দোস্ত কিরে তুই ঘরে শুয়ে আছিস যে!
কয়েক দিন ধরে তুই তো কলেজেও
যাসনি
কারন কি বলতো…??? (রকি)
– হ্যা রে দোস্ত আমি কয়েক দিন ধরে
কলেজেও যেতে পারিনি, একটু সমস্যা
সেই
জন্য! (আমি)
– আচ্ছা সমস্যা বাদ তুই বল পিকনিক এ
যাবি কি না…?
– মানে?
– আরে দোস্ত আমাদের কোচিং
থেকে সামনে
শুনিবার পিকনিক।
– অ তাই বল!
– হুম তুই যাবি না?
– নারে দোস্ত!!!
– কেন তুই যাবি না?
– আ রে দোস্ত আমি গেলে রেশমা
যাবে না,
সে তো সব সময় চায় আমি তার দু
চোখের
আড়ালে থাকি।
আর আমি গেলে অ যাবে…?
– হুম যাবে আমরা এটা নিয়েই অর
সাথে
আলোচনা করে ছিলাম, তখন সে রাজি
হইছে।
– তাই!! হা হা হা…
– হাসছিস কেন…?
– এমনি রে দোস্ত…!!! আচ্ছা যাবো।
– থ্যাংকস দোস্ত!
– হুম!!!
.
আমি এতক্ষণ যার সাথে কথা বললাম সে
আমার কলেজ ফ্রেন্ড, আর যে রেশমার
কথা
বললাম সেও আমার কলেজ ফ্রেন্ড।
.
আমি রেশমাকে অনেক ভালোবাসি,
কিন্তু
রেশমা অন্য একটা ছেলেকে অনেক
ভালোবাসে।
রেশমা আমাকে সব সময় বলতো আমি
যেন
তার দু চোখের সামনে না যাই।
আমাকে বাজে ছেলে ভাবতো
রেশমা, আমি
তার দুচোখের সামনে যেতে চাই না।
কিন্তু কি করব দুজন একই ক্লাসে পড়ি।
তাই ভাবলাম ভালোবাসার
ব্যাপারটা বাদ
দেওয়া যাক, কেননা রেশমা তো
আমাকে
ভালোবাসে না।
কিন্তু আমি এখনো রেশমাকে মনে মনে
ভালোবাসি।
রেশমা আমাকে শুধু একটা কথায় বলতো,
রাজ তুই একটু ভাল ‘হ’…
.
সেই জন্যই আমি রেশমাকে আর বিরক্ত
করি না, আমি যদি কিছু একটা করি,
তবে
সেঠা রেশমা আর করতো না।
মোট কথা আমি রেশমার অপছন্দের
পাত্র
ছিলাম।
.
আমি যেখানে থাকি সেখানে
রেশমা থাকে না,
সেই জন্যই বললাম পিকনিকে আমি
গেলে
হয় তো রেশমা যাবে না, কিন্তু রেশমা
নিজে
মত দিয়েছে।
তাই রাজি হয়ে গেলাম…
.
সামনে শুনিবার এ পিকনিক তাই কিছু
জামা
কাপড় কেনাকাটা করার জন্য মার্কেট
এ
গেলাম,
১প্যান্ট এবং ১টা টি-শার্ট কিনলাম।
রেশমা একদিন ক্লাসে বলেছিল টি-
শার্ট
পড়লে নাকি ছেলেদের অনেক সুন্দর
দেখায়।
তাই কিনলাম…
.
পিকনিক কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি,
বান্দরবন…
৭দিনের ট্যুর, সবাই অনেক মজা করব।
শুনিবার সকাল ৭:০০টায় আমাদের
“কুড়াইল
শেরে-ই বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়”এর মাঠ
থেকে
গাড়ি ছারলো।
আমরা ছিলাম ৭ জন, একটা হাইচক্যার।
আমি, রেশমা, রকি, সজল, রিয়া, সুমন,
সাকিব।
আর আমাদের মাঝে যে সজল তাকেই
রেশমা
অনেক ভালোবাসে,
.
যাই হোক আমরা লম্বা একটা সময়
জার্নী
করার পর আমরা কক্সবাজার এসে
পৌছালাম।
আমরা সাইমুন হোটেলে রুম বুক করলাম,
আমার সামনের রুমটা ছিল রেশমার,
কিন্তু
রেশমা তো আমাকে দুচোখ দিয়ে
দেখতে
পারেনা।
তাই আমার রুমটা সজল এর সাথে চেঞ্জ
করে নিলাম, চলে গেলাম আমি
নিচের
তলায়…
রাত টা কোনো রকম ভাবে কাটালাম,
আমার
অনেক অশান্তি লাগছে।
.
পরের দিন সকাল বেলা…
আমরা সবাই ঘুরতে গেলাম, আমি রকি
কে
বললাম’
– দোস্ত আমার ভালো লাগছে নারে
তোরা যা
গিয়ে ঘুরে আয় আমি রুমে আছি… (আমি)
– কি বলিস এসব সবাই যাবে আর তুই
যাবি
না মানে? (রকি)
– হুম রে ভাল লাগছে না দোস্ত তুইও
অদের
সাথে যা!
– না আমি তোকে ছাড়া কিছুতেই যাব
নাহ!!!
– হুম চল…
.
আমিও গেলাম ওদের সাথে কিচ্ছু
ভাল্লাগেনা, তাই সিটে বসে আছি।
এখন আর গিটার টাও আগের মত সুর উঠে
না
তাই বাজাই না।
পাশে গিটার রেখে বসে আছি, আর
আমার
মনে হচ্ছে শরির টা ঝিম ধরে আসছে।
সন্ধায় সবাই একসাথে হোটেলে…
.
পরের দিন…
আমি সেই টি-শার্ট এবং একটা
থ্রিকোয়াটার পরে ইনজয় করার জন্য
বেরিয়ে পরলাম,
পরে দেখি রেশমা আমার দিকে একটু
একটু
তাকাইতেছে, আমি কিছু না বলে চলে
গেলাম।
কিছুক্ষণ পর আবার আমার শরির ঝিম ধরে
আসছে…
তাই আর কিছু না করে সিটে গিয়ে
বসে
পরলাম…
.
২দিন পর…
সবাই রাঙ্গামাটি তে, সেখানে
ঘুরাঘুরি করার
সময় সজল এর পা পাথরে লেগে কেটে
যায়,
এতে অনেক রক্ত পরেগেছে।
আমরা সাথে সাথে সেখানে একটা
হাসপাতালে
নিয়ে গেলাম, ডাক্তার পরিক্ষা করে
বলে
– অনেক রক্ত খরচ হইছে এখনি রক্ত দিতে
হবে,
– ঠিক আছে ডক্টর আমরা যথা শিঘ্রয়
রক্তের ব্যবস্থা করছি (সাকিব)
.
রেশমা কাঁদছে, তার কান্না আমি
সইতে
পারিনা, তাই আমি বাহিরে গিয়ে
বসে আছি।
সবাই রক্তের ব্যাপারে বলাবলি করছে,
রক্তের গ্রুপ- ও নেগেটিভ।
সেখানে যারা আছে তাদের কারও
রক্তের
গ্রুপ ও নেগেটিভ নাই।
রিয়া বলছে,
– এই রাজের রক্তের গ্রুপ তো ও
নেগেটিভ!
(রিয়া)
– রাজের হলেই কি রাজ রক্ত দিবে?
(রকি)
– হুম সেঠাই তো! রেশমা অর সাথে যে
ব্যবহার করে তাতে রক্ত দিবে বলে
আমার
মনে হয় না, (সুমন)
– রেশমা গিয়ে যদি রাজ কে বলে
তাহলে
দিতেও পারে, যেহেতু রাজ
রেশমাকে অনেক
ভালোবাসে,(রিয়া)
– হুম আমি রাজের কাছে যাবো,
রাজের পা
ধরে হলে আমি সজল এর জন্য রক্ত নিবো,
কারন আমি সজল কে অনেক
ভালোবাসি।
সজল এর জন্য আমি সব করতে রাজি…
.
আমাকে তারা সেখানে খুজে না
পেয়ে গাড়ির
কাছে আসে,
আমি বসে আছি, আমার সাসনে রেশমা
এসে
বলে,
– রাজ এত দিন তুই আমকে অনেক কিছু
দিতে চেয়েছিস কিন্তু আমি নিজ
থেকে তা
নেইনি,
কিন্তু আজ আমি নিজেই তোর কাছে
একটা
জিনিস চাইবো তুই সেঠা দিবি না…?
.
আমি সব কিছুই শুনছি সাইট থেকে
সজলের
রক্তের প্রয়োজন, আমি জানতাম আমার
আর সজলের রক্তের গ্রুপ এক, তাই সেখান
থেকে চলে আসছিলাম।
.
– কিরে কথা বলছিস না কেন?
অ বুঝেছি তুই আমাকে ভালোবাসিস
সেই
জন্য কথা বলছিস না।
যে সজল মারা গেলে আরও ভালো হয়
তাইনা?
আজকে তোর কি হইছে কথা বের হচ্ছে
না
মুখ দিয়ে…?
আজ আমি নিজে থেকে তোর কাছে
আসছি
সেইজন্য কথা বলছিস না তাই না…??
– হ্যা হ্যা হ্যা আমি আজ বোবা হয়ে
গেছি,
কিচ্ছু কথা বের হবে না আমার মুখ
থেকে।
আরে আজ তো আমি একটা পাথরের
মুর্তী
যে কখনো কথা বলতে পারে না!!!
আজ আমি নিজেই মৃত্যুরদিন গুনছি…
– কি বললি?
– তুই যেদিন আমাকে বলেছিস আমাকে
তুই
ভালোবাসিস না, সে দিন থেকে
খাবার কি
জিনিষ আমার মুখে পরেনি,
কিন্তু তাই বলে না খেয়ে থাকিনি,
আমি
সারাক্ষণ নেশা খেয়ে আমার খুদা
মিটিয়ে
ছি…
এখন ডাক্তারি পরিক্ষায় ধরা পরেছে
আমার
ক্যান্সার।
– কি বলছিস এসব…???
– আমার ক্যান্সার…!!!
ডাক্তার বলেছে আমি আর বেশী দিন
বাঁঁচবো না,
তাই আমি মৃত্যুর পথের যাত্রী হয়ে
বেচে
আছি।
– (রেশমা চুপ কোনো কথা বলে নাহ…!)
তুই আমার কাছে চেয়েছিস রক্ত
নিবি,
চল আমি রক্ত দিবো, আমার সারা
শরিরের
রক্ত আজ দিয়ে দিবো, আমার কিচ্ছু হবে
না, চল…
– চুপপ!!!
– কিরে চুপ করে থাকলি যে???
.
রেশমা আওয়াজ করে কাঁদতে লাগলো,
আমি
আর কিছুই বললাম না…
আমি একটু সাইটে গিয়ে কাঁদতে
লাগলাম,
একটু পর দেখি রেশমা আমাকে পেছন
থেকে
জরিয়ে ধরেছে, আর অনেক জোরে
জোরে
বলছে,
– রাজ আমাকে ক্ষমা করে দে, আমি
বুঝতে
পারিনি…
– সেঠা অনেক দেরি হয়ে গেছে রে,
এখন
সজল কে বাঁচাতে হবে,
তুই তো সজল কে অনেক ভালোবাসিস,
সেই
জন্যই আমি তোর পথ থেকে সরে
দারিয়েছি।
.
রেশমা কোনো কথা বলে না, শুধু
কাদে…
– যা সজল এর জন্য তাড়াতাড়ি রক্তের
ব্যবস্থা কর রকি! (আমি)
– ঠিক আছে রে দোস্ত, তোর মত মানুষ হয়
না।
মৃত্যুর পথ গুনতে থাকা একটা মানুষ অন্য
একটা মানুষকে বাচানোর জন্য কত
ব্যাকুল,
দেখ রেশমা দেখ…? (রকি)
.
রেশমা শুধু কাঁদছে, আবার আমাকে
জরিয়ে
ধরে কাঁদছে, আমি তার হাত টা
সরিয়ে দিতে
চেষ্টা করলাম কিন্তু অনেক শক্ত করে
ধরে আছে রেশমা আমাকে…
.
..
কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা
ভালোবাসার অনুভূতিটা বুঝতে অনেক
দেরি করে ফেলে । কেননা
সত্যিকারে ভালোবাসা সবাই বুঝতে
পারে না ।