Mysterious Suicide পর্ব_২_ও_৩

আপুর মৃত্যুর কয়েক মাস আগের ঘটনা, কলেজে কি এক রাজনৈতিক ঝামেলার জন্য সব শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে বাসায় চলে আসছিলো। বড় আপুও চলে আসে। মা খুব অসুস্থ থাকায় মেজ আপু আর আমিও চলে আসি। আমরা তিন বোন একই ইউনিভার্সিটি কলেজের সিনিয়র জুনিয়র ছিলাম।
আমরা সবাই চলে আসায় বাড়ীটা বেশ ভরা ভরা লাগছে।
আমরা ৩ বোন, বাবা-মা, দাদী, আর বুড়ী দাদী( দাদীর দেখাশোনা করার জন্য নির্ধারিত) উনাকে আমরা জন্মের পর থেকেই দেখছি আমাদের সাথে আছেন, এখন উনি আমাদের পরিবারের ই একজন, তাই পারিবারিক কোনো বিষয়ে বেশ জোড়ালো ভুমিকা রাখেন।
মা’র ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজ চলছিলো! ডক্টর বলেই দিয়েছেন সর্বোচ্চ ১ মাস!
মন খারাপের মধ্য দিয়েই চলছিলো সব।
এক সন্ধ্যায় আমরা তিন বোন বসে কথা বলছিলাম , কিভাবে মা কে এই কয়েকটা দিন একটু ভালো রাখা যায়। এত ডাক্তার দেখিয়ে টাকা খরচ করেও কোনো লাভ ই হলোনা। দেশের বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মাকে।
এরই মধ্যে,
হঠাৎ বুড়ী দাদীর চেচামেচি!!
— কত্তদিন কইছি চিতি রে (স্মৃতি – বড় আপু) গোছল কইরা কাপর চোপর বাইরে থুবিনা, মাগরেবের আগে ঘরে তুলবি! সন্দা রাইতে হাবিজাবি কত্তকিছু উইড়া যায়, নজর পরলে বুজবিয়ানে!!
বড় আপু তার কথা হেসে উড়িয়ে দিলো।
বুড়ী দাদী আরো রাগা রাগি শুরু করে দিলেন!
— মাইয়া মাইনসের হগ্গল কিছু নিয়া এত হেলা করতে নাই।
বিশ্বাস তো করনা কিছু মাইয়া। জ্বিন ভুত বইলা কিছু তো আছেই। আনবিয়ত মাইয়া ছাওয়ালের প্রতি বেশি নজর করে। কাপর চোপরের গন্ধ নেয়। জাদু টোনা করে।
এতো বেশি চেচামেচি করায় আপুও রেগে হন হন করে বেরিয়ে গেলো কাপর তুলতে!
★ বলে রাখা ভালো আমাদের বাড়িটা একদম গ্রামে, আসে পাসে ঝোপঝাড়, দিনের বেলা ও অন্ধকার লাগে।
★ কাপড় শুকানোর আড় টা ( বাশের খুটিতে দরি বাঁধা)
বাড়ির পেছনের সেই কদম গাছের সাথে। অর্থাৎ পুকুর ধারে!
আপু কাপর তুলতে গিয়ে রীতিমতো চিতকার চেচামেচি করে বলছিলো,
— আমি কোনো কুসংস্কার বিশ্বাস করি না! এসব কিচ্ছু হয়না। নজর বলে কিছুই নেই, কিসের আবার জ্বিন ভুত!! এসব কিছুর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই! অস্তিত্ব নেই!
থাকলে যেন আমার সামনে আসে!!!!
বুড়ী দাদী এপাশ থেকে চিতকার করে বলছিলো,
— ঐ মাইয়া তারাতাড়ি আয়, ঐ যায়গা ভালোনা, কিছু হইলে বুঝবি, মাগরেবের আজান পরছে হেই কহন!
আপু আবার শুরু করলো,
— ধুররর বা** , এসব বা*** র জ্বিন ভুত কিছুই নাই
থাকলে যেন আমার সামনে আসে!! এসবে তুমি ভয় পেলেও আমি ভয় পাইনা!
আপু রেগে হন হন করে আসছিলো কথা বলতে বলতে হঠাৎ ঘরের কোনায় এসে মাথা ঘুরে পরে গেলো!!!
আমরা সবাই রীতিমতো ভয় পেয়ে দৌড়ে গেলাম, বাবা আর মেজ আপু বড় আপুকে ধরে রুমে নিয়ে এলো।
অনেক সময় মাথয় পানি ঢালার পর আপুর সেন্স ফিরলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
— হঠাৎ পরে গেলে কিভাবে?
বুড়ী দাদী — আমি কইছিলাম চুপ করতে, নাইলে সমস্যা হইবো, দেখছোস কি হইলো?
বড় আপু — তুমি কি চুপ করবা একটু!! আমার কিছুই হয়নি, হঠাৎ মনে হলো আমার চারপাশটা খুব গরম বাতাসে ভরে গেছে, নিঃস্বাস নিতে পারছিলাম না তাই মাথা ঘুরে পরে গেছি।
তোমার কথায় আমার মাথা গরম হয়েছে তাই এমন হয়েছে!
— হ কইছে তোমারে!
বাবা ধমক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিলেন।
— এবার চুপ করোতো সবাই, অনেক হয়েছে।
বেশ অনেক সময় পর পরিবেশ ঠান্ডা হলো।
রাতে খেয়ে সবাই শুয়ে পরলাম,,,
আমরা তিন বোন একসাথেই ঘুমাই,
প্রায় রাত ১ টা বাজে, না না ১২:৪৫ হবে সম্ভবত।
বড় আপু বিছানায় উঠে বসলো, আমি তখনো ঘুমাই নি,
—- এই ( আমার শরিরে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে)
এই শ্রাবণ ? ওঠ না!! আমার কেমন যেনো লাগছে!! আমিও উঠে বসলাম, মেজো আপু মরার মতো ঘুমাচ্ছে!!
— কেমন লাগছে? পানি খাবি? এনে দিবো?
— না, খুব গরম লাগছে শ্বাস নিতে পারছিনা!!
— ফ্যান তো চলছে!! অনেক বাতাস!!
— না ফ্যান না, ওই জানালা টা একটু খুলে দেনা প্লিজ!!
— আরে ওটা তো পেছনের জানালা!! ওটা খুললেই পুকুর আর কদম গাছ দেখা যায়, রাতের বেলা কি ভয়ংকর লাগে যায়গাটা!! আমার খুব ভয় লাগে আমি পারবোনা!!
আপুকে বললাম অন্য জানালা খুলে দেই, কিন্তু আপু ওই জানালা টাই খুলবে!!
খুব ঘামছিলো আপু, মনে হচ্ছে ওই জানালা না খুললে আপু শ্বাস বন্ধ হয়ে মরেই যাবে!!
কি আর করার, ধীরে ধীরে গিয়ে পেছনের জানালা টা খুলে দিলাম।
আমি শুধু জানালার খিল টা খুলেছিলাম, খিল খুলতেই মনে হলো খুব জোর খাটিয়ে জানালা টা আপনা আপনি ই খুলে গেলো!!! আর এক ঝাপটা হিম শীতল বাতাস ঘরে প্রবেশ করলো!!! আমি কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলাম,
শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে আমার, পেছনে তাকিয়ে একটু অবাক হলাম! একদম লক্ষী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে গেছে আপু!!
কিন্তু এত দ্রুত!! অথচ কিছুসময় আগেই এই মেয়েটা কেমন ছটফট করছিলো!!
হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো!! আমি আরো ভয় পাচ্ছিলাম!!
তাও ধীরে ধীরে গিয়ে আপুর পাশেই শুয়ে পরলাম।
আমি আপুকে ধরে ঘুমাই, সেই ছোটোবেলার অভ্যাস আমার। তাই আপুকে ধরেই ঘুমাতে গেলাম।
আর যেই আপুর শরীর স্পর্শ করেছি!!!
ভয়ে যেনো আমার আত্মা টা উড়ে গেলো!!
বরফের মতো ঠান্ডা তার শরীর!! আর শরীর থেকে কেমন মরা লাশের মতো গন্ধ বেরুচ্ছিল!!!
আমি কোনো রকম আমার হাতটা সরিয়ে নিলাম তাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই!
আস্তে করে এপাশ ঘুরে শ্রেয়া কে (মেজো আপু) জরিয়ে ধরলাম খুব শক্ত করে!!
আমি রীতিমতো কাপতে শুরু করেছি!!
কি হলো এসব!! কি ঘটছে? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা!!!
আমাকে আরো বেশি চমকে দিয়ে ওপাস থেকে একটা পুরুষ -নারী মিশ্রিত কন্ঠস্বর বলে উঠলো,
ভয় পেয়েছিস শ্রাবন!!!
#পর্ব_৩
আমাকে আরো বেশি চমকে দিয়ে ওপাস থেকে একটা পুরুষ -নারী মিশ্রিত কন্ঠস্বর বলে উঠলো,
ভয় পেয়েছিস শ্রাবন!!!
আমার গলা দিয়ে কোনো কথাই বেরুচ্ছেনা। আমি তবুও আমতা আমতা করে বললাম,
— না আপু!
কেমন বিচ্ছিরি এক হাসির শব্দ শুনতে পেলাম আমি।
তারপর আর কিছুই জানিনা, হয়তো অবচেতন হয়ে পরেছিলাম।
আমার ঘুম ভাঙ্গলো পরদিন সকাল ৯ টায় বা ৯:২৩ হবে হয়তো। ঘুম থেকে উঠে কিছুসময় স্বাভাবিক ছিলাম তারপরই মনে হলো কাল রাতে কি ঘটেছে আমার সাথে।
দিনের বেলা তাই তেমন ভয় হচ্ছিল না কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। উল্টো রাগ হচ্ছিল মেজো আপুর উপর, হবে না ই বা কেনো,, এত কিছু ঘটলো অথচ ও শুধু মরার মতো ঘুমিয়েছে!
ভাবছিলাম বাসার সবাইকে এ-বিষয়ক কিছু বলব কিনা?
নিজের মনে কি ভেবে ঠিক করলাম এখনি কিছু বলবনা। দেখা যাক কি হয়।
তখন প্রায় ভরদুপুর,
রান্না- বান্না সব শেষ এখন শুধু গোসল করে খাবার খাবো। বাবা নামাজ পরে এসে সবাই কে খাবার খেতে ডাকলেন। বুড়ী দাদী মাকে খাইয়ে দিচ্ছেন, মার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়েই চলেছে।
আমরা সবাই খাবার টেবিলে শুধু বড় আপু ছাড়া!
বাবা- কিরে স্মৃতি কে দেখছিনা যে?
বুড়ী দাদী – ওই মাইয়ার কি কোনো কাজ আছে? সারাদিন খালি টই টই করা।
বাবা- আহ্ চুপ করোতো একটু, তুমিই বা সারাক্ষণ ওর পেছনে লাগো কেনো?
দেখতো মা শ্রেয়া ও কোথায়, বল খেতে আসতে।
মেজো আপু চলে গেলো বড় আপুকে ডাকতে, আমরা খেতে শুরু করেছি।
মেজো আপু সারা ঘর খুঁজে এসে বলল আপু বাড়িতে নেই!
বাবা তাকে বাড়ির পেছনে দেখতে বললেন। আপু তাই করলো।
হঠাৎ মেজো আপুর চিতকার শুনতে পেলাম, বাড়ির পেছন থেকে। আমরা খাওয়া ছেড়ে সবাই দৌড়ে গেলাম!
গিয়ে দেখি মেজো আপু বড় আপুর দিকে ভয়াল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! আর বড় আপু খিল খিল করে হাসছে, আর হাতে তালি দিয়ে বলছে,
— ভীতু ভীতু ভীতু!!!
কি ভীতুরে তুই শ্রেয়া, একটুতেই ভয় পেয়ে যাস হা হা হা!
কি হয়েছে এখানে? বাবা বললেন।
— কিছুনা বাবা, এই একটু চমকে দিয়েছি শ্রেয়া কে হা হা হা।
তোরা যে কি করিস না, এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই তার উপর তোদের এই ছেলে মানুষি যায়না।
চল বাড়ি চল, খাবি চল
বড় আপু — হ্যা বাবা, খাব তো, সব খেয়ে শেষ করব হা হা হা!!!
কেমন অদ্ভুত লাগছিলো বড় আপুকে! যেনো সে এক অন্য মানুষ!
আমি মেজো আপুকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
আপু বলতে গিয়ে বড় আপুর দিকে তাকালো, আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম বড় আপু পেছন ফিরে মেজ আপুকে না সূচক মাথা নাড়লো!! আর হা হা করে হাসতে হাসতে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
আমি আবার মেজো আপুকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছিল একটু আগে?
আপু ও না সূচক মাথা নাড়লো। বলল কিছু হয়নি। বলেই সে বাড়ীর ভেতর চলে গেলো।
মাঝখান থেকে আমি পরেছি গোলোক ধাঁধায়! কি হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেদিন সারাদিন মেজো আপু বড় আপুর কাছে যায়নি, দূরে দূরেই থেকেছে বাবা র কাছাকাছি। আমার কাছেও আসেনি। অবশ্য আমিও যাইনি। কাল রাতে সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম!
কেমন একটা পরিবেশ ৩ বোন ই ৩ জনের থেকে দূরে দূরে আছি।
দুই তিন দিন পর…..
আমার কেনো যেনো মন হলো বাবা কে সব খুলে বলা উচিৎ, কারন বিষয়টা দিন দিন জটিল হচ্ছে।
বড় আপু প্রত্যেক রাতে পেছনের জানালা খুলে সারারাত সেখানেই দাড়িয়ে থাকে একটুও ঘুমায়না!
একা একাই কথা বলে, হাসে, কান্না করে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ঝগরা করছে।
রাতে কখনো কখনো আমার ঘুম ভেঙে গেলে মনে হতো আপু আমার পাসেই শুয়ে আছে,,,
আমি যদিও মেজো আপুকে ধরে ঘুমাতাম তখন কিন্তু মনে হতো আমার ওপাসে বিশাল একটা বরফ খন্ড রাখা!!
কেমন যেনো একটা বাজে গন্ধ নাকে ভেসে আসতো।
ঠিক করেছি আজই বাবা কে সব বলব,
তাই এক কাপ চা হাতে নিয়ে বাবার কাছে বসলাম।
— বাবা তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো?
— হ্যা বল মা, কি বলবি?
— বড়… ( আমার কথা শেষ না হতেই বুড়ী দাদী র কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম)
— ওরে বাবা রে মাইরা হালাইছে রে, ও চিতির বাপ ওরে সবাই কইরে আমি মরলাম রে…….
আমরা সবাই ছুটে গিয়ে দেখি বুড়ী দাদী মাটিতে পরে আছেন! শুকনো মরিচ সব মাটিতে ছড়ানো ছিটানো!
সম্ভবত মরিচ শুকোতে দিতে মাচার উপর উঠতে গিয়ে পরে গেছেন।
বাবা আর আমি তাকে টেনে তুললাম।
— দাদী তুমি পরলে কিভাবে? এতটুকু উচুতে মই দিয়ে উঠতে তো তোমার পরার কথানা। চোখ বন্ধ করে যে কোনো বাচ্চা ও উঠতে পারবে।
— আমি পরিনাই রে, আমি পরিনাই, ওই মাইয়া আমারে ধাক্কা দিছে!!
— কে বড় আপু!!
— হ!! আমারে কয় তুই আমারে খুব জ্বালাস বুড়ী!! ওয়াই কইয়া আমারে মাচার উপর থেকে ধাক্কা দিছে!!
বাবা খুব রেগে গেলেন, আর বাবা রেগে গেলে কোনো কথাই বলেন না। শুধু আমাকে বললেন দাদীকে মলম লাগিয়ে দিতে আর ব্যথার একটা অসুধ দিতে।
আমিও তাই করলাম।
বড় আপু বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুখ বাকাবাঁকা করে হাসছিলো, আমি তার পাশ দিয়ে হেটে যেতেই আপু বলল
— ভুল করেও বাবা কে কিছু বলতে যাসনা শ্রাবণ!!
ফল এর থেকেও খারাপ হবে হা হা হা।
আমি বুড়ী দাদীকে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলাম দাদীও পাসে বসা ছিলো, মেজো আপু এসে আমাদের কাছে বসল।
একটু আমতা আমতা করেই সবার উদ্দেশ্য বলল,
— মানুষ কি কখনো জীবন্ত সাপ খায়!??

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প