অদৃশ্য_এক_অসুখ_তুমি পার্ট:০৪ (শেষ পর্ব)

মেঘ আর আরিয়ান এখন নতুন ভাড়া করা ছোট্ট একটা ঘরে থাকে।ছোট রান্নাঘর, এক রুম, একটা বারান্দা।
কিন্তু শান্তি আছে।আর সেই শান্তিটুকুর নাম— ভালোবাসা”।
মেঘ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে আরিয়ান রান্না করছে।
তুই রান্না করছিস?হুম, আজ তোকে রান্না করতে দিব না।
তুই শুধু বসে থেকে আমার দিকে তাকাবি।
মেঘ হেসে ফেলে।এই ছেলেটা, যে একসময় ছিল আগুন—
আজ নিজেই হয়ে গেছে শান্তির নদী।
সেদিন রাতে, বৃষ্টি হচ্ছিল।আরিয়ান আর মেঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভিজছিল।হঠাৎ আরিয়ান মেঘের কপালে চুমু খায়।
তুই জানিস?তুই আমার জীবনে আসার পর সব অন্ধকার ফিকে হয়ে গেছে।
মেঘ কিছু বলে না।সে শুধু জড়িয়ে ধরে আরিয়ানকে।
তার চোখে জল,কারণ ভিতরে ভিতরে সে জানে,এই সুখ হয়তো বেশিদিন থাকবে না,
কয়েকদিন ধরেই মেঘ খুব ক্লান্ত থাকে।হঠাৎ মাথা ঘোরে, মাঝে মাঝে বমি আসে।প্রথমে তারা ভাবে হয়তো প্রেগন্যান্সি।কিন্তু পরীক্ষা করে বোঝা যায়—না।আরও কিছু টেস্ট করা হয়।
ডাক্তার মেঘকে আলাদা ডাকে।আপনার দুইটা কিডনির কার্যক্ষমতা অনেক কমে গেছে।এই বয়সে এমন হওয়া খুবই দুঃখজনক…দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে বিপদ হতে পারে।মেঘ থমকে যায়।আরিয়ান কে এখন বলব না,
ওকে আর কষ্ট দিতে পারবো না…
ওদিকে সালমান চৌধুরী বসে বসে রাগে গর্জে উঠে।
এই ছেলে আমার কথা শোনেনি!এখন তার বউকে শেষ করতে হবে—তবেই সে ভেঙে পড়বে।
সে কিছু লোক পাঠায় মেঘকে ভয় দেখাতে।একদিন সকালে মেঘ বাজারে গেলে—দু’জন লোক এসে মেঘকে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে:আরিয়ান কে বলিস… এই শহরে জায়গা নাই ওর।না হলে… তোর মুখে অ্যাসিড পড়তেও সময় লাগবে না।মেঘ ভয়ে কিছু বলে না।কিন্তু ভেতরে কেঁপে ওঠে।
রাতে আরিয়ান খেয়াল করে মেঘ চুপচাপ।
কি হইছে রে?
কিছু না… শুধু একটু মাথা ধরেছে।
আরিয়ান মেঘের মাথায় হাত রাখে।তুই জানিস?
যতদিন তুই আছিস, আমি মরলেও চলবে।
কিন্তু তুই যদি চলে যাস…আমি কই থাকবো?
মেঘ চোখ বন্ধ করে শুধু ফিসফিস করে বলে:তুই আছিস বলেই তো এখনো বাঁচি…
মেঘ এখন নিয়ম করে ক্লিনিকে যায়।একাই।আরিয়ানকে কিছু বলে না।প্রথম কয়েকবার সে গায়েব হয়ে যায় কয়েক ঘণ্টা।আরিয়ান ভাবে হয়তো টিউশন বা কাজ।
কিন্তু একদিন মেঘের হাত থেকে একটা প্রেসক্রিপশন পড়ে যায়।ডায়ালাইসিস রিপোর্ট।আরিয়ান দেখে ফেলে।সে কিছু বলে না।
শুধু রাতে মেঘ যখন ঘুমিয়ে যায়,ওর মাথায় হাত রাখে আর কান্না করতে করতে বলে,তুই যদি আমার আগে চলে যাস আমি শূন্য হয়ে যাবো রে বউ…
মেঘ এখন দুর্বল,রাতে ঘুম ভাঙে,মাঝে মাঝে কাঁপুনি দেয় শরীর।
একদিন আরিয়ানের চোখে পড়ে—মেঘ একা বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।
কি হইছে?
আকাশ দেখতেছিলাম…ভাবছিলাম, তুই যদি থাকিস আকাশ হইয়া—আমি যদি উড়ে যেতে পারতাম…
তুই তো আছিস এখনো।আমি আকাশ হবো, মেঘ হবো, বৃষ্টি হবো…তুই শুধু চোখ বন্ধ করে ডাকবি— আমি থাকবো।
এইদিকে সালমান চৌধুরী আবার নতুন খেলা শুরু করে।
সে আরেক দল লোক ভাড়া করে,তাদের হাতে তুলে দেয় মেঘের ক্লিনিক রিপোর্ট।তারা খবর ছড়িয়ে দেয়—
মেঘ এখন মরার পথে… আরিয়ান নিজের সম্পদ নষ্ট করছে একটা মরতে বসা মেয়ের জন্য,
এই কথা শুনে আরিয়ান তার বাবার বাড়ি যায়।সব আত্মীয়র সামনে দাঁড়িয়ে বলে—তোমরা সবাই হিসেব করছো আমার লাভ-ক্ষতির,কিন্তু একটা কথা মনে রাখো—
মেঘ মরলেও আমার,বাঁচলেও আমার।আমি মরেও তার হাত ছাড়বো না।
এক রাতে মেঘ নিজেই আরিয়ানের সামনে বসে কেঁদে ফেলে।তুই কেনো এত ভালো?
ভালো না হলে তোকে পেতাম না…
তুই জানিস, আমি মরতে চাই না…
কিন্তু আমি তোর সময় নষ্ট করছি…
তুই মরবি না… আমি বাঁচিয়ে রাখব…
প্রয়োজনে আমার কিডনি দেব,
আমার জীবন দেব… কিন্তু তুই মরবি না বউ…
মেঘ আর কিছু বলতে পারে না।সে শুধু কাঁদে।
আরিয়ান জড়িয়ে ধরে।
আরিয়ান নিজেই গোপনে ডাক্তারের সাথে দেখা করে।
স্যার, আমি কিডনি দিতে চাই, প্লিজ…
দেখুন, তার শরীর দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে।
আপনার কিডনি মিললে সার্জারি করতেই হবে।
তবে সময় খুব বেশি নেই…
আরিয়ান চুপ।রিপোর্ট হাতে নিয়ে বসে থাকে।
তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন শক্ত হয়ে আসে।
কিন্তু মুখে কেবল একটাই কথা:আমার জীবন দিয়ে হলেও ওকে বাঁচাবো।
রাতে মেঘ ঘুমিয়ে পড়ে।আরিয়ান আস্তে করে মেঘের মাথায় হাত রাখে।তার কপালে চুমু দেয়।তারপর পাশে বসে চুপচাপ কাঁদে…কান্না চেপে রাখে যেন মেঘ না জেগে যায়।
তুই কষ্ট পাচ্ছিস, আর আমি শুধু বসে আছি—এটা আমার পুরুষত্ব না রে মেঘ…আমি তোর জন্য সব করতে চাই,
কিন্তু কিভাবে তোকে বলি, আমি ভিতরে ভিতরে ভেঙে যাচ্ছি…
মেঘ ঘুমের ঘোরে বলে—তুই এত চুপচাপ কেনো আরিয়ান…?
আরিয়ান হাসার ভান করে—কিছু না… তোকে দেখছি শুধু…
জানিস, তুই ঘুমিয়ে থাকলে আমার মনে হয়—এই দুনিয়া থেমে গেছে। শুধু তুই আর আমি… বাকিটা শূন্য।
পরদিন সকালে আরিয়ান মেঘকে নিয়ে বাইরে যায়।
সে মেঘকে ছোট্ট একটা পার্কে নিয়ে যায় যেখানে ফুল বাগান, পাখি গান গায়।
দেখ, এখানে কতো শান্তি…তোকে নিয়ে এখানে রোজ আসবোতুই তো বাঁচবি… তাই না?
মেঘ হাসে।কিন্তু চোখে জল।আরিয়ান… আমি যদি একদিন না থাকি,আরিয়ান একদম জোরে বলে,থাম! এই কথা মুখে আনবি না,আমি আছি…আমি তোকে আমার বুকের মধ্যে রেখে দেব…দরকার হলে আমি মরবো,
কিন্তু তোর কিছু হতে দিব না… জানিস, আমি বাঁচতে পারবো না তোকে ছাড়া,,
মেঘ তখন বলে—তুই তো আমার যুদ্ধ…আর তুই যদি পাশে থাকিস— আমি বেঁচে গিয়েও মরে থাকবো,
রিপোর্ট আসল।আরিয়ানের কিডনি পুরোপুরি ম্যাচ করেছে।
ডাক্তার বললেন—অপারেশন করা যাবে। কিন্তু ঝুঁকি থাকবে।রোগীর শরীর খুব দুর্বল।সময়ের সাথে দেরি করা যাবে না।
আরিয়ান বলল—আমি তৈরি। এখনই করুন।
ডাক্তার তাকিয়ে বললেন—একবার ভাবুন। এটা ছোট অপারেশন নয়।আপনি খুব তরুণ, ভবিষ্যত আছে…
আরিয়ান হেসে বলল—আমার ভবিষ্যৎ ওর বুকের ভেতরে।
ও বাঁচলে আমি আছি। ও না থাকলে আমি কে?
আরিয়ান যত্ন নিচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তে।মেঘ বুঝে যাচ্ছে কিছু একটা ঘটছে।সে একদিন আরিয়ানকে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করল—তুই আমাকে বাঁচানোর জন্য নিজের কিডনি দিবি?
তা জানলি কী করে?
তুই যতভাবে ভালোবাসিস,
আমি তার প্রতিটি ধ্বনি শুনতে পাই…
আরিয়ান থেমে গেল।তারপর আস্তে করে বলল—তুই আমার সবকিছু।আমি কিছু হারিয়ে বাঁচতে পারি,
কিন্তু তোকে হারিয়ে না।
মেঘ জড়িয়ে ধরল আরিয়ানকে।প্রথমবার, অনেকক্ষণ…
কোনো ভয় ছাড়াই। তার পর বলতে শুরু করলো, আরিয়ান, আমার জন্য, তোর জীবন নষ্ট করিস না প্লিজ, তখন আরিয়ান বললো তোকে বাঁচাতে পারলেই, আমি পরিপূর্ণ হবো, শূন্য হবো না…..
ঠিক এই সময় একদল মানুষ হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
বাড়িঘর তছনছ করে।একজন ছু*রি হাতে এগিয়ে আসে মেঘের দিকে।আরিয়ান রাগে পাগল হয়ে যায়।
সে ছিনিয়ে নিয়ে ছু*রি,সরাসরি আঘাত করে সেই পোড়াটার বুকে।ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।বাকি লোক পালিয়ে যায়।
আরিয়ান কাঁপছে।মেঘ ভয় পেয়ে বলল,তুই মারলি?
ওর হাতে ছু*রি থাকলে, আমি হয়তো তুইকেই হারাতাম…
পরে পুলিশ আসে।ছেলেটা হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যায়।মৃত্যুর আগে একটা কথা বলেছিল—আমারে পাঠাইছে তোর বাপ— সালমান চৌধুরী…
আরিয়ান থমকে যায়।তার চোখে আগুন জ্বলে ওঠে।
তুমি আমার বাপ না… তুমি এক জন্তু।আমি শয়তান হয়ে গেছি, কারণ আপনি শয়তান বানিয়েছেন।
এরপর কিছুদিন একটু শান্তি আসে।মেঘ কিছুটা ভালো অনুভব করে।ও রান্নাঘরে গিয়ে চা বানাতে চায়,আরিয়ান ধমক দেয়..
চুপচাপ বসে থাক… রান্না আমি করবো।
তুই সব করিস… আমি কিছুই পারি না…
তুই শুধু আমাকে ভালোবাসিস। বাকি আমি আছি।
সেদিন তারা একসাথে চা খায়।রাতে আরিয়ান মেঘকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুম পাড়ায়।যদি ঘুম থেকে না উঠিস, মনে রাখিস—আমি পাগল হয়ে যাবো… তোকে ছাড়া কিছুই না আমি….
পরেরদিন ডাক্তাররা জানায়—অপারেশন আগামিকাল সকাল ৯টায়।এই রাতটা গুরুত্বপূর্ণ, রোগীর মানসিক স্থিতি ঠিক রাখতে হবে।
আরিয়ান চুপচাপ বসে।তার চোখে কান্না নেই—কিন্তু ভিতরটা যেন আগুন হয়ে জ্বলছে।
মেঘ তাকে হাত ধরে বলল—তুই ভয় পাচ্ছিস?”
হ্যাঁ… কারণ এবার ভয়টা আমার জন্য না…
তুই তো জানিস, আমি জানোয়ার হয়ে গিয়েছিলাম একসময়…কিন্তু তুই আমাকে মানুষ বানিয়েছিস।
আমি যদি তোকে হারাই, আমি আবার জানোয়ার হয়ে যাবো। পাগল হয়ে যাবো একেবারে..
মেঘ আর কোনো কথা বলেনি।শুধু ঠোঁট ছুঁয়ে বলল—
তুই হারবি না। কারণ আমার জীবন তোর বুকে বেঁচে আছে…
রাতে ঘুমায় না কেউ।মেঘ বিছানায় শুয়ে আরিয়ানকে বলে,তুই কেমন করে এতটা ভালোবাসিস আমাকে?
কারণ তুই আমায় ঘৃণা দিয়ে শুদ্ধ করেছিস।
আমি তোকে একদিন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম…
কিন্তু তুই আমাকে আবার জোড়া লাগিয়ে দিলে।
মেঘ চোখ বন্ধ করে।আরিয়ান তার হাত ধরে কাঁপা কণ্ঠে বলল—যদি সকালে তুই না ওঠিস… আমি আর কিছুতে থাকবো না।আমি তোর সাথে কথা বলবো বাতাসে,
তোকে খুঁজবো প্রতিটি গন্ধে…
মেঘ বলে,তুই তো পাগল,হ্যাঁ… তোকে ভালোবেসে আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি,রাত কেটে যায় নিঃশব্দে।
-সকাল ৮:৫৬ মিনিট,অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মেঘকে।
আরিয়ান তার কপালে চুমু দিয়ে বলল—চোখ বন্ধ করিস না… মনে করিস, আমি তোর পাশে আছি…
তুই পাশেই আছিস তো?
আজীবন… যতদিন তুই নিশ্বাস নিবি,আমি তোর হাত ধরে রাখবো…
ডাক্তার দরজা বন্ধ করে দিলেন।আরিয়ান বসে পড়ল মেঝেতে।দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ কাঁদছে।
কেউ কিছু বলতে পারছে না তাকে।
ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই।২ ঘণ্টা… ৩ ঘণ্টা…
ডাক্তার এসে বলল—অপারেশন জটিল ছিল।আমরা চেষ্টা করেছি, আপাতত মেঘ স্টেবল আছে…কিন্তু কিছু সময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
আরিয়ান ছুটে গেল আইসিইউর জানালার কাছে।মেঘ ঘুমিয়ে আছে, নাকের পাশে অক্সিজেন পাইপ।
আরিয়ান চোখ ভিজিয়ে ফিসফিস করে বলল—তুই জিতলি…আমি বলেছিলাম তো, আমি তোকে মরতে দেব না…
মেঘ এখনও অচেতন।আরিয়ান জানালার পাশে বসে তার দিকে চেয়ে আছে।তার চোখ লাল, গাল শুকনো, আর শরীরটা ক্লান্ত।তবু চোখ সরায় না।
একটা সিস্টার এসে বলল—আপনি একটু বিশ্রাম নিন, আপনি নিজেও অসুস্থ হয়ে যাবেন।
আরিয়ান শান্ত স্বরে বলল—ওর চোখ না খোলা পর্যন্ত আমি মানুষ না…আমি তো এখন শুধু এক অপেক্ষা,,
সকাল ৭:১৫মেঘ চোখ খুললো।ধীরে ধীরে।চারপাশ ঘোলা লাগছে, গায়ে অসহ্য ব্যথা।তার চোখে জল, সে শুধুই ফিসফিস করে বলল—আরিয়ান…?
আরিয়ান ছুটে এল।তুই চোখ খুলেছিস… তুই আমার পৃথিবী আবার ফিরিয়ে দিলি…
মেঘ কাঁপা কণ্ঠে বলল—আমি বেঁচে আছি?তুই শুধু বেঁচে না…তুই তো আমার বুকের স্পন্দন, তুই না থাকলে আমি মৃত ছিলাম।
মেঘের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো।আরিয়ান তার হাত ধরে বলল—এই হাত আমি আর ছাড়বো না।এখন তুই শুধু বাঁচ, আমি তোর প্রতিটি নিঃশ্বাস হয়ে থাকবো।
একজন নার্স ফাইল নিয়ে বলল—রোগীর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল,কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ এবং চিকিৎসা দরকার হবে।কিডনি একটাই, সাবধানে থাকতে হবে।
মানসিক চাপ একদম দেওয়া যাবে না।
আরিয়ান মাথা নেড়ে বলল—ওকে আর কেউ কষ্ট দিতে পারবে না,কারণ এখন ওর সামনে আমি আছি… আগুন হয়ে।কিছুক্ষণ পর আরিয়ান মেঘ কে নিয়ে বাসায় চলে আসে….
সেই রাতে, মেঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে।আরিয়ান তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
তুই কাঁদছিস?
তুই জানিস, আজ মনে হচ্ছে, আমি তোর জীবনের জন্য ভয় পাচ্ছি
কেন?
কারণ আমি জানি, তুই আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে শেষ করে দিবি…
আরিয়ান হেসে বলল—তুই তো আমার জীবন…
জীবনকে বাঁচাতে গিয়ে মরলে, ওটা কি মৃত্যু হয়?
সেই রাতেই হঠাৎ মেঘের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তড়িঘড়ি করে।
ডাক্তার বলল—তাকে দ্বিতীয়বার ডায়ালাইসিসে নিতে হবে।
কিন্তু কিডনি একটাই… এটা ভয়ংকর বিপদ।সময় কম…
আরিয়ান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখ দুটো শুকিয়ে গেছে।সে জানে… সময় শেষের পথে…
আরিয়ান মেঘের কপালে হাত রাখে।তুই যদি চলে যাস… আমি পাগল হয়ে যাবো, বলছি…
তুই যদি পাগল হয়ে যাস… তবে আমি মরতে পারবো না।
তুই মরলে আমি বাঁচবো না…
তুই থাকলে, আমি কিভাবে মরবো বল?
আরিয়ান মাথা নিচু করে কাঁদছে।
মেঘ ঠোঁটে মৃদু হাসি এনে বলল—আমার কবরটা তোমার বুকেই রাখিও…যেন আমি আর কোথাও যেতে না পারি…
মেঘের শরীর আর লড়তে পারছে না।ডাক্তারের কণ্ঠ শান্ত, কিন্তু কফিনের মতো ভারী,আমরা চেষ্টা করছি… তবে… সময় খুবই কম…
আরিয়ান পাশে বসে আছে,তার মুখে কোনো শব্দ নেই, চোখ স্থির, দৃষ্টিও যেন মরে গেছে।
হঠাৎ মেঘ ফিসফিস করে বলে—আরিয়ান… আমার একটাই অনুরোধ…
বল, মেঘ…
তুই কাঁদবি না, প্লিজ…
আমি চাই না, তোর চোখে জল থাকুক…তুই তো আমার সব ছিলি, আছিস… থাকবি…
আরিয়ান তার হাত শক্ত করে ধরে।চোখে জল জমে থাকলেও গড়িয়ে পড়ে না।
সে বলল—তুই চোখ বন্ধ করিস না মেঘ…আমি শ্বাস বন্ধ করব তবু তোকে ছাড়তে পারবো না…
সেই রাতে, মেঘের চোখ হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায়।যন্ত্রগুলো এক এক করে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
আরিয়ান মাথা নত করে চিৎকার করে ওঠে—মেঘ… না! প্লিজ না! তোকে ছাড়া আমি কিছুই না!তুই না থাকলে সবকিছু মিথ্যে…
ডাক্তাররা আসে, নার্স আসে, ওয়ার্ড বয় আসে…কিন্তু কারো সাহস হয় না তাকে সরানোর।
আরিয়ান জড়িয়ে ধরে থাকে মেঘকে,ঘণ্টার পর ঘণ্টা… নিথর শরীরটাকে,তুই মরতে পারিস না…আমি এখনো তো তোকে বলিনি—তুই আমার পৃথিবী ছিলি না, তুই আমার আকাশ ছিলি…
কয়েক মাস পর…একটা মানসিক হাসপাতাল।নাম: মানব কল্যাণ চিকিৎসা কেন্দ্র,একজন যুবক দেয়ালে মাথা ঠুকছে।
তার হাতে একটা নীল ওড়না।তার ঠোঁটে একটাই নাম…
মেঘ… মেঘ… মেঘ…
হ্যাঁ, সে আরিয়ান।যে একসময় পুরো শহর কাঁপিয়ে দিতো,
আজ সে কাঁদছে এক মৃত ভালোবাসার কাছে।
একদিন রাতে, হাসপাতালের দরজায় বসে থাকা এক নার্স বলল—এই পাগল ছেলেটা নাকি কোনো এক মেয়েকে ভালোবেসে পাগল হয়ে গেছে…
অন্যজন বলল—হ্যাঁ, মেয়েটা মারা গেছে…আর ছেলেটা বলে, সে এখনো বেঁচে আছে…ওর গলায় তো এখনো মেয়েটার ওড়না বাঁধা…
ভালোবাসা যদি সত্যি হয়,তাহলে তার শেষ নেই…
সে শুধু চেহারা বদলায়,কখনো মেঘ হয়,কখনো পাগল।
💔আরিয়ানের জন্য মেঘের শেষ চিঠি,,প্রিয় আরিয়ান,
যেদিন তুই এই চিঠিটা পড়বি,
সেদিন আমি হয়তো আর থাকবো না…
তোর হাতের নাগালে নয়,
তোর চোখের সামনে নয়,
শুধু থাকবো তোর হৃদয়ের এক কোণায়—নিঃশব্দে, নিঃশেষে…
তুই কি জানিস, আমার সবচেয়ে বড় ভয় কী ছিলো?
মরে যাওয়া না…
ভয় ছিলো
তুই হয়তো ভুলে যাবি…
কিন্তু এখন আমি জানি…
তুই পাগল হয়ে যাবি…
তুই প্রতিটা রাতে আমায় ডাকবি…
এবং জানবি না—
আমি তোর বুকের ভেতরেই থাকি, প্রতিটি শ্বাসে।
তোর গলা জড়িয়ে আমি শুধু বলতাম—আরিয়ান, তুই থাকলে আমি ভয় পাই না…
আজ তুই একা…কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, তুই একা না।
তুই চোখ বন্ধ করলেই, আমি থাকবো…
তুই জানালার বাইরে তাকালেই, আমি থাকবো…
তুই যখন বলবি,
মেঘ, তুই কোথায়?
আমি উত্তর দিব,,
তোকে ঘিরেই তো আমি আছি…
(তোর মেঘ,যে আজও তোকে ভালোবাসে)

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প