কালো জাদু (পর্ব:০১)

[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]
ঘটনাটি যার সাথে ঘটেছে তার নাম তারিফ।ঘটনাস্থল নওগা। ২০০৪ সালের এপ্রিল ৯ তারিখ।উনি ঘটনাটির তারিখ ঠিকঠাক বলতে পেরেছিলেন কারন ঐদিন উনার আব্বার মৃত্যু বার্ষিকী। ঘটনার শুরু ঐ রাত থেকেই….
উনার পরিবার মুসলিম হলেও উনি অনেকটা নাস্তিক স্বভাবের ছিলেন সেসময়।সবাই উনাকে অনেক বোঝাতো কিন্তু ধর্ম নিয়ে উনার তেমন একটা বিশ্বাস কাজ করতো না…
বাবার কবরের কাছে মাঝে মাঝে গিয়ে আস পাশ পরিস্কার করে দিয়ে চলে আসতেন.. দোয়া দুরুদ উনার কাছে কাল্পনিক কথা বলে মনে হতো।যে মারা গেছে সে মাটিতে মিশে গেছে তার আর কোনো অস্হিত্ব নেই……
ঐদিন সবাই তাদের গ্রামের বাড়িতে ছিলো। নওগার বাসায় তিনি একলা..রাতে খেয়ে শুয়ে পরার পর উনার ঘুম ভাঙে… উনার স্টিলের জানালায় বৃষ্টির পানির শব্দে..বারান্দায় কাপর মেলে রেখেছিলেন.. যে কারনে তাকে তারাতারি উঠতে হয়েছিলো যাতে বৃষ্টিতে সেগুলো ভিজে না যায়….
কাপর ঘরে এনে রেখে তিনি আবার শুয়ে পরেছিলেন..দরজাটা খোলা রেখেছিলেন।কিছুক্ষণ পর বারান্দার দরজাটায় টানা কয়েকটা বারি লাগার মতো ধুমধাম শব্দ হলো…উনি ভাবেন বোধহয় বৃষ্টির সাথে ঝড় শুরু হয়েছে…..
যাইহোক… উনি উঠে দেখেন বাইরে ঝরো হাওয়া কোনো কিছুই নেই শুধুই বৃষ্টি হচ্ছে.. চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা তার তখনো কাটেনি। গুরুত্ব না দিয়ে দরজার ছিটকিনি আটকে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলেন… চোখ বন্ধ করতে যাবেন ঠিক এমন সময় উনার রুমে প্রবেশ করার দরজায় সামনে কে যেন এসে ২ বার কাশি দিলো….
কাশি শুনে উনার চোখ খুলে যায়। বাসায় কে ডুকলো..।কয়েক সেকেন্ড পর স্পষ্ট একটা কন্ঠস্বর…. ” পানি দাও ”
উনি তখন আতঙ্কিত হয়ে উঠে বসেন। কারন যে কন্ঠটা শুনেছিলেন তা হুবুহু তা উনার বাবার গলার স্বরের সাথে মিলে যাচ্ছিলো….
উনার মনে পরেন উনার বাবা ঠিক এইভাবে ২ বার কাশি দিতেন কোনো কারন ছারাই কিছুক্ষণ পর পর….।কাশি দিয়ে পানি খেতেন।পানি না পেলে জোর গলায় বলে উঠতেন পানি দাও…
বিষয়টিকে তিনি আমল দেয় নি তখন। বিকেলে তার বাবার কথা অনেক মনে পরছিলো হয়তো সেই কারনেই ভুলবাল শুনেছেন তিনি… এটাই ভেবে নেন।এরপর উনার ঘরের দরজায় ঝুলন্ত পর্দাটা হুট করে আচমকা সরে যায়…
চারদিকে ঘুটঘুট অন্ধকার শুধু ঐ স্হানটাতেই লালচে এক প্রকার আলো জলছিলো..তিনি স্পষ্ট দেখতে পান কেউ একজন দেওয়ালে কিল মেরে তার পাশের রুমের সাথে একটা বাথরুম ছিলো সেই দরজাটা ধাক্কা মেরে চলে গেলো..। দরজা খোলার শব্দটা পর্যন্ত তার মনে ছিলো….
উঠে গিয়ে বাথরুমের সামনে লাঠি হাতে নিয়ে দারালো…কারন তিনি এবার ধরেই নেন বাসায় চোর ডুকেছে….।দশ মিনিট পার হয়ে যায়…কুড়ি মিনিট পার হয়ে যায়… কিন্তু কেউ দরজা খুললো না…।হটাত দরজাটা অাচমকাই খুলে গেলো…ভিতরের লাইটটা তখনো জ্বলছিলো….
উনি ভিতরে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখেন বাথরুমে কেউ নেই…।দুই থেকে তিন বারের মতো তিনি বাথরুমটা চেক করেন কিন্তু সত্যি সত্যিই কিচ্ছু ছিলো না সেখানে…..
লাঠিটা ফেলে দিয়ে একটা দৌড় দেন বাইরে চলে যাওয়ার উদ্দেশে।বাইরে চলে যাওয়ার পর পরই তার পিছনে একটা মোটা গলায় ডাক আসে….. ” তারিফ, বাবা এই বৃষ্টি বদলের মাঝে বাসা থেকে বের হস না…. বাইরে বিপদ আছে….,পিশাচেরা ঘুরা ফেরা করছে ”
উনি ভয়ে কাঠ হয়ে যায় সেখানে। ভয়ে পা থর থর করে কাপতে লাগে…এই লাইন টুকু আমি যেভাবে লিখলাম ঠিক সেই ভাবেই উনি উনার মা কে বলেছিলেন…. উনি উনার মাকে বলেছিলেন, আমি সেদিন শুনেছিলেন আমার মৃত বাবার স্নেহ মাখা কন্ঠ…। বেচে থাকার সময় যেভাবে আমায় ডাকতেন ঠিক সেইভাবেই…মনে হচ্ছিলো কেউ যখন টেপ রেকর্ডার চালিয়ে দিয়ে ছিলেন….
আমি ভাবছিলাম সত্যিই কি আব্বা এই রুমে…।তিনিতো মারা গেছেন আজ ১ বছর। জানিনা.. যদি আব্বা রুমে আসেন সেই উতসাহে আমি রান্নাঘরে উকি মারি আর আমি দেখতে পাই আব্বা উনার এক পুরাতন চেয়ারে বসে আছেন….।হাতে খবরের পএিকা। জোরে জোরে পরছিলেন ” আবার সড়ক দুর্ঘটনায় আরো একটি যুবক নিহতো! ”
আমি তখন একটা জমে যাও বরফ হাত পা ভয়ে ভারি হয়ে আছে।ইচ্চা করছিলো আর একটি বার আব্বা বলে ডাক দেই কিন্তু গলাটা সত্যিই বরফের টুকরো হয়ে গিয়েছিলো… তারিফ ভাই ঐভাবেই দরজা ধরে দারিয়ে আছেন… হঠাত মনে হচ্ছিলো পা দুটিতে কে জোরে টান দিচ্ছে…
উনি মেঝেতে পরে গিয়ে মাথায় ব্যথা পান। পরে যাওয়ার পরই উনি উনার আব্বার কন্ঠে আবার শুনেন ” বাবা সাবধান! ” কন্ঠটা এমন ছিলো যেন কেউ একজন অনেক গতিতে যেতে যেতে বলে জোর গলায় বলে গেলো…।
উঠে দাড়িয়ে তিনি আবার দরজার ভিতর উকি দিয়ে দেখেন ভিতরে উনার আব্বা তখন আর নাই।একটা খবরের কাগজ পরে আছে চেয়ারটার পাশে।রুমে গিয়ে পেপারটায় লেখা আছে তারিখ ২০০৩। তিনি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।কারন তিনি যেটা দেখেচিলেন সেটা তিনি স্পস্ট দেখে ছিলেন…..
আবার হুট করে উদাও হয়ে গেলো আর এখানে পেপারতো আসার কথাও না…তাও আবার পুরো পেপার। উনার আব্বা সব পুরোনো পেপার এক জায়গায় জমা করে রেখে দিতেন…. বাবা মারা যাওয়ার পর তা উনি নিজের বক্সে ভরে কোথাও একটা ফেলে দিয়ে ছিলেন….এখানে এলো কিভাবে সেটার হিসেব তিনি মেলাতে পারছিলেন না….
সেই রাতটা কেটে যায় তার পরের রাত থেকে স্বপ্নে উনাী আব্বা আসতে শুরু করে…কিন্তু দুঃস্বপ্ন নিয়ে।উনি স্বপ্নে দেখেন,,, উনার আব্বা আলমারিতে কিছু খোঁজাখুঁজি করছিলেন হটাত স্টিলের আলমারিটা উনার উপর দপ করে পরে যায়…উনি টেনে আলমারিটা তুলে দেখতে পান উনার বাবার মাথাটা রক্তাক্ত……হঠাত করে উনার আম্মা এসে গরম ধোয়াউঠা পানি নিয়ে এসে উনার বাবার মাথার উপর ঢালতে শুরু করে…..
পানির তাপে উনার আব্বার ছটফটানি আরো বেরে যায়।এটা দেখে তার মা জোরে জোরে হাসতে শুরু করে আর বলে দেখ তারিফ, তোর আব্বা ভোগ করছে মৃত্যু যন্ত্রনা।যেটা সবাই ভোগ করবে কিন্তু কেউ তার যন্ত্রনাটা বর্ননা করতে পারবে না। উনি এটা বার বার বলতে থাকেন আর হাসতে থাকেন। তারিফ এসব সহ্য করতে না পেরে ছুটে বাইরে চলে যান রাস্তা থেকে কোথা থেকে একটা ট্রাক এসে তাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়…..
উনার ঘুম ভেঙে যায়।উঠে দেখেন রুম থেকে দরজা দিয়ে কেউ একজন চলে গেলো…। উনি আবারো পিছু নেন কিন্তু ঐ রাতে তিনি উনার আব্বাকে আর দেখেন নাই। পরের দিন উনার মা চলে আসেন নওগায়।উনি তার মার কাছে এসব আর শেয়ার করেন নি। তারকাছে তখনো সব কিছু অবিশ্বাস্য লাগছিলো….
কিন্তু ব্যপাটা পাল্টে যায় ১৫ দিন উনার পর পর একই স্বপ্ন দেখার পর। উনি যে অফিসে কাজ করেন সেই অফিসে একটা কলিগ ছিলেন।লোকটা অনেকটাই ভিন্ন স্বভাবের।দেখে মনে হয় হয়তো অনেক বড় মাপের ভুত বিশারদ নয়তো ভন্ড।কথায় কথায় ঐ লোকের মুখে এক অদৃশ্য অস্হিত্বের আলাপ শুনতে পাওয়া যেত….
তার কারনে উনি ঐ লোকের কথা পাত্তা দিতেন না কারন তিনি এসব বিশ্বাসই করতেন না।উনি এক কৌতুহল নিয়ে কথায় কথায় ঐ কলিগকে ঐ রাতের ঘটনাটা বলে ফেলে যেদিন তিনি তার আব্বাকে রুমে দেখেছিলেন।ঐ লোকটির নাম ছিলো মুরাদ।মুরাদ ওকে বলে ছিলো, ঐটা তোমার আব্বার সাথে থাকা জ্বিন ছিলো যে তোমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো……
উনি এসব বিশ্বাস না করে জোরে হাসি দিয়ে চলে আসেন।চলে আসার সময় মুরাদ ডাক দেন এবং বলেন আমি যদি তোমার আব্বাকে তোমার সামনে দাড় করাতে পারি তাহলে তুমি বিশ্বাস করবে তো??….।তিনি রাজি হয়ে যায় বলেন ঠিক আছে এনে দেখাও…..
মুরাদ বললেন… ঠিক আছে আগামী শনিবার আমার বাসায় এসো প্রমান পাবে।তারিফ পরের শনিবার উনার বাসায় যান গিয়ে দেখেন……

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প