উলঙ্গ_মন পর্ব – ১

আচ্ছা বাবা, তোমরা যেইটা দিয়ে পিশাব করো, ঐটা মুখে নিলে কী হয়?
.
নিজের ৬ বছর বয়সের বাচ্চা মেয়েটার মুখে এই প্রশ্নটা শুনে আরিফ পুরো থতমত খেয়ে গেল। রিতু এতক্ষন ধরে চিপস খাচ্ছিল আর টিভিতে কার্টুন দেখছিল। হঠাৎই টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করে সে। প্রশ্নটা করেই সে আবার কার্টুন দেখায় মনোযোগী হয়ে পড়ে। আরিফ আম খাচ্ছিল। আরিফের হাত থেকে আমের প্লেট টা ধমাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। তার স্ত্রী শান্তা রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে জানতে চায়, কী হয়েছে? আরিফ আমতা আমতা করে বলে, কিছু না। হাত থেকে ছুটে পড়ে গেছে। শান্তা মেঝে পরিস্কার করে চলে যায়। আরিফের চোখে-মুখে তখনও ভয়, বিস্ময় আর কৌতূহল। এইটা কী ধরনের প্রশ্ন? রিতুর মাথায় এই প্রশ্ন এল কীভাবে? রিতুর যেন প্রশ্নের উত্তর শোনার ভ্রূক্ষেপ নেই। সে স্বাভাবিক ভাবেই টিভি দেখছে।
.
.
মেয়েটার সাথে এই প্রসঙ্গে আর কিছু বলার সাহস হয় না আরিফের । দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে বাসায় এসেছিল সে। দ্রুতই আবার চলে যেতে হলো তাকে অফিসে। কিন্তু অফিসের কাজে কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারে না সে। কয়েকজন কলিগ তার অন্যমনস্ক ভাব ধরতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করে, কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি? সে মৃদু হেসে কাঁধ ঘুরিয়ে জানায়, তার কোনো সমস্যা নেই। অন্যদিনের মতো অফিস ছুটি হওয়ার সাথে সাথে বাড়িতে যায় না আরিফ । কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে বাড়িতে যাওয়ার উল্টো পথ ধরে একা একা হাঁটতে থাকে। তার মেয়ের বলা সেই এক লাইন প্রশ্নের তাৎপর্য সে কিছুতেই বের করতে পারছে না। মেয়েটার বয়স সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়ে পড়েছে। এই বছরের শুরুতেই তাকে এলাকার একটা স্কুলের শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়েছে। এতটুকু একটা বাচ্চা মেয়ের মাথায় এই ধরনের একটা উদ্ভট প্রশ্ন কী করে আসতে পারে তা কিছুতেই মাথায় আসে না আরিফের। এই ধরনের কিছু সামনাসামনি না দেখলে এমন একটা প্রশ্ন মেয়েটার মাথায় আসার কথা না। কিন্তু আরিফ ভাবে, রিতু যখন একটু একটু সব কিছু বুঝতে শুরু করেছে তখন থেকে রিতুর সামনে কখনই সহবাস করে নি তারা। আর তাদের সহবাসে অতিরিক্ত এই নোংরামি গুলো কখনই ছিল না, যেমনটা রিতুর মনে প্রশ্ন জেগেছে।
.
আরিফ বুঝেছিল, বিষয়টা মোটেও হালকে নয়। তাই বিষয়টাকে সে হালকা ভাবে উড়িয়ে দেয় নি। অনেকক্ষণ ধরে এই বিষয়টা নিয়ে একা একাই চিন্তা করে যায় সে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় এই বিষয়ে খোলাখুলি তার মেয়ের সঙ্গেই কথা বলবেন তিনি। একটা ছয় বছরের বাচ্চা শিশুকে আমরা যতটা অবুঝ ভাবি তারা মোটেও ততটা অবুঝ হয় না। এই বয়সে অনেকেরই মানসিক বিকাশ অনেক ভালো হয়। আমরা যতটা ভাবি তারা তার চেয়ে অনেক বেশিই বুঝতে পারে। হয়তো তা তাদের মনের ভেতরেই আবদ্ধ করে রাখে। তাই আমরা ভাবি তারা অবুঝ।
.
.
আরিফ যতক্ষণে বাড়িতে ফিরে আসে ততক্ষণে রিতু ঘুমিয়ে গেছে। রাতে একই বিছানায় আরিফ , রিতু আর শান্তা ঘুমায়। রিতু মাঝখানে আর আরিফ এবং শান্তা তার দুইপাশে। ঘরে ডিম লাইট জ্বলছে। সেই আলোতেই আরিফের চোখ হঠাৎ করে শান্তার মুখের ওপর আটকে যায়। কোনো এক অজানা কারণে তার বুকটা ধ্বক করে উঠে। একটা অজানা ভয় আরিফের মনে বাসা বাঁধে। সে শান্তাকে নিজের চাইতেও বেশি বিশ্বাস করে। শান্তা কী কোনোভাবে তাকে ধোকা দিচ্ছে? তার অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে? রিতু মেয়েটা তো এর বাইরে আর কারও সাথে মিশে না! তার মনে এই উদ্ভট প্রশ্ন জাগার কারণ কী প্রত্যক্ষ ভাবে শান্তাই? হয়তো শান্তা কে এমন কিছু করতে দেখেছে রিতু, তাই তার মাথায় এই প্রশ্নটা এসেছে। শান্তা কী পরক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত! কিন্তু সে এমনটা কেন করবে? আরিফের মাথায় একের পর এক এমন উদ্ভট সব প্রশ্ন এসে তার মাথার ভেতর ভয়ংকর রকম জটলা বাঁধতে থাকে। অসংখ্য অজানা , অচেনা ভয়, সন্দেহ তার মনে চেপে বসে।
.
সকাল হতেই আরিফ বাড়ি থেকে রাস্তায় বেড়োয় একটু হাঁটাহাঁটি করতে। তার বাড়ির গেট বরাবর রাস্তার ওপাশেই একটা মুদির দোকান। মুদি পণ্যের পাশাপাশি চাও বিক্রি হয় এখানে। দোকানে বসে চা খেতে খেতে কথা প্রসঙ্গে আরিফ দোকানদারের কাছে জানতে চায় , সে এই বাড়িতে অচেনা কাউকে ঢুকতে দেখে কি না দিনের বেলায়। দোকানদার কিছুক্ষণ ভেবে বলে, সেদিকে তেমন খেয়াল করে না সে। তবে কয়েকদিন একটা কমবয়সী ছেলেকে বাড়ি থেকে বের হতে দেখেছে সে। কথাটা শুনে আবার আরিফের বুকটা ধ্বক করে উঠে!
সে রাস্তায় বেশিক্ষণ না থেকে আবার বাড়িতে ফিরে যায়।
.
ফোন বন্ধ করে রেখেছে আরিফ । আজ সে অফিসে যাবে না। শান্তা অবাক হয়ে অফিস কামাই দেওয়ার কারণ জানতে চাইল তার কাছে। আরিফ বলল, এমনি টানা অফিস করতে ভালো লাগছে না। তাই অফিসে বলে একদিন ছুটি নিয়েছে। সকালে নাস্তা করার পর অন্যদিন শান্তা রিতুকে স্কুলে দিয়ে যায়। আজ যেহেতু আরিফ বাসায় তাই আরিফ গেল।
.
রিতু স্কুলের পোশাক পরে তৈরি হয়ে বাবার হাত ধরে বাড়ির বাহিরে বেরিয়ে এল। শান্তা গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতরে যেতেই আরিফ রিতুকে নিয়ে স্কুলের পথের উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল। রিতু কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল, বাবা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? আরিফ মিষ্টি করে হেসে বলে, আমরা আজ সারাদিন অনেক ঘুরবো, আর মজা করবো। আজ তোমার স্কুল কামাই। রিতু আনন্দে চেঁচিয়ে উঠল। সত্যি সত্যিই আরিফ রিতুকে নিয়ে প্রায় ঘন্টা খানেক অনেক জায়গায় ঘুরলো। ওকে আইসক্রিম, চকোলেট কিনে দিল। তারপর কাছেরই একটা পার্কে ঢুকল তারা। পার্কের একটা বেঞ্চিতে দুজনেই গিয়ে বসে।
.
প্রচন্ড উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনায় আরিফের শরীর কাঁপছে। রিতু এক মনে আইসক্রিম খাচ্ছে, আর মুগ্ধ হয়ে চারপাশের মানুষ জন দেখছে। একসময় আরিফ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে মেয়েকে প্রশ্ন করলঃ
—– আচ্ছা মা’মনি একটা কথা বলতো, যখন আমি অফিসে থাকি তখন কী এই বাড়িতে তোমার আম্মুর সাথে দেখা করতে কেউ আসে?
— [হা করে কিছুক্ষণ ভেবে] কে আসবে বাবা?
——- [মৃদু হেসে] কেউ না, কেউ না, মা!
— ও হ্যা, মাঝেমধ্যে নয়ন ভাইয়া আসে।
কথাটা শুনে যেন, আরিফের বুকের ওপর থেকে একটা বড় পাথর সরে গেল। তাহলে মুদি দোকানদার নয়নের কথা বলেছিল! নয়ন হলো ওর বড় বোনের একমাত্র ছেলে। এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে। মনিকার সাথে তাঁর ভারি ভাব।
নয়নরা থাকে এই এলাকার পাশের এলাকাতেই। আরিফের কাজের চাপে ওই বাড়িতে অনেক দিনই যাওয়া হয়নি। তবে নয়ন, তাঁর মামার বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসে এটাতে ওর অবাক হওয়ার কিছু নেই!
এবার আরিফ, মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বল্লঃ
—— আচ্ছা মা, তুমি সেদিন ঐরকম একটা প্রশ্ন আমায় কেন করেছিলে?
— [কৌতূহলী হয়ে] কোনদিন? কী প্রশ্ন বাবা?
—— [কাঁপা কণ্ঠে] ঐযে বলেছিলে, আমরা যেটা দিয়ে হিসু করি, সেইটা মুখে নিয়ে কী করে?
-মন দিয়ে পড়ুন,
-পরের পর্ব পেতে রিকু বা ফলো করব রাখুন তাহলে ছাড়া মাত্রই নোটিফিকেশন পাবেন,আর হ্যা রিকু দিয়ে নক দিবেন,টাইমলাইনে পেজ শেয়ার করা আছে পেজে সব পর্ব আছ!-ধন্যবাদ)
প্রশ্নটা শুনেই রিতু হাসতে শুরু করে। ও বুঝতে পারে কথাটা রিতুর কাছে মজার ঠেকেছে, তাই তাঁর হাসি।
আরিফ আবার আদুরে স্বরে বলেঃ
——- তুমি কী কখনো তোমার আম্মু বা অন্য কাউকে অমন করতে দেখেছ?
— [না সূচক মাথা নাড়ে]
——- তাহলে ওমন একটা প্রশ্ন তোমার মাথায় এলো কী করে? কখনো কী তোমাকে কেউ ওমন করতে বলেছে?
কথাটা শুনতেই রিতুর মুখ কালো হয়ে চুপসে যায়। আর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরিফের গলার স্বর কিছুটা কঠিন হয়ে আসে। সে বলেঃ
——- বলো মা, ভয় পেও না। তোমায় ওমন কেউ বলেছে?
— [হ্যা সূচক মাথা নাড়ে]
——- কে বলেছে, নাম বলো??
— ভাইয়া, আমাকে এইসব কথা কাউকে বলতে না করেছে। যদি আমি বলি, তাহলে সে আর আমাদের বাড়িতে আসবে না। আমার সঙ্গে খেলবে না।
আরিফের মাথা রাগে, ক্ষোভে প্রচন্ড গরমে হয়ে গেছে এর মধ্যেই। এবার কন্ঠে রাজ্যের বিস্ময় ফুটিয়ে বল্লঃ
——- তোমার নয়ন ভাইয়া তোমাকে এই রকম করতে বলেছিলেন?
— হু বাবা! কিন্তু আমি করিনি, ভাইয়াকে পঁচা বলে বকা দিয়েছি!
এই বিষয়ে একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে আর কোনো কথা বলার প্রয়োজন মনে করলো না। সে ভাবে, একটা ছেলের মস্তিস্ক কতটা বিকৃত হলে, একটা ৬ বছরের মেয়েকে এই কাজ করতে বলে! ৬ বছরের একটা মেয়ের মধ্যে যৌনতার আছেটা কী? তাঁর ওপর এইটা নাকি ওর আপন ভাগ্নে! প্রচন্ড রাগে ওর শরীরে আগুন জ্বলছে। নয়ন যতই আপন হোক না কেন , সে যা করেছে তা-ভয়ংকর অপরাধ। এর জন্য অকে একটা উচিত শিক্ষা দিতেই হবে!

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প