বিবেক_হীন_ পর্ব :- ( ৫ ) শেষ

:–আজ তিনদিন পর আমার জ্ঞান ফিরল এবং নিজেকে একটা উন্নত হসপিটালের আবিস্কার করলাম,মাথায় ব্যান্ডেজ করা।আগের মত মাথার আর তেমন একটা ব্যাথা হচ্ছে না। একটু উঠে বসতে চেষ্টা করলাম দেখি আমার ছোট্ট আপুটা আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আমার একটু নাড়া চড়া তেই ও উঠে বসল এবং কাঁদতে কাঁদতে বলতেছে,,,,
,,,,,ভাইয়া তুমি ঠিক আছো তো?তোমার জন্য আমি অনেক কেঁদেছি,আল্লাহর কাছে বলেছি আমার ভাইয়াটাকে ঠিক করে দাও।
…..পাগলিটার এই রকম কথা শুনে নিজেকেই ঠিক রাখতে পারলাম না,ওকে বুকে জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম এই পাগলি আর কাঁদবি না এই দেখো তোমার ভাইয়া তোমার পাশেই আছে এবং সুস্থ। একটু পর আমার বন্ধু টা আসল।
….বলল,নিলয় কেমন আছিস তুই?
,,,,বললাম, ভালো এবং আগের মত মাথার যন্ত্রণা টা এখন আর নেই। আচ্ছা একটা কথা বলতো, আমি এখন কোথায় আর আমি মৃত্যুর হাত থেকেই বা বেঁচে গেলাম কি করে,,,,,,?
লক্ষ করলাম একটু পরই দরজা খুলে কে জানি ভিতরে প্রবেশ করলো এবং যা দেখলাম নিজের চোখে বিশ্বাস করাতে পারলাম না। বললাম ভাবি,,,,,,,,,,আপনি ??
,,,,হ্যা রে নিলয় আমি, কেঁদে কেঁদে বলল, কেমন আছিস তুই,? আমার জন্যই আজ তোর এই অবস্থা, ভাই তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস, জানি এর কোন ক্ষমা হয় না,,।কি করবো বল রাগের মাথায় এসব করে ফেলেসি।
,,,ভাবি তার সব দোষ গুলো মাথা পেতে নিল,আমার ও খুব কষ্ট হচ্ছে ভাবির কান্না দেখে, আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।ভাবিকে ডাক দিয়ে পাশে বসিয়ে তার হাত দুটো ধরে বললাম, ভাবি আজ আমি অনেক খুশি যে আপনি আপনার ভুল গুলো বুঝতে পরেছেন।কথা গুলো শুনে ভাবি আবারো আমাকে জরিয়ে ধরে কন্না কাটি শুরু করে দিল। আমি ভাবিকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা কই,,? বাবা আসে নি?
,,,চলুন একটু পিছনে ফিরে যাওয়া যাক,,,
নিলয় যখন শেষ বারের মত আবিরের (নিলয়ের বন্ধু) কাছ থেকে ফোনে কথা বলে বিদায় নিচ্ছিল পরপারে যাওয়ার জন্য, তখনি আবির এই অবস্থার কথা শুনে নিলয়ের কাছে ছুটে আসে এবং ওই আঙ্কেল এর কাছ থেকে সব কিছু শোনার পর নিলয়কে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নিয়ে আসা হয়।এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা হলো।নিলয় কে আসিইউ তে রাখা হলো।
এদিকে আবির নিলয়ের ভাবিকে ফোন দিয়ে সব ঘটনা খুলে বললো এবং নিলয়ের ভাবি তার সমস্ত অপরাধ গুলো মাথা পেতে নিল।নিজে নিজে ভাবতে লাগলো আর না তার একটা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা দরকার।তাই নিলয়ের পরিবারকে সব বিষয় খুলে বললো এবং এই সমস্ত কথা শুনে তাদের পরিবারের বিশাল একটা শোরগোল সৃষ্টি হয়ে গেল।সবাই কান্না কাটি করতেছে।এদিকে এইসমস্ত কথা শুনে নিলয়ের বাবার পায়ের নিছ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে এমন অবস্থা।
,,,নিলয়ের বাবা,নিজে নিজে কাঁদতেছে আর বলতেছে, নিলয় বাবা তুই কই আমি না বুঝেই তোর উপর অনেক অত্যাচার করেছি বাবা তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস,আমাকে ক্ষমা করে দিস।
বলতে বলতেই তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন মানে তার হার্টঅ্যাটাক হয়েছে।আর ওই দিকে নিলয়ের মা নিলয় নিলয় বলে চিৎকার করেই যাচ্ছে।কিন্তু নিলয় আজ আর তার মায়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না।সে নিজেই আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঙ্গা লরতেছে।
আর রাইশা এই সমস্ত শুনে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলো না,একা আনমনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে আর নিলয়ের কথাই ভাবছে,সে নিজেকই অপরাধী ভাবছে,সে চাইলেই সেইদিন নিলয় কে বিশ্বাস করতে পারতো কিন্তু সে তা করে নি,সেও নিলয়কে ফিরিয়ে দিয়েছে।কিন্তু আজ রাইশা চিৎকার করে নিলয়কে বলতেছে বড্ড ভালোবাসি রে তোকে,প্লিজ আর একটি বার আমার কাছে ফিরে আয়।কথা দিচ্ছি তোকে আর কখনো অবিশ্বাস করবো না, প্লিজ নিলয় আর একটা সুযোগ দে আমায় প্লিজ নিলয় ফিরে আয়।এই বলেই আবারো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।
এদিকে নিলয়ের বাবাকে তারাতারি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো,এবং তাকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেখে নিলয়ের ভাই আর ভাবি নিলয়ের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুরে চলে আসলো।এবং নিলয়ের বাবাকে দেখাশোনার জন্য রাইশা এবং নিলয়ের মা থেকে গেল।
,,,, এবার গল্পে ফিরে আসা যাক,,৷
নিলয় যখন তার ভাবিকে জিজ্ঞেস করেছিল বাবা কই?তখন তার ভাবির মুখ থেকে কোন কথাই বার হচ্ছিল না, শুধু কেদেই যাচ্ছিল।
নিলয়: ভাবি বাবা আসেনি? কিছু বলতেছেনা কেন,ও বাবা বুঝি এখনো আমার উপর রেগে আছে, বলেই আবার নিলয়ের মনটা খারাপ হয়ে গেল।
এবার নিলয়ের ভাই রুমে প্রবেশ করতেই নিলয়কে জরিয়ে কাঁদতেছে আর বলতেছে ভাই আমার তুই ঠিক আসিছ তো?তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছি রে না বুঝে আমায় ক্ষমা করে দিস।
,,,আমি(নিলয়) বললাম ভাইয়া তোমাকে আর কাঁদতে হবে না আমি তোমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি,তোমরা যে আমার কাছে ফিরে এসেছো এটাই আমার একটা বড় পাওয়া। কিন্তু ভাইয়া বাবা,মা কই তারা ভালো আছে তো?
,,,,,না রে বাবা তোর কথা শোনার পরেই হার্টঅ্যাটাক করছে,এখন অবশ্য সুস্থ আছে। কিন্তু তোকে বার বার দেখতে চাচ্ছে।
,,,,,কি বলছো, বাবা অসুস্থ তুমি আমাকে আগে বলোনি কেন?
,,,,,কিভাবে বলবো বল, তুই তো নিজেই সুস্থ ছিলি না।
,,,,ভাইয়া প্লিজ আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চলো, আমি বাবার কছে যেতে চাই।
,,,,তুই আগে সুস্থ হও।
,,,ভাইয়া আমি পুরোপুরি সুস্থ আছি,প্লিজ আমাকে নিয়ে চল।
,,,,আচ্ছা ঠিক আছে নিলয়, আমরা কালকেই দেশে ফিরতেছি।
আমরা সবাই দেশে ফিরলাম, এসেই আঙ্কেল এবং আন্টির বাসায় আসলাম, মানে আমায় বাবা, মায়ের মতো আদর করে নতুন একটা পৃথিবী সাজিয়ে দিয়েছিল।তাদের জন্যই হয়তো আজ বেঁচে আছি।আমি গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম,এবং বাবা, মাকে বললাম আমি তোমাদের কাছে খুব তারাতারি ফিরে আসব,নিজেদর খেয়াল রাখবা কেমন, কথা গুলো বলতেই অজান্তে দুচোখ বয়ে পানি চলে আসলো।তারাও কেদে দিও বললো আচ্ছা বাবা। কিন্তু আমি আমার ছোট্ট আপু টা মানে (পিংকি) কে নিয়ে রওনা দিলাম। ও আমার সঙ্গে আসতে পেরে অনেক খুশি। তারপর আমি,আবির,ভাইয়া ও ভাবি সবাই ট্রেনে করে রওনা দিলাম।
,,,তারপর ভাবির দিকে লক্ষ করলাম, ভাবি কেন জানি মনমরা এবং চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, মনে হচ্ছে যেন কতদিন থেকে না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে। আমি বললাম ভাবি কি হয়েছে তোমার, এত মনমরা কেন?
,,,,,,না কই কিছু না তো।
,,, কিছু না তো বললেই হলো,ভাবি আমি তোমাকে চিনি, কতটা আপন ছিলে, তোমার কি হয়েছে আমি বুঝবো না?কথাটা শেষ না করতে ভাবি আমাকে কান্না অবস্থা জরিয়ে বললো নিলয় তুই এখনো আমায় এতটা ভালোবাসিস,কিন্তু দেখ আমি তোর ভালাবাসাটার মুল্য দিতে পারি নি রে।আমি আর কখনো এমনটা করবো না শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দিস।
ওই দিক থেকে ভাইয়া বলতেছে, জানিস নিলয় তোর এই অবস্থার পর থেকেই তোর জন্য প্রত্যেকটা রাতেই তোর জন্য তোর ভাবি কেঁদেছে, কত রাত যে নির্ঘুমে কাটিয়েছে সেটা আমি জানি।
গল্প করতে করতে স্টেশনে এসে পরলাম। আর এই দিকে ছোট্ট পাগলিটা আমার কোলেই ঘুমিয়ে গেছে,আর ভাবিও আমার এক কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিল।আজ আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমি আজ কত খুশি।
একটু পরেই আমরা বাসয় এসে পৌঁছালাম।
দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে , বাবা,মা এসেই আমাকে জরিয়ে ধরলো এবং কেঁদে কেঁদে বলল নিলয় আমাদের ক্ষমা করে দিস বাবা।তোর সাথে এমনটি আর কখনেই করবো না।বাবা মাকে বললো নিলয়কে ঘরে নিয়ে যাও।আমি ঘরে এসেই মাকে বললাম সবাকে দেখতেছি কিন্তু রাইশা কই ওকে তো দেখতেছি না,ও কই মা?মা বললো জানে না কই।
আমার মন খারাপ হতে লাগলো, সবাই আসলো রাইশা এখনো আসলো না,ওর আবার কিছু হয় নি তো।আমি আর পিংকি বাহির হয়ে চাচির কাছে গেলাম, বললাম রাইশা কই? চাচি বললো, নিলয় বাবা সকাল থেকে কেন জানি রাইশার মন খারপ ছিল,তুমি আসার একটু আগে কোথায় জানি বেরিয়ে গেল বলতে পারছি না বাবা,,,।
এইবার বুঝতে বাকি রইলো না রাইশা কোথায় আছে।রাইশা আমার উপর অভিমান করলে নদীর তীরে এসে আনমনা হয়ে দারিয়ে থাকতো।আর আমি এসে মহারানীর মান ভাঙ্গাইতাম।
এইবার আমি আর পিংকি নদীর তীরে গেলাম, দেখি একটা মেয়ে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে, আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না ওটই রাইশা। আমি পিছন থেকে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলাম,ও চমকে উঠলো আর আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলো কিন্তু আমি জোর করে ধরাতেই আর নিজেকে ছড়াতে পারলো না।আমি বললাম, আগে বল আমি কে তারপর তোকে ছাড়বো,,,,আমার কন্ঠস্বর আর আলতো ছোঁয়াই ও আমাকে ঠিকেই চিনতে পেরে গেছে । রাইশা বলতেছে এই গাধা আমাকে ছাড়বি,,, আমি বললাম না ছাড়বো না,,,,না ছাড়লে কিন্তু আবারো তোর আব্বুকে বলে দিব আবারো আচ্ছা মাইর দিবে কিন্তু। আমি তো আবারও রিতীমত ভয় পেয়ে গেলাম,,,,না এইবার আর ভয় পেলে হবে না,,সাহস করে রাইশা কে বললাম তুই যদি আবারো আব্বুকে বলে দিস,,এবার কিন্তু সত্যি সত্যি মরে যাব,এবং তোর কাছ থেকে সারাজীবনের জন্য অনেক দূরে চলে যাব, চাইলে আর ফিরতে পারবো না।রাইশা ভয়ে পেয়ে গিয়ে আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বলল তোকে কোথাও যেতে দিব না,আমি তোকে আর হারাতে চাই না,প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না।আমি একটু মজা করে বললাম তাহলে যে বললি আব্বুকে বলে দিবি,,,ওই না না আর বলবো না,,,পাগলিটা আমাকে জরিয়ে ধরেই থাকলো আর ছাড়ার কোন নামেই নাই,,,,,।
,,আর ওই দিক থেকে আরেক পাগলি মানে পিংকি আমাদের দিকে সেই তখন থেকে তাকিয়ে আছে খেয়ালে করি নি।পিংকি বলে উঠলো ওই ভাইয়া তোমরা ওখানে কি করছে আর ওই মেয়েটা কে? আবার জরিয়ে ধরছো কেন? দারাও আমি তোমার আব্বুকে বলে দিব, তুমি একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরছো,,,,।
এই যা আবার মনে হয় ধরা খেলাম রে,,আল্লাহ আমারে বাঁচও,,,,,
আমি তড়াহোড়ো করে রাইশা কে ছাড়িয়ে পিংকির কাছে এসে বললাম লক্ষী বোনটা আমার এমনটি করে না,আব্বুকে বলিও না তা না হলে আবার আমাকে মারবে।লক্ষী বোনটি আমার প্লিজ বলিস না,যাও অনেক গুলো চকলেট কিনে দিব,পিংকি বললো আমার চকলেট লাগবে না,
,,,তাহলে?
,,,আমাকে জরিয়ে না ধরে ওই মেয়েটাকে কেন ধরছো?
,,,ওকে বাবা sry sry,,,,বলেই পিচ্ছিটাকে জরিয়ে ধরে কপালে একটা চুমু একে দিলাম,,,,,,,,।
আর এভাবেই অপূর্ণ ভালোবাসাটা পূর্ণতা পেল।

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প