আমার নাম অনিক। আমার পেশা হলো অ্যান্টিক জিনিসের খোঁজ করা। পুরনো বাড়ি, ভাঙাচোরা হাভেলী – আমার কাছে যেন গুপ্তধনের খনি। এই নেশার টানেই সেদিন পৌঁছেছিলাম শহরের এক পুরোনো জমিদারবাড়িতে। বাড়িটা এখন পুরোপুরি পরিত্যক্ত, কিন্তু তার জরাজীর্ণ দেওয়াল আর ভাঙা খিলানগুলো যেন অতীতের হাজারো গল্প বুকে ধারণ করে আছে।
আমি যখন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম, একটা স্যাঁতসেঁতে গন্ধ আমার নাকে এলো। ভাঙা কাঁচ আর ধুলোর আস্তরণে ঢেকে আছে সবকিছু। বৈঠকখানা পেরিয়ে একটা বড় ঘরে ঢুকতেই আমার চোখ আটকে গেল একটা জিনিসের উপর। ঘরের এক কোণে, ধুলোয় ঢাকা অবস্থায় পড়ে আছে একটি বিশাল আকারের ড্রেসিং টেবিল, তার মাঝখানে লাগানো একটা প্রকাণ্ড আয়না। আয়নাটা যদিও ধুলো আর নোংরায় অপরিষ্কার, তবুও তার গাম্ভীর্য আমাকে টানছিল।
আমি সাবধানে আয়নাটার ধুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করতে লাগলাম। যত পরিষ্কার হতে থাকলো, তত স্পষ্ট হতে লাগলো আয়নার ভেতরটা। অবাক হয়ে দেখলাম, আয়নার কাঁচটা অন্যরকম। সাধারণ আয়নার মতো শুধু আমার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছিল না। বরং, মনে হচ্ছিল যেন আয়নার ভেতরে একটা আবছা ছবি নড়াচড়া করছে। প্রথমটা ভেবেছিলাম চোখের ভুল, কিন্তু কিছুক্ষণ দেখতেই বুঝলাম, না। এটা কোনো প্রতিচ্ছবি নয়। আয়নার ভেতরের জগতটা সম্পূর্ণ আলাদা।
আমি দেখলাম, আয়নার ভেতরে একটা পুরোনো দিনের কক্ষ। সে কক্ষের আসবাবপত্র, দেওয়ালের রঙ – সবকিছুই এই বাড়ির সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সে কক্ষে একজন বৃদ্ধা মহিলা বসে আছেন! তিনি যেন আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না, নিজের মনেই কিছু কাজ করছেন। আমার বুকটা ধুকপুক করে উঠলো। ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। আমি কি hallucinate করছি?