজন্যই তো বলি বিয়ে করে নে। বউয়ের কথা বাদ দিলাম। একজন সঙ্গীর কখনো তুলনা হয় না। বাবা নামক এক অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য হলেও বিয়ে করা উচিৎ।’
গ্লাস পড়ে যাওয়ার শব্দে ঘাড় কাত করে তাকায় আতিক। স্ত্রীর চমকে যাওয়া মুখ আর বিস্ময়ের রেখা ফুটে উঠা চক্ষু জোড়া দেখে বিস্তৃত হাসলো সে। শায়লার কণ্ঠস্বর কাঁপছে। চোখের সামনে অপ্রত্যাশিতভাবে স্বামীকে দেখে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেলো। জোরে জোরে শ্বাশুড়িকে ডাকতে লাগল।
– ‘মা, ও মা কই আপনি? দেখে যান কে এসেছে।’
ছেলের বউয়ের এমন আতঙ্কগ্রস্থ স্বর শুনে দৌড়ে বাইরে এলো আতিকের মা। চৌকাঠ থেকে বাড়ির উঠোনে ছেলেকে দেখে একেবারে স্থির হয়ে গেলেন তিনি। যেন কোনো স্বপ্ন দেখছেন। বহুদিন পরে ছেলেকে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আনন্দের অশ্রু।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে মায়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়াল আতিক। কুহু তখনও বাবার বুকের সাথে লেপ্টে রয়েছে। আতিকের মা তার সারা মুখে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আতিকের মাথায় হাত রেখে কাঁদছেন তিনি।
– ‘তুমি আইছো বাপ? বুড়া মার কথা তোমার মনে পড়ছে? আর তোমার বিদেশ যাওয়া লাগবো না বাপ। তুমি আমার চোখের সামনে থাকো।’
আতিক মায়ের কপালে চুমু দিয়ে আরেক হাতে আগলে নিলো। মা এবং মেয়েকে বুকে জড়িয়ে এতোদিনের অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীর দিকে তাকাল। শায়লা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না মানুষটা তার চোখের সামনে। শায়লার চোখের দিকে তাকিয়ে আচমকাই চোখ টিপ দিল সে।
________________
বিকেল থেকে রাত অব্দি আতিকের কোল থেকে কেউ কুহুকে নিতে পারেনি। ওয়াশরুমে থেকে কোনোরকম গোসল করে বের হয়েছে। মেয়ে তার ওই সময়টা চিৎকার করে পুরো বাড়িয়ে মাথায় তুলেছে। সেই যে বুকের সাথে মিশে রয়েছে এখনো বুকেই আছে।
বাবার বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমে বিভোর কুহু। শায়লা সবকিছু গুছিয়ে রুমে এলো। কুহুর জন্য বিছানা করে তাকে শুইয়ে দিল তাকে। আতিক দরজা বন্ধ করে শায়লাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। শায়লাও চুপটি করে স্বামীর বুকে মাথা রেখে ধুকপুক শুনতে লাগল। কতদিন পর এই মানুষটার স্পর্শ পেলো সে। দিনগুলো গুনা হয়নি। বহুদিন পরে আবারও এই মানুষ ভালোবাসায় রাঙাবে সর্বাঙ্গ।
– ‘অভিমান কমেছে?’
– ‘মাত্র কমলো।’
– ‘আলিঙ্গন দেরিতে হওয়ায় রেগে আছো বুঝি?’
সবার আগে গল্প পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ “কথা কাব্য” তে লাইক দিন।
– ‘উহ্! মোটেও না। সবুরে মেওয়া ফলে। এই যে সারারাতটা এখন আপনার আর আমার। স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কাউকে দেখাইতে নেই। স্বামী স্ত্রী প্রণয়টা সুপ্ত থাকাই শ্রেয়। নাহলে বদনজর লেগে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তার থেকে ভালো চার দেওয়ালের মাঝেই বন্ধি থাকুক। যেন কারো নজর না লাগে।
এবার মনে হয় আর বিদেশ পাড়ি দিতে পারবেন না। মেয়ে একদিনেই যা শুরু করছে। অথচ এতোদিন যত্ন করলাম আমি এমন পাগলামি কখনো করে নাই। মা হয়েও অবহেলিত আমি।’
– ‘ধন্যবাদ তখন একটা বেকার ছেলেকে বিয়ে করে তার জীবন সঙ্গিনী হওয়ার জন্য। তাকে পুতুলের ন্যায় একটা রাজকন্যা উপহার দেওয়ার জন্য। ভালোবাসি বউ, তাই তো অভিমান করেছে বলে ছুটে এসেছি দূর প্রবাস থেকে।’

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প