১। এই ঘটনাটা আমার আম্মুর কাছ থেকে শোনা। আমি এখন আমার আম্মুর ভাষায় বলছি।
তখন আমার বিয়ে হয়নি। আমাদের গ্রামের একটি ছোট ছেলে একদিন বিকালে দোকানে কিছু কিনতে যায়। উল্লেখ্য, দোকানে যাওয়ার পথে একটি গোরস্থান পার হতে হয়। গোরস্থানের পাশে একটি বড় গাছ, তার পাশে দুই-তিনটি তাল গাছ এবং একটি তেঁতুল গাছ রয়েছে। এই জায়গাটার পাশ দিয়ে যেতে দিনের বেলাতেও গা ছমছম করে। তার উপর ছেলেটা একা দোকানে গেছে। মাগরিবের আজান দেওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু ছেলেটা বাড়ি ফেরেনি।
ছেলেটার মা-বাবা তাকে খুঁজতে বের হয়। কিন্তু তারা তাকে কোথাও খুঁজে পায় না। তখন তারা বাড়ি ফিরে এসে আমাদের গ্রামের একজন লোকের কাছে যায়। এই লোকটির নাকি (তুলারাশি) জ্বীন-ভূত দেখার ক্ষমতা আছে। তিনি দেখেন যে, ছেলেটাকে একটি গোরস্থানে রাখা হয়েছে (জ্বীনেরা)। সবাই তখন সেই গোরস্থানে ছেলেটাকে খুঁজতে যায়। কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই জ্বীনগুলো ছেলেটাকে নিয়ে চলে যায়।
তখন সবাই আবার লোকটার কাছে যায়। তুলারাশি আবার জিন দেখেন। এবার তিনি দেখেন যে, ছেলেটাকে একটি তালগাছে তোলা হচ্ছে। সবাই তখন হুজুরকে নিয়ে তালগাছের নিচে যায়। হুজুর আজান দেন এবং বলেন, “ছেলেটাকে নিচে নামিয়ে দাও।” কিন্তু জ্বীনগুলো আবার ছেলেটাকে একটি পুকুরে নিয়ে যায়। সবাই আবার পুকুরে খুঁজতে যায়, কিন্তু ততক্ষণে ছেলেটাকে তারা অন্য কোথাও নিয়ে গেছে।
সবাই আবার বাড়ি ফিরে আসে। এইভাবে সারা রাত কেটে যায়। শেষ রাতে আবার যখন তুলারাশি দেখেন, তখন তিনি দেখেন যে, ছেলেটাকে পুকুরে গাছের শিকড়ের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই আবার পুকুরে খুঁজতে যায়, কিন্তু ততক্ষণে ছেলেটাকে জ্বীনরা মেরে ফেলেছে।
জ্বীনদের মধ্যে সাত ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন ভালো ছিল। ভালো জ্বীনটি খারাপ জ্বীনগুলোকে বলেছিল, “ছেলেটাকে মেরো না, তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দাও।” কিন্তু খারাপ জ্বীনগুলো তার কথা শুনেনি।
পরে সেই জ্বীনগুলোকে হাজির করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, “তোমরা ছেলেটাকে কেন মেরেছ?” তখন তারা বলে, “ছেলেটাকে আমরা দোকান থেকে ফেরার পথে ধরে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে যখন সবাই তাকে খুঁজতে শুরু করে, তখন আমরা বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ছেলেটাকে মেরে ফেলেছি।”
২। এই ঘটনাটাও আমার আম্মুর থেকে শোনা। আমি এখন আমার আম্মুর ভাষায় বলছি।
আমার শ্বশুরের পুরানো বাড়ি থেকে বের হয়ে নতুন বাড়ি তৈরি করেন। উল্লেখ্য, তখন আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো বাড়ি ছিল না। ৪০ ডিসিমিল জমির উপর টিনের চালাওয়ালা ঘর তৈরি করা হয়েছিল, বাকি জমিগুলো খালি পড়ে ছিল। গ্রামের বাথরুমগুলো সাধারণত ঘর থেকে একটু দূরে হয়। আমাদের বাথরুমও ঘর থেকে একটু দূরে ছিল। বাথরুমের পাশে একটি পাঠিখানা (ছোট পুকুর) এবং তার পাশে একটি শিমুল গাছ ছিল। শিমুল গাছটিতে একটি খারাপ জ্বীন বাস করত। মাঝে মধ্যে শিমুল গাছটিতে প্রচণ্ড বাতাস হতো, কিন্তু বাড়ির কারও কোনো ক্ষতি হতো না।
এমনই একদিন, সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন রাত ৯টা থেকে ১০টার দিকে (গ্রামে রাত ১০টা মানে অনেক রাত)। হঠাৎ টিনের চালে অনেক কিছু পড়ার শব্দ হতে থাকে। আর ঘরের পাশে দুটি নারিকেল গাছ ছিল, তাদের পাতাগুলো এমনভাবে নেড়ে দেওয়া হচ্ছিল, যেন প্রচণ্ড তুফান হচ্ছে গাছটার উপর।
তখন সবাই ভয় পেয়ে যায়। আমার শ্বশুর বুঝতে পারেন যে এগুলো জ্বীনদের কাজ। আগেও এমন হতো—হঠাৎ হঠাৎ এসে শব্দ করত। এমনই একদিন, আবার অনেক শব্দ হতে থাকে। তখন আমার শ্বশুর এসে জ্বীনদের বলেন, “আপনারা আসছেন, একটু জিরিয়ে নিন। তারপর আবার চলে যান। আমার বউ-ঝি’দের কোনো ক্ষতি করবেন না।”
এরপর আমাদের বাড়িটি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে আর কোনো খারাপ কিছু বা কারও কোনো ক্ষতি করতে না পারে।
৩। এই ঘটনাটা আমার আব্বুর থেকে শোনা। আমি এখন আমার আব্বুর ভাষায় বলছি।
আমাদের বাড়ি নদীর পাশে হওয়ার কারণে রাতে অনেক সময় নদীতে মাছ ধরতে যেতাম। এমনই একদিন ঠিক করলাম, মাছ ধরতে যাব। তখন রাত ১১টা। কিছু মাছ ধরার পর দেখি, আশেপাশে অনেক শিয়াল ডাকছে। তখন গা একটু ছমছম করে উঠল। আমি ঠিক করলাম, আর মাছ ধরব না। তারপর নদীর পাশের চর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি, একটি বড় কুকুর আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি লক্ষ্য করলাম, কুকুরটা সাধারণ কুকুরের চেয়ে একটু বড়। তখন একটু ভয় লাগল। আমি সাথে থাকা একটি বিড়ি ধরলাম এবং হাঁটতে থাকলাম। এমন সময় কুকুরটা হঠাৎ একটি বড় দামড়া গরুর রূপ নিল। আমি তখন বুঝতে পারলাম, এটা নিশ্চয়ই কোনো খারাপ জিনিস।
আমি আরো জোরে হাঁটতে থাকলাম। ওই খারাপ জিনিসটা এবার অনেকগুলো শিয়ালে পরিণত হলো। আমি তখন ভয় না পেয়ে বললাম, “তুই যা খুশি হ, আমার কিছু করতে পারবি না।” আমি সিগারেট টানতে টানতে আরো সামনে এগিয়ে গেলাম। সে জিনিসটা আমার সামনে আসতে চাইলে, আমি আমার সাথে থাকা জাল দেখালাম। জালে গুল্লা (মাছ ধরার ওজন) ছিল, তাই সে জিনিসটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। আর আমি ভালোভাবে বাড়িতে ফিরে এলাম।