মধ্যরাতের আতঙ্ক

কোনো বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে থাকলে নাকি সেখানে খারাপ কিছু এসে থাকা আরম্ভ করে। আজকাল এসব বিশ্বাস করা হয় না। আমিও এসব বিশ্বাস করতাম না, যদি অফিসের কাছাকাছি হওয়ায় সেই পরিত্যক্ত বাড়ির পাশের ছাপড়া ঘরটা আমাকে ভাড়া নিতে না হতো। ঘরটা বেশ পছন্দ হয়েছিল স্বল্প বসতির এলাকায় হওয়ার জন্য। ঘরে ওঠার কয়েক দিনের ভেতরেই সব গোছগাছ করে নিলাম। একা থাকি, নির্ঝঞ্ঝাট সব কিছু। সপ্তাহ খানিক স্বাভাবিক ভাবেই কাটলো। এরপর এক রাতে রোজকার মতো অফিস থেকে ফিরে সব কাজ শেষ করে দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাতে হঠাৎ জানলায় টোকা পড়ার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল।
ঘড়িতে দেখলাম রাত ১২ টা ২৬। ঘরের একমাত্র জানলাটা আমার খাটের সঙ্গে প্রায় লাগোয়া, ঘরের দরজার মুখোমুখি উল্টো পাশে। কে ডাকছে ঘরের পেছন থেকে! যদ্দুর দেখেছি জানলার ওপাশে মানুষহীন পরিত্যক্ত বাড়িটা ছাড়া আর কোনো ঘর নেই। বিরক্তি নিয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে রইলাম। টোকার শব্দ বদলে এবার কারো জোরে জোরে থাপড়ানোর কারণে জানলাটা ঝনঝন করে কেঁপে উঠল। অতি প্রয়োজনের তাগিদে কেউ যেন জানলা খোলার আহ্বান করছে। আচমকা অপ্রত্যাশিত এই ঝনঝন শব্দে বুকটা কেঁপে উঠল। ওপাশে যেই থাকুক বেশ অধৈর্য। ক্রমাগত ঝনঝন করে কেঁপেই চলেছে জানলাটা। জানলা খোলার আগে আমি গলার আওয়াজ কিছুটা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কে ভাই?’ সঙ্গে সঙ্গে জানলার কম্পন থেমে গেল। কয়েক মুহূর্ত কেটে গেল। কোনো সাড়া-শব্দও নেই। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী চাই?’ আমি জানলা খুলবো কি খুলবো না ভাবছি এমন সময় আমার বুক কাঁপিয়ে দিয়ে আবার ঝনঝন করে কাঁপতে লাগলো জানলাটা। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এমন করে এত রাতে কেউ ডাকবে না! আমি বিছানা থেকেই জানলার তিনটা পার্টের মাঝখানেরটা ধীরে ধীরে খুলে দিলাম। উৎসুক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকালাম।
কিন্তু কেউ নেই জানলার সামনে। আশ্চর্য্য! এর অর্থ কী! বালিশের পাশ থেকে টর্চটা তুলে হাত বাইরে বের করে আলো এদিক সেদিক ঘুরলাম। কেউ নেই! জানলাটা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম। দশ মিনিট কেটেছে বোধ হয় চোখ পুরোপুরি লাগেনি। আবার জানলায় টোকার আওয়াজ পড়লো, পরের মুহূর্তেই ঝনঝন করে কাঁপতে লাগলো ওটা। এবার প্রচণ্ড রাগ হলো। জানলা খুলে বাইরে তাকালাম। সেই একই অবস্থা। কেউ নেই। এবার বিরক্তির পাশাপাশি রাগও অনুভব করলাম। এত রাতে কেউ রসিকতা করছে আমার সাথে! টর্চ হাতে নিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। মৃদু চাঁদের আলো, উঠানের বাল্বের আলোতে ফকফকা হয়ে আছে চারপাশ। এই ছাপড়া ঘরের উল্টোমুখে বাড়িওয়ালাদের থাকার ঘর। ওদের ঘরের সব বাতি বন্ধ। শুনশান একটা ভাব। আশেপাশের সব বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। সামনে একটা লাঠি পড়ে থাকতে দেখে কী মনে করে তা হাতে নিয়ে ঘরের পেছনে চলে এলাম। উৎসুক ভাবে এদিক-সেদিক আলো ফেলে খুঁজে দেখলাম, কিন্তু কারও অস্তিত্বই পেলাম না।
বিরক্তি নিয়ে ঘরে ফিরে আসবো, হঠাৎ খেয়াল করলাম ওদিকের পরিত্যক্ত দু-চালা বাড়িটার বারান্দার লাগোয়া ঘরটায় বাতি জ্বলছে। কিছুটা অবাক হলাম। কারণ যতটুকু জানি এই বাড়িটা দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। তাছাড়া এতক্ষণের ভেতর কয়েকবার বাড়িটার দিকে চোখ পড়েছিল আমার। কিন্তু আলোটা আমার চোখে পড়েনি। আমার ঘরের জানলা দিয়ে তাকালেও পুরো বাড়িটা দেখা যায়। তখন জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়েও আলোটা দেখিনি। বাড়িতে কেউ উঠেছে বোধ হয়! টর্চের আলো গেটের উপর ফেলতেই অবাক হলাম। সেই আগেকার মতোই বড় পিতলের তালাটা লাগানো আছে ছিটকিনিতে বাইরে থেকে। ওই রুমে তালা না খুলে কেউ ঢুকতে পারবে না। কেমন একটা সন্দেহ হলো।
আমি সন্তর্পণে বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেলাম। বারান্দার ঘরটার একটা কাঠের জানলা বাইরের দেয়ালের দিকে। ওটায় ধাক্কা দিয়ে জানতে চাইলাম, ‘কে ভেতরে?’ কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম ভেতরে কারও নড়াচড়ার শব্দ শুনে। খানিক পরেই খটখট আওয়াজ করে ওটা খুলে গেল। একটা মেয়ে উৎসুক মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার উৎসুক চাহুনিতে কেমন অভিভূত হয়ে পড়লাম আমি। কম্পিত কণ্ঠে বললাম, ‘ইয়ে মানে এই বাড়িতে কেউ থাকে বলে জানতাম না, আলো জ্বলছে দেখে অবাক হয়ে এখানে এলাম।’
মেয়েটা হাসিমুখে বলল, ‘আজই আমরা এলাম! কিছুক্ষণ আগে।’
‘কিন্তু গেট বাইরে থেকে তালা দেয়া যে!’
‘কই?’
আমি ঘুরে বাড়ির গেটের দিকে আলো ফেলেই বিস্মিত হলাম। একটু আগেও দেখলাম বাইরে থেকে তালা দেয়া কিন্তু এখন তালার কোনো চিহ্ন নেই। গেটটা সামান্য ফাক হয়েও আছে। মেয়েটার মুখ এখনো হাসি হাসি। বলল, ‘এর আগের বার যখন এসেছিলাম আপনাকে তো দেখিনি! নতুন প্রতিবেশী নাকি আপনি!’
‘ইয়ে মানে ওই ঘরটায় এক সপ্তাহ হবে উঠেছি। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কত রাত!’ অপ্রস্তুত ভাবে জবাব দিলাম।
‘জানলায় কারো ধাক্কার আওয়াজ পেয়ে বেরিয়েছিলেন বোধ হয়!’
আমি সামান্য মানসিক ধাক্কা খেলাম। ‘আপনি জানলেন কী করে?’
‘আমিও যে ঝনঝন শব্দ শুনে জানলা খুলে বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। আপনার জানলার পাশে একটা অদ্ভুত ছায়ার মতো কালো কিছু দেখে ভয় পেয়ে আবার জানলাটা বন্ধ করে দিয়েছি। তারপর আপনি এলেন!’
অদ্ভুত এক ভয়ের শিহরণ অনুভব করলাম আমি। মেয়েটা বলল, ‘এসেছেন যখন ভালোই করেছেন, একটা উপকার করে দিয়ে যান। ভেতরে আসুন।’
এই বলে জানলাটা বন্ধ করে দিল খট করে। পরমুহূর্তেই বারান্দার বাতি জ্বলে উঠল। গেটটার অর্ধেক নিশ্ছিদ্র লোহা আর বাকি অংশ গ্রিলের হওয়ায় বারান্দার আলো গেট বেদ করে বাইরে আসছিল। আমি হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এরপর প্রবেশ করলাম ভেতরে।
পরিত্যাক্ত বাড়ি বলতে এটা খুব সাদা-মাটা একটা দু-চালা বাড়ি। দুটো বেডরুম পাশাপাশি। রুম থেকে বের হলেই ডান পাশে বাথরুম ঘর এবং বাম পাশে আরেকটা ছোট ঘর। যেই ঘরের জানলা খুলে মেয়েটা আমাকে আহ্বান করলো।
বারান্দার ঘরটিতে উকি মেরে দেখলাম মেয়েটি নেই। আশ্চর্য্য! ডান পাশের বেডরুমের ভেতর থেকে ডাক এলো মেয়েটির মিষ্টি কন্ঠ থেকে, ‘ভেতরে আসুন!’ আমি কিছুটা সংকোচ নিয়ে দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। ঘরের বাল্ব বন্ধ। টর্চের আলোতে ঘরটা ভরে উঠল। আমার থেকে কয়েক হাত দূরেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা এগিয়ে এসে একটা চেয়ার ইঙ্গিত করে দেখিয়ে আমার হাতে একটা বাল্ব ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা একটু লাগিয়ে দিন না! এটার জন্যে খুবই জ্বালাতনে পড়েছি। পুরো বাড়িতে কোনো টর্চ নেই।’ একুশ বাইশ বছরের একটা মেয়ে। শাড়ি কাপড়ে কেমন অপ্সরার মতো লাগছে তাকে। বুকের ধুকপুকানি সামান্য বেড়ে গেল।
আমি চেয়ারে উঠে বাল্বটা লাগানোর চেষ্টা করলাম। বেশ উপরে হুক হওয়াতে সামান্য বেগ পেতে হলো।কাজটা করতে করতে কৌতূহলতা থেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি কী একা এসেছেন?’ এবার আমার পুরো শরীর জমিয়ে দিয়ে একটা পুরুষালি গলা ঘর ভরে গমগম করে উঠল, ‘আমরা একা কোথাও যাই না! তোরও একা অপরিচিত ঘরে ঢোকা উচিত হয়নি!’ আমার হাত থেকে বাল্ব আর টর্চ দুটোই ছুটে পড়ে গেল। আতঙ্কে শিউরে ওঠে নিচে তাকালাম। টর্চটা বন্ধ হয়ে পুরো ঘর তিমিরে ডুবে গেল। তখনই মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকে জ্বলজ্বলে আগুনের শিখার মতো দুটো চোখ জ্বলে উঠল। সেই শিখার আলোতে যেই মুখটা দেখলাম এটা কোনো মানুষের মুখ হতে পারে না! ওটার কোনো নাক কিংবা মুখ নেই! গোল মুখটার মাঝামাঝি ফুঁড়ে বেরিয়ে আছে দুটো আগুনের শিখার চোখ। গলার সামান্য নিচে একটা ফাক। মনে হলো ওটাই ওর মুখ। চিৎকার করার জন্য আমার সমস্ত শরীর আন্দোলন করে উঠল।
চিৎকার করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু গলা দিয়ে টু শব্দটি বের হলো না। উল্টো পা ফসকে চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে গেলাম উপুড় হয়ে। অল্পের জন্য মাথাটা মেঝেতে ঠুকতে ঠুকতে ঠুকলো না। আমি ঘুরে মেয়েটার দিকে তাকালাম। ওটার চোখ থেকে বিচ্ছুরিত আলোই ওটার অবয়ব মেলে ধরলো আমার চোখের সামনে।
ওটার লোমশ সারা শরীর গিজগিজ করছে অদ্ভুত এক সাদা পোকায়। অনেকটা কেঁচোর মতো দেখতে ওগুলো। ওটা এগিয়ে আসছে আমার দিকে। ভয়ে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে, ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে বুঝলাম দুটো পা ই বেশ ভালো রকম মুচড়ে গেছে। পালানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু কী এটা! ভ্রম!
এবার নিজের সর্ব শক্তি ব্যয় করে একটা চিৎকার করলাম। নিজের মুখ থেকে বের হওয়া বিকট চিৎকার পুরো ঘরময় এমন ভাবে ভারী খেয়ে কেঁপে উঠল যে নিজেই চমকে উঠলাম। মেয়েটার হাত থেকে বাল্বটা নেয়ার আগে হাতে করে আনা লাঠিটা মেঝেতে ফেলে ছিলাম। অন্ধকার হাতড়ে ওটার নাগাল পেলাম। অদ্ভুত প্রাণীটার শরীর ঝুঁকতে লাগলো আমার দিকে। লোমশ শরীরের আড়াল থেকে ওর দুটো স্তন উন্মুক্ত হয়ে গেল আমার সামনে। লাঠিটা সজোরে এগিয়ে এনে আঘাত করলাম ওটার বুক বরাবর। ওটা অশরীরী নয়! সামান্য আর্তনাদ তুলে পিছিয়ে যেতে লাগলো ওটা পেছনে। আমি আবার চিৎকার করলাম। শরীরে সামান্য যে শক্তি ছিল তার সাথে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে হাতের উপর ভর দিয়ে মেঝে টেনে টেনে শরীরটাকে বারান্দায় এনে হাজির করলাম। বারান্দার বাল্বটাও বন্ধ হয়ে আছে। কয়েকজন মানুষের ছুটে আসার আওয়াজ পেলাম। আমার চিৎকার কাজে লেগেছে।আমার বাড়িওয়ালা সহ আশেপাশের অনেকেই গেটের সামনে থমকে দাঁড়ালো। একসাথে কয়েকটা টর্চের আলো আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিল।
কিন্তু তারা কেউ ভেতরে আসতে পারলো না। কারণ গেটটা বাইরে থেকে তালা দেয়া। তারা বিস্মিত হয়ে বাইরে থেকে চেচাতে লাগলো, জানতে চাইলো কী করে আমি ভেতরে ঢুকলাম তালা না খুলে! আমাকে এমন কাহিল অবস্থায় দেখে তারাও ঘাবড়ে গেছে। অবশ্য তারা বেশিক্ষণ লাগালো না তালাটি ভেঙে আমাকে উদ্বার করতে। কোনো জবাব দেয়ার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না।চোখ দুটো বন্ধ করলাম। এক মৃত্যু আতঙ্ক আমার শরীরটাকে পুরোপুরি অবশ করে ফেলেছিল।
পা দুটো ভালো হতে প্রায় মাস পেরিয়ে গেল। আমি অবশ্য ঘটনার পর দিনই সেই ঘর, এলাকা ছেড়ে ভয়েই এক প্রকার পালিয়েই এসেছিলাম। সেই বীভৎস ভয়ঙ্কর চেহারা আর শরীরটা বা রাতের কথা যখনই মনে উদয় হতো আমার শরীরটা কেঁপে উঠত। কত রাতে দুঃস্বপ্নে এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিল ওই প্রাণীটা আমার! এরপর থেকে এই পর্যন্ত অন্ধকার ভীতি দূর করতে পারিনি আমি। এখনো আলো জ্বেলে ঘুমাতে হয় আমাকে।
যেই লোকগুলো সেরাতে আমাকে উদ্ধার করেছিল তাদেরকে আমার কাহিনী বললে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেনি তখন। আবার আমিও যে কিভাবে বাড়িতে ঢুকেছিলাম সেই কিনারাও করতে পারেনি। অনেক বছর পর যখন সেই এলাকায় আবার ফিরে গিয়েছিলাম তখন জানতে পারি আমি চলে যাওয়ার পর থেকে ওই বাড়িটার উত্তরাধিকারীরা ওখানে ফিরে এসে পরিত্যক্ত বাড়িটা ভেঙে বহুতল বিল্ডিং করার আগ পর্যন্ত সেই বাড়ির আশেপাশের অনেক ঘরের লোকেরাই মাঝরাতে জানলায় টোকা, ধাক্কানোর আওয়াজ পেয়েছিল, কেউ কেউ মধ্যরাতে সেই পরিত্যক্ত বাড়ির ঘরে আলো জ্বালা অবস্থাতেও দেখেছে। কয়েকজন একটি রূপসী মেয়ের অবয়বও দেখেছিল খোলা জানালা দিয়ে। আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা জেনে অনেকেই পুর্ব থেকে সতর্ক থাকায় বিপদে পড়েনি যদিও।
অবশ্য আমি যা দেখেছিলাম সেরাতে, সেই দৃশ্যটা তারা কেউ দেখেনি। আমি চাইওনা ওটা আর কেউ দেখুক। চাই না, কারও ঘরের জানলায় মধ্যরাতে পড়ুক অচেনা জগতের কারও টোকা!

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প