কনে_বদল পর্ব০৪

রাত এগারোটা বাজলে সাইমুম এলো।আজ একেবারেই সে শান্ত। ঠোঁটে মিষ্টি হাসি লেগে আছে।
সে এসেই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর আমার কাছে এসে বসলো।যেন ওর মতো ভালো মানুষটি আর নেই।যেন আমরা যুগ যুগ ধরে প্রেমে পড়ে আছি।একে অপরকে ভালোবাসছি।
সাইমুম কোমল গলায় আমায় জিজ্ঞেস করলো,’খেয়েছো?’
আমি চুপ করে রইলাম। উত্তর দিলাম না।
সাইমুম একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটের ধোঁয়া আমার সহ্য হয় না। আমার কেমন কাশি উঠে গেল।
সাইমুম বুঝতে পারলো আমার অসুবিধা হচ্ছে।তাই সে জানলা দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেটটা দূরে ছুঁড়ে মারলো।
আমি ওর আচরণের হঠাৎ পরিবর্তনটা বুঝতে পারছি না। কেমন খটকা লাগছে আমার।একটা মানুষ যে কি না গতকাল পশুর মতো আচরণ করলো আমা সাথে আর আজ সে এমন পরিবর্তন হয়ে যায় কী করে?
সাইমুম অদ্ভুত একটা কান্ড করলো। ধীরে ধীরে আমার কাছে ঘেঁষলো। আমার একটা হাত আস্তে করে ধরলো। আমার অস্বস্তি লাগছে।তাই আমি হাত টেনে নিতে চাইলাম।ও বাঁধা দিলো না। কিন্তু এর খানিক পর আবার সে আমার ঘনিষ্ঠ হলো। কপালে চুমু খেলো। আমার হঠাৎ কেন জানি সবকিছু বদলে গেলো। মুহূর্তে ভুলে গেলাম গতকালের সাইমুমের করা অসভ্য আচরণের কথা।আমি ওর পিঠের কাছে শার্টে শক্ত করে টেনে ধরলাম। তারপর। তারপর আসল রুপটা দেখালো সাইমুম। হয়তোবা এমন কিছুই চেয়েছিল সে। মানসিক এবং শারীরিক ভাবে সে আমায় শাস্তি দিতে চায়।সে আমায় তার মোহে ফেললো। শরীরের চাওয়াকে জাগিয়ে তুললো। মনকে তার প্রতি ধাবিত করলো। তারপর আমায় এক ধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,’কী ভেবেছো তুমি?অত সহজে তোমায় কাছে টানবো?অত সহজে সব ভুলে যাবো? তোমার বোনের দেয়া আঘাতটা তো সামান্য নয়। তোমার শাস্তি তো কেবল শুরু। এরপর আরো আছে। ধীরে ধীরে টের পাবে আঘাত কাকে বলে!’
কথাগুলো বলেই সাইমুম তার মোবাইল ফোন বের করলো। ওখানে ভিডিও প্লেয়ারে গেলো। তারপর একটা ভিডিও ওপেন করলো।
ভিডিওটা আমার।একটা নগ্ন শরীর।শরীরটা আমার। ঘেন্না হচ্ছে আমার। খুব ঘেন্না হচ্ছে।
আমি এক কাজ করে বসলাম।ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে আসলাম মোবাইল ফোনটা। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না।এর আগেই ও আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো ফোন। তারপর শক্ত হাতে একটা চড় বসিয়ে দিলো আমার গালে।
আমি কাঁদতে চাইতেই ও বললো,’এখন পোস্ট করে দেই এটা? দিবো?’
আমি ওই দুষ্ট লোকটার দিকে কাঁপা কাঁপা চোখের পাতার ফাঁকে তাকাই।ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে আসে আমার দেহ।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,’আল্লাহর দোহাই লাগে আপনি এমন কিছু কইরেন না!’
সাইমুম তখন হাসে। হেসে বলে,’তবে আমার কথা সব শুনবে।আর গলা যেন রুম থেকে না বেরুয়।’
আমি উপর থেকে নীচে মাথা ঝুঁকিয়ে বলি,’আচ্ছা।’
তারপর রাত বাড়ে। বাড়ির সবকটা মানুষ ঘুমায় বিভোর হয়ে।আমি জেগে থাকি। সাইমুম সিগারেট ধরিয়ে ঠোঁটে নিয়ে টান দেয়। তারপর আমায় বলে,’কাপড় খুলো।’
আমি পাথরের মতো জমে যেতে থাকি।
ও ধমক দেয়।বলে,’শুনতে পাওনা?’
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,’পারবো না।’
ও রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে আমার কাছে আসে।
তারপর বলে,’মধুর গলায় বললে কাজ হয় না তাই না?ভিডিওটা পোস্ট করতে হবে নাকি?’
আমি জানি না আমার কী হলো! হঠাৎ প্রচন্ড ভয় এসে জেঁকে বসলো কোথা থেকে যেন। এবং তখন আমার মনে হলো ও যা বলে তাই করা উচিৎ আমার। মানুষ নিজের সম্মানের জন্য কাঁদে। সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সে মরতেও দ্বিধা করে না। আমারও মনে হলো যে করেই হোক আমার সম্মান বাঁচাতে হবে। একবার সম্মান হারালে তা আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যাবে না!
আমার এক এক করে সবগুলো কাপড় খুলতে হয়। কাপড় খুলতে গিয়ে আমার কেবল মনে হতে থাকে আমি বুঝি এক এক করে আমার বুকের পাঁজর শরীরের হাড্ডিসার খুলে ফেলছি। তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় হৃদয়ে। রক্তক্ষরণ হয়। আমার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ে গালের উপর। এইসব দেখে আনন্দ পায় সাইমুম।
আমি ভেবেছিলাম এটা করার পর আজকের মতো মুক্তি পাবো। কিন্তু মুক্তি অত সহজ কথা? ঘড়িতে কেবল রাত একটা তেরো মিনিট বাজে!
সাইমুম বললো,’এবার এক পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকো।যতোক্ষণ না বলছি পা নামাতে ততক্ষণ নামাবে না।যদি নামাও তবে আমি গতরাতের মতো বিছুটি পাতা লাগাবো!’
বিছুটি পাতার কথা শুনে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে। শিরশির করে শরীর। ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে আমার। ভয়ে ভয়ে পা উঁচু করি আমি।এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে চুপিচুপি কাঁদতে থাকি। সাইমুম একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যায় আর মিটিমিটি হাসে।ওর হাসি দেখে আমার ইচ্ছে করে ওকে খুন করে ফেলতে।আমি মনে মনে ঠিক করি ওকে খুন করে ফেলবো। কিন্তু একটা মানুষ খুন কী সামান্য বিষয়!
আরেকবার মনে মনে ঠিক করি আমিই মরে যাবো।ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না বেঁধে ঝুলে পড়বো। কিন্তু এটা করলেই তো সব শেষ হয়ে যাবে না। বিশ্বাসীদের জন্য মৃত্যুর পর এক জগত আছে। আখেরাত। আত্মহত্যা মহাপাপ।আত্মহত্যাকারীকে চিরকাল জাহান্নামে জ্বলতে হয় পুড়তে হয়।আমি তো সহ্য করতে পারবো না জাহান্নামের আগুন!
বড় অসহায় মনে নিজেকে। কোন পথ খুঁজে আমি পাই না।পা টা অবস হয়ে আসছে।এক পায়ে এভাবে কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা যায়?
হঠাৎ খেয়াল করলাম সাইমুম তার ফোনের ক্যামেরা তাক করে রেখেছে এদিকে।আমি তাড়াহুড়ো করে হাত দিয়ে নিজেকে ঢাকতে গিয়ে ভুলে উঁচু করে রাখা পা মাটিতে নামিয়ে ফেলি।আর তখনই ধমক দিয়ে উঠে সাইমুম।বলে,’এবার আসল শাস্তি পাবে।’
আমি ওর সামনে হাত জোড় করে বলি,’এমন করবেন না প্লিজ! আমার আর সহ্য হচ্ছে না।আমি মরে যাবো!’
সাইমুম কোন অজুহাত শোনে না।সে আমার হাত দুটো ধরে ফেলে। এবং বেঁধে ফেলে আমার খুলে রাখা জামা দিয়ে। তারপর পা জোড়া বাঁধে ওড়নায়। এরপর আসে কচস্টেপ নিয়ে। এঁটে দেয় মুখে কচস্টেপ। তারপর পকেট থেকে বিছুটি পাতার গুঁড়ো বের করে। লাগিয়ে দেয় আমার গায়ে। আমার তখন কী যে কষ্ট হয়! কী যে যন্ত্রণা!একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কীভাবে এমন যন্ত্রণা দিতে পারে আমার বুঝে আসে না!
আমি ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খাই। শব্দ বেরুয় না বাইরে কিন্তু আমি গগণবিদারী চিৎকার তুলি। কাঁদি। চোখের জলে ভেসে যেতে থাকে শুভ্র গালের দু’ পাশ। শক্ত মাটির শরীর।
সাইমুম হাসে।বলে,’তোমায় একটা শর্ত দিবো। এই শর্ত পূরণ করতে পারলেই তোমার মুক্তি।শর্ত পূরণের পর তোমার সাথে সারা জীবন সুখের সংসার করবো আমি। তুমি কী পূরণ করতে রাজি আমার দেয়া শর্ত?বলো।’

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প