প্রতিশোধ

স্যার লাশটা…!
– চুপ করো দত্ত! লোক জানাজানি না হয় যেন। আর হ্যাঁ, ওপর মহল যেন এক্ষুনি এই বিষয়টা টের না পায় ওকে?
– কিন্তু স্যার।
– ব্যাস্ আর কোনো কথা নয়। যাও দেখো বাইরে যেন লোক জড়ো না হয়।
– ওকে স্যার।
– মিলি! যাও চেঞ্জ করে নাও শাড়ীটা।
মিনিট পাঁচেক পর শাড়ী বদলে আসে মিলি।
– বসো এখানে।
– স্যার বিশ্বাস করুন আমি..আমি ওকে মারিনি।
– আমি জানি তুমি এ কাজ করতে পারো না। কিন্তু এটা হলো কিভাবে সেটা আমায় জানতে হবে। নাহলে আমি তোমায় বাঁচাতে পারবো না। কারণ তুমিও জানো মিস্টার সিনহা এই শহরের অন্যতম বড়ো বিজনেসম্যান।
– কা.. কাল রাত প্রায় এগারোটার দিকে আমাকে কল করে দরজা খুলতে বলে। ও পুরো ড্রাংক ছিল।
– তারপর?
– ঘরে ঢুকেই ও নেশার ঘোরে…আ..আমার কাছে আসে। আমিও…ওকে বাধা দিতে পারিনি। কারণ আমি ওকে ভালোবাসি। তারপর কখন দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝিনি। তারপর স…সকাল হতে আমি যখন ওকে ডাকলাম দে…দেখি ও সাড়া দিচ্ছে না। তারপর তারপর….( হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে মিলি )
– ঠিক আছে আর বলতে হবে না। বাকিটা আমি জানি। তুমি জল খাও আর শান্ত হও।
– স্যার এটা তো আজ না হোক কাল জানাজানি হবেই। আমার কি হবে স্যার?
– আমি আছি তো!
– স্যার আপনার কি মনে হয়? মানে কীভাবে ও মারা গেলো? কারণ কাল তো ওকে সুস্থই লেগেছিল। হ্যাঁ ড্রাংক ছিল ঠিকই কিন্তু তাছাড়া আর অন্য কোনও সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।
– মনে হচ্ছে ঘুমের মধ্যেই কোনোভাবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
– কিন্তু স্যার কাল রাতে ও আমার বাড়ি ছিল। আর এই বিষয় নিয়ে তদন্ত হলে যখন লোকেশন চেক করা হবে তখন তো লাস্ট লোকেশন আমার বাড়িই দেখাবে। ত.. তখন আমি কী করবো?
– এক মিনিট ওর ফোনটা দেখি।
– হ্যাঁ স্যার দেখছি।
স্যার ওর ফোন তো নেই। ওর প্যান্টের পকেট চেক করলাম সেখানেও নেই।
– মানে? কাল ও ফোন নিয়ে আসেনি?
– জানিনা স্যার। আমি তো দেখিনি ওর সাথে ফোন।
– যদি ফোন না এনে থাকে তাহলে তোমার বাঁচার রাস্তা একটু হলেও ক্লিয়ার বাট সেটা এখনো আমি সিওরলি বলতে পারছিনা। ওর ফোনটা ইমিডিয়েট খুঁজতে হবে।
– আর ওর বডিটা? এটাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তো পাড়ার লোক দেখতে পাবে তখন কী হবে স্যার?
– সেটা আমি বুঝে নেবো। আপাতত বডিটা এখানেই থাকবে আর হ্যাঁ কোনোভাবেই তুমি ওতে টাচ্ করবে না ঠিক আছে?
– না না স্যার। আপনি যেটা বলবেন সেটাই হবে। আমি কিছু করবো না।
– হুম্। এখন আমি আসছি। ওর বডিটা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। ততক্ষণ এখানে কাউকে ঢুকতে দেবে না।
– ওকে স্যার। তাড়াতাড়ি আসবেন প্লিজ। আমার খুব ভয় করছে।
– ভয় পেও না মিলি। তুমি যখন কিছু করোনি তাহলে তোমার কিছু হবে না আমি তোমায় বলছি।
– ধন্যবাদ স্যার।
– ঠিক আছে। এখন আসছি আমি।
এরপর ইন্সপেক্টর রয় আর বাকি কনস্টেবলরা মিলির বাড়ি দিয়ে বেরিয়ে যায়।
– তো মিস্টার সিনহা! কেমন লাগছে আপনার? ঠিক এখানেই সেদিন রাই এভাবেই শুয়েছিল। ঠিক আপনার মতোই।
সেদিন রাতে ঠিক এমন করেই রাইকে আপনি চিরকালের জন্য না ফেরার দেশে পাঠিয়েছিলেন। সেদিন আমি ওকে বাঁচাতে পারিনি কিন্তু আজ আমি ওর মৃত্যুর প্রতিশোধটা নিলাম।
সেদিন ভাগ্যিস রাই পার্টিতে যাওয়ার আগে আমাকে ফোনে বলেছিল যে ওকে আপনিই পার্টিতে ইনভাইট করেছেন। নয়তো ওর খুনি কে আমি তো জানতেই পারতাম না।
আর প্রতিশোধটা নেওয়ার জন্য আমাকে আপনার মতোই ভালোবাসার নাটকটা করতে হলো একমাস ধরে। আপনি যে এতো সহজে আমার কাছে ধরা দেবেন সত্যিই ভাবিনি। আসলে কী বলুন তো? ভগবানও চান আপনি শাস্তি পান। সেদিন আপনার চাপে পড়ে পুলিশ কেসটাকে সামান্য হার্ট এ্যাটাক বলে ক্লোজ করেছিল। বাট আপনি সেদিন জোর করে ওর সর্বনাশ করেছিলেন। আর আমার বন্ধু মানে ইন্সপেক্টর রয়ই আমাকে আপনাকে শাস্তি দিতে সাহায্যটা করেছে। আর আপনার ফোনটা? সেটা তো আমি নিজের হাতে ভেঙে ফেলেছি। ওটা আর পুলিশ খুঁজেও পাবে না। অবশ্য আদিত্য মানে ইনস্পেক্টর রয় জানেন ব্যাপারটা। আশা করি ও সামলে নেবে এটা।
আর আজ তো শুধু বাকি পুলিশদের সামনে আমরা দুজন ছোট্ট একটা নাটক করলাম জাস্ট। যাতে আপনার মৃত্যুটাও হার্ট এ্যাটাক মনে হয় সবার সামনে। সেদিন শত চেষ্টা করেও আমি কোনো প্রমাণ পাইনি আপনার বিরুদ্ধে। নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সেদিন আপনি আইনের চোখে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছিলেন। আর আমার বোন বিনা বিচারে এতো বড়ো শাস্তি পেলো।
আর কাল আপনি আসার পর আমি নিজের হাতে আপনার ওয়াইনে ওটা মিশিয়ে ছিলাম। আর ওই ওষুধটা ধীরে ধীরে আপনার পুরো শরীরকে অবশ করে দিয়ে আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো। আর কেউ বুঝতেও পারলো না। আর মিস্টার রয় আপনার বডি পোস্টমর্টেমেও পাঠাবে না বুঝলেন? ঠিক যেমন করে সেদিন আপনি আমার বোনের বডিটা পাঠাতে দেননি।
এরপরেও যদি কোনোভাবে আমিই শাস্তি পাই, তাও আমার কোনো আফসোস থাকবে না। কারণ আমি তো আপনাকে শাস্তি দিতে পেরেছি।।
রাই… আমি পেরেছি বোন তোর খুনিকে শাস্তি দিতে। তুই এবার শান্তিতে ঘুমা।।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প