রুমে আবির নেই। বিছানার উপর কালো একটা বিড়াল বসে আছে। বুকের ভেতর ছেদ করে উঠলো। বাসার প্রতিটা জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজেও তার হুদিশ পেলো না। ভয়ে শরীর থরথর করে কাঁপছে। রুমি পুনরায় চুপিসারে বেলকনিতে গেলো। আড়চোখে বাহিরে তাকাতেই দেখে বিভৎস চেহারার সেই সোহেল নেই। একটু পর রুমের ভেতর থেকে আবিরের গলার আওয়াজ পেলো সে। দৌড়ে রুমে যেয়ে দেখে কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুমির শরীরটা তখনো থরথর করে কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
” কোথায় ছিলে তুমি? এই বৃষ্টির মাঝে বাহিরে বের হয়েছিলে?”
আবির তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বললো,
” আমি অনেকক্ষণ যাবত খেয়াল করছি তুমি বাহিরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো। ওই খানে একটা লোক দাঁড়ানো ছিলো। বিষয়টা অদ্ভুত লাগছিলো আমার কাছে। তাই বের হয়ে সামনাসামনি দেখার প্রবল ইচ্ছে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে পারেনি। কিন্তু আমি পৌছানোর আগেই সে চলে গেছে।”
” আমি কি বিষয়টা ওকে খুলে বলবো? যদি সে বিশ্বাস না করে?”
মনে মনে কথাগুলো বললো রুমি। শান্তশিষ্ট হয়ে বললো,
” তোমার সাথে আমি কিছু বিষয় শেয়ার করতে চাই।”
” হুম বলো।”
এমন সময় আবিরের ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে আননোন নাম্বার।
” হ্যালো কে বলছেন?”
” স্যার আমি অনলাইন শপ থেকে বলছিলাম। গতকাল আপনি আমাদের পেইজে পাঁচটি সিসি ক্যামেরা অর্ডার করেছিলেন। আপনার দেওয়া এড্রেসে অর্ডারকৃত পণ্য গুলো পাঠিয়ে দিয়েছি। কান্ডলি পণ্য গুলো রিসিভ করে আমাদের কনফার্ম করুন।”
” ধন্যবাদ আমি পরে আপনাদের জানাচ্ছি।”
” ওকে স্যার। ভালো থাকবেন।”
আবির ফোনটা কেটে টেবিলের উপর রাখলো। রুমি বললো,
” কার ফোন? পরে কি জানানোর কথা বললে?”
” অফিসিয়াল ফোন। আগামীকাল ক্লায়েন্ট আসবে অফিসে। আমি এটেন্ড করতে পারবো কি না সেটা জানতে চেয়েছে।”
” তোমার চোখ মুখ তো অন্য কথা বলছে।”
” মানে ঠিক বুঝলাম না।”
” থাক আর বুঝতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে নাও। ঠান্ডা লেগে যাবে।”
চুপচাপ সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রাতের বেলা সোফায় বসে টিভি দেখছে দুজন। তখন আবির বললো,
” রুমি তুমি কয়েকদিনের জন্য বাড়ি থেকে ঘুরে আসো। ভালো লাগবে তোমার। আমি তো শুধু ছুটির দিনগুলো ব্যাতীত তোমাকে সময় দিতে পারি না।”
রুমি ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
” আমি কখনো সে কথা বলেছি?”
আবির ওর হাতটা ধরে বললো,
” কয়েকদিন যাবত যতসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এ অবস্থায় বাসায় একা রেখে অফিসে থাকবো কি করে?”
রুমি চুপ হয়ে গেলো। বিড়বিড় করে বললো,
” আবির তো ঠিক কথায় বলেছে।”
আবির ওর চুপচাপ দেখে বললো,
” কি ভাবছো?”
” আমাকে সেফটির জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছো? তুমি কি করবে?”
নিস্তব্ধত হয়ে গেলো আবির। এর উত্তর তার জানা নেই। ভারী গলায় বললো,
” আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবো।”
” তুমি পারলে আমি কেনো পারবো না? দুজন এক সাথেই থাকবো।”
” আচ্ছা সে দেখা যাবে। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যাও।”
” তুমি ঘুমাবে না?”
” বার্সার খেলা শুরু হবে একটু পর।”
” তার মানে এখন তুমি খেলা দেখবে? কাল আবার অফিস আছে।
” বেশীক্ষণ দেখবো না।”
” ঠিক আছে। আমার ঘুম পাচ্ছে। তুমি বেশী রাত জেগো না কেমন।”
কথাগুলো বলে রুমি চলে গেলো। আবির মন মনে বললো,
“রুমি আমার সাথে কিছু লুকাচ্ছে। বাহির থেকে বাসায় আসার পর মনে হয় আমি ব্যতীত অন্য কেউ বাসার ভেতর প্রবেশ করে। সেদিন বেলকনিতে কারও পায়ের ছাপ। হাসপাতালে ওর বান্ধুবীর সাথে সোহেল নামে কোন ছেলেকে নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। জিজ্ঞার করার পর সে আমার থেকে লুকিয়েছে। সত্যি বলতে রুমিকে যথেষ্ট সন্দেহ করি।”
বিকেল বেলা কোরিয়ার সার্ভিস থেকে ক্যামেরা গুলো এনে লুকিয়ে রেখেছে আবির। রুমির অন্তরালে ব্লুটুথ ক্যামেরা গুলো সেট আপ করবে সে। ধীরে ধীরে তার কাজ শুরো করলো। রুম, বেলকনি, দরজা, কিচেন এবং মেইন গেইটে ক্যামেরাগুলো বসালো। ঘড়িতে তখন রাত বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট। কাঁধে কারও স্পর্শ পেয়ে থমকে যায় আবির। তাকিয়ে দেখে রুমি। সে বললো,
” এখনো ঘুমাও নি তুমি?”
” হঠাৎ সজাগ পেয়ে দেখি তুমি নেই। এত রাতে বেলকনিতে কি করছো?”
” একটু দাঁড়াও দমকা বাতাসে নিমিষেই শরীরটা শীতল করে দিবে।”
রুমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভারী গলায় বললো,
” আমার তো মনে হয় না তুমি শীতল অনুভব করার জন্য দাঁড়িয়ে আছো।”
” তাহলে কি মনে হয়?”
” সেটা তো জানলে বলেই দিতাম। আচ্ছা যাই হোক অনেক রাত হয়েছে। আসো ঘুমাবে এখন।”
অতঃপর রুমে গেলো দুজনে।
পরের দিন কনফারেন্স রুমে ক্লায়েন্টদের সাথে মিটিং করছে আবির। বেশ কয়েকবার ফোন আসলো রুমির। সে রিসিভ করলো না। মিটিং শেষে হঠাৎ রুমির কথা মনে হলো তার। ল্যাপটিপে সিসি টিভির ফুটেজ অন করতেই ঘাবড়ে গেলো আবির। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে রুমি। হাতে আপেল কাটার ছুটো চাকুটা। ডেক্সের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে ওর নাম্বারে ফোন দিলো। রিসিভ করে ওই পাশ থেকে বললো সে,
” আবির কোথায় তুমি? কতবার ফোন দিয়েছি।”
” তুমি ঠিক আছো তো?”
” আমার ভীষণ ভয় করছে। মনে হয় বাসার ভেতর সত্যি সত্যি কেউ প্রবেশ করেছে।”
কেঁদে কেঁদে বললো রুমি।
” রুমি প্লীজ মাথা ঠান্ডা করো। এক কাজ করো রুমের ভেতর দরজা অফ করে বসে থাকো। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় আসছি।”
” একটু জলদি আসো না। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
” রুমি শুধু শুধু ভয় পেয়ো না। এতে হীতের বিপরীত হবে।”
কথাগুলো বলে ফোন কেটে দিলো না।
” এই মুহূর্তে সিসিটিভির ফুটেজ চ্যাক করে সময় নষ্ট করা যাবে না। আগে ওর সেফটি। পরে বিষয়টা দেখা যাবে।”
মনে মনে কথাগুলো বললো আবির। তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে বের হলো। আধা ঘন্টার মাঝে বাসায় উপস্থিত হলো। ভেতর দিয়ে লক করা বারবার কলিং বেল চাপছে আবির। রুমির কোন সাড়া পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ওর নাম্বারে ফোন দিলো। সুইচজড অফ দেখাচ্ছে। বুকের ভেতরটা ধরফর করছে তার। পরোক্ষণেই মনে হলো দরজার এক্সট্রা চাবি তার মানিব্যাগে ছিলো। চট করে বাসার ভেতর ঢুকে রুমি রুমি বলে ডাকছে আবির। রুমের দরজাও লক। দরজায় টুকা দিয়ে বললো,
” রুমি তুমি শুনতে পাচ্ছো?”
আবিরের কন্ঠ শুনে জলদি করে দরজা খুললো রুমি। চুলগুলো এলোমেলো। চোখে ভয়ের স্পষ্ট ছাপ। থরথর করে কাঁপছে রুমি। তাকে দেখামাত্রই জড়িয়ে ধরে বললো,
” তোমার আসতে এতক্ষণ লাগলো কেনো? আর একটু দেরী হলেই সে আমাকে মেরে ফেলতো।”
আবির ওকে শক্ত করে ধরে বললো,
” কার কথা বলছো তুমি?”
রুমি কান্না স্বরে বললো,
” সে মেরে ফেলবে। আমি তাকে দেখেছি। কাচা মাংস চিবিয়ে খাচ্ছে। চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। আবির ও আমাকে বাঁচতে দিবে না। এখান থেকে আমাকে নিয়ে যাও।”
” শান্ত হও একটু। আমি আছি আর কোন ভয় নেই।”
দুজনে পাশাপাশি সোফায় বসে আছে। বাহিরে ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। আনমনা হয়ে বসে আছে রুমি। আবির ওর হাতটা ধরে বললো,
” কি হয়েছিলো তখন?”
রুমি ওর দিকে তাকিয়ে বললো,
” সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ রুমে অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ শুনতে পায়। জলদি করে রুমে যেয়ে দেখি উদ্ভুত ধরনের একটা ছায়া বিছানার উপর ডানা মেলে শুয়ে আছে। আমি ধীরে ধীরে বিছানার দিকে পা বাড়ালাম। ছায়াটাও স্লো মোশনে আফসা হয়ে যাচ্ছে। বিছানায় স্পর্শ করার সাথে সাথে ছায়াটা পুরো মিলিয়ে গেলো। একটু পরে সেইম ছায়াটা দেয়ালে দেখতে পেলাম। আমি বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কিসের ছায়া এটা। প্রথমে ভেবেছিলাম আমার ও হতে পারে। আমি পুনরায় দেয়ালের কাছে যেতেই ছায়াটা আস্তে আস্তে বেলকনির দিকে চলে গেলো। তখন ভীষণ ভয়ে পেয়ে যায়। তোমার নাম্বারে অনেকবার ফোন দিয়েছি। রিসিভ করো না।”
” তুমি জানো সব। আজ অফিসে ক্লায়েন্ট এসেছিলো। ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো। এরপর কি হয়েছে?”
” ভয়ে বেলকনি থেকে চলে আসি। তখন আবার ড্রয়িং রুমে সেই আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভয়ে থরথর করে কাঁপছি আমি। আড়চোখে ড্রয়িং রুমের দিকে তাকাতেই দেখি একটা লোক সোফায় বসে মাংস চিবোচ্ছে। মাংসে রক্ত মুখ বেয়ে নিচে পড়ছে।”
ওর কথা শোনে আবিরের চোখ কপালে উঠে গেলো। কি বলছে রুমি? ওর কি মাথা ঠিক আছে? নাকি অন্যকিছু। সিসিটিভির ফুটেজ চ্যাক করলেই বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে ওর কাছে কিছু বলা যাবে না। উল্টো আমাকে দোষারোপ করবে।
” রুমি তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো?”
” আবির আমি যা দেখেছি সেটাই বলেছি। আমার প্রতি তোমার কোন বিশ্বাস নেই?”
” সেটা বলিনি আসলে ঘটনাটা অপ্রত্যাশিত। বেশ খটকা লাগছে। আমি জানি কখনো তুমি মিথ্যা বলো না। একটা কুয়েশ্চন করি তোমাকে। একটু আগে বললে মাংসের রক্ত নিচে পড়ছে মানে ফ্লোরে তাই না?”
” আমি স্পষ্ট দেখেছি টুপটুপ করে রক্ত ঝরছে।”
” ঠিক আছে তোমার কথা মনে নিলাম। এখন এটা বলো আমি খুব ভালো করে চ্যাক করেছি কোথাও রক্তের ছিঁটেফোঁটা ও নেই।”
এতক্ষণ রুমির হুশ আসলো। সে আবিরকে হাতের ইশারায় বললো,
” এই যে এই জায়গায় সেই লোকটা বসে মাংস খাচ্ছিলো।”
” সেই লোকটা কে সোহেল?”
ওর মুখে সোহেলের নাম শোনে চমকে উঠে রুমি। মাথার ভেতরের মগজটা নড়ে উঠে তার। আমতা আমতা করে বললো,
” কি বললে তুমি?”
আবির মুচকি হেসে বললো,
” কই কিছু বলি নি তো।”
সে উচ্চস্বরে বললো,
” আবির তুমি কিছু একটা বলেছো। আর একবার রিপিট করো।”
” ওভার রিয়েক্ট করছো কেনো? মনে হয় মিথ্যা কিছু বলেছি আমি।”
” তুমি সোহেল এর ব্যাপারে কি ভাবে জানো?”
” আমার ওয়াইফের এক্স বয়ফ্রেন্ড ছিলো সে। আর এটা আমি জানবো না? যদি ও তোমাকে অনেক বেশী বিশ্বাস করি। তারপর ও আমার থেকে লুকিয়েছো।”
রুমি ভারী গলায় বললো,
” স্যরি আবির। তুমি যেমনটা ভাবছো আসলে তেমনটা না। ওর সাথে জাস্ট ফ্রেন্ডশিপ ছিলো। এর থেকে বেশী কিছু না।”
আবির হেসে হেসে বললো,
” তুমি হয়তো এখনো আমাকে বিশ্বাস করতে পারো নি। পারলে একের পর এক মিথ্যা কথা বলতে পারতে না। তোমার আর কিছু লুকানোর নেই। তোমার বান্ধবীর থেকে সব কিছু জানতে পেরেছি।”
” কে সুমি?”
” যেই হোক না কেনো তোমার জানার প্রয়োজন নেই। তবে এটা আশা করিনি আমি। এনিওয়ে তোমার প্রতি বিশ্বাস আছে সারাজীবন থাকবে।”
রুমির চোখে জল টলমল করছে। আবিরের কাছে সে মিথ্যাবাদী প্রমানিত হলো। আবির বললো,
” এত টেনশন করার কিছু নেই। সবার জীবনেই অতীত নামক সময়টা থাকে। একসময় বাস্তবতার কাছে গুলাটে হয়ে যায়।”
রুমি আবিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
” আবির প্লীজ আমাকে মাফ করে দাও। ভেবেছি তোমাকে সবটা বলার পর যদি আমার থেকে দূরে সরে যাও। সেই ভয়ে এতদিন কিছু বলি নি। বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
আবির মাথায় হাত দিয়ে বললো,
” বোকা মেয়ে। কাঁদছো কেনো বললাম তো আমি কিছুই ভাবি নি। সব কিছু নরমাল ভাবেই নিয়েছি।
রাতের বেলা ঘুমে আচ্ছন্ন রুমি। আবির ধীরে ধীরে সিসিটিভির ভিডিও অন করলো। ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো সে। প্রথম ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে রুমি সোফায় বসে টিভি দেখছে। এমন সময় হাতে থাকা রিমোট কন্ট্রোল ফ্লোরে পড়ে যায়। চমকে উঠে রুমি। এরপর সে রুমে প্রবেশ করে। রুমের ভেতর ক্যামেরায় ধরা পড়ে দরজা অফ করে সে রুমের লাইট অন করে। বাকীটা ওর বিবরণ অনুযায়ী ঘটে। কিন্তু এখানে অদ্ভুত কিছু দেখলো না সে। বেলকনি থেকে আসার সময় তার শাড়ীর আচল দিয়ে ফুলের টব পড়ে যায়। পুনরায় চমকে যায় সে। দূর থেকে ড্রয়িং রুমের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আবির তখন ড্রয়িং রুমের সিসি ফুটেজ চ্যাক করে দেখলো ড্রয়িংরুমে কারও কোন উপস্থিত নেই। কিন্তু ওর দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী টিভিতে একটা হরর এপিসোড হচ্ছে। যেখানে একজন লোক মৃত মানুষের মাংস খাচ্ছে। এটা দেখেই সে ভয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে। আবিরের এর আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে একটা বিষয় বারবার মনে হচ্ছে রুমি কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত নয় তো?
পরেরদিন একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর শরণাপন্ন হলো আবির। এই বিষয়ে রুমিকে এখনো কিছু জানায় নি। সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে সব কিছু তুলে ধরলো আবির। এরপর সাইকিয়াট্রিস্ট বললো,
” আপনি ঠিক ধরতে পেরেছেন। বাস্তবে ভূত বা প্রেতাত্মার কোন অস্তিত্ব নেই। আপনার ওয়াইফ ম্যান্টালি ডিপ্রেশনে ভুগছে। সে তার বন্ধুর মৃত্যুটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেনি। সব সময় নিজে গিল্টি ফীল করতো। ওর মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করতো। আপনার ওয়াইফ হরর কোন মুভি দেখে?”
” জ্বি স্যার প্রায় সময় সে হরর মুভি দেখে। ইদানীং একটু কম দেখে।”
” হরর মুভিতে ভূত আর আত্মার উপস্থিত অনেক বেশী। এমন কোন এপিসোড সে দেখেছে যেটা অনেকাংশেই তার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। সময় করে আপনার ওয়াইফকে একদিন নিয়ে আসুন। কাউন্সিলিং করলে বিষয়টা তার বোধ গম্য হবে। সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি তাকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরে আসতে পারেন। তার মাইন্ডসেট চ্যাঞ্জ করা বলতে পারেন একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। হরর মুভি যেনো না দেখে বিষটা মাথায় রাখবেন। কিছুদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ওয়াইফকে একটু সময় দিন। আশা করি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। অন্যথায় আশংকাজনক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এসব ম্যান্টালি ডিজঅর্ডারে ইনফেকটেড মানুষজন সুইসাইড করতেও ভাবে না। একটু সাবধানে থাকবেন।”
” ধন্যবাদ স্যার। আমি খুব শীঘ্রই ওকে নিয়ে আপনার কাছে আসবো।”
বাসায় এসে দেখে টিভির দিকে মগ্ন হয়ে বসে আছে রুমি। হরর এপিসোড হচ্ছে। আবির টিভিটা অফ করে বললো,
” জামাইটা যে বাসায় সে দিকে কোন খেয়াল নেই?”
রুমি মুখ বাকিয়ে বললো,
” বাসায় থাকতে কে বলছে? টিভির সুইচটা দাও আজ এই সিরিজের লাস্ট এপিসোড। জানো এই এপিসোডের মেয়েটা বড্ড বোকা। তা না হলে মনের ভয়ে কেউ সুইসাইড করে।”
ওর মুখে এমন কথা শোনে শিউরে উঠলো আবির। স্বাভাবিক হয়ে বললো,
” রেডী হও আজ তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।”
রুমি এক লাফে সোফা থেকে উঠে বললো,
” সত্যি শপিং এ যাবে?”
” এমন ভাবে বললে মনে হয় কখনো যায় নি শপিং এ।”
” আমি কখন বললাম যাও নি? তবে সেটা অনেক আগে। ইদানীং তো খুব ব্যস্ত থাকো।”
আবির ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
” আজকে থেকে আর থাকবো না। এভরি ফ্রাইডে তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো। সারাদিন ঘুরাঘুরি করবো। বাহিরে ডিনার করবো। কিন্তু একটা শর্ত আছে।”
সে মুখটা কালো করে বললো,
” কি শর্ত?”
” আজ থেকে হরর এপিসোড দেখা বন্ধ। প্রমিজ করো।”
” শপিং এর সাথে হরর এপিসোড দেখার সম্পর্ক কি?”
” বাস্তবে যার কোন অস্তিত্ব নেই সেগুলো দেখে শুধু শুধু ভয় পাওয়ার কোন মানেই হয় না।”
” তোমার কথায় যুক্তি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে আর কখনোও হরোর মুভি দেখবো না।”
আবির কপালে চুমো দিয়ে বললো,
” আমার লক্ষী বউ।”
সেদিনের পর থেকে ওর প্রতি দায়িত্ব বেড়ে যায় আবিরের।