আমি বুড়ী দাদীকে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলাম দাদীও পাসে বসা ছিলো, মেজো আপু এসে আমাদের কাছে বসল।
একটু আমতা আমতা করেই সবার উদ্দেশ্য বলল,
— মানুষ কি কখনো জীবন্ত সাপ খায়!??
আমরা সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম!
অবাক হওয়ার মতই কথা বলেছে সে।
দাদী — ছি ছি ছি, জীবন্ত সাপ!! আরে না পাগল নাকি তুই। মানুষ আবার সাপ খায় নাকি?
বুড়ী দাদী — মাইনসে খায় তা হুনিনাই, তয় জ্বীন- পরী রা খায়, সাপ খায়, পোকা খায়, পরজাপতি খায়, হুনছি গরুর লাদা ও খায়।
আমি তার কথায় একটু মুচকি হাসলাম।
বললাম,
— তুমি এত কিছু জানো কিভাবে গো? বেশ জানা শোনা তুমি দেখছি এবিষয়ে।
— জানমুনা মানে, আমার বাপের তো পোষা জ্বীন আছিলো। আর আমরা হেই কোন কালের মানুষ মেলা কিছু দেখছি আগে, আমাগো দাদীরা গপ্প করছে কত্ত…
মেজো আপু তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
— তার মানে যে জীবন্ত সাপ খায় সে মানুষ না!!
মেজো আপুর কথার ধরন এমন ছিলো যেনো সে কাউকে জীবন্ত সাপ খেতে দেখেছে!
আমি সেখানে আর কোনো কথা না বলে মেজ আপুকে ইশারা করলাম একটু দূরে আসতে,,,
তারপর আমি সেখান থেকে উঠে এসে বারান্দার ঘরটায় অপেক্ষা করতে লাগলাম।
বারান্দার এই ঘরটা সবসময় বন্ধ থাকে, পুরোনো জিনিসপত্র সব এঘরে থাকে, খুবই নোংরা আর পোকামাকড়ে ভরা থাকে সবসময়।
রুমে ঢুকে প্রথমে কিছু খেয়াল না করলেও একটু পরেই আমি লক্ষ্য করলাম এই ঘরে কোনো টিকটিকি নেই, না আছে কোনো তেলাপোকা বা অন্য কোনো পোকামাকড়!!!
মাকড়সার জালে ঘর ভর্তি কিন্তু কোনো মাকড়সা নেই!!
বিষয়টা খুব অদ্ভুত লাগলো আমার কাছে,
আর মূহুর্তেই বুড়ী দাদীর কথাগুলো মন পড়ে গেলো,
“”” মাইনসে খায় তা হুনিনাই, তয় জ্বীন- পরী রা খায়, সাপ খায়, পোকা খায়, পরজাপতি খায়”””
কেমন জানি একটু ভয় লাগলো আমার।
একটুপরেই মেজো আপু এলো,,,
আমি তার হাত টান দিয়ে ঘরের ভেতর এনে দরজা বন্ধ করে দিলাম।
সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম,
— তুই বড় আপুকে সাপ খেতে দেখেছিস তাইনা?
মেজো আপু আমার কথা শুনে ছিটকে উঠলো!!
যেনো সে ভূত দেখেছে!!
— তুই জানলি কিভাবে?
মেজো আপু ইতোমধ্যে ঘামা শুরু করে দিয়েছে।
— আমি তোর কথা শুনেই বুঝেছিলাম। আমার মনেই হচ্ছিল কিছু গোলমাল আছে। তবে তোর কথায় আরো শিওর হয়েছি।
তুই বলতো সেদিন ওভাবে চিতকার করলি, ঠিক কি দেখেছিলি?
মেজো আপু আমতা আমতা করতে লাগলো,,
তারপর বলা শুরু করলো,
— আমি বড় আপুকে ডাকতে বাড়ীর পেছনে গেছি, দেখি বড় আপু কদম গাছের নিচে দাড়িয়ে কি যেনো খাচ্ছে, আমি ভাবলাম কোনো ফল টল হবে হয়তো। তাই স্বাভাবিক ভাবেই কথা না বলে একটু সামনে এগিয়েছি আর দেখলাম,,, ( আপু একটু থেমে ঢোক চিপলো)
দেখলাম আপুর গলায় একটা সাপ পেচানো জীবন্ত!! আর আপুর হাতে অনেক গুলো টিকটিকি, মুখেও টিকটিকি চিবোচ্ছে!! কি বিচ্ছিরি অবস্থা!! আমি সেখানেই দাড়িয়ে পরলাম, আমি নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!!
হঠাৎ আপু আমার দিকে তাকালো আর গলা থেকে সাপটা ছাড়িয়ে কচ কচ করে খেয়ে ফেলল!! আর বিভৎস ভাবে হাসতে লাগলো, তখনই আমি চিতকার করে উঠেছিলাম!!!
মেজো আপুর কথা শুনে আমিও প্রায় জমে গেছি!
আমিও মেজো আপুকে বললাম গত কিছুদিন ধরে আমি যা যা দেখেছি, অনুভব করেছি!!
সব মিলিয়ে দুজন সিদ্ধান্ত নিলাম বাবাকে সব বলব। আজ রাতেই বলব।
রাত প্রায় ৮/৯ টা বাজে সম্ভবত, সবাই মা’র কাছে বসে আছি। মা’র যা অবস্থা তাতে আজ রাত পার হবেনা!
সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে আমারো খুব কস্ট হচ্ছিলো, কিন্তু আমি কান্না করতে পারিনা! মানে কাঁদলে আমার চোখ থেকে পানি আসেনা!
মেজো আপু মায়ের মাথার কাছে বসে আছে আর আমি পায়ের কাছে, বাবা শুধু সারা ঘরে পায়চারি করছে, অ্যাম্বুলেন্স খবর দেওয়া হয়েছে।
হঠাৎ মেজো আপুর দিকে চোখ পরতেই আপু ইশারা দিলো বড় আপুর দিকে তাকাতে,
তাকিয়ে দেখি আপু সিলিংএর দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ বড় বড় করে, সেখানে একটা টিকটিকি!!!
বড় আপুকে দেখে মনে হচ্ছিলো এখনি ঝাপ দিয়ে টিকটিকির উপর পরবে, আর ছিড়ে খাবে সেটাকে।
হঠাৎ টিকটিকি টা বাইরে চলে গেলো আর বড় আপুও সেটার পিছন পিছন!!
আমি আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না সত্যি। এই পরিবেশে বাবাকেও বা কি করে বলি এসব।
এর মধ্যে মা পানি খেতে চাইলে মেজো আপু রান্না ঘরে গেলো পানি আনতে, কিছু সময় পর ফিরেও এলো পানি হাতে,
কিন্তু মেজো আপুকে খুবই অদ্ভুত লাগছিলো দেখে!
শরীর ঘেমে একাকার, চেখ গুলো বড় বড়!! মনে হচ্ছে খুব ভয়ানক কিছু দেখেছে!!! কিন্তু এই পরিবেশে আর আপুর দিকে খেয়াল করার সময় নেই, মা’র অবস্থা খুবই খারাপ!!!
শুধু ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে??
আপু ফিস ফিসিয়ে জবাব দিলো,,
রক্ত….. অনেক রক্ত….!!!
আমি দৌড়ে গেলাম রান্না ঘরে, গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলামনা!
পুরো রান্না ঘর জুড়ে কার যেনো রক্তমাখা পায়ের ছাপ!!
আর সারা ঘর জুড়ে এখানে ইদুরের খন্ডিত শরীর ওখানে তেলাপোকা মরা, আর টিকটিকির ছড়াছড়ি!!
আমার মাথাটা কেমন যেন করছে, কেমন যেনো সব ঘুরছে,, শুধু মনে হলো আমি ধীরে ধীরে মাটিতে শুয়ে পরছি,,,,,
তারপর প্রায় অনেক সময় সেভাবেই মাটিতে পরা অবস্থায় রইলাম,, না, আমি সেন্স লেস হইনি! আমি সব বুঝতে পারছিলাম, শুনতে পাচ্ছিলাম শুধু উঠতে আর নরাচরা করতে পারছিলাম না।
হঠাৎ মনে হলো একটা ঠান্ডা হাত আমার কাঁধের উপর রাখলো কেউ,
আমার বুঝতে বাকী নেই এটা বড় আপু!!
আবার সেই পুরুষ নারী মিশ্রিত কন্ঠস্বর!!
— ভয় পাচ্ছিস শ্রাবণ??
আমি খুব চেষ্টা করলাম কথা বলতে, কিন্তু কোনোভাবেই গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছিলো না। আমি মনে মনে বলছিলাম,
না,, না আমি ভয় পাচ্ছিনা।
আমাকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে আপু বলল,
– সত্যিই ভয় পাচ্ছিস না!!
কেমন হবে যদি এভাবেই পরে থাকিস?
কেমন বিচ্ছিরি ভাবে হাসছিলো সে,,,,
আমি মনের অজান্তেই বলে ফেললাম,
— কে আপনি? বড় আপু কোথায়? আপনি আমার আপুনা!! কোনোদিন না!!
আবার সেই বিচ্ছিরি হাসি!!
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শোনা গেলো,,,
তুই এভাবে পরে আছিস কেনো? ( মেজো আপু)
ঠিক আছিস তো তুই?
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে উঠে দাড়ালাম, কথাও বলতে পারছিলাম। আসে পাসে তাকিয়ে বড় আপুকে কোথাও পেলাম না, আর সেই রক্তও নেই।
আমরা দুজনেই দ্রুত সেখান থেকে বেড়িয়ে এলাম।
এদিকে অ্যাম্বুলেন্স তখনো আসেনি, আর কি, যা ভেবেছিলাম তাই হলো।
রাতেই মা মারা গেলেন!!
একরাতেই সব শেষ হয়েগেলো! কান্নার রোল পরেগেলো বাড়ীতে। বাবা বিছানার একপাশে পাথরের মতো পরে আছেন, আর একদৃষ্টিতে মা’র লাশের দিকে তাকিয়ে আছেন!!
গভীর শোক পেয়েছেন বাবা!!
মা’র মাটি হলো পরদিন সকাল ১১ টায় সব আত্মীয় স্বজন আসার পর। জীবনের প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম এতিম হলে কেমন লাগে। মা ছাড়া পুরো বাড়ীটাই খালি হয়ে গেছিলো। সে ব্যথা বলে বোঝানোর মতো না।
এতো শোকের ভীরেও আমি বড় আপুকে খেয়াল করলাম। মা মারা গেছে এবিষয়ে তার কোনো শোক আফসোস ই নেই। সে আছে তার মতো। তার বাস যেনো অন্য ভুবনে।
এরপর প্রায় মাস দুয়েক কেটে গেছে….
এখন শুধু আমরা দুই বোনই না, বাড়ীর সবাই তার এই অস্বাভাবিক আচরন খেয়াল করেছে!!
সবার মাঝখানে থেকেও সে একা একা এমন ভাবে কথা বলে যেনো তার সামনে কেউ বসে আছে!!
বিষয়টা সবাই খুব সিরিয়াসলি নিতে লাগলো।
প্রথমে আপুকে একজন অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী ডাক্তার দেখানো হলো।
তাতে উনি যা বললেন,
মায়ের মৃত্যুতে আপু গভীর শোক পেয়েছে, এবং আপু ধরে নিয়েছে মা বেঁচে আছেন। আর সে মায়ের সাথেই কথা বলে!!
ডাক্তারের রিপোর্ট শুনে সবাই স্বাভাবিক হলো শুধু আমি আর মেজো আপু ছাড়া।
কারন আমরা তার আচরন আরো আগে থেকে খেয়াল করছি। যা শুধু আমরাই জানি।
একদিন দুপুরে আমরা সবাই উঠানে বসে আছি। বড় আপু আমাদের থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে,
হঠাৎ খেয়াল করলাম আপুর শরীরের ছায়া ২ টা!!!
#পর্ব_৫_ও_শেষ_পর্ব
একদিন দুপুরে আমরা সবাই উঠানে বসে আছি। বড় আপু আমাদের থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে,
হঠাৎ খেয়াল করলাম আপুর শরীরে র ছায়া ২ টা !!
এবং দুটি ছায়ার ই শারীরিক অঙ্গভঙ্গি আলাদা আলাদা।
প্রথমে দেখে বুঝতে পারছিলাম না এটা কি সত্যি দুটি ছায়া,
নাকি শুধুমাত্র আলোর তারতম্যের কারণে এমনটা দেখা যাচ্ছে।
আমি বড় আপুকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,
-আচ্ছা আপু তোর খুধা লাগেনি? খাবি না কিছু?
বড় আপু আমার দিকে ফিরে তাকালো, আমি স্পষ্টই দেখতে পেলাম একটা ছায়া ঠিক আপুর মতোই আমার দিকে ফিরে তাকালো, অর্থাৎ এটা আপুর শরীরেরই ছায়া।
কিন্তু অন্য ছায়াটি নাড়াচাড়া করছিলো অন্য দিকে তাকাচ্ছিলো যা সম্পূর্ণই ভিন্ন ছিল আপুর থেকে!!
আমার বুঝতে একটুও বাকি রইলো না কি হয়েছে বা কি ঘটছে এখনো পর্যন্ত!!
আমি দ্রুত সেখান থেকে উঠে গিয়ে বাবার কাছে গেলাম,
এবং দেরি না করে এতদিন পর্যন্ত যা যা ঘটেছে সব কিছুই একে একে বাবাকে খুলে বললাম।
বাবা কোন ভাবেই আমার কথা বিশ্বাস করতে রাজি না।
তার চাই চাক্ষুষ প্রমাণ!
ডাক্তার যা বলেছেন বাবা সেই কথাতেই অনর।
বাবা কে শুধু এতোটুকু বললাম বাবা তুমি একটু বড় আপুকে খেয়াল করো। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি সেখানেই পেয়ে যাবে। বাবা মুখে কোন কথা না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন।
বাবার তো বেশ কিছুদিন ধরেই মায়ের মৃত্যুর কারণে মনটা অনেক খারাপ ছিল। সন্ধ্যায় বাবা সবাইকে ডাকলেন।
সেখানে আমরা সবাই সহ বড় আপুও ছিল ।
জানিনা বাবা ঠিক কি ভেবে আমাদের সবাইকে একত্রে আসতে বলেছেন।
বাবা কতক্ষণ চুপ থেকে বড় আপুকে সম্মোধন করে বললেন,
— স্মৃতি, তুই আমার বড় মেয়ে, বড় আদরের।তোর মার খুব শখ ছিল মরার আগে যেন তোর বিয়েটা দেখে যেতে পারে। কিন্তু তা তো আর হলো না, এখন আমার শখ বা তোর মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছেও বলতে পারিস, অন্তত আমি চাই মরার আগে যেন তোর বিয়েটা দেখে যেতে পারি।
মোটকথা আমি তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছি তোর পছন্দের কেউ থাকলে বলতে পারিস।
বাবার এই কথাগুলো বলতে বলতে আমি বড় আপুকে খেয়াল করছিলাম, আপু নিচের দিকে মাথা দিয়েছিল কিন্তু তার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছিল!
মনে হচ্ছিলো এখনই রাগে হুঙ্কার ছাড়বে।
যেই ভাবা সেই কাজ,
আপু বসা থেকে দাঁড়িয়ে রেগে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
আমার বিয়ে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, আমি আপাতত বিয়ে করছি না।
কথাগুলো বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল সে। রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর থেকে। আমরা বসার ঘরে থেকে সেই শব্দ শুনতে পেলাম।
বাবা মনে খুব কষ্ট পেলেন। এই স্বাভাবিক কথায় বড় আপুর থেকে এই আচরণ সে মোটেও আশা করেনি ।
বাবা চুপচাপ সেখান থেকে উঠে চলে গিয়ে পায়চারি করতে লাগলেন।
আমি আর মেজ আপু বড় আপুর পেছন পেছন রুম পর্যন্ত গেলাম, রুমের দরজা লাগানো ভেতরে বড় আপু কার সাথে যেন কথা বলছিল, কন্ঠ শুনতে পাচ্ছিলাম দুইটা! একটা বড় আপু আর একটা কেমন যেন পুরুষ-নারী মিশ্রিত সেই কণ্ঠস্বর এর মত। তবে আজ কিছুটা ভিন্ন শোনা যাচ্ছিল।
বড় আপু বলছিল,
— এভাবে আর কতদিন??
আমাকে বশীভূত করে কি লাভ আপনার??
আমি সত্যিই আর সহ্য করতে পারছি না। চলে যান আপনি আমায় ছেড়ে দিন আপনি। আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?? আমায় মুক্ত করে দিন। আমি মুক্তি চাই। আমি বাঁচতে চাই!! মরতে চাইনা আমি!!
ও পাশ থেকে সেই কণ্ঠস্বর বলছিল,
–আমি তোমাকে নিয়ে যাব খুব তাড়াতাড়ি। এই শরীর থেকে তোমায় আমি মুক্তি দিয়ে দেব!!!
তারপর তুমি আমার হবে সারা জীবনের জন্য!!! আমার শরীরের অংশ তোমার মাঝে বেড়ে উঠছে দিন দিন। আমি তোমাকে নিজের করে নেব!!
আমি সাত পাঁচ না ভেবেই দরজায় নক করলাম।
সাথে সাথেই ভেতরের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেল।
বেশ অনেকক্ষণ ভেতরের সব কিছু চুপচাপ
হঠাৎ নিজে থেকেই দরজাটা খুলে গেল!!
আমরা ভাবছিলাম ভেতরে ঢুকব কি ঢুকব না।
হঠাৎ ভেতর থেকে বড় আপু নিজেই বলল আয়.. তোরা ভিতরে আয়!
মেজ আপু আমার জিজ্ঞেস করছিল, ভেতরে যাওয়া ঠিক হবে কিনা?
আমি মেজ আপুর হাত টা ধরে রুমে ঢুকলাম।
বড় আপু খাটের উপর শুয়ে আছে উপর হয়ে, যেন তার পেটে খুব ব্যথা!! এতদিনে এই প্রথমবার বড় আপুকে দেখে আমার খুব মায়া হচ্ছিল সত্যি। তার মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। যেন তার ভিতরে কত চাপা কান্না কত চাপা কষ্ট সে লুকিয়ে রেখেছে।
মেজ আপু বড় আপুর এই অবস্থা দেখে একরকম কেঁদেই ফেলল।
— স্মৃতি বলনা তোর কি হয়েছে আপু? তোর কি কোন সমস্যা? কিছু বলতে চাস আমাদের? এমন অদ্ভুত আচরণ করছিস কেন তুই? তুই আমাদের সব খুলে বল বোন।
বড় আপু প্রায় কেদেই ফেলেছে কান্না করতে করতে শুধু এতোটুকু বলল,
— আমায় বাঁচা বোন আমি মরতে চাই না আমি বাঁচতে চাই!!
বড় আপু কথা বলতে বলতেই পেছনের জানালাটা একাই খুলে গেল ঝাপটা হাওয়ায়!! আমরা ঠিক অনুভব করতে পারলাম যেন একটা গরম হাওয়া রুমের ভেতর ঢুকলো!!
মুহূর্তেই পরিবেশ একদম বদলে গেল। বড় আপু ভয়ে আমাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরল । আর বলল,
— ও -ও-ও আবার চলে এসেছে। আমাকে নিয়ে যাবে তার সাথে। আমায় বাঁচা তোরা।
বড় আপু আমাদের জড়িয়ে ধরেছিল হঠাৎ আপুর শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল!
আবার সেই বিদঘুটে গন্ধটা!!
এ যেন কোন অশরীরির প্রবেশ !!!
বড় আপু হঠাৎ আমাদের দুজনকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল!!
আমরা দুজনেই খুব ব্যথা পেলাম।
তারপর উঠে গিয়ে একটু দূরে দাড়ালাম।
আবার সেই পুরুষ নারী মিশ্রিত কণ্ঠস্বর!!
তোরা এখানে এসেছিস কেন? নিজেদের ভালো চাস তো এখান থেকে দৌড়ে পালা। খবরদার আর যদি এই রুমে আসিস।
তোরা দুজন আজ থেকে অন্য রুমে থাকবি।আমাদের যথেষ্ট প্রাইভেসি দরকার। তিনি বলেছেন তোদের দু’জনকেই তিনি পছন্দ করেন না। বিশেষ করে শ্রাবণকে তো একদমই পছন্দ করেন না।
চলে যা এখান থেকে চলে যা আমাদের চোখের সামনে থেকে।
আমরা কোন কথা না বলে চুপচাপ রুমের বাইরে চলে এসে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম যেন আপু আমাদের দেখতে না পায়।
আবার তাদের কথা শুরু হল,
— আমি কতবার বলেছি আপনাকে, আপনাকে আমার সহ্য হয় না। তবুও বারবার কেন ফিরে আসেন আপনি?
কি বাজে গন্ধ আপনার শরীরে।
কি বীভৎস আপনার চেহারা খুব ভয় হয় আমার!
ওপাশ থেকে কেউ কথা বলছিলোনা।
আপু আবার বলতে শুরু করলো,
মেরে ফেলুন আমাকে, তবু সবকিছুর সমাপ্তি ঘটুক । আমি সবাইকে সবকিছু বলে দিব। এই সন্তান আমি রাখবো না!!
কথাটা বলার সাথে সাথেই সারাঘর কেঁপে উঠলো। আপু এত জোরে কথা বলছিল যে বাবা উঠে চলে এসেছে….
বাবাকে রুমে ঢুকতে দেখে সাথে সাথে আমরা দু’বোন ঢুকলাম।
কিজানি আবার কি থেকে কি হয়!!
কিন্তু রুমেতো বড় আপু ছাড়া কেউ নেই!! শুধু পেছনের জানালাটা খোলা, কদম গাছটা দেখে মনে হচ্ছে বাহিরে ঝর হচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব বাতাস বাহিরে।
বাবা- কি হয়েছে এত চেঁচামেচি করছ কেন!!
– কিছুনা বাবা যাও ঘুমাও।
— কোনো সমস্যা থাকলে বল আামায়।
– বললাম তো কিছুনা বাবা যাও ঘুমাও।
আমরা চলেই আসছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে আপু ডাকলো,
– বাবা?
— হ্যা মা বল?
– না থাক কাল সকালে বলবো। যাও ঘুমাও সবাই। আর তোরা দুজন প্লিজ অন্য রুমে ঘুমা।
আমি ঘর থেকে বেরিয়েই বাবা কে বললাম,
— বাবা অনেক দেরি হয়ে গেছে, কাল সকালেই কোনো বড় হুজুর কে খবর দিয়ে আনো। কোনো ডাক্তার আপুকে ভালো করতে পারবেনা।
আপু খুব কষ্ট পাচ্ছে বাবা। অনেক বড় কিছু ঘটেছে আপুর সাথে!!
বাবা আমার কথায় রাজি হলো। বললেন কাল সকালেই হুজুর আসবেন আজ রাতেই তাকে খবর দেবেন।
আমরা সবাই চলে এলাম ঠিকই, কিন্তু কাল সকালে আর বাবা কে কিছু বলা হলোনা বড় আপুর!
সকালে বুড়ী দাদীর চিতকারে সবার ঘুম ভাঙ্গলো!!
আর গিয়ে যা দেখেছিলাম তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না কেউই!!
বড় আপুর লাশটা কদম গাছের সাথে ঝুলছে!!!
জিহ্বা টা বের করা, নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। চোখ খোলা ছিলো তখনো। চোখ গুলো কি বড় বড় করে তাকিয়ে আছে যেনো খুব বিভৎস কিছু দেখেছে সে!!
পুলিশে খবর দেওয়ার পর তারাই লাশটা নামিয়েছিলো।
তার জামা কাপরের ভেতরে অনেকগুলো মরা টিকটিকি আর তেলাপোকা ছিলো।
এলাকার কেউ কবরস্থানে আপুর কবর দিতে দেয়নি, তাই বাধ্য হয়ে আপুকে বাড়ির পেছনেই একটা জায়গায় কবর দেয়া হয়।
কিজানি কি বলতে চেয়েছিলো আপু,
বললে হয়তো এটাও বলতো,
— সব কুসংস্কারই মিথ্যে নয়, কিছু সংস্কার ও আছে যা আধুনিকতার নামে আমরা কুসংস্কার বলে চালিয়ে দেই।
মাস খানেক পরেই আপুর কবরের মাঝখানে তরতর করে বেড়ে ওঠে এক কদম গাছ!!!!
সমাপ্ত……
প্রথম দিন যেদিন ও কাপর তুলতে গিয়ে জ্বীন-ভূত নিয়ে বাজে কথা বলে ছিলো সেদিন ই তাকে জ্বীনে বশিভূত করে নেয়। তার শরীর কে কাজে লাগিয়ে জ্বীন তার ভেতরে বাস করা শুরু করে এবং তার মাধ্যমেই পোকা মাকর খায়।
মেয়েটিকে সে তার বশিভূত করে তার দুনিয়ায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু মেয়েটি রাজি ছিলোনা এবং সবাইকে সব বলে দিতে চায় যার কারনে তাকে প্রানের মায়া ছাড়তে হয়।
আর মানুষ কে আল্লাহ তাআলা অনেক বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ যেমন ভালো বানিয়েছেন তেমনি খারাপ জিনিস ও পৃথিবীতে আছে। তাই আমাদের ই সব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এবং সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।