নরখাদক পর্বঃ |৪|(সমাপ্ত পর্ব)

আমি চারপাশে দেখলাম, আর ঐ ছায়াগুলো নেই। তাহলে ব্যাপারটা কি…..
হ্যাঁ! এখানে আমার গলায় একটা তাবিজ রয়েছে। এই তাবিজটা আমার মা ছোট বেলায় আমার গলায় বেঁধে দিয়েছিলো। ঐ শয়তানগুলো এই তাবিজ ছুঁতে পারেনি।
এখন তাহলে এই অভিশপ্ত জঙ্গলটাকে শেষ করে দেয়া যাবে! আমি তাড়াতাড়ি সাইবার দিকে দৌড়ে এলাম। সাইবা ভয় পেয়ে জদুমদু হয়ে গেছে। আমি আর সাইবা তাড়াতাড়ি এ জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসলাম। আমি যে ঐ শয়তানগুলোকে তাড়ানোর উপায় পেয়েছি। সেইটা আমি সাইবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলাম।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর গল্প করছি। সাইবা বললো,
– আমি আর জীবনেও এই জঙ্গলে আসছি না! চাকরি থাকলে থাকবে। নতুবা ছেড়ে দিয়ে বিয়ে করবো!
– কেন? জঙ্গলে আর আসবা কেন তুমি?
– একবার যা বাঁচান বেঁচেছি! তারপর কি আর কেউ আসে?
– আর হেড অফিসে কি বলবো?
– বলবো অল ক্লিয়ার!
– মানে?
– মানে, কোথাও কোন সমস্যা নেই। সব ঠিকঠাক আছে। যে মানবে না এসে দেখে যাবে!
– তোমার কথায় যুক্তি আছে। তাহলে সেটাই কথা রইলো। কেসের ফাইল হবে অল ক্লিয়ার।
– হুম।
আমি আর সাইবা ফিরে এলাম। ফাইল জমা দিলাম। বড় স্যার তো কোন মতেই অল ক্লিয়ার মানবেন না। অবশেষে সাইবা স্পষ্টভাবে বলে দেয় যে, বিশ্বাস না হলে আপনি নিজেই গিয়ে দেখে আসুন। তারপর বিশ্বাস করেছেন। আমি অফিস থেকে কয়েক দিনের জন্য ছুটি নিলাম। একটা কাজ আছে।
আমি আমার একটা বন্ধুকে ফোন করলাম। আমার সেই বন্ধুর নাম রাজা। রাজা একজন কবিরাজ এবং তান্ত্রিক। আমি তাকে সব ঘটনা বললাম। আর আমার সাথে সেই জঙ্গলে যেতে বললাম। রাজা এ সকল শয়তান ভুত জ্বীন নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে।
আমি আর রাজা অভিশপ্ত সেই জঙ্গলে গেলাম। রাজা জঙ্গলটা দেখেই কিছু বুঝতে পারলো। সে বললো,
– এই জঙ্গলে একাধিক শয়তান রয়েছে!
আমি কিছু বললাম না। রাজা আস্তে আস্তে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে গেলো। আমিও রাজার পিছনে পিছনে গেলাম। আমার গলায় তাবিজ থাকায় আমার খুব একটা ভয় হলো না। কিছুক্ষণ পর রাজা আমায় বললো,
– এটা নরখাদকদের জঙ্গল। এখানে ওদের বাস। ওদের থামানোর কোন উপায় নেই। ওরা শয়তান।
– তো ওরা কি এইভাবেই থাকবে?
– ওদের আমি আমার তন্ত্র শক্তি দিয়ে বেঁধে ফেলবো। ওরা এই জঙ্গলে গাছে, মাটিতে বন্দি হয়ে থাকবে।
– ঠিক আছে। তাই করো।
রাজা তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা কঙ্কালের খুলি বের করলো। খুলির উপর কিছু ভয়ঙ্কর চিহ্ন রয়েছে। রাজা মুখে অদ্ভুত রকমের কিছু বলতে লাগলো। আর সাথে সাথে চারপাশে অন্ধকার নেমে আসলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ঐ শয়তানগুলো আবার আসবে! রাজা একটুও বিচলিত হলো না। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকটা বনমানুষের মতো ছায়া উড়ে এসে রাজার গলা চেপে ধরলো। রাজা মুখে আর ঐ মন্ত্র বলতে পারছে না।
রাজা ব্যাগ থেকে একটা ধূলোর মতো কিছু বের করে ছুঁড়ে মারলো। ঐ ছায়াগুলোর শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো। ওরা মুখ দিয়ে খুব বিশ্রী রকমের আওয়াজ বের করতে লাগলো। আর জোরে আওয়াজ করছে ওরা।
আমি শেষে দুহাত দিয়ে আমার কান চেপে ধরলাম। হঠাৎ কোথাও থেকে একটা ছুরি উড়ে এসে আমার গলার পাশ দিয়ে চলে গেলো। আর সাথে সাথে আমার গলা থেকে তাবিজটা খুলে নিচে পরে গেলো। আমি বিষয়টা বুঝতে পারার সাথে সাথে নিচে তাকিয়ে তাবিজটা তুলে নিতে চাইলাম। কিন্তু তার আগেই একটা নরখাদক আমার কাছে চলে আসলো। ভয়ঙ্কর হাতে আমায় চেপে ধরে। রাজা ঐ ধূলোর মতো জিনিসটা আমার দিকে ছুড়ে মারে। আর ওদের শরীরে আগুন জ্বলে উঠে। আমি দৌড়ে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। একটু পরেই দেখি আস্তে আস্তে আলো বাড়তে লাগলো। সবগুলো শয়তান অদৃশ্য হয়ে গেলো।
রাজা বললো,
– আমি ঐ শয়তানদের বেঁধে ফেলেছি। ওরা আর কারো ক্ষতি করতে পারবে না।
– সত্যি তো?
– অবিশ্বাসের কোন কারণ নেই।
আমি আর রাজা ঐ জঙ্গল থেকে ফিরে এলাম। আর আমিও কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম যে, আর ওখানে কোন ঝামেলা হবে না।
____________________________
একটা অ্যাম্বুল্যান্স যাচ্ছে লাশ নিয়ে। বড় একটা গাছ ভেঙে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। অ্যাম্বুল্যান্সের ড্রাইভার বললো,
– ঐ জঙ্গল দিয়ে যাওয়া যায়। গাড়ি ওদিকে নিচ্ছি।
কেউ কিছু বললো না। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ অ্যাম্বুল্যান্সের ছাদের উপর কিছু একটা জোরে ধাক্কা খেলো। ড্রাইভার তাল সামলাতে না পেরে একটা গাছের সাথে অ্যাম্বুল্যান্স লাগিয়ে দেয়। অ্যাম্বুল্যান্সের পিছনের দরজা ভেঙে গেছে। পিছনে লাশের সাথে আত্মীয় স্বজন আছে। সবাই বেশ ভয় পেয়ে যায়। এমন সময় হঠাৎ…….
এমন সময় হঠাৎ কয়েকটা কালো বনমানুষের মতো ছায়া পুরো অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে ফেলে। ড্রাইভার ওদিকে অজ্ঞান হয়ে গেছে। সবাই ভয়ে চিৎকার করতে লাগলো। ঐ ছায়াগুলো চারপাশ থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে ধাক্কা দিতে লাগলো। লাশের ছেলে সবুজের কান্না করার মতো অবস্থা! সে তার বাবার লাশ ধরে বসে আছে।
হঠাৎ প্রচন্ড একটা ধাক্কায় লাশের পা অ্যাম্বুল্যান্সের বাহিরে চলে যায়। আর একটা কালো ছায়া পা ধরে জোরে টান দেয়। টান দেওয়ার সাথে সাথে লাশটা মাঝখান থেকে চিড়ে দুই ভাগ হয়ে দুদিকে পরে। ঐ ছায়াগুলো কচমচ করে লাশটা খেতে শুরু করলো। অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতর সবার অবস্থা খারাপ!

Be the first to write a review

Leave a Reply

We’re sorry you’ve had a bad experience. Before you post your review, feel free to contact us, so we can help resolve your issue.

Post Review

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সাম্প্রতিক গল্প