কনে_বদল পর্ব০৩

শাশুড়ি মার কাছে সব বলতে গিয়েও বলতে পারি না। সাইমুম হুট করে ঘরে আসে। দূর থেকে ইশারায় বোঝায় আমি মুখ খুললে ও ভয়াবহ কিছু একটা করে বসবে!
তারপর মার সামনেই ও আমাকে বলে,’আফসান,মার জন্য চা করে আনো।শুনেছি তুমি খুব ভালো লেবুর চা বানাতে পারো!’
আমি উঠে যেতে চাইতেই শাশুড়ি মা আমার হাত টেনে ধরেন। বলেন, ‘এখন চা করতে হবে না।আসো আমরা ছাদে যাই।গল্প করি গিয়ে!’
উনার এই প্রস্তাবে খুশিতে আমি আত্মহারা হয়ে উঠি। ভাবি ছাদে গিয়ে এক এক করে সাইমুমের অত্যাচারের কথা বলে দিবো মার কাছে। কিন্তু যাওয়ার আগে চোখ টিপে সাইমুম আমায় আবার স্মরণ করিয়ে দেয়।মার কাছে তার বিষয়ে মুখ খুললেই সে আমার নগ্ন শরীরের ধারণ করা ভিডিওটা ভাইরাল করে দিবে!
তারপর সেই আনন্দ আর উচ্ছলতা মুহূর্তে নষ্ট হয়ে যায়।আমি অতি কষ্টে মুখের হাসিটা ধরে রাখি। শাশুড়ির সাথে হেঁটে হেঁটে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠি।
শাশুড়ি আমায় নিয়ে ছাদের এক পাশের গোলাপ বনের দিকে যান। তারপর আমায় জিজ্ঞেস করেন,’তুমি বোধহয় কিছু বলতে চাও আমার কাছে!কী বলতে চাও খুলে বলে ফেলো মা।’
আমি বুঝতে পারি আমার শাশুড়ি মার অনুধাবন ক্ষমতা খুব চমৎকার। সহজেই তিনি তার পাশের মানুষটার সম্পর্কে অনুমান করে ফেলতে পারেন।
আমি খুব করে চাইছিলাম শাশুড়ি মার কাছে সব খুলে বলতে। কিন্তু বললাম অন্য রকম করে।যেন সাইমুমের গায়ে কোন অপবাদ না লাগে। বললাম,’মা,উনি বোধহয় আমার প্রতি একটু রাগ। এই জন্য ভয় ভয় লাগছে!’
মা চমকে উঠে বললেন,’রাগ কেন?’
‘আপুর সাথে বিয়ে ঠিক হলো আর বউ হয়ে এলাম আমি! এই জন্য।’
আমার শাশুড়ি মা ফিক করে হেসে উঠলেন। হেসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,’তুমি কী তাক্বদীরে বিশ্বাস করো?আমি ভাগ্যের কথা বলছি।কপালের লিখনের কথা বলছি।আসলে সাইমুমের ভাগ্যে বউ হিসেবে মুনতাহার নাম নাই। ওখানে আফসানার নাম।বুঝেছো?’
আমি মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম।
মা আমার থুতনি ধরে মুখটা উপরের দিকে তুললেন। তারপর বললেন,’সাইমুম কী তোমায় সরাসরি বলেছে তোমার প্রতি রাগ সে?’
‘না আমি তার আচরণে বুঝেছি।’
‘তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে ও?’
‘না মা।’
‘তবে?’
আমি কী বলবো বুঝতে পারি না ‌। সবকিছু ফাঁস হয়ে যেতে পারে।মা জেনে গেলে সাইমুম আমার ক্ষতি করবে।তাই এই কথাটা এখানেই শেষ করে দেয়ার জন্য আমি বললাম,’আমি ধারণা করেছি মা।আমি ভেবেছি আপুর বদল যেহেতু আমি উনার বউ হয়ে এসেছি এই জন্য সে রাগ করতে পারে!’
আমার শাশুড়ি আবার হাসলো। হেসে বললো,’বোকা মেয়ে। কোন চিন্তা করো না।ওর ধাতে রাগ নাই।রাগ থাকলে তো তোমায় বিয়েই করতো না!’
আমি তখন খুব কষ্টে বলি,’জ্বি মা।’
আর মনে মনে বলি,মাগো, আপনি তো জানেন না আপনার এই ছেলেটি একটা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে আছে শুধু।মুখোশের আড়ালে সে একটা পিশাচ। শয়তান একটা!
মা আমায় নিয়ে ছাদ থেকে নামেন। তারপর কিচেনে নিয়ে যান আমায়। ওখানে গিয়ে নিজের হাতেই কেটলি চা পাতা চিনি লেবু আর পানি নিয়ে আসেন আমার কাছে। তারপর বললেন,’কীভাবে করতে হবে বলো।আমি চাই না তোমার হাত লাগুক আজ কাজে।আমি নিজেই সব করবো। তুমি শুধু বলে দিবে কীভাবে কী করতে হবে!’
আমার তখন কী যে আনন্দ লাগে! মনে মনে বলি,ইয়া আল্লাহ!ওর জন্মদাত্রী মা অত ভালো কিন্তু ও এমন কেন?ওর ভেতরটা অত পাষাণ কেন?
আমি কীভাবে কী করতে হবে মাকে বলে দেই। মা দু কাপ চা করেন।এক কাপ আমার অন্যটা তার।চা খেয়ে তিনি প্রশংসা করেন। বলেন,’ অসাধারণ। তুমি সত্যিই কাজ জানো মা!’
সারাটা দিন আমার ভালো যায়। ওদের বাড়ির সবগুলো মানুষ খুব ভালো।সাইমুমের চাচীরা এসেছিল। আমার সাথে কী যে মিষ্টি করে কথা বলেছে!
সারাদিন ওর কাজিনেরা এসে আমার সাথে গল্প করেছে।সবার মুখেই সাইমুমের প্রশংসা আর প্রশংসা।কেউ তার বিরুদ্ধে একটুকুও মন্দ কথা বলেনি।সবার কাছেই সে লক্ষ্মী একটা ছেলে।
আমি কিছুই বুঝতে পারি না। তবে আমার সাথে প্রথম রাতেই সাইমুম এমন ভয়ানক আচরণটা করলো কেন?

দিন শেষ হয়ে যায় দ্রুত। নোরম বিকেলের বুকে হলুদ সন্ধ্যা উড়ে আসে। তারপর আসে অন্ধকার রাত। আমার ভয় জাগে।মনে পড়ে গতকাল শেষ রাতে ঘর থেকে বেরোবার সময় সাইমুম বলেছিল,’আফসান,আজ তো কেবল শুরু মাত্র। আগামীকাল থেকে বুঝতে পারবে শাস্তি কাকে বলে!’
আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে। ভয়ে কাঁপতে থাকি আমি।আর বসে বসে অপেক্ষা করি একটি কাল রাতের জন্য।যে রাত হয়ে উঠবে আমার জন্য ব্যথাতুর!অসহ্যকর এবং দূর্বিষহ!

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প