ঘরটা ফুল দিয়ে সাজানো।এর নাম বাসর ঘর।আজ আমার সুখের দিন।সারা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন এটি।
কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে এই দিনটিকে নরক করে দিল আমার বর সাইমুম।সে প্রথমে আমার কাছে এসেই কোন কথা না বলে আমার দুটো হাত গামছা দিয়ে বেঁধে দিলো। তারপর বাঁধলো দু’পা। তারপর এক এক করে শরীরের সবকটি কাপড় টেনে খুলে ফেললো।কাপড় খোলার পর আমার সারা শরীরে ঘষে ঘষে বিছুটি পাতা লাগিয়ে দিলো।আমি যন্ত্রণায় যখন চিৎকার করতে লাগলাম তখন সে আমার মুখে কচস্টেপ এঁটে দিলো। তারপর বললো এবার চিৎকার করো।যতোটা গলায় জোর আছে ততটা দিয়েই চিৎকার করো।কথাটা বলে হাসলো। হেসে বললো,’তোমার বোন মুনতাহা আমার জীবনে একটা বড় কলঙ্ক দিয়ে গেছে।আমায় ছেড়ে একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। আমার কী অপরাধ ছিল বলো?এই অপমানের শোধ আমি তোমার কাছ থেকে নিবো হাঁড়ে হাঁড়ে। তোমাকে বুঝিয়ে দিবো তোমার বোনের ভুলের মাশুল কতটা বড়! তোমার বাবা কী ভেবেছেন? তোমাকে বিয়ে করেছি আমি খুশি মনে?মোটেও তা না।আমি তোমাকে বিয়ে করেছি প্রতিশোধ নিতে। আজ থেকে শুরু হলো প্রতিশোধ নেয়া!’
সাইমুমের দিকে তাকিয়ে আমি যন্ত্রণায় ছটফট করছি।গলা ছেড়ে চিৎকার করছি। কিন্তু কচস্টেপ দিয়ে মুখ এঁটে থাকায় সেই চিৎকার দূরে যাচ্ছে না।এক প্রকার গোঙানির মতোই শোনা যাচ্ছে।যা রুম থেকে বেরুবে না কিছুতেই।
আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে সাইমুম।যেন ওর খুব মজা লাগছে আমাকে এভাবে দেখে!
********
‘কে পালিয়ে গেছে?’
মা বাবার মুখটা চেপে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে বললো,’আস্তে। তোমার মেয়ে মুনতাহা।’
বাবা আঁতকে উঠলো। তারপর মার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে বললো,’কী বললে তুমি?’
‘ওই যে রাসেল নাম ছেলেটার যার সাথে ওর রিলেশন ছিল।ওর সাথে পালিয়ে গেছে।’
বাবা বোধহয় এবার রাগে চিৎকার চেঁচামেচি করবে। কিন্তু এই মুহূর্তে বাবা চিৎকার চেঁচামেচি করলো না। মাকে ঠান্ডা গলায় বললো,’বরযাত্রী তো এসে গেছে। এখন কী হবে?’
মা বললো,’একটু বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলে বিদায় করতে হবে। এছাড়া তো উপায় নাই।’
বাবা বললো,’বুঝিয়ে বললে হবে না। ছেলেটার অত বড় ক্ষতি আমি করতে পারবো না।’
মা অবাক হয়ে বললো,’তাহলে কী করতে চাচ্ছো তুমি?’
বাবা তখন আমার নাম উচ্চারণ করলো।মার কাছে বললো,’আফসানাকে সাজিয়ে আনো।আমি ছেলেকে খালি হতে বিদায় করবো না।আফসানাকে ওর কাছে বিয়ে দিবো।’
শুনে আমি আঁতকে উঠলাম।সারা শরীর আমার কাঁপতে লাগলো।এটা কী বলছে বাবা!
দেয়ালে ঠেস দিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।এর মাঝেই মা এলো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে। এসেই আমার হাত ধরে বললো,’আয়।’
আমি মার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,’কোথায়?’
মা সোজা সাপটা বললো,’আজ তোর বিয়ে।’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’হোয়্যাট?’
মা বললো,’এসব বলার সময় না এখন আফসানা। তুই আমাদের মান সম্মান রক্ষা কর মা।’
কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে কনে সাজতে হলো।বিয়ের বরযাত্রী এসেছে।তখনও অবশ্য ব্যপারটা জানাজানি হয়নি যে বিয়ের কনে বদল হয়েছে।
আমাকে সাজানো হয়েছে।বরের সাথে যে মেয়েরা এসেছে তারা ধরেই নিয়েছে আমিই আসল কনে। আমার সাথেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল।আর আমি ভয় পাচ্ছি। সাইমুম অর্থাৎ যার সাথে আমার বিয়েটা হচ্ছে সে যখন আমায় দেখবে তখন কী ভয়াবহ কান্ডটা ঘটবে?কারণ সে কী এটা মেনে নিতে পারবে যে বউয়ের বদল বউয়ের বোনকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে।
সবচেয়ে আশ্চর্য জনক বিষয় হলো বাবা সাইমুমকে আড়ালে ডেকে নিয়ে এই বিষয়ে কথা বলেছে। সাইমুম নাকি এতে সামান্য রাগও করেনি।সে বরং খুশি হয়েছে।তার সম্মান রক্ষা হয়েছে বলে।
মা এসে আমার কানে ফিসফিস করে বলে গেল,’আফসানারে,তোর কপাল ভালো মা।তুই রাজ কপালী!’
আমি অবাক হয়ে মার দিকে তাকিয়ে বললাম,’হঠাৎ এমন কথা বললে কেন মা?’
মা বললো,’সাইমুম তোরে মেনে নিয়েছে।’
আমি মুখে শুধু বললাম,ও–।’
তারপর ধুমধাম করে বিয়েটা হয়ে গেলো।মার কথায় ভেবেছিলাম আমার বুঝি সত্যি সত্যি রাজ কপাল। কিন্তু বাসর রাতে যা ঘটলো——